• বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর
  • " />

     

    ওয়েস্ট ইন্ডিজে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের পেছনে 'অবদান' মাশরাফির

    ওয়েস্ট ইন্ডিজে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের পেছনে 'অবদান' মাশরাফির    

    টেস্ট সিরিজে হাবুডুবু খেল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সাদা পোশাকে বাংলাদেশ ছিল যেন সেই ছাত্রের মতো, যে এক পরীক্ষার দিনে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে আরেক পরীক্ষার। শেষে গুবলেট পাকিয়েছে সব। আর একেবারে শেষের দিকে গিয়ে, পূর্বজ্ঞানে ভিত্তি করে স্পিনে একটু সাফল্য। ফলটাও তাই অনুমিত এমন পরীক্ষা দেওয়ার পর- হোয়াইটওয়াশ। 

    পরের পরীক্ষাটা তাই বাংলাদেশের জন্য ছিল বাড়তি চ্যালেঞ্জ। সে বিষয়ে বাংলাদেশ ভাল করে আসছে অনেকদিন ধরেই, তবে আগের পরীক্ষার বিভীষিকাই যেন কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সেই বাংলাদেশকে নিজের স্বচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে বদলে দিলেন একজন- অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। টেস্টের বিভীষিকা ভুলে বাংলাদেশ যে ওয়ানডে সিরিজ জিতল, এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান অধিনায়কেরই, বলছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। 

    গায়ানায় প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দিয়েছিল তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের দ্বিতীয় উইকেটে ২০৭ রানের রেকর্ড জুটিই। তবে তার আগেও দলের মাঝে জয়ের উদ্দীপনাটা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফিই, “টেস্ট সিরিজের মানসিকভাবে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। আমাদের জন্য ওয়ানডে সিরিজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং আমরা জানতাম ওয়ানডে ফরম্যাটে আমরা সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে মাশরাফি ভাইয়ের দলে যোগ দেয়া বড় অবদান ছিল।” 

    তামিম বলছেন, দলের পরিবেশটাই বদলে দিয়েছিলেন মাশরাফি, “তিনি হয়তো অন্যের হয়ে ব্যাটিং ও বোলিং করে দেননি। কিন্তু তিনি দলের অভ্যন্তরীন পরিবেশ পরিবর্তন করতে অনেকে সাহায্য করেছেন। একটা বাজে টেস্ট সিরিজের পর ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেক নেতিবাচক মনোভাব থাকে, পরিস্কার মনোভাব থাকে না। তিনি যেই ইতিবাচক মনোভাবটা নিয়ে এসেছেন, সেটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটা বড় কারন ছিল।”

    “এরপর যেভাবে করে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটা খেললাম, কঠিন উইকেটে আমরা কোন সময় হাল ছেড়ে দেইনি। কষ্ট করে উইকেটে ছিলাম আমরা। সেটার ফলাফল পেয়েছি আমরা। এরপর স্বভাবতই দলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমার কাছে মনে এমন টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ফিরে আসাটা বিশেষ একটা পারফরম্যান্স ছিল।”

    অবশ্য প্রথম ম্যাচ জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচও জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলতে পারত বাংলাদেশ। এবার ৩ রানে হেরে সেটা হলো না। আরেকটি স্বল্প ব্যবধানে হার, আরেকবার মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া। এবারও ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন মাশরাফি, “আমরা চাচ্ছিলাম প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজটা জয় করে নিতে। কারন গায়ানার উইকেট আমাদের হয়ে কথা বলছিল। বল স্পিন করছিল, মাঠ বড় ছিল। সেন্ট কিটস অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনুকূলে ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচ হারার পর মাশরাফির ভাইসহ বসেছিলাম, তার অনেক বড় ইনপুট ছিল। আমরা যদি আগে থেকেই চিন্তা করে নেই যে ওরা আমাদের থেকে এগিয়ে আছে তাহলে আমরা খেলার আগেই হেরে গেছি, তাহলে শেষ ওয়ানডে খেলার কোনো মানে হয় না। আমরা আগে চিন্তা না করে মাঠে পারফর্ম করে দেখাতে চেয়েছি।”

    মাশরাফির অবদানের সঙ্গে তার ও সাকিবের সেই জুটির গুরুত্বটাও অবশ্য বুঝছেন তামিম, “জুটিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমরা টেস্ট সিরিজ থেকে ফিরে আসার জন্য। ওই উইকেটে ব্যাট করা কোনভাবেই সহজ ছিল না। সেই সময় যদি আমি অথবা সাকিব উইকেটটা ছুঁড়ে ফেলতাম, তাহলে বিষয়টা আরও কঠিন হত। কারন অনেক ডট বল হচ্ছিলো। আমাদের মনোযোগ ঠিক ছিল, আমরা জানতাম এই উইকেটে স্কোর বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে টিকে থাকাই রান করার একমাত্র উপায়। আমাদের কেউ একজন যদি আউট হয়ে যেতাম, তাহলে ওই জুটিটাও হতো না আর আমাদের রানটাও বাড়ত না। তখন ম্যাচের গতিপথ ভিন্ন হতে পারত। এই জুটিটা সিরিজ জয় ও টি-টোয়েন্টি জয়ে বড় প্রভাব ফেলেছিল।”

    অবশ্য সাকিব-তামিমের সেই জুটি, পরে তৃতীয় ওয়ানডেতেও তামিমের আরেকটি সেঞ্চুরি, মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ইনিংস, ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মুস্তাফিজের এনে দেওয়া ব্রেকথ্রু- সবকিছুর আগে ছিল মাশরাফির ছড়িয়ে দেওয়া সেই স্বস্তির সুবাতাস, উদ্দীপনার ঝাঁঝ!