অ্যাডিলেডে জয়ের সুবাস পাচ্ছে ভারত
স্কোর
চতুর্থ দিন শেষে
ভারত ২৫০ ও ৩০৭
অস্ট্রেলিয়া ২৩৫ ও ৪৯ ওভারে ১০৪/৪ ( মার্শ ৩১*, হ্যারিস ২৬; শামি ২/১৫, অশ্বিন ২/৪৪)
জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার আরও ২১৯ রান
লিডটা অনায়াসেই ছাড়াতে পারত ৪০০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে এই লিড পেলে হয়ত পুরোপুরি নির্ভারই থাকতেন বিরাট কোহলি। শেষের দিকে ব্যাটসম্যানদের অতিরিক্ত তাড়াহুড়োতেই লিডটা পার হলো না ৩২৫ রানও। কোহলির সেই আফসোস কিছুটা হলেও ঘুচিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরাই, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মতো তাদের ভুল শট নির্বাচনই জমিয়ে তুলেছে অ্যাডিলেড টেস্ট। শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন আরও ২১৯ রান, ভারতের দরকার ছয় উইকেট।
দিনের শুরুটা দেখেশুনেই করেছিলেন চেতেশ্বর পূজারা ও অজিঙ্কা রাহানে। গতকাল দিনের শেষ কয়েক ওভারে রাহানেকে নড়বড়ে লাগলেও আজ তার ব্যাটিংয়ে সেরকম কিছুর ছাপ ছিল না। পূজারাকে সাথে নিয়ে দলের লিড নিয়ে যান ২০০ রানের ওপরে। পূজারা-রাহানে দুজনেই পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। বারবার বোলিং পরিবর্তন করেও টিম পেইন এই জুটি ভাঙতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন সেই লায়নই। শর্ট লেগে দাঁড়ান ফিঞ্চের হাতে ক্যাচ দিয়েই ফেরেন পূজারা। প্রথম ইনিংসের মতো এবার আর সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি, আউট হয়েছেন ৭১ রান করে। পূজারা আউট হলে ভাঙ্গে ৮৭ রানের জুটি। তিন ওভার পর রোহিত শর্মাকেও ফেরান লায়ন, সিলি পয়েন্টে দাঁড়ান পিটার হ্যান্ডসকম্বের দুর্দান্ত এক ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রোহিত।
ঋশভ পান্ট নেমেই ঝড় তুলেছিলেন। চারটি চার ও এক ছয়ে মাত্র ১৬ বলেই পান্ট করেন ২৮ রান। পান্ট ঝড় থামিয়েছেন সেই লায়নই। ক্রিজ ছেড়ে তাঁকে মারতে এসে কভারে ফিঞ্চের হাতে তালুবন্দি হন পান্ট। তখন ভারতের লিড ৩০০ ছুঁইছুঁই। লিড ৩০০ পেরোয় রাহানের দক্ষতায়। ৩০৩ রানের মাথায় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে আউট করেন মিচেল স্টার্ক, ডিপ স্কয়ার লেগে মার্কাস হ্যারিস সহজেই ক্যাচ লুফে নেন। এরপর চার রানের মাঝে পরে ভারতের শেষ তিন উইকেট। লায়নকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন রাহানে। আউট হওয়ার আগে রাহানে করেন ৭০ রান। শেষ পর্যন্ত ৩০৭ রানেই থামে ভারতের ইনিংস, লায়ন নেন ছয় উইকেট, ভারতের লিড দাড়ায় ৩২২।
জিততে হলে গড়তে হবে ইতিহাস, এমন সমীকরণ মাথায় নিয়েই ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনাররা। দ্বিতীয় বলেই অ্যারন ফিঞ্চকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন ইশান্ত শর্মা। রিভিউ নেওয়ার পর দেখা যায়, ইশান্তের বলটি ছিল নো-বল! সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়েও নিজেকে ক্রিজে থিতু করতে পারেননি ফিঞ্চ। চা বিরতির ঠিক আগে তাঁকে আউট করেন অশ্বিন, ঠেকাতে গিয়ে বল তার গ্লাভসে লেগে পান্টের হাতে ধরা দেয়। অনেক সময় নিয়ে রিভিউ নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন ফিঞ্চ, শেষ পর্যন্ত নেননি। পরে দেখা গেছে, আসলে অশ্বিনের বল তার ব্যাট কিংবা গ্লাভস কোথাও লাগেনি!
এই টেস্টে অভিষেক হওয়া হ্যারিস ভালো কিছু করার আভাস দিয়েছিলেন। চোখ ধাঁধানো কিছু শট খেলার পর ফিরেছেন তিনিও। শামির করা অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে পান্টের হাতে ক্যাচ দেন হ্যারিস। উসমান খাওয়াজা ক্রিজে আসার পর থেকেই ছিলেন নড়বড়ে। অশ্বিনকে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। ৮ রানের মাথায় ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসলে ডিপ কভারে রোহিতের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন খাওয়াজা।
হ্যান্ডসকম্ব-শন মার্শ জুটি থিতু হওয়ার আভাস দিচ্ছিলেন। দুজনেই মন্থর গতিতে ব্যাটিং করেছেন। এক পর্যায়ে ধৈর্য হারান হ্যান্ডসকম্ব। শামির বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিং মিস হয় তার, ডিপ কভারে সহজ ক্যাচ ধরেন পূজারা। দিনের বাকি সময়টায় আর বিপদ হতে দেননি মার্শ ও প্রথম ইনিংসে দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান পাওয়া ট্রাভিস হেড।
শেষ দিনের শুরুতেই মার্শ-হেড জুটি ভাঙতে চাইবেন কোহলি। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আশা যে বাঁচিয়ে রেখেছেন এই দুজনই। ৩১ রান করে অপরাজিত আছেন মার্শ, কাল তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চম দিনে অ্যাডিলেডে অপেক্ষা করছে রোমাঞ্চকর সমাপ্তি।