• ফুটবল

ডিফেন্ডিং ট্যাকটিকস (প্রথম পর্ব)

পোস্টটি ১৩৫৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ডিফেন্ডিং হলো ফুটবলের মৌলিক অংশ। ডিফেন্ডিং এর মূল রহস্য কোচের ট্যাকটিকস, ডিফেন্ডারদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ও মাঠে কঠোর ট্যাকটিকাল ডিসিপ্লিন। ফর্মেশন,কোচের ট্যাকটিকস এবং অপনেন্ট এর এটাকিং স্ট্র্যাটেজির উপর নির্ভর করে কোনো দলের ডিফেন্ডিং বিভিন্ন রকম হতে পারে কিন্তু ডিফেন্ডিং ব্যাসিকস সবক্ষেত্রেই মোটামুটি একই।

 

এভরিওয়ান ইজ ডিফেন্ডার

ডিফেন্ডিং এ প্রথমেই যে ব্যাপারটা আসে সেটা ফর্মেশন। কয়জন ডিফেন্ডার খেলবে,৩ জন নাকি ৪জন?-প্রশ্নের উত্তর খুব সোজা। অপনেন্ট এর পায়ে বল থাকা অবস্থায় একটা দলের ১১ জন ই ডিফেন্ডার, দূর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধ্রুবসত্যটি অনেক অ্যামেচার টিম জানে না বা বোঝে না। অপনেন্ট এর পা থেকে বল কেড়ে নেয়ার দায়িত্ব শুধু ডেডিকেটেড ডিফেন্ডার এর নয়,বরং টিমের ফরোয়ার্ড লাইন ও মিডফিল্ডার রা মার্কিং, প্রেসিং করে অপনেন্ট কে ফিজিক্যাল ও মেন্টাল প্রেশার না দিলে ওয়ার্ল্ড এর বেস্ট ডিফেন্ডাররাও তেমন সুবিধা করতে পারবে না। তাই ফরোয়ার্ড ও মিডফিল্ডারদের এই চিন্তা থাকা যাবে না যে আমি কেন প্রেস করবো বল নেয়ার দায়িত্ব তো ডিফেন্ডারের। এরকম চিন্তাভাবনা দলের জন্য পরাজয় ব্যতীত কিছুই অর্জন করতে অক্ষম।

এখন দলের মূল ডিফেন্সলাইনে ৩জন নাকি ৪জন ডিফেন্ডার খেলবে এবং তাদের রোল/রেসপন্সিবিলিটি কি হবে সেটা নির্ভর করে কোচের ট্যাকটিক্সের উপর। তবে মূল ডিফেন্স লাইনের আন্তঃবোঝাপড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

 

ফিল্ড স্ক্যানিং ও লাইন মেন্টেইন

ডিফেন্ডারদেরকে একটা সরলরেখা বরাবর পজিশন মেনটেইন করতে হয়, যাতে অপনেন্ট ফরোয়ার্ডকে মার্কিং এর পাশাপাশি অফসাইড ট্র্যাপে আটকানো যায়। ৪জন বা তারো অধিক টিমমেট দ্বারা নিখুঁত এই লাইন মেনটেইন করতে শুধু অপনেন্ট প্লেয়ারদের চোখে চোখে রাখলেই হয় না, বারবার শোল্ডার চেক করে অপনেন্ট ও নিজের প্লেয়ারদেরও পজিশন খেয়াল করা লাগে, সেই অনুযায়ী নিজে মুভ ও করা লাগে। একইসাথে বলের দিকে, অপনেন্ট প্লেয়ারদের দিকে এবং নিজের টিমের ডিফেন্সলাইনের দিকে খেয়াল রাখা যথেষ্ট কঠিন, যা প্র্যাক্টিস টাইমে টিমমেটদের সাথে একসাথে খেলে ও তাদের মতিগতি,খেলার স্টাইল সম্পর্কে হাতের তালুর মত পরিষ্কার ধারণা ছাড়া সম্ভব নয়। তাই ডিফেন্স শুধু একটা পজিশন নয়, এটা একটা সিস্টেম। ডিফেন্সলাইন হলো- ১১জনের একটা ফুল আর্মির ভেতরে আরো কঠিনভাবে শৃংখলা ও বোঝাপড়ায় আবদ্ধ একটা ব্যাটেলিয়ন ।

 

 

 

 

ফিজিক্যাল & মেন্টাল কোয়ালিটিজ

ডিফেন্স সিস্টেমের পাশাপাশি একজন ডিফেন্ডারের ইন্ডিভিজুয়াল পার্ফমেন্স অনেক সময় খেলার অবস্থা বদলে দিতে পারে। এক্ষেত্রে ডিফেন্ডারের এপ্রোচ কেমন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। একটা মনোভাব প্রচলিত যে,উচ্চতা,শারীরিক শক্তিসামর্থ্য থাকলেই ভালো ডিফেন্ডার হওয়া যায়। শারীরিক সামর্থ্য ছাড়া অপনেন্ট এর ক্ষিপ্র ফরোয়ার্ডকে আটকানো যেমন কঠিন, আবার একজন দীর্ঘদেহী-শক্তিমান ডিফেন্ডার অপনেন্ট প্লেয়ারের মনে সাইকোলজিক্যাল ইফেক্ট তৈরি করতে পারে। তবে উচ্চতা বা শারীরিক গঠন কারো কম থাকলেও ইন্টেলিজেন্স ও ফুটবল সেন্স সেই অভাবপূরণ করতে পারে। জার্মান ফুটবল টিমের সাবেক ক্যাপ্টেন ফিলিপ লাম একজন ডিফেন্ডার যার উচ্চতা ডিফেন্ডারদের এভারেজ উচ্চতার চেয়ে বেশি নয় অথচ অনেক কোচ ও ট্রেইনার তার ইন্টেলিজেন্স এর প্রশংসা করে বলেছেন লামের মত ইন্টেলিজেন্ট প্লেয়ার তারা দ্বিতীয়টি দেখেননি। এছাড়াও,একজন ডিফেন্ডারের গতিবেগ,ক্ষিপ্রতা, ভারসাম্য, ফ্লেক্সিবিলিটি ইত্যাদি থাকা জরুরি|

 

প্লেয়ার মার্কিং

ডিফেন্ডার হিসেবে একজন প্লেয়ারকে অবশ্যই পার্ফেক্টলি প্লেয়ার মার্কিং করতে হবে কারণ স্ট্রাইকার বা ফিনিশারদের মেন্টালিটি থাকে স্পেস খুজে সেখানে রান নেয়া। শুধু বলের দিকে তাকিয়ে না থেকে অপনেন্ট এর অন্য প্লেয়ারগুলো কে কোথায় সেটা ধারণা রাখা জরুরি। বিভিন্ন প্লেয়ার মার্কিং ট্যাকটিক্স হতে পারে -ডিরেক্ট, জোনাল, শ্যাডো মার্কিং।

কোনো নির্দিষ্ট প্লেয়ারকে মার্ক করে রাখা ডিরেক্ট মার্কিং। যদি একজন নির্দিষ্ট ডিফেন্ডার ওই প্লেয়ার মাঠের যেখানেই যাক মার্ক করে রাখে তাহলে সেটা টার্গেটেড মার্কিং বলা যেতে পারে।

ট্যাক্টিকাল এনালাইসিসে মাঠকে কয়েকটা নির্দিষ্ট এরিয়া বা জোনে ভাগ করা হয়। বর্তমানে একজন প্লেয়ার বা ডিফেন্ডার তার নিজের জোন বা এরিয়া মার্ক করে খেলে। অর্থ্যাৎ যদি কোনো প্লেয়ার বলসহ বা বল ছাড়াই তার জোনে আসে তাকে সে মার্ক করবে। ওই প্লেয়ার তার জোন ছেড়ে অন্য জোনে গেলে অই জোনের ডিফেন্ডার তাকে মার্ক করবে। এই জোনাল মার্কিং এর সুবিধা হলো একজন ডিফেন্ডারের এনার্জি সেভ হয়, প্রোপার অপনেন্ট মার্কিং এর কাজ ও হয়।

শ্যাডো মার্কিং মেইনলি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের কাজ। বল ইন্টারসেপশনের কাজে শ্যাডো মার্কিং ব্যবহৃত হয়। শ্যাডো মার্কিং হলো অপনেন্টকে বুঝতে না দেয়া যে তাকে মার্ক করা হচ্ছে। ফলে সে নিজেকে মার্কিংবিহীন বা খালি স্পেসে দেখে অবশ্যই বল পাস চাইবে এবং তার মাথায় থাকবে যে তার কাছাকাছি কোনো ডিফেন্ডার নাই। তাই অপনেন্ট যখন unaware বা প্রিপেয়ার্ড না তখনই তার পাস ইন্টারসেপ্ট করা বা তার থেকে বল ট্যাকল করে নেয়া সবচেয়ে সহজ।

 

প্রেসিং

বল মাঠের কোন সাইডে রয়েছে সেদিকে সাধারণত ডিফেন্ডাররা বেশি ফোকাসড থাকে,সেদিক প্রেসিং বেশি হয়। টিম প্রেসিং মূলত মাঠের কোনো জায়গায় নিউমেরিকাল সুপেরিয়রটি এনে অপনেন্ট এর ভেতর সাইকোলজিক্যাল প্রেশার তৈরি করা।

একজন অপোনেন্ট প্লেয়ারকে প্রেস দিলে তার কাছে অপশন দুইটা- হয় অন্যজনকে পাস দিবে নাহয় ড্রিবলিং করে প্রেস থেকে বের হবে। যত ভালো ড্রিবলারই হোক, ড্রিবলিং করা অলওয়েজ রিস্কি, বল লুজ করার পসিবিলিটি থাকে। তাই অপনেন্ট এর কাছে বেটার অপশন মনে হতে পারে পাস দেয়া। এখানেই আসলে টিম প্রেসিং এর ইফেক্ট কাজে লাগানো হয়।

ডিফেন্ডিং এর মূল কাজ অপনেন্ট এর খেলা আনকমফোর্টেবল করে দেয়া। তাই কোনো অপনেন্টকে প্রেস দেয়ার সময় তাকে বেটার অপশন চুজ করতে দেয়া যাবে না, অর্থ্যাৎ তার টিমমেট বা পাসিং অপশনগুলোকে মার্ক করে ফেলতে হবে যাতে সে পাস দেয়ার মত কাউকে না পেয়ে বল নিয়ে ড্রিবল করতে বাধ্য হয়। একজন প্লেয়ার যখন একজন অপনেন্ট প্লেয়ারকে প্রেস দিচ্ছে তখন প্লেয়ারের টিমমেটরা অপনেন্ট প্লেয়ারের কাছাকাছি যেসব অপনেন্ট টিমমেটস আছে তাদেরকে মার্কিং এ রাখবে যাতে পাস দিলেই ইন্টারসেপশন বা সেকেন্ড বল উইন করা যেতে পারে, অথবা পাস দেয়াই অসম্ভব করে ফেলা যেতে পারে।অপনেন্ট যার পায়েই বল থাকুক এই টিম প্রেসিং মাঠে সিনক্রোনাইজলি করে যেতে হয়। ধরা যাক, একজন RM তার সাইডে একজন অপনেন্টকে প্রেস দিচ্ছে, তাই CM কে এগিয়ে আসতে হবে অপোনেন্ট এর ক্লোজেস্ট টিমমেটকে মার্ক করতে, আবার তখন LM কে CM এর পজিশনে আসতে হবে সেন্টারমিড জায়গায় অপনেন্ট কে মার্ক করতে এবং অই জায়গা যেনো ফাকা না থাকে। আবার LM এর দিকে বল বা প্লেয়ার গেলে CM ও RM সেইমভাবে একজন আরেকজনের পজিশন কাভার করবে। এভাবে একটা ডাইনামিক সিস্টেম মাঠে সিনক্রোনাইজডলি মুভ করবে।