• দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকা সিরিজ
  • " />

     

    পোর্ট এলিজাবেথে লঙ্কান-রূপকথা

    পোর্ট এলিজাবেথে লঙ্কান-রূপকথা    

    দক্ষিণ আফ্রিকা ২২২ ও ১২৮ 

    শ্রীলঙ্কা ১৫৪ ও ১৯৭/২ (কুশল মেন্ডিস ৮৪, ওশান্ডা ফার্নান্ডো ৭৫, রাবাদা ১/৫৩)

    ফলঃ শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে জয়ী (২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ী)


    পোর্ট এলিজাবেথের ট্রেডমার্ক হয়ে যাওয়া ব্রাস ব্যান্ড বেজে গেছে অবিরত। তার সঙ্গে অলক্ষ্যে বেজে গেছে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের সেই চেনা সিম্ফোনি। শুধু জয়ের বললে ভুল হবে, এই সুর তো আসলে ইতিহাস গড়ার। শ্রীলঙ্কা আজ যে কীর্তি গড়ে গেছে, এত বছরের টেস্ট ক্রিকেটে উপমহাদেশের কোনো দলেরই যে তা নেই! প্রথম উপমহাদেশের দেশ হিসেবে সিরিজ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে, তার চেয়েও বড় কথা দুই টেস্টে করেছে ধবলধোলাই।

     

     

    ইতিহাস গড়ার জন্য শ্রীলঙ্কার আজ দরকার ছিল ১৩৭ রান। হাতে ছিল ৮ উইকেট (এম্বুলদেনিয়ার চোটে যেটি আসলে হয়ে গেছে ৭ উইকেট)। এই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের ২২২  ছিল সর্বোচ্চ, শ্রীলঙ্কার কাজটা সহজ মনে করার কারণ ছিল না কোনো। আগের দিন ওশান্ডা ফার্নান্ডো আর কুশল পেরেরা অপরাজিত ছিলেন যথাক্রমে ১৭ ও ১০ রান করে। কে ভেবেছিল, চতুর্থ ইনিংসে দুজন আর কোনো উইকেট না হারিয়ে সেই অসম্ভবের দুয়ারে পৌঁছে দেবেন?

    আজ সকালের দ্বিতীয় ওভার থেকে কুশল আর ওশান্ডা জানান দিচ্ছিলেন, দিনটা হতে যাচ্ছে তাদের। রাবাদার দ্বিতীয় ওভারে চার মেরে ওশান্ডা বার্তা দিলেন, পাল্টা আক্রমণকেই মানবেন মূলমন্ত্র। প্রথম কয়েক ওভারে আগুন ঝরিয়েছেন রাবাদা-অলিভিয়ের , তবে খানিক পরেই পিচ সহজ হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুজন খেলতে শুরু করেছেন হাত খুলে। মেন্ডিস যেরকম টাইমিং চাছিলেন, সেরকমই হচ্ছিল। ব্যাটকে কথা বলাচ্ছিলেন রিমোট কন্ট্রোলের মতো, অলিভিয়েরের এক ওভারে প্রায় মখমলের মতো টাইমিংয়ে মারলেন দুই চার। স্টেইনের ওভারে তিন চারে দ্রুত পৌঁছে গেলেন ত্রিশের ঘরে।

    স্টেইনকে আরেকটি চার মেরে কুশল পৌঁছলেন ফিফটিতে, তাও ৫২ বলে। অন্যদিকে ওশান্ডার ব্যাটও যেন কথা বলছে পিকাসোর তুলির আঁচরের মতো। ডু প্লেসি ফিল্ডিং বদলে ফ্লাই সিপ আনলেন, তারা খেলছিলেন কাভারে। আবার ফ্লাই স্লিপ সরালেন, দুজন খেলতে শুরু করলেন স্লিপের ওপর দিয়ে। এর মধ্যে ওশান্ডাও মহারাজকে চার মেরে পৌঁছে গেলেন ফিফটিতে।

    শ্রীলঙ্কা তখন জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে। স্টেইন, অলিভিয়ের, রাবাদা, মুল্ডার, মহারাজ- কেউই কিছু করতে পারছিলেন না। প্রতি ওভারেই প্রায় এক দুইটা চার মেরে দূরত্বটা ঘোচাচ্ছিলেন দুজন। মহারাজকে ছয় মেরে জয় থেকে মাত্র ১ রানের দূরত্বে নিয়ে এলেন দুজন। আগের টেস্টের মহাকাব্যের নায়ক কুশাল পেরেরাকে আর মাঠেই নামতে হলো না। ওশান্ডার ব্যাটেই সেই ১ রান এলো, দুজনের জুটিটা হলো ২১৩ বলে ১৬৩ রানের। ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার পর মাত্র তৃতীয় দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিতল শ্রীলঙ্কা।