• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    শাকিরির জোড়া গোলে ইউনাইটেড গেরো কাটালেন ক্লপ

    শাকিরির জোড়া গোলে ইউনাইটেড গেরো কাটালেন ক্লপ    

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে লিভারপুল। অলরেড সমর্থকদের জন্য এর চেয়ে মধুর যেন আর কিছু হতে পারত না! ইংল্যান্ডের দুই দলের রেষারেষি বহু পুরনো। প্রিমিয়ার লিগের গল্পে ইউনাইটেডই রাজা। এবার লিভারপুল যখন লড়ছে শিরোপার জন্য, ইউনাইটেড তখন ধুঁকছে। গল্পটা কি বদলাতে শুরু করেছে? অ্যানফিল্ডে ইউনাইটেডের ওপর লিভারপুলের আধিপত্যের পর সেটা মনে হতেই পারে। ম্যান ইউনাইটেডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে লিভারপুল শাসন করেছে ম্যানচেস্টারকেই। ম্যানচেস্টার সিটিকে টপকে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল আবারও উঠেছে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষস্থানে।

    প্রিমিয়ার লিগে ৮ ম্যাচ পর ইউনাইটেডকে হারাতে পেরেছে লিভারপুল। অ্যানফিল্ডে অল রেডদের জয়ের নায়ক জের্দান শাকিরি। ম্যাচের ২০ মিনিট বাকি থাকতে নেমে তিনিই বদলে দিয়েছেন খেলা।

     

     

    লিভারপুল শুরুটা করেছিল ঝড়ের বেগে। প্রথম আধঘন্টায় ম্যান ইউনাইটেডকে চাপে ফেলে কাঙ্ক্ষিত গোলও আদায় করে নেয় তারা। যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল, হোসে মরিনহোর কৌশল লিভারপুলের বিপক্ষে ছিল তেমনই। রক্ষণ সামলে কাউন্টার অ্যাটাকে লিভারপুলকে আঘাত করা। মাঝমাঠে তাই তেমন একটা প্রেসিংও করছিল না ইউনাইটেডের মিডফিল্ড। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২৪ মিনিটে ইউনাইটেডের ডিফেন্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে চিপ করে ডিবক্সের ভেতর বল ফেলেন ফাবিনহো। সাদিও মানে চেস্ট রিসিভ করে বল নামিয়ে এনে, বাম পায়ের শটে গোল করে অ্যানফিল্ডকে আনন্দ ভাসান। মিনিট তিনেক পর ডেয়ান লভ্রেন সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তখনই ব্যবধান দ্বিগুণ হত পারত লিভারপুলের।

    সবকিছু যখন ঠিকঠাক চলছিল তখনই লিভারপুলের জন্য বিপত্তিটা বাঁধিয়ে বসেন অ্যালিসন। চ্যাম্পিয়নস লিগে অ্যানফিল্ডের শেষ ম্যাচে ছিলেন লিভারপুলের জয়ের নায়ক। কয়েকদিনের ব্যবধানে তিনিই করে বসলেন একটা আনকোরা কাজ। বাম দিক থেকে রোমেলু লুকাকুর ক্রসটা সহজেই ধরার কথা ছিল অ্যালিসনের। প্রথম দফায় বল হাত ফঁসকে বেরিয়ে গেল, পরের চেষ্টাতেও ব্যর্থ হলেন। সামনেই ছিলেন জেসি লিনগার্ড। ইউনাইটেড ফরোয়ার্ডের জন্মদিন ছিল গতকাল। অ্যালিসন যেন তাকে সেই উপহারই দিলেন। আর লিনগার্ডও বাকি কাজটা সেরে খেলার ধারার বিপরীতে ফিরিয়ে আনলেন ইউনাইটেডকে।



    অধারাবাহিক মৌসুমের অস্বস্তি আর ইনজুরির লম্বা তালিকা নিয়ে অ্যানফিল্ডে গিয়েছিলেন মরিনহো। পল পগবাকে আরও একবার বেঞ্চেই বসিয়ে রেখেছিলেন ইউনাইটেড কোচ। সমতায় থেকে বিরতিতে যেতে পারায় তাই মরিনহোই দুই কোচের ভেতর ছিলেন বেশি স্বস্তিতে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মারুয়ন ফেলাইনিকে নামিয়ে মরিনহো চমকও দেখান। কিন্তু প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধটাও ক্লপের দলের ছায়ায় থেকেই শুরু হলো ইউনাইটেডের।  ৫২ মিনিটে ডেভিড ডি গিয়ার দারুণ এক সেভে বাঁচল দল। ওই আক্রমণ থেকে রিবাউন্ডে নাবি কেইতাকেও আর গোল করতে দেননি অ্যাশলি ইয়াং।

    একই ধারায় চলতে থাকা খেলায় লিভারপুলের গোল করা সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। আবার সাম্প্রতিক সময়ে অ্যানফিল্ডে মরিনহোর গৌরবের অতীত খানিকটা চোখ রাঙ্গানিও দিচ্ছিল তাদের। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের বেশিরভাগ সময় ইউনাইটেডের জমাট বাঁধা রক্ষণ সেরকম কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। শেষে ৭০ মিনিটে জের্দান শাকিরির শরণাপন্ন হন ক্লপ। লিভারপুলের ম্যানেজারের ওই সিদ্ধান্তটাই দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে ইউনাইটেডের প্রতিরোধ। মাঠে নামার ৩ মিনিটের মধ্যেই শাকিরি এগিয়ে নেন দলকে। এরপর ৮০ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করে তখনই ম্যাচটা লিভারপুলের করে নেন সুইস ফরোয়ার্ড।   

    ৭৩ মিনিটে সাদিও মানে আক্রমণ শুরু করেছিলেন বাম প্রান্ত ধরে। এরপর হেরেরাকে কাটিয়ে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন মানে। তার ক্রস থেকে দলকে গোল হজমের হাত থেকে একবার বাঁচিয়েও দেন ডি গিয়া। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারেননি। রিবাউন্ডে বল যায় শাকিরির পায়ে, তার ডান পায়ের শট ইয়াংয়ের গায়ে লেগে ঢুকে যায় ডি গিয়ার জালে।
    শাকিরির দ্বিতীয় গোলটাও ঢুকেছে এরিক বায়ির গায়ে লেগে। সে দফায় অবশ্য বাম পায়ে শট করেছিলেন শাকিরির। মোহামেদ সালাহর পাস বল পেয়েছিলেন ডিবক্সের সামান্য বাইরে। সেখান থেকেই ইউনাইটেডর ম্যাচে ফেরার আশা শেষ করে দেন শাকিরি। এর মিনিট খানেক আগে অ্যান্থনি মার্শিয়ালকে নামিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন মরিনহো। পুরো ম্যাচে ইউনাইটেডের নখদন্তহীন আক্রমণের পর দুই গোলে পিছিয়ে যাওয়া- শেষের দশ মিনিট তাই নিয়মরক্ষার মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছিল অ্যানফিল্ডে।

    পয়েন্ট তালিকার ৬ নম্বরে থাকা ইউনাইটেডের চেয়ে লিভারপুল এগিয়ে গেছে ১৯ পয়েন্টে। প্রিমিয়ার লিগে ইউনাইটেডের ওপর লিভারপুল এতো বড় লিড নিতে পারেনি কখনই। সেই রীতি বদলেছেন ক্লপ। তবে ইউনাইটেড নয়, শিরোপার পথে মূল বাঁধা যে ম্যানচেস্টারের অন্য ক্লাব সেটা ভালো করেই জানেন লিভারপুল ম্যানেজার।

     


    • ১৩ তম ম্যাচে এসে ফাবিনহো পেয়েছেন লিভারপুলের হয়ে প্রথম অ্যাসিস্ট
    • ৬ বার ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলে প্রথমবারের মতো গোল করেছেন সাদিও মানে
    •  প্রথমার্ধে মাত্র একটি পাস কমপ্লিট করতে পেরেছিলেন রোমেলু লুকাকু
    • প্রিমিয়ার লিগে সিমিওন মিনোলেত ও লরিস ক্যারিয়াসের ভুলে গত মৌসুমে যত গোল খেয়েছে লিভারপুল, অ্যালিসনের ভুলেও ততোগুলো গোলই হয়েছে চলতি মৌসুমে। 
    • মার্চ ২০১১ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ইউনাইটেডের বিপক্ষে অ্যানফিল্ডে ৩ গোল করেছে লিভারপুল
    • ১৭ ম্যাচ থেকে মাত্র ২৬ পয়েন্ট পেয়েছে ইউনাইটেড, প্রিমিয়ার লিগের হিসাবে এতো বাজে অবস্থা কখনই ছিল না ইউনাইটেডের
    • লিভারপুলের ১১ জন আউটফিল্ড খেলোয়াড়ই শট করেছেন গোলে। লিভারপুলের মোট ৩৬ শটের বিপরীতে ইউনাইটেডের শট ৩টি