স্বপ্নের এক দিন।
পোস্টটি ১১৫৭ বার পঠিত হয়েছেএই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফ্রেড স্পফোর্থ। ক্লাবের সর্বশেষ সদস্য স্টুয়ার্ট ব্রড। ভুল বলা হলো। ব্রড তো আগে থেকেই ছিলেন। সর্বশেষ সদস্য বাংলাদেশের সোহাগ গাজী।
হ্যাট্রিক। একজন বোলারের চির আরাধ্যের বস্তু। চির আরাধ্যের বস্তু বলেই হয়তো টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৮ বছরের জীবনে হ্যাট্রিক দেখা গেছে মাত্র ৪১ বার। হ্যাট্রিক করেছেন ৩৭ জন। বুঝতেই পারছেন কয়েকজন বোলারের নামের পাশে লেখা আছে একাধিক হ্যাট্রিক। এমনিতেই হ্যাট্রিক করা এভারেস্ট জয়ের চেয়ে কোন অংশে কম কঠিন নয়। তালিকার ৩৩ জন যদি এভারেস্ট জয় করে থাকেন তাহলে বাকি ৪ জন জয় করেছেন ‘সেভেন সামিট’। কারণ তাঁদের নামের পাশে লেখা ২টি করে হ্যাট্রিক। সেই ৪ জনের নাম হিউ ট্রাম্বল, ওয়াসিম আকরাম, স্টুয়ার্ট ব্রড এবং টমাস জেমস ম্যাথুজ।
হিউ ট্রাম্বল এবং ওয়াসিম আকরামকে নিয়ে বলার কিছু নেই। অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড যদি তাঁদের লিজেন্ডদের তালিকা করা শুরু করে তাহলে সেই তালিকায় ট্রাম্বল এবং আকরামের নাম থাকবেই থাকবে। ট্রাম্বলের ব্যাপারে একটু জানিয়ে রাখি, ৩২ টেস্ট খেলে এই অফস্পিনারের উইকেট সংখ্যা ১৪১। তাঁর সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত ছিল যে তিনি যেকোনো ধরণের পিচে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। মুরালিধরন সম্পর্কেও এরকম একটা কথা প্রচলিত ছিল। তাঁর সম্পর্কে বলা হতো, তিনি কাঁচের উপরও বল ঘুরাতে পারবেন। যাই হোক, ভিন্ন যুগের খেলোয়াড়দের খেলার তুলনা করা যায় না, করা উচিতও না। তারপরেও যদি করি, মুরালির সমান ২৩০ ইনিংসে বল করলে হিউ ট্রাম্বলের উইকেট সংখ্যা হত প্রায় ৬০০’র কাছাকাছি। ট্রাম্বল যে লিজেন্ড এতে নিশ্চয়ই আর কোন সন্দেহ নেই আপনাদের. স্টুয়ার্ট ব্রড লিজেন্ড হতে পারবেন কিনা, তা বলবে সময়।
বাকি থাকেন টমাস জেমস ম্যাথুজ। এই ভদ্রলোককে চিনি না। লিজেন্ড তো পরের কথা, কোনভাবেই পরিচিত নাম না। হ্যাট্রিক করতে লিজেন্ড হওয়া জরুরী না। তবে দুবার যিনি হ্যাট্রিক করেছেন, হি হ্যাড সামথিং স্পেশাল। ক্রিকইনফোতেও ঢুকে পেলাম একেবারেই সাদামাটা এক ক্যারিয়ারের মালিককে। ৮ টেস্টে ২৬.১৮ গড়ে ১৮ উইকেট ১৭.০০ গড়ে ১৫৩ রান, ৭টি ক্যাচ। তাহলে? তাঁর স্পেশালিটি কি?
খোঁজা শুরু করলাম। খুঁজতে খুঁজতে যা পেলাম তাঁর সম্পর্কে তা বিস্ময়কর বললেও কম বলা হয়ে যায়। ম্যাথুজের দুটো হ্যাট্রিক একই টেস্টে।
বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়, ম্যাথুজের দুটো হ্যাট্রিক একই দিনে।
২৮ মে, ১৯১২ সাল। এখনকার যেমন ৩ দেশকে নিয়ে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ হয়, তখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে ত্রিদেশীয় টেস্ট সিরিজ হচ্ছিলো ইংল্যান্ডে। প্রথম ম্যাচ ছিল অস্ট্রেলিয়ার সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার। সেই ম্যাচেই ম্যাথুজ আগুনে ছারখার হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
৩ দিনের সেই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথমে ব্যাট করে তোলে ৪৪৮ রান। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ৭ উইকেটে ২৬৫, ঠিক তখনই ম্যাথুজ নামক ম্যাজিশিয়ানের আগমন। রোলাণ্ড বিউমণ্ড, সিড পেগলার এবং টম ওয়ার্ডকে আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস গুটিয়ে দিলেন ২৬৫ রানেই। সেই সাথে তুলে নিলেন নিজের প্রথম হ্যাট্রিক।
১৮৩ রানে পিছিয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আবার ব্যাটিঙে নামলো। নেমেই পড়লো ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে। স্কোর যখন ৫ উইকেটে ৭০ তখন ম্যাথুজ তার টুপি থেকে ম্যাজিকের ২য় অংশ বের করলেন। হার্বি টেলরকে করলেন বোল্ড, রেগি শোয়ার্যকে করলেন কট অ্যান্ড বোল্ড। আবারও ম্যাথুজের হ্যাট্রিকের মুখে ব্যাট করতে নামলেন টম ওয়ার্ড। তাকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে একই দিনে দ্বিতীয় হ্যাট্রিক পূর্ণ করলেন ম্যাথুজ।
আচ্ছা, ১৯১২ সালের ২৮ মে’র সূর্যটা কি টমাস জেমস ম্যাথুজের জন্যই উঠেছিলো?
এই কীর্তির পরে ম্যাথুজ কেমন খেলোয়াড় ছিলেন তা আর বিচার না করলেও চলে। হাফ সেঞ্চুরি,সেঞ্চুরি,ইনিংসে ৫ উইকেট,ম্যাচে ১০ উইকেট অনেক দেখেছে ক্রিকেট। হ্যাট্রিক অনেক না হলেও কম দেখা হয়নি।
কিন্তু এক টেস্টে দুই হ্যাট্রিক!!
এক দিনে দুই হ্যাট্রিক!!!
টমাস জেমস ম্যাথুজ, আপনি অমরত্বের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন!!!!!!
- 0 মন্তব্য