• লা লিগা
  • " />

     

    মেসি ম্যাজিকে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে হার এড়ালো বার্সা

    মেসি ম্যাজিকে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে হার এড়ালো বার্সা    

    লিওনেল মেসিকে সচারচর এমন উদযাপনে মাততে দেখা যায় না। ৬৪ মিনিটে ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক গোল করেছেন, সেই গোলে ম্যাচের স্কোরলাইন হয়েছে ২-২। অথচ ন্যু ক্যাম্পে প্রথম ৩২ মিনিটে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। সেই বার্সাকে রক্ষা করেছেন মেসি, ভ্যালেনসিয়ার বিপক্ষে প্রথম গোলটাই এসেছে মেসির পা থেকেই। লা লিগার আরেকটি মেসিময় রাতে অবশ্য জয়টা আর পাওয়া হয়নি বার্সার। ভ্যালেনসিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে এর্নেস্তো ভালভার্দের দল।

     

     

    লা লিগায় এখন পর্যন্ত রক্ষণের দিক দিয়ে সেরা দল ভ্যালেন্সিয়া। অন্যদিকে আক্রমণের সেরা বার্সা। ম্যাচটা যেমন চিন্তা করা হচ্ছিল, শুরু থেকেই সেটা হলো উলটো। বরং ভ্যালেন্সিয়ার আক্রমণভাগই পরীক্ষা নিতে থাকল বার্সা। ভ্যালেন্সিয়াকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন অধিয়ানক ড্যানিয়েল পারেহো। শুরুতে মনোযোগ দিয়েছেন বেশি আক্রমণে। ভ্যালেন্সিয়ার বেশিরভাগ আক্রমণের কারিগরও তিনি। প্রথম তিন মিনিটেই দুইবার বার্সার গোলে শট নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের পরীক্ষাটাও নিয়ে ফেলেছিলেন ভালোভাবেই, রিবাউন্ডে আবার ডেনিস চেরিশেভও শুরুতেই বার্সার বারপোস্টও কাঁপিয়ে দেন। এরপর ৯ মিনিটে আরও একবার হাফ চান্স এসেছিল পারেহোর পায়েই।

    ম্যাচের মিনিট দশেক পার হওয়ার পর বার্সা গুছিয়ে উঠতে শুরু করে। বল পজেশনও বাড়ে তাদের, ১৫ মিনিটে ফিলিপ কৌতিনহো প্রথমবারের মতো ভ্যালেন্সিয়ার গোলে শট করেন। ভ্যালেন্সিয়ার গোলবারের নিচে নেতোর নেতা হয়ে ওঠার শুরুও তখন থেকে। এরপর সার্জি রবার্তোর একটি ক্রস, যেটা গোলে পরিণত হতে যাচ্ছিল- সেটাও ঠেকিয়ে দেন নেতো।


    ২৪ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়ার এগিয়ে যাওয়াটা ছিল স্রোতের বিপরীতে। অন্যপ্রান্তে পারেহোর কাছে বল হারিয়েছিলেন মেসি। সেখান থেকেই কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠে ভ্যালেন্সিয়া। রদ্রিগোর থ্রু পাস ধরে পরে সেই আক্রমণ গোলে পরিণত করেন কেভিন গ্যামেইরো।

    ভ্যালেন্সিয়াকে দ্বিতীয় গোলের জন্য এরপর অপেক্ষা করতে হয়েছে অল্প কিছু সময়। এর মধ্যে ফিলিপ কৌতিনহোর শট এজেকুয়েল গারায়ের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকতে পারত, কিন্তু নেতো সেটা ঠেকিয়ে দিয়েছেন শক্ত হাতেই।

    বার্সার রক্ষণে এই ম্যাচে পরিবর্তন এনেছিলেন ভালভার্দে। জর্দি আলবা ছিলেন না, লেফট ব্যাকে খেলেছেন রবার্তো। ক্লেমেন্ত লংলের জায়গায় ছিলেন থমাস ভারমালেন। পিকে আঘাত পেয়ে কিছুক্ষণ ছিলেন মাঠের বাইরে। তখনই রবার্তো দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডিবক্সের ভেতর রক্ষণের। আনাড়ি ফাউলে রবার্তোই পেনাল্টি দিয়ে বসেন ভ্যালেন্সিয়াকে।  ৩২ মিনিটে পারেহোর সফল স্পটকিক ভ্যালেন্সিয়াকে এনে দেয় স্বপ্নের দুই গলের লিড।

    কিন্তু অন্যপ্রান্তে বার্সাকে পেনাল্টি দিয়ে আবার নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনে ভ্যালেন্সিয়া। টনি লাতোর অবশ্য খুব বেশি দোষও ছিলনা, নেলসন সেমেদোকে আটাকানোর আর কোনো উপায় ছিল না তার। রেফারির চোখেও সেটা পেনাল্টিই মনে হলো। ভাগ্যটা ভালোই ছিল বার্সার, অন্যদিন হয়ত এমন জায়গা খালি হাতেই ফিরতে হত তাদের। ভ্যালেন্সিয়ার নাম্বার টেনের মতো বার্সা অধিনায়কও সফল স্পটকিক নিয়ে ৩৭ মিনিটে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন দলকে। ঘটনাবহুল প্রথমার্ধেই অবশ্য আরও দুইটি দারুণ সুযোগ এসেছিল বার্সার কাছে। কর্নার থেকে ডিবক্সের ভেতর বল পেয়ে রবার্তো মেরেছিলেন বারপোস্টে। আর ইভান রাকিটিচের মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারা বলে ভলি করেছিলেন মেসি, কিন্তু তিনি মেরেছিলেন অনেক ওপর দিয়ে। তাই এক গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বার্সা।

    দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত শুরু করেও অবশ্য বারবার নেতোর কাছেই হার মানতে হচ্ছিল বার্সাকে। ৪৭ মিনিটে মেসির শট ফুল স্ট্রেচে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন নেতো। মিনিট খানেক পর মেসি, কৌতিনহো, সুয়ারেজদের গড়া আক্রমণ বিফল হয় ভ্যালেন্সিয়ার দৃঢ় রক্ষণের কাছে। কিছুক্ষণ পর আলেনিয়াও যোগ দেন আক্রমণে। সাজানো আক্রমণে যখন লাভ হচ্ছিল না, তখন ডিবক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শট করেন আলেনিয়াও, সেটাও ঠেকে যায় নেতোর শক্ত হাতের কাছে।

    বার্সার আধিপত্য ভেঙে দিয়ে ম্যাচের ঘন্টা পার হওয়ার পর দারুণ দুইটি সুযোগ পেয়েছিল ভ্যালেন্সিয়াও। ম্যাচটা তখনই শেষ করে দিতে পারত তারা। ৬০ মিনিটে রদ্রিগোকে ওয়ান অন ওয়ানে ঠেকিয়ে দেন টের স্টেগান, রিবাউন্ডে ওয়াসের শট ব্লক হয় নেলসন সেমেদোর জায়গায় বদলি নামা জর্দি আলবার গায়ে লেগে। ৬৩ মিনিটে রদ্রিগো আরও একবার সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ফাঁকাবারে গোল করতে না পেরে।  

    ভ্যালেন্সিয়ার কাছে আটকে যাওয়াটাই যখন বার্সার নিয়তি মনে হচ্ছিল তখনই দারুণ মুহুর্তের জন্ম দেন মেসি। দুই, তিনজন ডিফেন্ডার ঘিরে রেখেছিলেন তাকে। ডিবক্সের বাইরের সেই জায়গা থেকে বারপোস্টও দেখতে পারার কথা নয় ভালো করে। কিন্তু ওইটুকুন ফাঁকা জায়গা কাজে লাগিয়েই শট করলেন মেসি, একেবারে শূন্য থেকে সৃষ্টি করলেন দারুণ এক গোল! ম্যাজিশিয়ানের সেই গোলেই সমতায় ফেরে বার্সা।

    শেষদিকে আলবার সঙ্গে মেসির বেশ কয়েকটি সমন্বিত আক্রমণ বারবার আশা দেখিয়েছে বার্সাকে। কিন্তু ন্যু ক্যাম্পে আর উদযাপনের উপলক্ষ্য আসেনি। আর দুই গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচে সমতা আসার পর ভ্যালেন্সিয়াও আর সেভাবে মনোযোগ দেয়নি আক্রমণে। তাই ৪ গোলের ঘটনাবহুল ড্রতেই থামে ম্যাচ।

    ২২ ম্যাচ শেষে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে বার্সেলোনা লা লিগার শীর্ষেই আছে। তবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ আগামীকাল নিজেদের ম্যাচে জিতে গেলে দুই দলের ব্যবধান কমে আসবে ৩ এ।