• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    দুইবার পিছিয়ে পড়েও বায়ার্নকে হারাল ডর্টমুন্ড

    দুইবার পিছিয়ে পড়েও বায়ার্নকে হারাল ডর্টমুন্ড    

    দুইবার বায়ার্ন মিউনিখকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি, দুইবারই দলকে ফিরিয়ে এনেছিলেন মার্কো রয়েস। কিন্তু সিগন্যাল ইদুনা পার্কে রোমাঞ্চ তবুও বাকি ছিল। ৭৪ মিনিটে পাকো আলকাসেরের গোলে পাঁচ গোলের থ্রিলার জিতে বায়ার্নকে বুন্দেসলিগার তিন নম্বরে ঠেলে দিয়েছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। ২৭ পয়েন্ট নিয়ে বুন্দেসলিগায় সবার ওপরে ডর্টমুন্ড, ২৩ পয়েন্ট নিয়ে বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখ আছে দুইয়ে। বায়ার্ন মিউনিখ ২০ পয়েন্ট নিয়ে ৩ নম্বরে। অতীত বলছে লিগের এই সময়ে শীর্ষ থাকা দলের চেয়ে ৭ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়ে কখনই শিরোপা জিততে পারেনি বায়ার্ন। 

    নিকো কোভাচের দল তাই শেষ ৮ ম্যাচ থেকে পেল মাত্র ৭ পয়েন্ট। এমনিতেই অস্বস্তিতে ছিলেন বায়ার্নের নতুন কোচ, ডর্টমুন্ডের কাছে হেরে আরও চাপে পড়ে গেলেন কোভাচ। এই মৌসুমে ডর্টমুন্ডের একমাত্র হারটি এসেছিল আগের ম্যাচে, চ্যাম্পিয়নস লিগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে হেরেছিল তারা। লিগে সেটার প্রভাব পড়ল না, লুসিয়ানো ফাভ্রের দল দেখিয়েছে বুন্দেসলিগা জয়ের সামর্থ্যটা আছে তাদের।

    অথচ প্রথমার্ধে বায়ার্নই দাপট দেখাচ্ছিল ডর্টমুন্ড মাঠে। বল পজেশন, আক্রমণ সবদিক দিয়েই এগিয়ে ছিল তারা। অন্যপ্রান্তে গোল যখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল, তখনই অবশ্য একটি উপহার পেয়ে গিয়েছিলেন মার্কো রয়েস। ম্যাটস হামেলসের ভুল থেকে বল পেয়ে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে ফিনিশ করতে পারেননি, সোজা মেরেছেন ম্যানুয়েল নয়্যারের হাতে। প্রথমার্ধে এছাড়া তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি ঘরের দল।



    রয়েস না পারলেও তার সাবেক সতীর্থ লেভানডফস্কি অবশ্য কিছুক্ষণ পর ভুল করেননি। রাফিনহা ক্রস করেছিলেন রাইট উইং থেকে, সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথা থেকে হেডে গোল করে বায়ার্নকে লিড এনে দেন লেভানডফস্কি। ২৬ মিনিটে এগিয়ে গিয়ে বায়ার্ন আরও আধিপত্য বিস্তার করলেও অবশ্য গোল আর পায়নি প্রথমার্ধে। 

    দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরতে ভাগ্যের সহায়তাও দরকার ছিল বরুশিয়ার। এর আগে নয়্যার আটকে দিয়েছিলেন রয়েসকে, সেই তিনিই ডর্টমুন্ডকে ম্যাচে ফেরার সাহায্য করে দিলেন ডিবক্সের ভেতর রয়েসকে ফাউল করে। দুই অধিনায়কের লড়াইয়ে জয়ী রয়েস। নয়্যারকে ভুল দিকে পাঠিয়ে ঠান্ডা মাথায় গোল করে ডর্টমুন্ডকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন তিনি। সেই গোলের রেশ না কাটতেই অবশ্য আবারও পিছিয়ে পড়ে ডর্টমুন্ড। ডিবক্সের ভেতর থেকেই সার্জ গ্যানাব্রি আর জশুয়া কিমিচের দারুণ বোঝাপড়া, পরে কিমিচ চিপ করলেন ফারপোস্টে থাকা লেভানডফস্কিকে। ৫২ মিনিটে আবারও হেডে গোল করে বায়ার্নের ডাগ আউটে স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন পোলিশ স্ট্রাইকার। কিন্তু সেই স্বস্তি স্থায়ী হয়নি ম্যাচ শেষে।

    লেভানফস্কির যা পারেন, রয়েসও কম যান না। ডানদিক থেকে আসা ক্রসে প্রথমে সুযোগেই শট করে দারুণ এক গোল করলেন রয়েস। ৬৭ মিনিটে ডের ক্লাসিকের ফল তাই, লেভানফস্কি ২, রয়েস ২। এরপর নাটকের শেষ অঙ্কের নায়কের জন্যই জমা ছিল সব। বার্সেলোনা থেকে ধারে ডর্টমুন্ডে খেলতে এসে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন পাকো আলকাসের। বেশিরভাগ ম্যাচে বদলি হয়ে নেমেও বুন্দেসলিগার শীর্ষ গোলদাতাদের ছোট তালিকায়ও ছিলেন। রয়েসের দ্বিতীয় গোল অবশ্য তাকেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে বসিয়েছিল এককভাবে। সেই আলকাসের বায়ার্নের বিপক্ষেও বদলি হয়ে নামলেন। ৫৯ মিনিটে নেমেছিলেন তিনি, দল তখনও পিছিয়ে। রয়েস ফিরে আসার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জাডন সানচোরা বায়ার্নের রক্ষণকে এলোমেলো করে দিয়েছিলেন কয়েকবার। কিন্তু শেষে আলকাসেরই কেড়ে নিলেন সব আলো। ৭৪ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে দেওয়া অ্যাক্সেল ভিটসেলের পাস খুঁজে পায় আলকাসেরকে। আক্রমণে ছিলেন তিনি একাই। জেরোম বোয়াটেং সুযোগই পাননি, হামেলস কেবল তাকে আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টাই করে গেছেন। আর আলকাসের ডিবক্সের ভেতর ঢুকে এগিয়ে আসা নয়্যারের গায়ের ওপর দিয়ে চিপ করে বল জালে পাঠিয়ে সিগন্যাল ইদুনা পার্কের গর্জন দ্বিগুণ করেন। আর মৌসুমের নিজের গোলসংখ্যা নিয়ে যান ৮ এ।

    শেষদিকে সানচোর কল্যাণে পাওয়া বলে রয়েস ব্যবধানও দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু হ্যাটট্রিক আর পাননি। হ্যাটট্রিক প্রায় করেই ফেলেছিলেন লেভানডফস্কিও। যোগ করা সময়ের ৫ মিনিটে বল ডর্টমুন্ডের জালে পাঠিয়েও অবশ্য অফসাইডের কারণে বাতিল হয়েছে সেই গোল। 

    মার্চে বায়ার্নের কাছে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ডর্টমুন্ড। এরপরে এমন জয়, তারওপর আবার লিগের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করা- সবমিলিয়ে ডর্টমুন্ড সমর্থকদের উদযাপন হয়েছে অনেকটা শিরোপা জয়ের মতোই। এভাবে চলতে থাকলে শিরোপাস্বপ্ন দেখাতেই পারে ডর্টমুন্ড।