ফিলিপ্পো ইনজাঘির মিলান ক্যারিয়ারের সেরা ৫ স্মরণীয় মূহুর্ত
পোস্টটি ৫৬১ বার পঠিত হয়েছেআজ “সুপার পিপ্পো” খ্যাত এসি মিলানের সাবেক স্ট্রাইকার ফিলিপ্পো ইনজাঘি ৫০ বছর পূর্ণ করলেন। মিলানের হয়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য সকল ট্রফিই জিতেছেন। মিলানের হয়ে ইউরোপিয়ান সকল প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। তাই তার জন্মদিন উপলক্ষে ২০২৩-২৪ মৌসুম শুরুর আগে সুপার পিপ্পোর মিলানের ক্যারিয়ারের সেরা পাঁচটি মুহূর্ত স্মরণ করা যাক।
সম্মানিত উল্লেখ-
*২০০৭ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, ফাইনাল
মিলান ২০০৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের দরুন পরবর্তীতে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। সেমিফাইনালে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী জাপানিজ ক্লাব উরাওয়া রেড ডায়মন্ডসকে হারানোর পর ইয়োকোহামায় আর্জেন্টিনার জায়ান্ট বোকা জুনিয়র্সের মুখোমুখি হয় রোসোনেরিরা। ইনজাঘি ম্যাচের উদ্বোধনী গোলটি করেন। তার অসাধারণ রানের জন্য কাকা তাকে অনসাইডে খেলতে বাধ্য হন এবং গোলরক্ষক মাউরিসিও কারান্টাকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান। ৭১তম মিনিটে আবারও কাকার অ্যাসিস্টে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন ইতালির সাবেক এই ফুটবলার।
*ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ
২০১২ সালের ১৩ই মে ইনজাঘি নোভারার বিপক্ষে লিগ ম্যাচে শেষবারের মতো মিলানের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। ক্লারেন্স সিডর্ফের চমৎকার লব বল বুক দিয়ে রিসিভ করে সাইড ফুট ব্যবহার করে জালে জড়ান পিপ্পো এবং মিলানের জয় নিশ্চিত করেন। এর মাধ্যমে সান সিরোতে তিনি ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। এটি ছিল মিলান জার্সিতে তার করা শেষ গোল। দুই মাস পরে, ইনজাঘি খেলোয়াড় হিসেবে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং কোচ হিসেবে দল পরিচালনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
৫. ২০০৬-০৭ ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, কোয়ার্টার ফাইনাল, প্রতিপক্ষ-বায়ার্ন মিউনিখ
২০০৫-০৬ মৌসুমে লিগে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর স্কুডেট্টো জয় থেকে ছিটকে যায় মিলান। ৩০ পয়েন্ট কাটার আগে মিলান ৮৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষে ছিল এবং সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। তবে লীগ শেষে প্রথম স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে অবনমিত হওয়ার শর্তে তারা যোগ্যতা অর্জন করেছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের 'এইচ' গ্রুপের শীর্ষে থাকা রোসোনেরিরা রাউন্ড অফ সিক্সটিনে মুখোমুখি হয় স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকের। দ্বিতীয় লেগে অতিরিক্ত সময়ের গোলে সেল্টিককে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হয় কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। প্রথম লেগে ড্যানিয়েল ফন বুয়েটেন দুটি গোল করেন যার মধ্যে একটি গোলও ছিল আবার স্টপেজ টাইমে। তার এই গোল ম্যাচে ২-২ গোলের সমতা এনে দেয় এবং বায়ার্নকে অ্যাওয়ে গোলে এগিয়ে নেয়। তবে বায়ার্ন তাদের ঘরের মাঠে মিলানকে আটকাতে ব্যর্থ হয়। শুটিং লেন তৈরি করে সিডর্ফ মিলানকে ১-০ গোলে এগিয়ে নেয় যা অলিভার কান ডাইভ দেওয়ার পরেও রুখতে ব্যর্থ হন। মাত্র চার মিনিট পরে, সিডর্ফ ইনজাঘিকে একটি সুন্দর ব্যাক হিল পাস দিয়েছিলেন। পিপ্পো যথারীতি সন্দেহজনকভাবে অফসাইড ছিলেন। ইনজাঘি ঘুরে নিজের প্রথম ছোঁয়ায় কানের ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান। বায়ার্ন সমর্থকদের উচ্ছ্বাস কেড়ে নিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে তিনি তার ট্রেডমার্ক উদযাপন শুরু করেন।
৪. ২০০২-০৩ ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, গ্রুপ-জি, প্রতিপক্ষ ডেপোর্তিভো লা করুনা
মিলান ২০০২-০৩ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ জি-তে লা লিগার ক্লাব দেপোর্তিভো লা করুনার সাথে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছিল। তবে গোল পার্থ্যকের কারণে মিলান গ্রুপের শীর্ষে থেকে গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে যায়। জি-গ্রুপের এই দুই শীর্ষ দল যখন স্পেনে মুখোমুখি হয়েছিল তখন ডিয়াভালোরা ডেপোর্তিভোকে ৪-০ গোলে হারায়। তখনকার এই স্প্যানিশ জায়ান্টদের ইনজাঘি প্রায় একাই ধসিয়ে দেন, করে বসেন হ্যাটট্রিক। ইনজাঘির এই হ্যাটট্রিক ছিল বেশ উপভোগ্য। যার দুইটি গোল ছিল চোরাশিকারির মতো এবং বাকি গোলটা ছিল সময়োপযোগী রানের সাথে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ের সমন্বয়। সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টারকে পরাজিত করে এবং ফাইনালে জুভেন্টাসকে পেনাল্টি শ্যুটআউটে হারিয়ে সেবার টুর্নামেন্ট জিতেছিল মিলান।
৩. ৩০ গোলের মৌসুম
আজকাল, এক মৌসুমে ৩০ গোল করা তুলনামূলকভাবে সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু সেরি এ-তে এখনও এটি করা বেশ মুশকিল। ইনজাঘি লিগ এবং ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৯ ম্যাচে ৩০ গোলের কোটা পূরণ করেন। তবে এটি তার ক্যারিয়ারের জন্য চিত্তাকর্ষক অর্জন ছিল। ২০০২-০৩ সিরি-এ তে ১৭ গোল করার মাধ্যমে তিনি ছিলেন লীগের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলস্কোরার। তার আগে ছিল শুধু ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরি (২৪ গোল) এবং আদ্রিয়ান মুতু (১৮ গোল)। তবে কোনো খেলোয়াড়ই পিপ্পোর ৩০ গোলের মাইলফলক অতিক্রম করতে সক্ষম হননি। তিনি ১৬ টি ইউরোপীয় ম্যাচে ১৩ টি গোল করেছিলেন এবং সেই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০ গোল করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। তার আগে ছিল কেবল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডাচ স্ট্রাইকার রুড ভ্যান নিস্টেলরয়। ইনজুরি তার ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এসে বেশ ভুগিয়েছিল। যদিও তিনি আর কখনও এক মৌসুমে ১৮ টির বেশি গোল করতে পারেননি, তবে দুর্দান্ত গোল-স্কোরার হিসাবে তার বেশ খ্যাতি রয়েছে।
২. ২০০৯-১০ ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, গ্রুপ-জি, প্রতিপক্ষ-রিয়াল মাদ্রিদ
ইউরোপের সবচেয়ে সফল দুই দল আয়াক্স ও রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে গ্রুপে থাকা মিলানকে শেষ ষোলোর যোগ্যতা অর্জনে সেবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট পাওয়ার পর সান সিরোতে ফিরতি লেগে মাদ্রিদের বিপক্ষে ড্র অথবা জয়ের প্রয়োজন ছিল মিলানের। প্রথমার্ধের শুরুতে লস ব্লাঙ্কোসকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন গঞ্জালো হিগুয়াইন। মিলান ম্যাচে সমতা আনতে না পারায় ৬০তম মিনিটে রোনালদিনহোর পরিবর্তে ইনজাঘিকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি। মাঠে নামার ১০ মিনিটের মধ্যেই ইকার ক্যাসিয়াসকে বোকা বানিয়ে জ্বালাতান ইব্রাহিমোভিচের ক্রস থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান পিপ্পো। ৭৮তম মিনিটে জেনারো গাত্তুসোর ভাসানো বল অফসাইড পজিশনে থাকা ইনজাঘির কাছে আসে। এগিয়ে আসা ক্যাসিয়াসকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান পিপ্পো। এটি নিসন্দেহে সন্দেহজনক গোল ছিল কারণ স্ট্রাইকার স্পষ্টতই অফসাইড ছিল। অতিরিক্ত সময়ে পেদ্রো লিওন সমতা ফেরালেও শক্তিশালী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ১০ মিনিটের ব্যবধানে ইনজাঘির দুটি গোল ইউরোপের সবচেয়ে বড় মঞ্চে উজ্জ্বল হওয়ার প্রবণতাকে প্রমাণ করে।
১. ২০০৬-০৭ ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ- লিভারপুল
এটা কি অন্য কিছু হতে পারে? ২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালটি সমস্ত মিলানিস্তিদের জন্য একটি তিক্ত স্মৃতি হিসাবে রয়ে গেছে কারণ লিভারপুলের বিপক্ষে মিলানের দ্বিতীয়ার্ধে পতন পুরানো এক প্রবাদকে মনে করিয়ে দেয়, "এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি শেষ নয়।" ইস্তাম্বুলের সেই অলৌকিক ম্যাচের দু'বছর পরে মিলান আবারও ফাইনালে উঠেছিল এবং একই লিভারপুল দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মুখিয়ে ছিল। কাকা, আন্দ্রেয়া পিরলো, মাসিমো আমব্রোসিনি, জেনারো গাত্তুসো, ক্লারেন্স সিডর্ফ, আলেসান্দ্রো নেস্তা, দিদা এবং পাওলো মালদিনির মতো ক্লাবের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকাদের নিয়ে গঠিত মিলান দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ইনজাঘিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। হাফ টাইমের হুইসেল বাজানোর ঠিক আগে আন্দ্রে পিরলো ১৮ গজ দূর থেকে বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি-কিক মারার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। তিনি বলটি মানবদেয়ালের পাশে দিয়ে মারতে গেলে ইনজাঘি তা বুকে দিয়ে রিসিভ করেন এবং পেপে রেইনাকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান। ৮৪তম মিনিটে কাকার বাড়ানো বল থেকে লিভারপুলের অফসাইড ফাঁদ কে পরাজিত করে ইনজাঘি। রেইনাকে কাটিয়ে গোল করে মিলানের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করেন পিপ্পো। ৮৯ তম মিনিটে ডার্ক কুয়েট একটি গোল করেন কিন্তু পিপ্পোর জোড়া গোলে মিলান তাদের ইতিহাসের ৭ম ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জেতে। ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্সে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার পান “সুপার পিপ্পো”।
- 0 মন্তব্য