• লা লিগা
  • " />

     

    পয়েন্ট হারিয়ে লা লিগা জমিয়ে তুলল বার্সা

    পয়েন্ট হারিয়ে লা লিগা জমিয়ে তুলল বার্সা    

    ম্যাচের আর ৮ মিনিট বাকি তখন। পুরোটা ম্যাচ দুর্দান্ত রক্ষণভাগ দিয়ে লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজদের রুখে দিয়েছে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের ডিফেন্ডারেরা। মেসিদের আটকে কাতালানদের বিপক্ষে সুযোগও কম পায়নি বিলবাও। ডানপ্রান্ত থেকে ক্রস করলেন বদলি খেলোয়াড় ইকার মুনিয়াইন। ক্লিয়ার করতে গিয়ে ভারসাম্য হারালেন জেরার্ড পিকে, ডিবক্সে বল পেয়ে গেলেন বিলবাও স্ট্রাইকার ইনাকি উইলিয়ামস। পুরো সান মামেস স্টেডিয়াম তখন উদযাপনের পূর্বপ্রস্তুতি সেরেই ফেলেছে প্রায়। উইলিয়ামস শট নিলেন, কিন্তু আকস্মিকভাবেই আগুনে শটটি রুখে দিলেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার-স্টেগান। অবিশ্বাস্য সেভে তখন বিলবাও সমর্থকদের মাথায় হাত, শূন্যদৃষ্টিতে স্টেগানের দিকে তাকিয়ে আছেন উইলিয়ামস। মেসির মূল একাদশে ফেরার দিনটায় পাদপ্রদীপের আলোটা নিজের করে নিলেন জার্মান গোলরক্ষক। বিলবাওয়ের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে লা লিগার শিরোপা রেস জমিয়ে তুলল বার্সা। আজকের ড্রয়ে ২৩ ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকল বার্সা। সমান সংখ্যাক ম্যাচে টেবিলের দুইয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সংগ্রহ ৪৫ পয়েন্ট। এক বছর পর লা লিগায় গোল করতে ব্যর্থ হল বার্সা।

    মেসির একাদশে ফেরার দিনে মাঝমাঠে আর্থার মেলোর বদলে নেমেছিলেন আর্তুরো ভিদাল। পুরোটা ম্যাচই তাকে রীতিমত নাচিয়ে ছেড়েছেন বিলবাওয়ের মিডফিল্ডাররা। মূল একাদশে পাওয়া সুযোগটা একেবারেই কাজে লাগাতে পারেননি চিলিয়ান মিডফিল্ডার। ১০ মিনিটে তার ভুলেই আরেকটু হলে লিডটা নিয়েই নিয়েছিল বিলবাও। মাঝমাঠে ভিদালের থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডিবক্সের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে ইয়ুরির নেওয়া শট চলে যায় বার্সা গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। শুরুতেই নিজেদের স্বভাবসুলভ প্রেসিং ফুটবলে বার্সাকে চেপে ধরে বিলবাও। প্রথমার্ধে বার্সা যে গোল খায়নি, সেজন্য সবচেয়ে বড় অবদানটা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে-টার স্টেগানের। ১৭ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে দিয়ে মার্কো সুসায়েতার বাঁকানো শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন তিনি। ইনজুরি কাটিয়ে আজই মূল একাদশে প্রথমবার নেমেছিলেন মেসি। তবে এখনও যে পুরোপুরি সুস্থ নন- প্রথমার্ধে বোঝা গেছে তা-ই। তবে সম্পূর্ণ ফিট না হয়েও যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন মেসি, আবারও যেন প্রমাণ করলেন তা-ই। ২১ মিনিটে চারজন ডিফেন্ডারের ফাঁক গলেও দুর্দান্ত এক পাস বাড়ান লুইস সুয়ারেজকে। কিন্তু মেসির চমৎকার পাসের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি, সুয়ারেজের শট চলে যায় গোলের বাইরে দিয়ে।

     

     

    এর মিনিট তিনেক পর আবারও গোলের সুযোগ পায় বিলবাও। কিন্তু আবারও বাধ সাধেন স্টেগান। রাউল গার্সিয়ার দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিক দক্ষহাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন জার্মান গোলরক্ষক। ২৮ মিনিটে আবারও মেসিজাদু। দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পাস বাড়ান ভিদালকে। কিন্তু সুয়ারেজের মতই শট গোলে রাখতে পারেননি তিনি। সতীর্থদের গোলমুখে এমন অপয়তা দেখে গোল করার দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধেই তুলে নেন মেসি। ৩৬ মিনিটে মেসির বাড়ানো পাস ক্লিয়ার করতে ডিবক্স ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বিলবাও গোলরক্ষক। ফাঁকা পোস্ট পেয়ে ডিবক্সের বাইরে থেকেই চিপ করেন মেসি। কিন্তু সতীর্থদের মত ভাগ্যও যেন আজ সহায় ছিল না বার্সার। মেসির চিপ প্রতিহত হয় বারপোস্টে। ৪০ মিনিটে দুর্দান্ত বিলবাওয়ের প্রেসিং ফুটবলে মাঝমাঠে বল হারান ইভান রাকিটিচ। গার্সিয়াকে পাস বাড়ান সুসায়েতা। কিন্তু স্টেগান দুর্গ এবারও পরাস্ত করা হয়নি বিলবাও ফরোয়ার্ডের।

     

     

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ডাক পড়ে এই সপ্তাহে ইউরোপিয়ান ফুটবলের ‘হটকেক’ ভিডিও রেফারির। ৪৮ মিনিটে বিলবাও ডিফেন্ডার ইয়েরায় আলভারেজ বল ক্লিয়ার করতে যেয়ে হাত ব্যবহার করার অভিযোগ করেন সুয়ারেজ, মেসি। পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। ‘ভিএআর’ ব্যবহৃত হলেও সিদ্ধান্ত বদলায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে সময়ের সাথে ম্যাচের দখল নিজেদের করে নিতে থাকে বার্সা। ৫৮ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে ফ্রিকিক পায় বার্সা। কিন্তু শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মেসি। কাতালানদের কাছে মাঝমাঠের দখল হারিয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকে বিলবাও। প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গ ভাঙ্গতে বেশ বেগই পেতে হয়েছে বার্সাকে। উল্টো দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা সময় প্রতি-আক্রমণে খেলা বিলবাওই গোলের সুযোগ পেয়েছে বেশি। ৬৬ মিনিটে ইনাকি উইলিয়ামসের আরও একটি শট ফিরিয়ে দেন স্টেগান।

    উইলিয়ামস এবং বদলি খেলোয়াড় ইকার মুনিয়াইনের গতির সামনে রীতিমত অসহায়ই মনে হয়েছে বার্সার রক্ষণভাগকে। ৭৩ মিনিটে মুনিয়াইনের পাস থেকে স্টেগানকে একা পেয়েও দলকে লিড এনে দিতে পারেননি উইলিয়ামস। শেষদিকেও তরুণ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডকে ফিরিয়ে দিয়েছেন জার্মান গোলরক্ষক। হারের খাদ থেকে বলতে গেলে একাই বার্সার জন্য ড্র ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে এখন মাত্র ৬ পয়েন্টে এগিয়ে আছে বার্সা। সামান্য পা হড়কালেই হারাতে হতে পারে শীর্ষস্থান। এতদিন বার্সার লা লিগার শিরোপা ঘরে তোলা সময়ের ব্যাপার মনে হলেও এখন থেকে সব ম্যাচেই সাবধান থাকতে হবে ভালভার্দের দলকে। আজকের মত পারফম্যান্সে শেষমেশ হয়ত লিগটাই খোয়াতে হতে পারে কাতালানদের।