কোথায় হারে ভারত? তবুও উচ্চ রবে শির!
পোস্টটি ৯২৩ বার পঠিত হয়েছে
এ ধরনের আয়োজনে হেরে গেলে যা হয়, তাই হচ্ছে। ভারতের সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ। রোহিত শর্মা-কে এক্ষুনি অধিনায়কত্ব থেকে বিদায় করবার পয়গাম শুরু হয়েছে। সমর্থকদের সামলানো এখন মুশকিল, আর তা যদি হয় আমাদের উপমহাদেশীয় ক্রিকেট সমর্থক- তাহলে তো কথাই নেই। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের সমাপ্তি ঘটেছে। পঞ্চম দিনে এসে হেরেছে ভারত, জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। গতবছর নিউজিল্যান্ডের পর এবার অজিদের কপালে উঠল টেস্ট সেরার মুকুট।
গত বছরের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালেও ভারত ছিল নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ। দ্বিতীয়বারের মতো রানার্স-আপ হওয়া ভারতীয় টেস্ট দল কেনো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ এখনো নিতে পারেনি, তা নিয়ে করা যাবে বিস্তর গবেষণা। তা সম্ভবত শুরুই হয়ে গেছে। সমর্থকেরা তো আছেই, সাথে বিশ্লেষক-ক্রীড়া অনুরাগী-সাংবাদিক-ক্রিকইনফো-সহ সকল সম্ভাব্য জায়গা, বাদ থাকবে কিছু- সেরকম মনে হয় না।
কোথায় ভারত হেরে যায়?
সোজা উত্তর দিতে গেলে আপনি বলবেন, যেকোনো বড় আসরের সেমি বা ফাইনালের দৌড়ে ভারত হেরে যায়। হ্যাঁ, পরিসংখ্যান দেখতে গেলে দেখা যাবে, ভারত তাদের শেষ আইসিসি ট্রফি জিতেছে ২০১৩ সালে। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তার পরবর্তী সময়গুলোতে সেমি আর ফাইনালের দোলাচলে আর জেতা হয়ে ওঠেনি কোনো আইসিসি শিরোপা।
আজ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের পঞ্চম দিনে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২০৯ রানের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে ভারতীয় দলকে। টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথম দিন শুরু করে ভারত। সবুজ উইকেটে খেলা। অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও বললেন, টসে জিতে তিনিও ফিল্ডিং ছাড়া অন্যকিছু ভাবতেননা। ভারতীয় দল ফিল্ডিং নিয়ে সুবিধা পেয়েছে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই জেনেছে সবাই। কারণ অজিদের স্কোর ছিল তখন ৭৬/৩। সেই স্কোরবোর্ড অল্প কিছু রানেই গুটিয়ে যাবে, এই যখন ভাবনা- তখন মাঠে উপস্থিত দুই ব্যাটার স্টিভ স্মিথ এবং ট্রাভিস হেড। দুজনের জুটিটা ছিল ২৮৫ (৪০৮) রানের। মূলত এই জুটির কারণেই প্রথম ইনিংসে ৪৬৯ রানের সংগ্রহ তুলতে সক্ষম হয় অস্ট্রেলিয়া দল।
ম্যাচ শেষে যত হিসাব
ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড় ফাইনাল শেষে তাই বলছিলেন, ‘এটা ৪৬৯ রানের উইকেট না।’
তবে আমরা ধরে নিতে পারি, প্রথম ইনিংসে ৪৬৯ রানের একটা চাপ অস্ট্রেলিয়া দল তৈরি করতে পেরেছিল। আর এখানে ভারতের বোলারদের কিছু দায় তো নিতেই হবে। ঠিক এ জায়গায় এসে একজন ভারতীয় দর্শক, রবিচন্দ্রন অশ্বিন-কে মিস করেছে কিনা, জানতে পারলে ভাল হতো। সম্ভবত করেছে।
ফাইনাল শুরুর আগে নানারকম গুঞ্জন ছিল ভারতের একাদশ নিয়ে। ভারত কি চারজন পেসার নিয়ে নামতে যাচ্ছে নাকি তিন পেসারের সাথে থাকবেন এক স্পিনার, যিনি হবেন রবি অশ্বিন। একাদশ দেওয়ার পর জানা গেল, চার পেসার। নেই অশ্বিন। টেস্ট ক্রিকেট র্যাংকিংয়ে বোলারদের মধ্যে অশ্বিন এখন এবং যখন একাদশ নির্বাচন করা হয় তখন, দুই মিলেই এক নাম্বার। তো এসবের পরেও অশ্বিনকে না রাখা নিয়ে অনেকেই কিছু কিছু মন্তব্য করেছেন ম্যাচ শুরুর দিন।
“প্রথম দিনের শেষ সেশনে আমরা ১৫৭ রান দিয়েছি, কোনো উইকেট না নিয়ে। এটা ছিল হতাশার। আমরা জানতাম কোন লাইন এবং লেংথে বল করতে হবে। লেংথ খারাপ ছিল না। কিন্তু আমরা আমাদের লাইনে অনেক প্রসারিত ছিলাম। অনেক বেশি জায়গা দেওয়া হয়েছে ট্রাভিস হেডকে, সে এটা কাজে লাগিয়েছে এবং আমরা পিছিয়ে পড়েছি।”- হারের পর বলছিলেন ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড়।
এছাড়াও স্মরণ করুন চতুর্থ দিনের কথা। যখন ভারতীয় দলকে টার্গেট দেওয়া হয়েছে ৪৪৪ রান। ৪৪৪ রানের টার্গেট নিয়ে যখন ভারতীয় দল ব্যাট করছে, তাদেরকে খুব বেশি সতর্ক দেখা যায়নি। ম্যাচ জেতার চিন্তা নিয়ে চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ৪৪৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করলে কিছু ঝুঁকি নিতে হয় সত্য। তবে ভারতীয় দলের পরিকল্পনায় কিছু দ্বিধা ছিল বলে মনে হয়েছে। কোচ রাহুল দ্রাবিড় যেমন বলেছেন, তিন-চারটা শট খেলার সময় একটু সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। গিলের ক্যাচ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক হয়েছে। রোহিত শর্মার সুইপ বা পুজারার আপার-কাট করবার ঝুঁকিপূর্ণ চেষ্টা, এসব না করলেও চলত। তবে ক্রিকেটে যে শেষ কথা নেই আসলে। যা না করলেও চলতো, তাই হয় বারবার।
২০২৩ আইপিএল কতটা প্রভাব রাখল ভারতীয় দলে
এদিকে অনেকেই ইঙ্গিত করতে চাইবেন। আইপিএলের প্রভাবে কি ভারতীয় দলের পরাজয়? এত সরলীকরণ না করলেন। তবে ভারতীয় দলের যথেষ্ট প্রস্তুতির অভাব ছিল, সেটা অন্তত অস্বীকার করেনি ‘স্বয়ং’ কোচ রাহুল দ্রাবিড়। আইপিএল শেষ হয়েছে ২৯ মে। এরপর ভারতে অল্প সময়ের ক্যাম্প শেষে জুনের ৩ তারিখ থেকেই লন্ডনে প্রস্ততি ক্যাম্প। আইপিএল পরবর্তী সময়ের ব্যবধান খুবই কম। আপনি অধিক বিশ ওভারের গেম খেলার পর, স্বাভাবিকভাবেই আপনার শরীর ও মনের জন্য কিছু সময় দরকার হবে- যখন আপনি আবার একটা টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামছেন ইংল্যান্ডে। সেই সময়টুকু ভারতীয় দল পেয়েছে বলে মনে হয় না।
কোচ রাহুল দ্রাবিড় তাই বলছিলেন, “আমি কোচ হিসেবে প্রস্তুতি নিয়ে একদমই খুশি ছিলাম না, কিন্তু এটা বাস্তবতা, যার মুখোমুখি আমাকে হতে হয়েছে, আমাদের হতে হয়েছে।”
কোন অভিযোগ তিনি দিতে চান না। তবে কোন ‘বাস্তবতার’ কথা তিনি বলেন, তা নিয়ে কিছুটা আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। একজন জাতীয় দলের কোচ, যিনি তার প্রস্তুতি সারতে পারেননা- কোনো এক বাস্তবতার কারণে, তা নিয়ে দুঃখ যদি না করেন, দুঃখজনক।
সব মিলিয়ে ভারতের হার আর অস্ট্রেলিয়ার জয়- এটাই আজকে ক্রিকেটের আলোচনা। বিজয়ের দিন যেমন কারো আসে, তেমনি হারের দিন আসে কারো কারো। তবে দিন সকলেরই আসে। রোহিত শর্মা তাই বলেন, উচ্চ-শিরে পরের চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য লড়াইটা জারি রাখবে তার দল। সত্যিই তো! শির-উচ্চ রেখেই এ-যাত্রা, এর বাইরে আর কী-ই বা থাকে।
- 0 মন্তব্য