• ফুটবল

রিস্টো স্টোইচকভঃ বুলগেরিয়ার গর্ব

পোস্টটি ৩১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

কিছু কিছু ফুটবলার থাকে যারা নিজের খেলার মাধ্যমে নিজের দেশকে ফুটবল বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ভক্তরা সেই দেশের নাম নিতে গেলে তাদের নাম মিলিয়ে বলে। এই যেমন ধরুন, ম্যারাডোনা, মেসি, পেলে, জিদান, ক্রুয়েফ, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কল্যানে যখনই তাদের দেশের নাম কোন আলোচনায় আসে তখনই তাদের নামই উঠে আসে। তেমনই এখন রিস্টো স্টোইচকভ, যার নাম বললে বুলগেরিয়ানদের বুক গর্বে ফুলে উঠে।

 

এখনকার ফুটবল ফলোয়ারদের বুলগেরিয়ার ফুটবল ইতিহাস সম্পর্কে কম জানা শোনা থাকতে পারে কারন, এখন ফুটবলের মেজর প্রতিযোগিতা গুলোই তাদের অংশগ্রহণ কালেভদ্রে হয়। আপাতত তাদের ফুটবল ইতিহাস একপাশে থাকুক এই নিয়ে পরবর্তীতে আসছি।

 

সেই বুলগেরিয়া থেকেই বিশ্ব ফুটবলে অন্যতম সেরা প্লেয়ার এবং স্ট্রাইকার হিসেবে উঠে আসেন রিস্টো। তার কল্যানে ফুটবল মানচিত্রে হারিয়ে যাওয়া বুলগেরিয়া আবার স্থান পায়।

 

এই বুলগেরিয়ান তারকার জন্ম ১৯৬৬ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি, বুলগেরিয়ার প্লোভডিভ শহরে।

 

ফুটবল জগতের প্রথম ক্লাব ছিল নিজের জন্মস্থানের ক্লাব মারিতসা প্লোভডিভ। যোগদেন তাদের যুব দলে। সেখান থেকে যান আরেক দেশীয় ক্লাব হেব্রোসে সাল তখন ১৯৮২।

 

এর পর ২ বছর বাদে ১৯৮৪ সালে ফ্রি ট্রান্সফারে নাম লিখান বুলগেরিয়ার অন্যতম বড় ক্লাব সিএসকেএ সোফিয়াতে। এইখানে খেলার সময়ই তার জাত চেনান সবাইকে নজরে পড়েন ইউরোপের সব বড় বড় ক্লাবে। ১৯৯০ সালে ক্লাব থেকে বিদায় নেয়ার সময় দলটির হয়ে জিতেছেন ৩ বার বুলগেরিয়ান লিগ, ৪ বার বুলগেরিয়ান কাপ, ১ বার বুলগেরিয়ান সুপার কাপ।

 

তার এমন প্যারফমেন্স দেখে তার উপর চোখ যায় বার্সেলোনার গডফাদার খ্যাত এবং সেসময়ে দলটির কোচ ইয়োহান ক্রুয়েফ। ফলাফল ১৯৯০ সালে তাকে ৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনে নেয় ব্লাউগ্রানারা। তিনি ছিলেন ক্রুয়েফের ড্রিম টিমের অন্যতম সেনানী। পরিসংখ্যানও তার প্রমান দেয়, কাতালানদের হয়ে খেলেন ২৫৫ ম্যাচ যাতে ১১৭ গোলের পাশাপাশি করেন ২৬ এসিস্ট। শিরোপা হিসেবে আছে, ৫ বার লা লিগা, ১ বার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা, ৩ বার উয়েফা সুপার কাপ, ২ বার কোপা ডেল রে, ৬ বার স্পানিশ সুপার কাপ।

 

বার্সেলোনা ছাড়ার পর এর পর খেলেন ইতালি, জাপান, সৌদি আরব এবং আমেরিকা তে।

 

রিস্টোকে নিয়ে কথা বললে তার জাতীয় ফুটবল দল নিয়ে কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। এই স্ট্রাইকার দেশের হয়ে খেলেন ৮৩ ম্যাচ যাতে ৩৭ গোলের পাশাপাশি আছে ৭ এসিস্ট।

 

লিখার শুরুতেই বলেছিলাম তার দেশের ফুটবল ইতিহাসের কিছু অংশ। এখন চলুন সেটাকে এইখানে মিলানো যাক। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ, সেবার বুলগেরিয়া খেলে বিশ্বকাপ, কিন্তু ব্রাজিল, ইতালির, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনার মত দল নিয়ে যত কথা হয়েছে তাদের নিয়েছে খুব কমই।

 

তার উপর বাছাইপর্বে এক গ্রুপে ৬ দল একসাথে ছিল, সেখানে তাদের সাথে এক গ্রুপে ফ্রান্স, সুইডেন থাকাতে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ ছিল কমই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা পায় তারা। কিন্তু সেম গ্রুপে আর্জেন্টিনা থাকায় তাদের নিয়ে কেউ খুব একটা আলোচনা করে নাই কিন্তু সবাইক চমকে দিয়ে ২য় রাউন্ডে যায় তারা। সেখানে প্রথম ম্যাচেই তারা ২-০ গোলে হারে নাইজেরিয়ার কাছে। কিন্তু পরের ম্যাচ গুলোয় গ্রিসের বিপক্ষে ৪-০ (রিস্টোর ২ গোল), এবং আলবিসেলেস্তের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পায় ( রিস্টোর ১ গোল)। এতে পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়। পরের রাউন্ডে মেক্সিকোর বিপক্ষে তার দল জয় পায় পেনাল্টি শ্যুটআউটে। (সেখানেও তার ১ গোল)। কোয়ার্টারে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি কে তার দল হারায় ২-১ গোলে। ফ্রি-কিক থেকে নিজে করেন নান্দনিক একটা গোল। তবে সেমিতে যেয়ে থামতে হয়। ব্যাজিওর ম্যাজিকে।

R

কার্টেসীঃ গোল ডট কম

১৯৯৪ বিশ্বকাপে, ৭ ম্যাচ করেন ৬ গোল। জিতেন বিশ্বকাপ গোল্ডেন বুট।

 

ব্যাক্তিগত অর্জন হিসেবে আছে, ব্যালন ডিওর, যেটি জিতেন ১৯৯৪ সালে। এছাড়া ৫ বার বুলগেরিয়ান ফুটবলার অফ দ্যা ইয়ার পুরস্কার জিতেন।

 

ছিলেন মূলত স্ট্রাইকার, কিন্তু তার সৃজনশীলতার জন্য তাকে এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে, আবার খেলতে পারতেন উইংগার হিসেবেও। তিনি ছিলেন ভালো পেনাল্টি এবং ফ্রি কিক টেকার। তার পাসিং আর ক্রসিং ছিল অনন্য।

 

গোলপোস্টের সামনে ঠান্ডা মাথার এই মানুষ, হয়ে যেতেন মাথা-গরম, বিপক্ষ প্লেয়ার, রেফারিদের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পরতেন। এই নিয়ে ঘটনাও আছে অনেক।

 

তবে সব কিছু ছাপিয়ে খেলার মাঠে তার অর্জনগুলো তার জন্য সম্মান আর ভালোবাসা দুটোই প্রাপ্য।

 

২০০৪ সালে বুলগেরিয়ার ৫০ বছরের ইতিহাসের সেরা ফুটবলারের খেতাব জিতেন তিনি।

 

তার কল্যাণে বুলগেরিয়াকে সবাই চিনেছে। এখনো তার দেশের সেরা প্লেয়ার হিসেবে তাকে গন্য করা হয়। তার অবসরের পর তার মত সুপারস্টার আর বুলগেরিয়াতে আসে নাই, খুব জলদিই যে তার মত আবার কেউ আসবে তার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।