একটি প্রকাশঅযোগ্য বিশ্বকাপ পোস্ট মর্টেম (প্রথম পর্ব)
পোস্টটি ৩৮২ বার পঠিত হয়েছেশেষ পর্যন্ত শ্রীলংকাকে টাইম আউট করে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার টিকেট যোগাড় করে ফেলেছে। বিশ্বকাপকে আর কি করে ব্যর্থ বলি? সভাপতি সাহেব আপাকে ফোনে নিশ্চয়ই ওয়েষ্ট ইন্ডিজ আর শ্রীলংকার মত সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পিছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা আদায় করে নেয়ার সুখবর দিয়ে দিয়েছেন। যারা তারপরও অহেতুক সমালোচনা করবে, তারা কি ক্রিকেট বোঝে? আপা নিজেও যথেষ্টই ভুক্তভোগী। চারদিকে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেয়ার পরও দেশি-বিদেশি অনেক চক্রান্তকারীর সমালোচনা তাঁর সরকারেরও পিছু ছাড়েনি। সুতরাং তিনি ছোট ভাইয়ের দুঃখ বুঝে তাঁর মাথায় হাত রাখবেন। এখন সভাপতি সাহেবকে কিছু কোচ, নির্বাচক ছাটাই করলেই চলবে। আপাকেও দেখিয়ে দেয়া যাবে তাঁর কর্মযজ্ঞ। সাঁপ মরলো, লাঠিও অক্ষত থাকল।
যে প্রেক্ষাপটে ছিলাম, ৭ ম্যাচে ৬ পরাজয়ে ইজ্জত হারিয়ে তলানীতে থাকা ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের নিজ নিজ সপ্তম ম্যাচ পরবর্তী উপস্থাপনায় অধিনায়ক বাটলার ও সাকিবকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল একটি অভিন্ন প্রশ্ন- “এই অবস্থা কেন হলো?” দুই অধিনায়কই চোখে মুখে রাজ্যের বিষ্ময় ফুটিয়ে বললেন, কেন এরকম হলো, তা তাদের জানা নাই। বাটলারের উত্তরে কৃত্তিমতা খোঁজাটা ঠিক হবেনা। শুধু ইংরেজ দলপতি কেন, ইংল্যান্ডের এহেন ভরাডুবি- বিশ্বকাপ ভুলে ২ বছর পরে অনুষ্ঠিতব্য মাঝারী মানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ গ্রহণের জন্য লড়াই করার এই বাস্তবতা কল্পনা করেনি ক্রিকেট বিশ্বের পাড় কোন মাতালও। তাই অসহায়ত্ব অনুভব করা বাটলার যখন বলছিলেন, এই ভরাডুবির কারণ তাঁর জানা নাই, তিনি যে মিথ্যা বলেননি সেটা বিশ্বাস করতে সর্বোচ্চ সন্দেহ বাতিকগ্রস্থেরও অসুবিধা হওয়ার কথা না। তবে একই কথা সাকিবের ক্ষেত্রে বলা যাচ্ছেনা। বাজির দরে অন্যতম তলানীতে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভালো করার ব্যাপারে আশার বাণী শোনায়নি কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্লেষক। তাই খানিকটা অপ্রাংগিক হলেও বলে রাখা ভাল- ক্রিকেট বহির্বিশ্বে না হলেও বাংলার কিছু স্বনামধন্য মিডিয়া ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব অবশ্য বিশ্বাস করতেন বাংলাদেশ ভাল করবে। এই যেমন তাঁদের অন্যতম সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার এবং অভিজ্ঞ ধারাভাষ্যকর জনাব আতাহার আলী খান প্রাকবিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচের কমেন্ট্রি বক্সে কোন রাখ ঢাক না রেখেই সেমিফাইনালের দৌড়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে রেখেছিলেন নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান বা দঃ আফ্রিকার মতো জাদরেল পরাশক্তি থেকেও। তিনি অবশ্য একা নন। দেশের প্রভাবশালী মিডিয়ার কতিপয় ক্রিকেট বিশেষ “অজ্ঞ” ব্যক্তিত্ব প্রায় বছর দেড়েক আগে থেকেই তাদের টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এবারে বিশ্বকাপ যাত্রাকে সম্ভাব্য শিরোপা জয়ের মিশন হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে এসেছেন। হাইপের শুরুটা সেখানেই। যদিও বলাই বাহুল্য সুপার লীগের ফাঁক ফোকর কাজে লাগিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকার পরও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা নিয়ে তাদের বাক বাকুম ছাড়া বাজির দর বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিডিয়াতে সম্ভাব্য শিরোপা প্রত্যাশী হিসেবে বাংলাদেশ কোন আলোচনাই জমাতে পারেনি। আবেগী আতাহারের দেশপ্রেম তাঁর পেশাদারী বিশ্লেষণকে অতীতেও কখনও ছাপিয়ে যেতে পারেনি, সেটা সবারই কম বেশি জানা। তাছাড়া ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ক্রিকেট বিশ্লেষকের ছদ্মবেশধারী কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রধান লক্ষ্য যে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন নয়, বরং অতিরঞ্জিত ও মুখরোচক প্রচারে ভাইরাল হয়ে ভিউ বাড়িয়ে টাকা কামানো, সেটাও কারও জানতে বাকি নেই।
ফিরে যাই সাকিব-বাটলারের অভিন্ন উত্তরে। বাটলারের মতো সাকিবও বলেছেন দলের ব্যর্থতার কারণ তাঁরও জানা নাই। তবে বাটলারের মত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছেনা তিনি সত্য বলেছেন কিনা। সত্য না বলে থাকলেও তাঁকে সম্ভবত দায় দেয়া যায়না। বিশেষ করে অধিনায়কের মতো দায়িত্বশীল পদে থাকা কারও জন্য। সাকিব যেহেতু বলতে চাননি অথবা বলতে পারেননি, সত্যিটা আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।
এই অবস্থা কেন হলো? এই ব্যর্থতার কারণ কি?
জয়ের সম্ভাবনা ক্ষণিকের জন্য জাগাতে না পারা প্রতিটি পরাজয়, অসহায় আত্মসমর্পণের পর চায়ের দোকান থেকে অফিস পাড়া, মিডিয়া থেকে সোস্যাল মিডিয়া- সমালোচনা আর ট্রলিং করা হয়েছে অসংখ্য ট্যাকটিকাল ইস্যু নিয়ে। টসে জিতে কেন ব্যাটিং না নিয়ে বোলিং নেয়া হলো? উদোকে না নিয়ে কেন বুদোকে খেলানো হলো? ব্যাটিং অর্ডারে বুদোকে কেন উদো’র আগে রাখা হলো? পাশাপাশি দলীয় কোন্দলের গুঞ্জন, সাংবাদিক অপমান, বড় তামিমের অনুপস্থিতি, ছোট তামিমের উপস্থিতি, সাকিবের ইগো আর আস্পর্ধা দেখানো গোয়ার্তুমি, লিটনের বারংবার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, হাতুরা’র স্বেচ্ছাচারিতা, বোর্ড কর্তাদের স্বার্থান্বেষী পলিটিক্সের মত মশলার তো কখনোই অভাব থাকেনা জগাখিচুড়ি রান্নার জন্য। সেই রেসিপিতে থাকা উপকরণ কোনটাই হয়তো ভুল নয়। তবে এটা ভেবে নেয়াটাই সবচেয়ে বড় ভুল যে টসে জিতে ব্যাটিং নিলেও ম্যাচের ফলাফল তাতে উল্টে যেত। যেমন উল্টে যেতনা উদোর জায়গায় বুদোকে নিলে কিংবা বুদোর জায়গায় উদোকে ব্যাটিং এ পাঠালে। বড় তামিম এর আগেও অনেক বিশ্বকাপ খেলেছেন। সুতরাং এবার তিনি থাকলে শাহীন শাহ আফ্রিদি বা যশপ্রীত বুমড়াহদের চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলতেন এটা ভাবারও কিছু নেই। সকল ট্যাকটিকাল সিদ্ধান্ত কখনোই একসাথে সফল হতে পারেনা। আর আজকের সফল ট্যাকটিক্স আগামীকালও সঠিক হবে ব্যাপারটা এরকম সরল অংক নয়। হাতুড়ার আগেও মোটা মাইনের কোচ ছিলেন। টাকার মান অবমূল্যায়ন হওয়ায় হয়তো হাতুরার বেতন কিছু বেড়েছে, এই যা পার্থক্য। মাঠের ফলাফলে সেই কোচরাও স্বেচ্ছাচারী হাতুরাকে ছাড়িয়ে যাননি। হাতুরাকে চাইলে পরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত রেখে দিন, না চাইলে এক্ষুণি ঝেটিয়ে বিদায় করুন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে লাউ ছিল, সেই কদুই থাকবে, কুমড়ো হয়ে যাবেনা।
বিজ্ঞ পাঠক, এ পর্যায়ে আসুন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজি। উত্তরগুলো জানা প্রয়োজন পোস্ট মর্টেমের ফলাফল জানতে। খুব ভাল হতো যদি আমাদের বোর্ড সভাপতি আর তাঁর দলবলকে এই প্রশ্নগুলো করা যেত। কিন্তু এই অভাজনের সেই ক্ষমতা নেই।
(পরের অংশ দ্বিতীয় পর্বে)
- 0 মন্তব্য