• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    ডি গিয়াতে ঠেকে গেল টটেনহাম

    ডি গিয়াতে ঠেকে গেল টটেনহাম    

    মার্কাস র‍্যাশফোর্ডের একমাত্র গোলে টটেনহাম হটস্পারকে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই সব উল্লাস ডেভিড ডি গিয়াকে ঘিরেই। ইউনাইটেডের ম্যানেজার হিসেবে প্রথম ৬ ম্যাচ জেতা একমাত্র ম্যানেজারও হয়েছেন ওলে গানার সোলশায়ার, উতরে গেছেন নিজের প্রথম বড় পরীক্ষাটাও। ম্যাচ শেষে তিনিও আলাদা করে খুঁজে নিলেন ডি গিয়াকেই। ধন্যবাদটা তো তার প্রাপ্যই। এক ডি গিয়াতেই আটেই গেছে টটেনহাম, সব মিলিয়ে মোট ১১ টি সেভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন অন্তত ৫ বার। ডি গিয়ার দুর্গে ধাক্কা লেগেছে স্পার্সের শিরোপা স্বপ্নেও। লিভারপুলের চেয়ে ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে তারা। আর ইউনাইটেড তাড়া করছে চ্যাম্পিয়নস লিগ স্পট, এই জয়ের পর আর্সেনালের সমান ৪১ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে ছয়ে। চারে থাকা চেলসির সঙ্গে এখন ব্যবধান ৬ পয়েন্টের। সোলশায়ারের অধীনে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইউনাইটেড তাতে শীর্ষ চার এখন নাগালের মধ্যেই মনে হওয়ার কথা রেড ডেভিলদের।

    প্রথমার্ধে অবশ্য খুব বেশি কিছু করতে হয়নি ডি গিয়াকে। ওয়েম্বলিতে বেশি দাপুটে ছিল টটেনহামই। আক্রমণ, বল পজেশন সব দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল মাউরিসিও পচেত্তিনোর দল। হ্যারি উইংকস ৮ মিনিটে ফিনিশটা ঠিকঠাক করতে পারলে শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত স্পার্স। কিন্তু তাতে অবশ্য ইউনাইটেড খুব বেশি আশা হারায়নি, তারা ভালোমতোই ছিল ম্যাচে। কাউন্টার অ্যাটাকে স্বাগতিকদের ঘায়েল করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার দারুণ কয়েকটি আক্রমণও সাজিয়েছিল তারা। ১১ মিনিটে জেসি লিনগার্ড শুরু করেছিলেন, পরের মিনিটে র‍্যাশফোর্ড হুগো লরিসের পরীক্ষাটাও নিয়ে নিলেন।  অ্যান্থনি মার্শিয়াল কিছুক্ষণ পর আরেকটু কঠিন পরীক্ষায় ফেলেও লরিসকে হারাতে পারলেন না।  কিন্তু ইউনাইটেডের টোটকাটা কাজে লাগল প্রথমার্ধের শেষদিকে গিয়ে। টটেনহাম যখন মানসিকভাবে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই সফল সোলশায়ারের দল। ৪৪ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে কিলার পাসটা দিলেন পল পগবা। র‍্যাশফোর্ডও টটেনহামের দুই সেন্টারব্যাককে পেছনে ফেলে পেয়ে গেলেন বলের নাগাল। এরপর কোণাকুণি শটে খুঁজে পেলেন ঠিকানা। র‍্যাশফোর্ডের উদযাপনের উলটো পাশে থাকল লরিসের আক্ষেপও। ঠিকঠাক চেষ্টা করলে হয়ত বলটা আটকাতেও পারতেন স্পার্স অধিনায়ক। 


     

    টটেনহামের আক্ষেপ যতই থাক, পগবা-র‍্যাশফোর্ডের উদযাপনটা যেন নিয়মিত ঘটনাই হয়ে গেছে।  নতুন কোচের অধীনে এই নিয়ে চার অ্যাসিস্ট হলো পগবার, আর র‍্যাশফোর্ড টানা তৃতীয় ম্যাচে পেলেন গোল। প্রথমার্ধটা সেই অর্থে ইউনাইটেডের জন্য প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু হয়ে থাকল। আর টটেনহামের আক্ষেপটা আরও বাড়ল দ্বিতীয়ার্ধে। সেটা বাড়ালেন ডেভিড ডি গিয়া।  পরের অর্ধে টটেনহামের প্রতিপক্ষ যত না ইউনাইটেড, তার চেয়ে বেশি হয়ে গেলেন ইউনাইটেডের গোলরক্ষক একা।

    বিরতির পর দুরন্ত সূচনা করেও টটেনহামকে উড়তে দেননি ডি গিয়াই। ৪৮ মিনিটে কেইনের শট পা দিয়ে সেভ করে শুরু।  মাঝে একবার পগবার ভলি ঠেকিয়ে লরিস শাপমোচন করেছিলেন ৬১ মিনিটে। কিন্তু ম্যাচের গল্পটা তার আগেই স্থানান্তর হয়ে গেছে অন্যপ্রান্তে। শুরুর কিছুক্ষণ টটেনহাম খেলল প্রথমার্ধের ইউনাইটেডের মতো, কাউন্টার অ্যাটাকে। এরপর শুরু অল আউট অ্যাটাক। কেইন, আলি, সনরা তো ছিলেনই, সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন প্রথমার্ধে মুসা সিসোকোর বদলি নামা এরিক লামেলাও।


    ডি গিয়ার বীরত্বের শুরু ৬৬ মিনিটে। তাকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন ডেলে আলি। কিন্তু র‍্যাশফোর্ডের কাজটা আর করতে পারলেন না তিনি। ঠিক একই জায়গা থেকে লরিসের মতো ভুলও করলেন না ডি গিয়া। ৭০ মিনিটে অবশ্য ডি গিয়া সেই সেভটাও ছাড়িয়ে গেলেন। কর্নার থেকে টবি অ্যাল্ডারওয়াইরেল্ডের ফ্লিক গোলে ঢুকতে দিলেন না দুর্দান্ত এক সেভ করে। এর তিন মিনিট পর আলিকে একরকম কাঁদিয়েই ছাড়লেন ডি গিয়া। গোল থেকে দশ গজ দূরে ছিলেন আলি, ডি গিয়াকে দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন কী না সেটা অবশ্য তিনিই জানেন। সেই দফায়ও তিনি করতে পারলেন না গোল, টটেনহামেরও আর সমতায় ফেরা হলো না তাই।

    কিন্তু তখনও যথেষ্ট সময় হাতে ছিল পচেত্তিনোর দলের। গোল পেতে মরিয়া হয়ে ফার্নান্দো ইয়োরেন্তেকেও বিরল একটা সুযোগ দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ম্যানেজার। দুই স্ট্রাইকার খেলিয়েও অবশ্য লাভ পাননি তিনি। ৮৬ মিনিটে ডি গিয়া কেইনকে যেভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছেন, এরপরই হয়ত বুঝে ফেলেছিলেন দিনটা তার দলের নয়। ডি গিয়ার ১১ সেভের মধ্যে ওটাই হয়ত থাকবে সবার ওপরেই। প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি সেভ করার রেকর্ড ছিল ডি গিয়ারই, নর্থ লন্ডনের আরেক ক্লাব আর্সেনালের মাঠে ২০১৭ সালে করেছিলেন ১৪ টি সেভ। ওয়েম্বলিতে টটেনহামের বিপক্ষে করলেন ১১টা, সেটা হয়ে গেল প্রিমিয়ার লিগে এক ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেভ।

    ইউনাইটেডের সম্ভাব্য নতুন ম্যানেজারদের তালিকায় সবার ওপরেই আছে পচেত্তিনোর নাম। কিন্তু সোলশায়ার নিজেও তো চাকরিটা পাকাপাকিভাবে পেতে আগ্রহী। টটেনহামকে হারিয়ে তাই নিজের দাবিটা ভালোভাবেই জানিয়ে রাখলেন তিনি।