এফসি লোরিয়ে : লিগ ওয়ানের নতুন চমক
পোস্টটি ৭২৫ বার পঠিত হয়েছেএই সিজনে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান এখন অবধি বেশ জমজমাট। এর কৃতিত্বটা দেওয়া যায় বেশ কিছু দলকে, যারা দারুণভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খেলে চলেছে। তবে অন্য সব দল গুলোর পাশাপাশি এবার চমক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে প্রধানত দুটি দল, আরসি লেঁস ও এফসি লোরিয়ে।
লিগ টেবিলে ছয়ে থাকা লোরিয়ে কে বলা যায় এই সিজনের সবচেয়ে বড় চমক, কারণ লেঁসের উত্থান মূলত শুরু হয়েছে গত সিজনে। অন্যদিকে লোরিয়ে চলতি সিজনে একদম হঠাৎ করেই উঠে এসেছে স্পটলাইটে। এখন ছয়ে থাকলেও শুরুর দিকে একটা লম্বা সময় ধরে সবাইকে অবাক করে টপ থ্রি তে ছিলো তারা।
লোরিয়ে কখনোই ফ্রান্সের এলিট ক্লাবের লিস্টে ঢুকতে পারেনি। দীর্ঘ সময় অ্যামেচার লেভেলেই পারফর্ম করে গেছে। তাদের প্রথম লিগ ওয়ান খেলার সুযোগ হয় ১৯৯৮-৯৯ সিজনে। এরপর লিগ ওয়ান ও লিগ টু তে উঠানামা করতেই পেরিয়ে গেছে বেশ কটি বছর। তারপর একসময় জিনিয়াক, মোরেল, রেসেতের মতো বেশ কিছু তরুণ ট্যালেন্টেড খেলোয়াড় প্রোডিউস করার মাধ্যমে লিগ ওয়ানের মোটামুটি নিয়মিত সদস্য হয়ে পড়ে তারা।
টানা বেশ কটি সিজন লিগ ওয়ানে কাটানোর পর আবারও খারাপ সময় নেমে আসে। লিগ টু তে নেমে যায় লোরিয়ে৷ এবার লিগ ওয়ানে ফেরে তিন বছর পর। ২০১৯-২০ সিজনে দুর্দান্ত ইওয়ান উইসার পাশাপাশি লে গফ, লরা আবেরজেল দের ধারাবাহিক পারফর্মেন্সে লিগ টু চ্যাম্পিয়ন হয়ে পুনরায় লিগ ওয়ানে যাত্রা শুরু করে লোরিয়ে।
এরপর গত দুই সিজন ধরে লোরিয়ের লড়াইটা ছিলো মূলত অবনমন এড়ানোর লড়াই। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু নাম কে সামনে নিয়ে আসে তারা। ২০২০-২১ সিজনে তাদের সেরা পারফর্মার ছিলো চেলসির লোনি সেন্টার-ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ ও তাদের লিগ ওয়ানে তোলার প্রধান কারিগর উইঙ্গার ইওয়ান উইসা। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো নজর কাড়ে একাডেমি গ্রাজুয়েট এঞ্জো লে ফি ও নতুন সাইনিং তেরেম মোফি।
এরপর গত সিজনেও অবস্থা ছিলো আগের মতোই। সিজনের শুরুতেই হারাতে হয় আগের সিজনের দলের প্রধান দুই তারকাকে। লোন শেষে চেলসি তে ফিরে যান চালোবাহ, ওদিকে আরেক ইংলিশ ক্লাব ব্রেন্টফোর্ডে পাড়ি জমান উইসা। ভাঙাচোরা দল নিয়ে আবারও রেলিগেশন এড়ানোর যুদ্ধ শুরু করে লোরিয়ে। অবশেষে দুর্দান্ত মিডফিল্ড জুটি এঞ্জো লে ফি ও লরা আবেরজেল এর কৃপায় আবারও কোনোরকমে রক্ষা পায় লোরিয়ে, টেবিলের ষোল তে শেষ করে সিজন।
গত সিজন শেষে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান ম্যানেজার ক্রিস্তফ পেলিসিয়ে। তার জায়গায় নতুন ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পান দলের তরুণ খেলোয়াড় থিও লে ব্রির চাচা রেজিস লে ব্রি। ৪৬ বছর বয়সী রেজিস লে ব্রি গত ১৯ বছর বিভিন্ন ছোটখাটো একাডেমিতে কোচিং করিয়ে কাটিয়েছেন। ওয়াস্কাল নামের এক ছোট্ট একাডেমিতে কাটান এক বছর, এরপর সাত বছর ছিলেন রেনের একাডেমির দায়িত্বে। অতঃপর ২০১২ সালে দায়িত্ব নেন লোরিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। সেখানে বেশ ভালো পারফর্মেন্সের পর প্রোমোশন পান লোরিয়ে বি টিমে। তবে তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট টা আসে গত জুনে, যখন পেলিসিয়ে কে বরখাস্ত করে লোরিয়ে। জুনিয়র ও বি দলের পর এবার মূল দলের দায়িত্ব হাতে নেন রেজিস লে ব্রি।
দায়িত্ব বুঝে নিয়ে স্কোয়াডে খুব বেশি পরিবর্তন আনেননি লে ব্রি। অল্প কিছু প্লেয়ার সাইনিং করান, যার বেশিরভাগই ছিলো ফ্রি। ক্রুসিয়াল সাইনিং বলতে ছিলো লিপজিগ থেকে গোলকিপার ইভোন মভোগো, রুবিন কাযান থেকে সেন্টার-ব্যাক মোনতাসার তালবি, গেঁগা থেকে উইঙ্গার ইওয়ান কাথলিন...এইতো। এগুলোর মধ্যে কোনোটার প্রোফাইলই তেমন দৃষ্টিনন্দন ছিলোনা একেবারেই। সে তুলনায় হারানো নামগুলোই তুলনামূলক বেশি পরিচিত। দল ছাড়েন আরমান্দ লরিয়েন্তে, থমাস মোকোদুই, লিও পেত্রো, হুবুলাং মেন্দেস সহ আগের সিজনের বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ নাম।
সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতা করার মতো কোনো দল লে ব্রি পাননি। একদম সাদামাটা ও লিগের অন্যতম কমদামী স্কোয়াড নিয়েই যাত্রা শুরু করেন তিনি। সেসময় নাম, ভার, স্কোয়াড ভ্যালু, ওয়েজ, স্যালারি সব কিছুতেই লিগের একদম তলানির ক্লাব লোরিয়ে। লে ব্রি দায়িত্ব নিয়েই বুঝলেন এ টিম নিয়ে কিছু করতে হলে ট্যাকটিক্যালি অসাধ্য সাধন করতে হবে, তাছাড়া উপায় নেই। তাই দলের খেলায় আমূল পরিবর্তন আনতে শুরু করলেন তিনি।
বড় টিমের বিপক্ষে লো ব্লকে খেলতে শুরু করলো লোরিয়ে। তাদের মাঠে প্রধান লক্ষ্য ছিলো লো ব্লকের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের নিকট হতে বল ছিনিয়ে নেওয়া, অতঃপর সরাসরি ফ্লুইড এটাকে যাওয়া। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্রুসিয়াল হয়ে দাঁড়ালো দলের অ্যাটাকার রা। আর অ্যাটাকারদের পাশাপাশি মিডফিল্ডারদের এটাকের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করলে লে ব্রি। সব মিলিয়ে এক দৃষ্টি নন্দন ফুটবল উপহার দিতে শুরু করলো লোরিয়ে।
শুরু থেকেই তাদের এক্সপেক্টেড গোল কে বড় মার্জিনে অভারপারফর্ম করতে শুরু করলো লোরিয়ে। এটার প্রধান কারণ ছিলো তাদের সুগঠিত স্মুথ ফ্লুইড এটাক। মাত্র ২৫ এক্সপেক্টেড গোলে তারা সফলভাবে বল জালে জড়িয়েছে ৩৩ বার, যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। আর সেটপিসে বিশেষভাবে মনোযোগ দেন লে ব্রি। সেটপিস থেকে মাত্র ৩.১২ এক্সপেক্টেড গোলে লোরিয়ের গোলসংখ্যা ৮ টি। ফিনিশিং এর এই অভাবনীয় পরিবর্তন পুরো দল কেই বদলে দেয়।
গত সিজনে লোরিয়ের প্রধান সমস্যার জায়গাই ছিলো এই এটাক, যেখানে চিত্র ছিলো এবারের তুলনায় পুরোই উলটো। সেবার লিগে পুরো সিজনে মেৎজের সাথে যৌথভাবে সবচেয়ে কম ৩৫ গোল করে লোরিয়ে, কিন্তু অপরদিকে তাদের এক্সপেক্টেড গোল ছিলো ৪৮.৬। সেবার এক্সপেক্টেড গোল খুব বাজেভাবে আন্ডারপারফর্ম করে তারা। আর ফিনিশিং এ অগ্রগতির মাধ্যমে এবার এই জায়গাতেই একদম অন্য লোরিয়ে কে দেখা যাচ্ছে।
লোরিয়ের খেলার আরেকটা মজার দিক হলো, অপনেন্ট এর বক্সের আশেপাশে তাদের বল অগ্রগতির পরিমাণ আপেক্ষিকভাবে খুবই কম। লিগ ওয়ানে ফাইনাল থার্ডে পাসিং এর পরিমাণ সবচেয়ে কম লোরিয়ের। প্রতি ম্যাচে গড়ে তাদের ফাইনাল থার্ডে পাস ৪৪ টি, যা লিগের অন্য যেকোনো দলের চেয়ে কমপক্ষে ১০% কম।
ম্যাচে তাদের অ্যাটাকের সংখ্যা থাকে তুলনামূলকভাবে খুবই সীমিত। তবে সেই অ্যাটাকগুলো হয় খুবই ক্রুসিয়াল। সেই ক্রুসিয়াল কিছু অ্যাটাক ছাড়া অপনেন্ট এর বক্সের আশেপাশে তাদের দেখাই যায়না। আর ফলাফল, লিগের অন্যান্য দলের তুলনায় আন্ডারলাইং নাম্বারে তারা অনেক পিছিয়ে। সাধারণত এটাই দেখা যায় যে কোনো দল যদি অফেনসিভলি ইম্প্রুভ করতে চায়, তাহলে প্রথম ইম্প্রুভ করতে হবে বল প্রোগ্রেশনে। আর এখানেই নিজেদের ব্যতিক্রম এবং স্পেশাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে লোরিয়ে।
ওদের অ্যাটাকিং প্লের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওরা বল কন্ট্রোল করেনা। বল পজিশনে সবসময় এগিয়ে থাকে তাদের প্রতিপক্ষ, তাই খেলার কন্ট্রোলও থাকে প্রতিপক্ষের হাতে। লিগ ওয়ানে এই সিজনে বল পজিশনে গড়ে সবচেয়ে পিছিয়ে লোরিয়ে (৪২.৪%)। কিন্তু তাদের অ্যাটাকগুলো হয় একদম ডাইরেক্ট। উইদাউট দ্য বল মুভমেন্ট ও ডিফেন্সিভ পাসিং এ লোরিয়ে পুরো সলিড। আর অ্যাটাকে তারা ফাস্ট, স্মুথ ও ওয়েল স্ট্রাকচার্ড। অ্যাটাকের ক্ষেত্রে বল মুভিং ফরওয়ার্ডে প্রতি সেকেন্ডে তাদের গড় গতি ১.৮ মিটার, যা লিগ ওয়ানে পঞ্চম সর্বোচ্চ গতি। তাদের শর্ট পাসে অ্যাটাক বিল্ড আপে তাদের একদমই দেখা যায়না। তাদের সবগুলো অ্যাটাকই হয় ফাস্ট ডাইরেক্ট ও ক্রুসিয়াল।
তবে সাধারণত একদম স্কোরিং এর দিকে না গিয়ে গোলের আশে পাশে বল মুভ করতে থাকে। তবে আগেই বলেছি, ফাইনাল থার্ডে লিগে সবচেয়ে কম পাসিং রেট লোরিয়ের। তবে তারা বল মুভ করে কোথায়? এখানেও তারা ব্যতিক্রম। ফাইনাল থার্ডে না গিয়ে তারা নিজেদের থার্ডে বল পাস করতে থাকে। স্কোরিং পজিশনে যাওয়ার আগে এখানেই মুভমেন্ট চলতে থাকে। নিজেদের থার্ডে তাদের বল পাসিং রেট ৩২%, যা লিগ ওয়ানে সর্বোচ্চ।
আর নিজেদের থার্ডে তাদের এ বল মুভমেন্ট প্রতিপক্ষকে প্রেসিং এ ফোর্স করে। ফলাফল, ফাইনাল থার্ডে স্পেস ক্রিয়েট হয়ে যায় এবং এই সুযোগ কে পুরোপুরি কাজে লাগায় লোরিয়ে ফরওয়ার্ড লাইন। লিগের অন্যতম দ্রুত ফরওয়ার্ড লাইনের অধিকারী লোরিয়ে উইঙ্গার দাঙ্গো উয়াত্তারা আর সেন্টার ফরওয়ার্ড তেরেম মোফি কে কাজে লাগিয়ে সেই স্পেস ব্যবহার করে মূহুর্তের মধ্যে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নেয়।
সবসময়ই যে তারা এই একই পদ্ধতিতেই অ্যাটাকে যায়, তা কিন্তু নয়। মাঝে মাঝে অ্যাটাক বিল্ড আপের কারিগর হিসেবে আবির্ভূত হন গোলকিপার ইভোন এমভোগো। বিল্ড আপে বরাবরই বেশ অ্যাক্টিভ ভূমিকা পালন করেন এমভোগো। প্রতি ৯০ মিনিটে তার পাস অ্যাটেম্পট ২৮.৬ টি, যা লিগে গোলকিপারদের মধ্যে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। বিল্ড আপে তার এ কন্ট্রিবিউশন একদিকে যেমন প্রতিপক্ষের প্রেসিং কে এলোমেলো করে ফেলে, তেমনি প্রতিপক্ষের ডিফেন্সিভ লাইনে স্পেস তৈরি করে।
এবার তাদের সিস্টেমে সবচেয়ে ক্রুসিয়াল প্লেয়ারগুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক, যাদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স লোরিয়ে কে দুর্দান্ত ভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তিনজন তরুণ প্লেয়ার, যারা লে ব্রির সিস্টেমে একদম পার্ফেক্টলি ফিট করেছে। তাঁরা হলেন স্ট্রাইকার তেরেম মোফি, উইঙ্গার দাঙ্গো উয়াত্তারা ও মিডফিল্ডার এঞ্জো লে ফি।
লিগ ওয়ানে এই সিজনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ টি গোল করেছেন ২৩ বছর বয়সী নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার তেরেম মোফি। গত সিজনও লোরিয়ে তেই কাটিয়েছিলেন মোফি, তবে তবে চোখে লাগার মতো পারফর্মেন্স ছিলোনা। কিন্তু এই সিজনে লে ব্রির আন্ডারে হয়ে উঠেছেন দুর্দান্ত। তার মুভমেন্ট অসাধারণ, যেকোনো সময় নিজের জন্য স্পেস তৈরি করে নিতে পারেন।
ড্রিবলিং এ বিশেষ পারদর্শী মোফি, লিগের অন্যতম সেরা ড্রিবলার স্ট্রাইকার হয়ে উঠেছেন তিনি। পাশাপাশি ৬ ফিট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এ স্ট্রাইকার ফিজিক্যালি বেশ শক্তিশালী, যা তাঁকে এক্সট্রা অ্যাডভান্টেজ দেয়। তার এক্সপেক্টেড গোল অভারপারফর্মিং রেট দুর্দান্ত। আনপ্রেডিক্টেবল মুভমেন্টের মাধ্যমে নিজের জন্য প্রচুর চান্স ক্রিয়েট করতে পারেন। তবে তার অন্যতম শক্তির জায়গা তার দুর্দান্ত গতি। প্রচন্ড গতির পাশাপাশি ফিজিক্যালিটির সাহায্যে মূহুর্তেই প্রতিপক্ষ ডিফেন্স কে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে ফেলতে পারেন। সব মিলিয়ে তেরেম মোফি একটা কমপ্লিট প্যাকেজ।
তবে ক্রিয়েটিং ও ফিনিশিং এ আরও কমপ্লিট প্যাকেজ ২০ বছর বয়সী ভার্সেটাইল উইঙ্গার দাঙ্গো উয়াত্তারা। লিগ ওয়ানের অন্যতম সেরা ড্রিবলার এই তরুণ। অন ও অফ দ্য বল মুভমেন্টে তিনি অতুলনীয়। এই অসাধারণ ড্রিবলিং ও মুভমেন্টের মাধ্যমে যেকোনো সময় দারুণ চান্স ক্রিয়েট করতে পারেন। লিগ ওয়ানে ড্রিবলিং থেকে নিজের বা টিমের জন্য উয়াত্তারার চেয়ে বেশি চান্স ক্রিয়েট করেছেন কেবল মাত্র এমবাপ্পে। পাশাপাশি ফিনিশিং এও সমান পারদর্শী উয়াত্তারা।
সবশেষে আছেন দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এঞ্জো লে ফি। এঞ্জো লে ফি কে সহজ ভাষায় বর্ণনা করা বেশ কঠিন। তাকে বলতে পারি "লোরিয়ের লোথার ম্যাথুস"। না, লে ফি কে লোথারের সাথে তুলনা করছিনা, সেটা করাটা একদমই হাস্যকর। তবে তুলনা করতে পারি দলে তাদের রোল টা। লোরিয়ে তে লে ফি কি করেন প্রশ্ন না করে প্রশ্ন করা উচিৎ লে ফি কি করেন না। লোরিয়ের কোর ডিফেন্ডিং থেকে টপ অ্যাটাক, সবখানেই সবসময় ইনভলভড থাকেন লে ফি। লোরিয়ের মূল খেলা টা কন্ট্রোল করেন লে ফি। অ্যাটাকিং ফেজে প্রেসিং এর মাধ্যমে বল এগিয়ে নিয়ে যান, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স কে অ্যাট্রাক্ট করে সতীর্থদের জন্য স্পেস ক্রিয়েট করেন। লং পাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ ডিফেন্স কে এলোমেলো করে দেন। তার পাসিং স্কিল দুর্দান্ত। পাশাপাশি দারুণ পজিশনিং ও মুভমেন্টের মাধ্যমে দলের অ্যাটাকিং ও ডিফেন্সিভ সকল অ্যাক্টিভিটিতে হয়ে ওঠেন ক্রুসিয়াল।
লো ব্লকের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের থেকে বল নিয়ে ফাস্ট ফ্লুইডে অ্যাটাকে যায় লোরিয়ে, যেটা পূর্বেই আলোচনা করেছি। আর এক্ষেত্রে সর্বদাই পাসিং, ড্রিবলিং ও মুভমেন্টের মাধ্যমে অ্যাটাক কে স্পিড আপ করার দায়িত্ব একা হাতে সামলান এঞ্জো লে ফি। অ্যাটাকিং থার্ডে তার পাস গুলো হয় আরও ধারালো, যা প্রতিপক্ষের সর্বশেষ ডিফেন্স লাইন কে এলোমেলো করে ফেলে। ফলাফল, সতীর্থের জন্য স্পেস তৈরি হয়ে যায়।
তবে শুধু এই তিনজনই নয়, লোরিয়ের এ দুর্দান্ত যাত্রায় দলের অন্য সকল সদস্যের ভূমিকাও অতি গুরুত্বপূর্ণ। মিডফিল্ডে লে ফির সঙ্গী লরাঁ আবেরজেল, দুই ফুলব্যাক কালুলু ও লে গোফ, উইঙ্গার স্তেফেন দিয়ারা, অফেন্সিভ মিডফিল্ডার জুলিয়ে পোসু, সেন্টার ব্যাক তালবি সবাই লোরিয়ের এ যাত্রায় দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করছেন। সর্বোপরি লোরিয়ে কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের দুর্দান্ত টিম প্লে, কারও ইন্ডিভিজুয়াল পারফর্মেন্স না। তাই কারও ভূমিকা কেই ছোট করে দেখার উপায় নেই।
তবে চলতি উইন্টার ট্রান্সফার উইন্ডো তে ছোটখাটো কিছু ক্রুসিয়াল পরিবর্তন এসেছে দলে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, সেটা হলো দলের "থ্রি মাস্কেটিয়ার্স" এর অন্যতম দাঙ্গো উয়াত্তারার প্রস্থান। লোরিয়ে ছেড়ে বোর্নমাউথে পাড়ি জমিয়েছেন এ দুর্দান্ত উইঙ্গার। দল ছাড়ার রিউমার আছে স্ট্রাইকার তেরেম মোফিরও। এদিকে দলে এসেছে দুটি নতুন মুখ। অলিম্পিক ডি মার্সেই থেকে এসেছেন তরুন সেনেগালীয় স্ট্রাইকার বাম্বা দিয়েং, অলিম্পিক লিওঁ থেকে লোনে এসেছেন উইঙ্গার রোমান ফেইভ। এ পরিবর্তন কিভাবে মানিয়ে নেয় রেজিস লে ব্রির দল, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তবে একদম অতি সাধারণ একটি দল নিয়ে চিরায়ত ফরমুলা থেকে বের হয়ে নতুন কিছু চেষ্টা করা, এবং সেখানে সফল হওয়া... সব মিলিয়ে লে ব্রি ইতোমধ্যেই যা করে দেখিয়েছেন, তা সত্যিই অসাধারণ এবং প্রশংসার দাবিদার।
- 0 মন্তব্য