• লা লিগা
  • " />

     

    ভ্যালেন্সিয়ায় হোঁচট খেয়ে দুইয়ে নেমে গেল বার্সা

    ভ্যালেন্সিয়ায় হোঁচট খেয়ে দুইয়ে নেমে গেল বার্সা    

    আলাভেসের কাছে গতকাল হেরে গেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চারে থাকা অন্য দুই দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ আর সেভিয়া অবশ্য জিতেছে নিজেদের ম্যাচ। কিন্তু আজ ভ্যালেন্সিয়াকে হারাতে পারলেই এককভাবে টেবিলের শীর্ষে উঠে যেত বার্সেলোনা। কিন্তু টানা দ্বিতীয় মৌসুম মেস্তায়া থেকে জয় নিয়ে ফিরতে ব্যর্থ হল কাতালানরা। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফর্মটা আর লিগেও টেনে আনা হয়নি তাদের, টানা চার লা লিগা ম্যাচে জয়হীন থাকল এর্নেস্তো ভালভার্দের দল। ম্যাচের প্রথম দুই মিনিটেই পিছিয়ে পড়া বার্সাকে আবারও খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছেন সেই লিওনেল মেসিই। ১-১ গোলের ড্রয়ে শেষ হয়েছে ভ্যালেন্সিয়া বনাম বার্সা ম্যাচটি। ৮ ম্যাচ শেষে সেভিয়ার (১৬) চেয়ে ১ পয়েন্ট কম নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে থাকল বার্সা।

    এস্তাদিও মেস্তায়াতে বার্সার মূল একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছিলেন কোচ এর্নেস্তো ভালভার্দে। ক্লেমেন্ত লংলের বদলে জেরার্ড পিকের সাথে নামিয়ে দিয়েছিলেন থমাস ভার্মাইলেনকে। কিন্তু কোচের আস্থার প্রতিদান একেবারেই দিতে পারেননি বেলজিয়ান ডিফেন্ডার। উলটো তার ভুলেই ম্যাচের ২ মিনিটেই পিছিয়ে পড়ে বার্সা। ভ্যালেন্সিয়া অধিনায়ক দানি পারেহোর কর্ণার হেডে ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন তিনি। ভার্মাইলেনের মাথায় লেগে হঠাৎই গতিপথ বদলানো বল হেডে ক্লিয়ার করতে পারেননি পিকেও। ফলাফল? গোলের মাত্র গজ দুয়েক দূরে দাঁড়ানো ভ্যালেন্সিয়ার ডিফেন্ডার এজেকুয়েল গারায় আলতো টাচে বল পাঠালেন বার্সার জালে। একসময় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলা গারায়ের জন্য গোলটা যেন ‘এল ক্লাসিকো’তে গোলের সমতুল্যই। অন্তত তার উদযাপন যেন তা-ই বলে দেয়। ম্যাচের শুরুতেই এমন ভুলে পিছিয়ে পড়ায় কিছুটা মনোবল হারান বার্সার ফুটবলাররা। আর শুরুতেই লিড নিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা ভ্যালেন্সিয়া ফুটবলাররা যেন চেপে ধরেছিলেন রীতিমত। আর সমর্থকদের জোরাল সমর্থনে খেই হারিয়ে ফেলে বার্সার ফুটবলাররা। একাধিক ভুল পাসে ভ্যালেন্সিয়ার জন্যই যেন কাজটা সহজ করে দিচ্ছিলেন তারা।

     

     

    ম্যাচের ৬ মিনিটেই ব্যবধানটা দ্বিগুণ করতে পারত তারা। কিন্তু মিচি বাতশুয়াইয়ের শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার-স্টেগেন। পিছিয়ে পড়ার পর দলকে সমতায় ফেরানোর দায়িত্বটা এরপর যেন নিজের কাঁধেই নিয়ে নেন তিনি। দুর্দান্ত সব ড্রিবল, পাসিংয়ে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বার্সাকে স্বরূপে ফেরাতে থাকেন তিনিই। সফলও হন সে মিশনে। ২৩ মিনিটে সুয়ারেজের সাথে ডিবক্সের বাইরে চমৎকার এক ‘ওয়ান-টু’ করে গোলের প্রায় গজ বিশেক দূর থেকে মেসির শট জড়ায় ভ্যালেন্সিয়ার জালে। লা লিগায় মেসির গোলে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টের রেকর্ডটা এতদিন ছিল দানি আলভেজের (২৬)। রেকর্ডটা আজ নিজের করে নিলেন সুয়ারেজ (২৭)। গত এক দশকে ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে ডিবক্সের বাইরে থেকে সবচেয়ে বেশি গোল মেসির (৫৭)। এরপর থেকেই বার্সার টিকি-টাকার জালে জড়িয়ে যায় ভ্যালেন্সিয়া। প্রথমার্ধে তেমন বলই পায়নি আর তারা।

     

     

    প্রথমার্ধ শেষে বার্সার বল দখল ছিল শতকরা ৭১ ভাগ। পজেশনে এগিয়ে থাকলেও ভ্যালেন্সিয়ার রক্ষণভাগকে আর ভেদ করতে পারেনি ভালভার্দের দল। পিৎজিনি-গারায়দের বিপক্ষে মেসিও আর সুবিধা করতে পারেননি তেমন। মাঝমাঠে তাই কনডগবিয়া-পারেহোদের ফাঁকি দিলেও বারবার ফিরতে হচ্ছিল খালি হাতেই। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে সমতায় ফেরার পর থেকে বাকিটা সময় ছড়ি ম্যাচে ঘুরিয়েছে বার্সাই। দ্বিতীয়ার্ধেও বজায় ছিল সে ধারা। ৫০ মিনিটেই লিডটা নিয়ে নিতে পারত কাতালানরা। কিন্তু ফিলিপ কুতিনিয়োর চমৎকার ‘ট্রেডমার্ক’ বাঁকানো শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন ভ্যালেন্সিয়া গোলরক্ষক নেটো। এর মিনিত চারেক পর মেসির দূরপাল্লার শটটিও ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। ভ্যালেন্সিয়াকে আক্রমণের জোয়ারে ভাসালেও লিড নিতে না পারায় স্বভাবতই কিছুটা অসন্তোষে ভুগতে থাকে বার্সা।

    অসন্তোষটা খুব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ছিল কুতিনিয়োরই। ৫৮ মিনিটে বল দখলের লড়াইয়ে পারেহো তাকে পেছন থেকে টেনে ধরলে ভ্যালন্সিয়া অধিনায়কের মুখে আঘাত করে বসেন তিনি। ‘ভিএআর’ থাকলেও রিভিউয়ের শরণাপন্ন হননি রেফারি। হলুদ কার্ড দেখে সে যাত্রায় বেঁচে যান কুতিনিয়ো। ভিডিও রেফারির সাহায্য নিলে হয়ত লাল কার্ডই জুটত কুতিনিয়োর ভাগ্যে। ম্যাচের বাকিটা সময় যতবার বল পেয়েছেন, প্রতিবারই শুনতে হয়েছে জোর দুয়োধ্বনি। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও মেসিদের আক্রমণের সামনে ইস্পাতদৃঢ় হয়েই ছিলেন গারায়রা। দ্বিতীয়ার্ধে তাই লক্ষ্যে ৫বার শট বা ৭৬ ভাগ বল পজেশন নিয়েও সুবিধা করতে পারেনি ভালভার্দের দল। ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই। গোলের আশায় আক্রমণের ধার বাড়াতে উসমান ডেম্বেলেকেও নামিয়ে দিয়েছিলেন ভালভার্দে। কিন্তু কাজের কাজ আর হয়নি। শেষদিক্ব শত চেষ্টা করেও নেটোকে কোনোভাবেই পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি মেসিরা। শেষমেশ আবারও রিয়ালের পয়েন্ট হারানোর দিকে সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হল কাতালানরা।