• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    ইউনাইটেডে মরিনহোর উত্তরসূরি কে?

    ইউনাইটেডে মরিনহোর উত্তরসূরি কে?    

    মৌসুমের শুরু থেকেই হাওয়ায় ভাসছিল তাঁর ছাটাইয়ের গুঞ্জন। লিভারপুলের কাছে ৩-১ গোলে হারের পর অবশেষে চাকরিটা ঠিকই হারিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার হোসে মরিনহো। ‘রেড ডেভিল’ কিংবদন্তী মাইকেল ক্যারিক আপাতত দায়িত্বে থাকলেও দুই-একদিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন কোচের নাম ঘোষণা করবে ইউনাইটেড। সাবেক দুই ইউনাইটেড খেলোয়াড় ওলে-গানার সোলশায়ার বা লঁরা ব্লঁয়ের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি- শোনা যাচ্ছে এমনটাই। তবে ইউনাইটেডের পূর্ণকালীন কোচ কে হবেন- তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। 

     

    জিনেদিন জিদান

    রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার হিসেবে ৩ বছরে মোট ৯টি শিরোপা জিতেছিলেন জিনেদিন জিদান, হ্যাটট্রিক করেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের। গত মৌসুমের শেষে হঠাৎই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই মৌসুমে ইউনাইটেডের যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের পর থেকে ইউনাইটেডের নতুন কোচ হিসেবে জিদানের নামটাই শোনা যাচ্ছিল জোরেশোরে। জিদান নিজেও দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক- এমন গুঞ্জনে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েছিলেন অনেকেই।

     

     

    পেপ গার্দিওলা বা মার্সেলো বিয়েলসাদের মত নিজস্ব ফুটবলীয় দর্শনের ছাপটা এখনও নেই জিদানের। কিন্তু খেলোয়াড়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, অনুপ্রাণিত করে তাদের থেকে সেরাটা আদায় করে নেওয়াতে জিদানের জুড়ি মেলা ভার। এই মৌসুমে ইউনাইটেডের বাজে ফর্মে মূল কারণ হিসেবে খেলোয়াড়দের সাথে মরিনহোর খারাপ সম্পর্ককেই দায়ী করেন অনেকে। জিদান কোচ হয়ে আসলে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা হয়ত কমে যাবে অনেকটাই।

     

    মরিসিও পচেত্তিনো

    টটেনহাম হটস্পার্সের কোচ হয়ে আসার পর থেকে ইউরোপের প্রথম সারির কোচদের মধ্যে তার নামটা আসে শুরুতেই। শিরোপা জিততে না পারলেও মরিসিও পচেত্তিনোর দিকে চোখ পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, ইউনাইটেডের মত দলগুলোর। এখনও স্পার্সে থিতু থাকলেও মরিনহোর উত্তরসূরি হিসেবে তাকে পছন্দ ইউনাইটেডের- এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বেশ।

     

     

    নিজস্ব ফুটবলীয় দর্শনের সাথে তরুণ ফুটবলারদের নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়া- পচেত্তিনোর সবচেয়ে বড় শক্তি এখানেই। সাউদাম্পটনে থাকার সময় যুবদল থেকে মূল স্কোয়াডে সুযোগ দিয়েছিলেন অনেককেই। ড্যালে আলি, হ্যারি কেইনদের সাথে স্পার্সকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। চ্যাম্পিয়নস লিগে তার অধীনেই নিয়মিত হয়েছে স্পার্স। ইউনাইটেডের মত দলে যুবদল থেকে ফুটবলারদের উঠে আসাটা একরকম বন্ধই হয়ে গিয়েছিল মরিনহোর অধীনে। পচেত্তিনো এলে মার্কাস রাশফোর্ডদের মত তরুণরাও হয়ত আরও সুযোগ পাবেন নিজেদের জাত চেনানোর। এসব কারণেই হয়ত ইউনাইটেড কিংবদন্তী গ্যারি নেভিল বলেছেন, “পচেত্তিনোকে কোচ হিসেবে আনতে পারাটা ইউনাইটেডের জন্য সবদিক দিয়েই উপযুক্ত হবে।”

     

    এডি হাও

    বোর্নমাউথকে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে আনার মূল কারিগর তিনি। গত কয়েক মৌসুম অবনমনের সাথে লড়াই করার পর এবার শীর্ষ দলগুলোকে বেশ ভালোই টেক্কা দিচ্ছে এডি হাওয়ের দল। ইউরোপে তরুণ ইংলিশ কোচদের মধ্যে তার নামটাই আসে সবার আগে। আর্সেন ওয়েঙ্গার দায়িত্ব ছাড়ার পর আর্সেনালের কোচ হওয়ার রেসে শুরুর দিকেই ছিলেন তিনি। মরিনহোর বিদায়ের পর ইউনাইটেডের কোচ হিসেবেও আসছে হাওয়ের নাম।

     

     

    বোর্নমাউথকে হাতের তালুর মত চেনেন হাও। মূল স্কোয়াডের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই এসেছেন যুবদল থেকে, অভিষেক হয়েছে হাওয়ের হাত ধরেই। ‘চেরি’দের প্রেসিং ফুটবলও নজর কেড়েছে বেশ। তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল এবং প্রিমিয়ার লিগে কোচিং করার অভিজ্ঞতা আছে- ইউনাইটেড এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভেবে থাকলে হাওই হয়ত হবেন সেরা পছন্দ।

     

    আন্তোনিও কন্তে

    প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম মৌসুমেই শিরোপা জিতিয়েছিলেন চেলসিকে। কিন্তু পরের মৌসুম শেষেই বরখাস্ত হয়েছিলেন আন্তোনিও কন্তে। চেলসিতে থাকার সময় মরিনহোর সাথে তার দ্বন্দ্বটা ছিল স্পষ্ট। ইউনাইটেড-চেলসি ম্যাচগুলোতে তাই উত্তাপ মাঠ ছেড়ে ছড়িয়েছিল ডাগআউটেই।

     

     

    চেলসি ছাড়ার পর থেকে এখনও ‘ফ্রি এজেন্ট’ই আছেন কন্তে। মরিনহোর বদলি হিসেবে তার নামটাও শোনা যাচ্ছে বেশ। কন্তে নিজেও নাকি দায়িত্বে নিতে ইচ্ছুক- অনেক সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে এমনটাই। নিজস্ব ফুটবলীয় দর্শন, শিরোপা- এই দিকে এগিয়ে থাকবেন কন্তে। কিন্তু জুভেন্টাস, চেলসি- দুই ক্লাবেই খেলোয়াড় এবং বোর্ডের সাথে ঝামেলায় জড়ানোর রেকর্ড আছে তার। সেই সাথে কন্তের ফুটবলীয় দর্শনে দল সাজাতে হলে মোটামুটি ঢেলেই সাজাতে হবে ইউনাইটেডকে, যা বর্তমান ‘রেড ডেভিল’ স্কোয়াডের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সেক্ষেত্রে নতুন কোচ নিয়োগ দেওয়ার যে মূল উদ্দেশ্য (ফলাফল এবং খেলায় উন্নতি করা), তা-ই হয়ত সাধন হবে না ইউনাইটেডের।

     

    রায়ান গিগস

    ডেভিড ময়েসকে বরখাস্ত করার পর চার ম্যাচের জন্য ইউনাইটেডের খেলোয়াড় এবং অন্তর্বর্তীকালীন কোচ, দুই-ই ছিলেন গিগস। ঐ মৌসুম শেষেই খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসর নেওয়া গিগস পরের মৌসুমেও ছিলেন ইউনাইটেডেই, লুই ফল গালের সহকারী হিসেবে। বর্তমানে ওয়েলস জাতীয় দলের ম্যানেজার তিনি। কিন্তু ইউনাইটেডের হটসিট খালি থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তার নামটাও এসেছে দায়িত্বপ্রত্যাশীদের মাঝে।

     

     

    ইউনাইটেডের ‘ক্লাস অফ ৯২’-এর অন্যতম সদস্য তিনি। যুবদলগুলো পেরিয়ে প্রায় ২৪ বছর ধরে ইউনাইটেডের হয়ে খেলেছেন মোট ৯৬৩টি ম্যাচ। আবার দুই দফায় কোচও ছিলেন। ইউনাইটেডকে তার চেয়ে হয়ত ভালমত চেনেন না কেউই। সেক্ষেত্রে গিগসের উপর এবার পাকাপাকিভাবে ভরসা করতেই পারে ইউনাইটেড।

    এঁদের বাইরে মোনাকোর সাবেক কোচ লিওনার্দো জার্ডিমের নামও আসতে পারে তালিকায়। কে জানে, হয়তো সবাইকে চমকে দিয়ে অন্য কেউ হতে পারেন মরিনহোর উত্তরসূরি।