ডিফেন্ডিং ট্যাকটিকস (শেষ পর্ব)
পোস্টটি ১০৯৯ বার পঠিত হয়েছেশট ব্লকিং, হ্যান্ড মুভমেন্ট
অপনেন্ট এর ক্রস, শট ব্লক করার সময় দুই হাত একসাথে বা আলাদা শরীরের পেছনে নিতে হবে অথবা শরীরের সামনে এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে হাতের পেছনে শরীরের কোনো অংশ থাকে এমনভাবে যেন ফুটবল লাগলে ওই জায়গায় হাত না থাকলেও শরীরের অন্য অংশ লাগতো। এভাবে হাত পেছনে বা সামনে নেয়ার অভ্যাস করলে শট বা ক্রস ব্লকিং এর সময় হ্যান্ডবল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
প্লেয়ার চেজ, ট্যাক্টিকাল ফাউল
অপোনেন্ট প্লেয়ার যদি ফাস্ট ও এজাইল হয় (দ্রুত ও ক্ষিপ্র) তাহলে তার সাথে দৌড়িয়ে পাল্লা দেয়া কঠিন। তাই, যদি কোন অপনেন্ট বল কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যায় ড্রিবল করে তাহলে তার পেছনে চেজ করা যাবে না বরং নিজের গোলবারের দিকে দৌড়াতে হবে, কারন আল্টমেটলি যেকোনো অপনেন্ট এর লাস্ট ডেস্টিনেশন বা টার্গেট হলো গোলবার এর দিকে।
অনেকেই কোন এটাক বা বিল্ডআপ বা কাউন্টারে কি হতে পারে আগেই বুঝতে পেরে ইচ্ছাকৃত ফাউল করে এটাকের ছন্দ নষ্ট করে বা বিল্ড আপ, কাউন্টারে যাওয়া গোলস্কোরিং চান্স তৈরি হওয়ার আগেই আটকে দেয়।এজন্য হলুদ কার্ড ও খাওয়া লাগতে পারে কিন্তু ট্যাক্টিকাল ফাউল, ম্যাচে অপনেন্ট এর এটাক থেকে গোলস্কোরিং চান্স তৈরি হওয়ার আগেই করতে হবে, এ ব্যাপারটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ফেইক ট্যাকল
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, বল পায়ে থাকা অবস্থায় একজন অপনেন্ট এর চিন্তা থাকে কখন ডিফেন্ডার কমিট করবে বা ট্যাকল করার জন্য ব্যালেন্সড স্ট্যান্স থেকে এগিয়ে আসবে, তারা ওই মোমেন্ট এর জন্য ওয়েট করে, যখনই ডিফেন্ডার ফিজিক্যাল প্রেস বা ট্যাকল কমিট করতে যেয়ে একদম কাছে চলে আসে তখনই অপনেন্ট বলটা নিয়ে কাটিয়ে বের হয়ে যেতে পারে, যেকারনে আগেই বলা হয়েছে প্রোপার টাইম ও সিচুয়েশন আসার আগে ট্যাকল কমিট না করতে, পেশেন্স রাখতে কখন তারা ভুল করে বা বল শরীর থেকে দূরে সরায়। কিন্তু তাদেরকে এই ভুল করতে ম্যানিপুলেট করা যেতে পারে।
অপনেন্ট এর পায়ে বল থাকা অবস্থায়, ডিফেন্ডারকে এমনভাবে কমিট করতে হবে যাতে অপনেন্ট বিশ্বাস করে যে আসলেই ডিফেন্ডার ট্যাকল করতে আসছে। ঠিক তখনই তারা বল ড্রিবলিং এর জন্য বা স্কিলের জন্য একটু দূরে সরাবে এবং ট্যাকল কমপ্লিট না করে তখনিই ডিফেন্ডার নিজের আগের বডি স্ট্যান্স ও পজিশনে ফিরে যাবে বা বল যেদিকে গেছে সেদিকে অপনেন্ট ও বলের মাঝে নিজেকে নিয়ে যাবে।
ট্যাক্টিকাল ডিফেন্স
বিভিন্ন এটাকিং স্ট্র্যাটেজি হতে পারে- পাসিং বিল্ড আপ, ক্রসিং, শর্ট পাস ও তিকিতাকা, লং বল টু উইংগারস, কাউন্টার এটাকিং ইত্যাদি। এসবের বিপরীতে ডিফেন্ডিং ট্যাকটিক্স ও বিভিন্নরকম।
প্রচুর ক্রস করা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সিগনেচার স্ট্র্যাটেজি ছিল বহুদিন। কর্নার সাইডলাইনের কাছাকাছি বল কোনোমতে নিয়ে যেয়েই ক্রস। এন্ড এভরি ক্রস ইজ আ গোলস্কোরিং চান্স। ইপিএল এর মত প্রতিযোগিতামূলক ও ফাস্টপেসড ম্যাচগুলো যেখানে ম্যাচ উইন করাই মুখ্য সেখানে এই ট্যাকটিক্স দৃষ্টিনন্দন না হলেও খুব কার্যকর ছিল। ক্রসিং এর বিপক্ষে ব্লকিং বা হেড ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি আফটারমেজারমেন্ট হলো অনেকটাই লাক ডিপেন্ডেন্ট। সবচেয়ে ভালো কাউন্টার ট্যাকটিক্স হলো প্রিভেন্টিভ হওয়া- ক্রস করতে না দেয়া, বল উইংগারের কাছে পৌছাতে না দেয়া।
পাসিং বিল্ড আপ, শর্ট পাস ও তিকিতাকা স্প্যানিশ ফুটবলের অংগ। ইপিএল এর মত ফাস্ট পেসড গেম না বরং খেলায় দক্ষতা, কৌশল, নান্দনিকতা ইত্যাদি থাকে। তিকিতাকা হলো প্লেয়ারগুলো কাছাকাছি থেকে প্রচুর শর্ট পাস খেলে বল বেশিরভাগ সময় নিজেদের পজেশনে রাখা। এ পাসিংগুলো বেশিরভাগ হয় অপনেন্ট মিডে, বা সেন্টারলাইন ও অপনেন্টবক্সের মাঝের জায়গায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই টিমের ডিফেন্স লাইনকে হাইলাইন বা অনেক উপরে উঠে খেলতে হয় যাতে তিকিতাকা পাসিং সার্কেল কমপ্লিট করা যায়।
তিকিতাকা বা শর্ট পাসিং ট্যাকটিক্স অনেক টিমকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে,কিন্তু বর্তমানে এটা রুখে দেয়ার সূত্র অনেক সোজা। যেহেতু অপনেন্ট এর পায়ে বল এবং হালকা প্রেস দিলেই বল আরেকজনের পায়ে চলে যাচ্ছে, তাই বলের পিছনে বা প্লেয়ারের পিছে দৌড়ানো ও এনার্জি লস করা বৃথা। এক্ষেত্রে নিজেদের হাফে সিটব্যাক করে জোনাল মার্কিং করতে হবে, এনার্জি সেভ রাখতে হবে। বল অপনেন্ট এর পায়ে থাকুক, যদি কোন উপায়ে একটা-দুইটা ইন্টারসেপশন বা ট্যাকল করে বল নিজেদের পায়ে পাওয়া যায় তাহলে দ্রুত ট্রাঞ্জিশন করে কাউন্টার এটাকে যেতে হবে, এবং অপনেন্ট এর ডিফেন্সলাইন হাই থাকায় কাউন্টার এটাক সাকসেসফুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রচুর।
লং বল ডিফেন্ডিং এ অপনেন্ট উইংগার ও তার রান ইফেক্টিভলি মার্ক করা ও এরিয়াল বল উইন বা ক্লিয়ার করতে হবে।
কাউন্টার এটাক ডিফেন্ড করা সিচুয়েশন ভেদে ভিন্নরকম। তবে কিছু মৌলিক ব্যাপার রয়েছে যেমন যতটা সম্ভব কনটেইন করে রাখা বা বল নিয়ে ড্রিবলিং করে বের হয়ে যেতে না দেয়া, ড্রিবলিং এ ফুল গতি অর্জন করতে না দেয়া, অর্থাৎ যতটা সম্ভব সময়, হোক কয়েক সেকেন্ড, নষ্ট করা যাতে নিজের টিমের বাকি প্লেয়াররা ডিফেন্সে আসতে পারে বা সাপোর্টে আসতে পারে। অনেক সময় ট্যাক্টিকাল ফাউল করা লাগতে পারে, যা নেসেসারি ইভিল, অর্থাৎ নান্দনিক ফুটবল না হলেও ম্যাচ উইনিং ফুটবল। একটা গোল খাওয়ার চেয়ে একটা এটাকের আর্লি স্টেজে ট্যাক্টিকাল ফাউল করে হলুড কার্ড খাওয়া বেটার ফর ম্যাচ উইনিং।
প্রোএক্টিভ ফুটবল ২০১৪ বিশ্বকাপে প্রভাব রেখেছিল, স্পেশালি জার্মানির খেলায়। ট্রায়াংগল পাসিং এ ব্যাপারটা বোঝানো সহজ।ট্রায়াংগল পাসিং এ একজন প্লেয়ারের কাছে বল থাকা অবস্থায় যখন কোনো ডিফেন্ডার প্রেস দিতে আসে, তখন প্লেয়ার তার টিমমেটকে শর্ট পাস দেয়, টিমমেটকে আবার ডিফেন্ডার প্রেস করতে গেলে টিমমেট আবার বল পাস দেয় কিন্তু সেটা সামনের দিকে, একটা খালি স্পেসে যেটা সেই ডিফেন্ডার ফেলে এসেছে, এবং প্লেয়ার এখনো সেখানে যায়নি। অর্থ্যাৎ,ডিফেন্ডার যখন নিজের পজিশন থেকে এগিয়ে যেয়ে প্রথম প্লেয়ারকে প্রেস করতে যাবে, প্লেয়ার তার টিমমেটকে পাস দিয়ে ডিফেন্ডারের ফেলে আসা স্পেসে রান নিবে ও তার টিমমেট ওই স্পেসে বল পাস দিবে। এই প্রো এক্টিভ ফুটবল ডিফেন্ড করতে হলে ডিফেন্ডারকে প্রথম প্লেয়ারকে প্রেস করার পর তার টিমমেটের কাছে প্রেস করতে যাওয়া যাবে না, বরং নিজের ফেলে আসা স্পেস বা পজিশনে ব্যাক করতে হবে একইসাথে প্রথম প্লেয়ার এর রান মার্কিং এ রেখে।
ডিফেন্ডারের মত একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারেরও উপরোল্লিখিত গুণাবলীর সাথেও বিবিধ বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। হয়ত সেসব নিয়ে আলোচনা করা হবে অন্য কোন লিখনীতে।
“Attack wins you games, defense wins you titles” - Alex Ferguson
- 0 মন্তব্য