• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    অবশেষে জয়ের দেখা পেল রিয়াল মাদ্রিদ

    অবশেষে জয়ের দেখা পেল রিয়াল মাদ্রিদ    

    নিজেদের শেষ ৫ ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। গত ম্যাচে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় গোল না করার 'রেকর্ড'টাও ভেঙ্গে দিয়েছে তারা। আর এক ম্যাচ হারলেই চাকরি হারাচ্ছেন হুলেন লোপেতেগি- গুঞ্জন ছিল এমনটাই। এল ক্লাসিকোর আগে আজ চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের মাঠে তাই ভিক্টোরিয়া প্লজেনের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না রিয়ালের। দেয়ালের পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর কোণঠাসা বাঘের মতই যেন ফিরে আসল তারা। চেক প্রজাতন্ত্রের ক্লাবটিকে ২-১ গোলে হারিয়ে ৫ ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল রিয়াল। 'লস ব্লাঙ্কোস'দের হয়ে নিজের ২০০তম ম্যাচটা জয় দিয়েই স্মরণীয় করে রাখলেন গ্যারেথ বেল। লিওনেল মেসি এবং রাউল গঞ্জালেজের পর একমাত্র ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা ১৪ মৌসুম গোলের রেকর্ড করলেন করিম বেনজেমা।

    মাত্র এক গোলে জিতলেও জয়ের ব্যবধানটা আরও বড় হওয়া উচিত ছিল রিয়ালের। হয়নি নিজেদের ব্যর্থতায়ই। হয়নি নিজেদের স্বার্থপরতার কারণেই। নাহলে শুধুমাত্র প্রথমার্ধ শেষেই তো অন্তত তিন গোলের লিড নিতে পারত রিয়াল। ম্যাচের আগে ইস্কো বলেছিলেন, কোচকে বরখাস্ত করতে হলে তাদের (খেলোয়াড়)দেরও বরখাস্ত করতে ফবে, কারণ খেলার ফলাফলটা তাদের কারণেই হচ্ছে। তাই আজ জয়ের দেখা পেতে লোপেতেগি যতটা উদগ্রীব ছিলেন, ততটাই মুখিয়ে ছিলেন ইস্কোরাও। ম্যাচের শুরু থেকেই রিয়ালের খেলাই যেন বলে দিচ্ছিল তা-ই। দীর্ঘদিন পর রিয়ালের খেলায় দেখা গেছে সেই পুরনো জয়ের ক্ষুধা। ম্যাচের ৫ মিনিটেই রিয়ালকে লিড এনে দিতে পারতেন অধিনায়ক সার্জিও রামোস। কিন্তু টনি ক্রুসের কর্ণার থেকে তার হেড প্রতিহত হয় প্লজেন গোলের বারপোস্টে। শুরু থেকেই প্লজেনকে এভাবে চেপে ধরেছিল রিয়াল। ফলাফলটাও এসেছে প্রায় হাতেনাতেই। ১২ মিনিটে লুকাস ভাজকেজের চমৎকার ক্রসে হেড করে গোল করেন করিম বেনজেমা। এই গোল দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে ৪র্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে গেলেন বেনজেমা (৫৭)। প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটা সময়ই গোলের সুযোগ তৈরি, পজেশন ধরে রাখা- সব দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল রিয়াল। কিন্তু প্রতি-আক্রমণে রিয়ালের রক্ষণভাগকে বেশ ঝামেলায়ই ফেলেছিল প্লজেন। রক্ষণে রাফায়েল ভারানের অভাবটা চোখে পড়েছে বেশ। প্রথমার্ধে ব্যবধান বাড়াতে না পারায় ভাগ্যকে কিছুটা দুষতেই পারে রিয়াল। কিন্তু একইভাবে সমতায় থেকে বা পিছিয়ে পড়ে প্রথমার্ধ শেষ না করায় নিজেদের সৌভাগ্যবানও ভাবতে পারে তারা। কারণ ২২ মিনিটে কেইলর নাভাসকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন প্লজেন স্ট্রাইকার প্রেৎজেলা। এর মিনিট পাঁচেক পর আবারও নাভাসকে একা পেয়ে যান তিনি। কিন্তু এবার অবশ্য তার শট ফিরিয়ে দেন কোস্টারিকান গোলরক্ষক। প্লজেনের এমন সব সুযোগ পাওয়ার কারণে সমগ্র বার্নাব্যু জুড়ে দুয়ো শোনা যাচ্ছিল রিয়াল সমর্থকদের থেকে।

     

     

    সেই দুয়ো গুলোই হর্ষধ্বনিতে পরিণত হয়েছিল ৩৩ মিনিটে। কিন্তু তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। ক্রুসের এক্সমৎকার থ্রু পাস থেকে বেল গোল করলেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোল। ভাগ্যের সাথে রেফারির সিদ্ধান্তও সহায় হয়নি রিয়ালের। ৩৬ মিনিটে ডিবক্সে ভাজকেজকে ফেলে দেন হুবনিক। কিন্তু রিয়ালের ফুটবলারদের জোর আবেদনের মাঝেও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। ৩৮ মিনিটে প্লজেন গোলরক্ষকের ভুলে ডিবক্সে বল পেয়ে যান ইস্কো। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা ক্রুস, বেনজেমাদের পাস না দিয়ে নিজেই চিপ করেন গোলরক্ষককে। কিন্তু বল চলে যায় গোলের বাইরে দিয়ে। ইস্কোর এমন মিসের পর ক্রুস-বেনজেমার হতাশা ছিল সুস্পষ্ট। ক্রুস হতাশ হলেও বেনজেমার এমন অভিব্যক্তি অবশ্য একেবারেই যুতসই নয়। কিন্তু ইস্কোর মিসের মিনিটখানেক পরই একইভাবে ফাঁকায় দাঁড়ানো বেলকে পাস না বাড়িয়ে নিজেই শট নিয়ে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন বেনজেমা। এত সুযোগ পেয়েও মাত্র এক গোলের লিড থাকায় প্রথমার্ধ শেষে দুয়ো শুনেই মাঠ ছাড়তে হয় লোপেতেগির দলকে।

    এক গোলের লিড, আর প্রতি-আক্রমণে প্লজেনের অহরহ সুযোগ পাওয়া- সব মিলিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে ছিল না রিয়াল। গত ম্যাচে রিয়ালের গোলখরা মিটিয়েছিলেন তিনিই। ৫৫ মিনিটে বেলের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাকহিল থেকে নিখুঁত এক চিপে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মার্সেলো। তবে এরপরও হাল ছাড়েনি প্লজেন। আক্রমণ করে গেছে সামর্থ্য অনুযায়ী। ৬২ মিনিটে হুবনিকের দূরপাল্লার শট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নাভাস। থিবো কর্তোয়ার বদলে মূল একাদশে জায়গা পেয়েই যেন নিজ সামর্থ্যের জানান দিয়ে রাখলেন তিনি। ৬৮ মিনিটে একইভাবে মিলান হাভেলকেও ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লিড নেওয়ার পর কেমন যেন মিইয়ে যায় রিয়াল।

     

     

    এই সুযোগেই ৭৮ মিনিটে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় প্লজেন। চমৎকার এক 'ওয়ান-টু' করে নাভাসকে পরাস্ত করেন রোসোভস্কি। গোল হজমের পর যেন আরও অধৈর্য হয়ে উঠে রিয়ালের সমর্থকেরা। শেষ ১০ মিনিটে রাদের দুয়োর কারণে মাঠে কান পাতা দায় হয়ে পড়েছিল। জিতলেও খুব একটা স্বস্তিতে থাকতে পারছে না রিয়াল। কারণ ম্যাচের মিনিট পাঁচেক বাকি থাকতে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন মার্সেলো। সদ্যই ইনজুরি থেকে ফিরে আবারও সাইডলাইনে চলে গেলেন তিনি। এল ক্লাসিকোর দিন তিনেক আগে ইনজুরি, মার্সেলো কি পারবেন বার্সার বিপক্ষে মূল একাদশে থাকতে? তবে এর চেয়েও বড় প্রশ্ন, আগামী সপ্তাহেও কি রিয়ালের কোচ হিসেবে বহাল তবিয়তে থাকবেন লোপেতেগি?