• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    লিভারপুল ও অ্যানফিল্ডের অন্দরমহলে

    লিভারপুল ও অ্যানফিল্ডের অন্দরমহলে    

    একসময় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা না থাকা অ্যানফিল্ডের ঘাস এখন গালিচার মত মোলায়েম। পুরো স্টেডিয়ামে লালের ছোঁয়া।/রিজওয়ান আবীর


    লিভারপুল ফুটবল ক্লাব- যার জন্মটা এক ব্যবসায়ীর হাত ধরে। যে ক্লাবের গল্পে মিশে আছে একটা বন্দর, সে বন্দরকে মেরে যাওয়া একটা খাল। যে গল্পে মিশে আছে তাদের এখনকার মাঠে একসময় খেলে যাওয়া এভারটন বা ৩৫ মাইল দূরের শহরের এক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে তাদের দ্বৈরথ। আর আছে অ্যানফিল্ড, যেখানে ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’। অ্যানফিল্ড ও লিভারপুল ঘুরে এসে লিখেছেন রিজওয়ান আবীর….


    হোউল্ডিং ও ওরেল সাহেবের দ্বন্দ্বটা কয়দিন ধরে চরমে পৌঁছেছে।

    রবিবার বিকাল। কফির কাপটা টেবিলের উপর রেখে ওরেল সাহেব বাইরে তাকালেন- অ্যালবার্ট ডক সবসময়ের মতোই জমজমাট। মাত্রই একটা বাণিজ্যিক জাহাজ এসে থেমেছে, কুলির দল হাঙ্গামা করছে কাজ পাওয়ার জন্যে। ওরেল সাহেবের অবশ্য সেদিকে তেমন মনযোগ নেই, দুপুরে নানা হাত ঘুরে আসা একটি চিঠির কথা ভাবছেন তিনি।

    সে চিঠি কয়েক বছর আগে শুরু হওয়া সমস্যার একরকমের চূড়ান্ত পর্যায়- পেশাদার ফুটবল লিগ শুরু হওয়ার পর হোউল্ডিং সাহেবের লোভটা বেড়ে গেছে অন্যায্য রকমের। লাভের কথা বলে এভারটনকে অ্যানফিল্ডে খেলতে রাজি করিয়েছিলেন, এভারটন কমিটি টাকার গুরুত্ব আর লোক জমায়েতের কথা মাথায় রেখে রাজিও হয়ে গিয়েছিল। টালবাহানা শুরু হল এক বছরের মধ্যেই, ভাড়া দ্বিগুণ করে দিলেন হোউল্ডিং। দুপুরে আসা চিঠিতে আরো কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি, ওকফিল্ড রোডের হোটেলের ভাড়াও নাকি বাড়িয়ে দিবেন। এত কম টাকায় নাকি বিশ-ত্রিশজন খেলোয়াড়ের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে তার পোষায় না।

    জানুয়ারি মাসের বিকাল বলে সন্ধ্যাটা নেমে আসে ঝুপ করে। দোতলার কফিশপটা থেকে নেমে আসতেই ধুপ করে নাকে এল কয়লা পোড়ার গন্ধ, আর কানে একগাদা হট্টগোল। ভারত থেকে বিকালে আসা জাহাজটা থেকে ব্যারেল ভর্তি করে তুলা নামাচ্ছে কুলির দল। এই তুলা এরপর ট্রেনে চাপিয়ে নেওয়া হবে ৩৫ মাইল দূরের ম্যানচেস্টারে কাপড়ের কারখানায়। ওরেল ভীড় ঠেলে এগুতে এগুতে ভাবতে লাগলেন, ‘নাহ এভাবে চলে না আর’। সিদ্ধান্ত একটা নিয়ে ফেললেন মনে মনে। মার্সি থেকে ভেসে আসা ঠান্ডা বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ির পথ ধরলেন। এক গাদা চিঠি লিখতে হবে আজ রাতে।

    পরের রবিবার। চার্চে এদিন লোকসমাগম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। পাদ্রী ‘আমেন’ বলার সাথে সাথে কিছু লোক জটলা বেঁধে বের হয়ে গেলেন, গন্তব্য ওকফিল্ড রোডের স্যান্ডন হোটেল। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করে আছেন সবাই, হোউল্ডিংও আছেন। কমিটি মেম্বাররা সবাই উপস্থিত হয়েছে নিশ্চিত হয়ে ওরেল গলা খাঁকারি দিলেন।

     

    ভারত থেকে বিকালে আসা জাহাজটা থেকে ব্যারেল ভর্তি করে তুলা নামাচ্ছে কুলির দল। এই তুলা এরপর ট্রেনে চাপিয়ে নেওয়া হবে ৩৫ মাইল দূরের ম্যানচেস্টারে কাপড়ের কারখানায়।/রিজওয়ান আবীর

     

    ‘আপনি এভাবে সবাইকে জিম্মি করে ভাড়া বাড়াতে পারেন না!’- হোউল্ডিংকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া কথাটায় সাঁয় দিলেন উপস্থিত প্রায় সবাই। হোউল্ডিং অবশ্য কিছুই বললেন না, চুরুটে টান দিতে দিতে ওরেল সাহেবের সব কথা নীরবে শুনে গেলেন।

    ‘দেখুন, ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা বেশি ভাল না। ডকে কাজ কমে যাচ্ছে, শ্রমিকরা বেশি বেতনের আশায় সব ম্যানচেস্টারের কাপড় কলে ছুটছে। আর জিনিসপত্রের দাম কেমন বেড়েছে সেটা তো আপনারা জানেন, এখন আমি যদি বাজারমূল্য চিন্তা করে মাঠের ভাড়া, হোটেলের ভাড়া দু’পয়সা বাড়াই তাতে তো আপনাদের কথা থাকা উচিৎ না।’


    জন হোউল্ডিং (১৮৩৩-১৯০২)- লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা। লিভারপুল শহরের লর্ড মেয়র ছিলেন অনেক বছর, পাশাপাশি হোটেল ব্যবসা এবং চোলাইখানার সাথে জড়িত ছিলেন। “কনজার্ভেটিভ” মতবাদের ছিলেন, লিভারপুলে আইরিশ শ্রমিকদের সহ্য করতে পারতেন না। তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্যান্ডন হোটেলই এখন লিভারপুল সমর্থকদের প্রধান মিলনস্থল।

    জন ওরেল- অ্যানফিল্ডের জমি প্রকৃতপক্ষে ওরেল পরিবারের সম্পত্তি ছিল। ১৮৮৪ সালে অ্যানফিল্ডের জমি দু’ভাগ হওয়ার পর এক ভাগ ওরেল বিক্রি করে দেন হোউল্ডিংয়ের কাছে। হোউল্ডিং এভারটন কর্তৃপক্ষ থেকে ঐ জমি মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভাড়া নিতেন, আবার তিনি এভারটন ক্লাবের চেয়ারম্যানও ছিলেন। স্বার্থের সংঘাত সেখান থেকেই শুরু হয়। অবশ্য ভিন্ন সূত্র বলে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব কারণ ছিল না। ওরেল পরিবার তাদের পারিবারিক আবাসন ব্যবসার সুবিধার জন্য একটি রাস্তা বানাতে চাচ্ছিল যেটি অ্যানফিল্ডের ভেতর দিয়ে যাবে, স্পষ্ট করে বললে এতে হোউল্ডিং সাহেবের জমির পরিমাণ (এবং আয়) কমে যাবে। আবার ওরেলরা ধীরে ধীরে চোলাইখানার ব্যবসার সাথেও জড়িয়ে পড়লে হোউল্ডিংয়ের সাথে সেক্ষেত্রেও একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হয়।


    হোউল্ডিং সাহেবের কথায় তীব্র প্রতিবাদ উঠল রুমের মধ্যে- ‘তাহলে আপনি ক্লাবের শেয়ার কিনেছেন কেন? আপনার তো শর্তই ছিল যে ক্লাবের স্বার্থে চেয়ারম্যান থাকাকালীন মাঠ আর হোটেল ভাড়া বাবদ আপনি কোন লাভ করবেন না!’

    ‘সেটা দশ বছর আগের কথা!’

    ‘চুক্তিতে তো কোন সময়সীমার কথা ছিল না!’

    ‘আমি দুঃখিত যে, সে চুক্তি এখন মানা আমার পক্ষে সম্ভব না।’

    ‘তাহলে এভারটনের খেলাও আর অ্যানফিল্ডে সম্ভব না!’ চিৎকার করে উঠলেন ওরেল, ‘আপনি ক্লাবের টাকায় নিজের পয়সা বাড়াচ্ছেন, ক্লাবের ভালো আপনাকে দিয়ে হবে না। আমরা গুডিসন পার্কে চলে যাব। যা হয় হোক!’

    এবার একটু চমকে গেলেন হোউল্ডিং সাহেব। স্ট্যানলি পার্কের পাশেই গুডিসন পার্ক, মাঠ একটা আছে বটে সেখানে কিন্তু ওরকম সু্যোগ-সুবিধা নেই। স্ট্যান্ড তো দূরে, ড্রেসিং রুম পর্যন্তও নেই। ‘আপনি কি মনে করেন ওই মাঠ এখন খেলা আয়োজন করার উপযোগী আছে?’

    ‘সেটা আমরা বুঝে নিব, আর আপনার ক্লাবের শেয়ার আমরা কিনে নিচ্ছি বর্তমান দামে, কিছুদিন পরেই টাকা হাতে পেয়ে যাবেন।’

    ১৮৯২ সালের সে বিকেলে অ্যানফিল্ড থেকে বেরিয়ে গেল এভারটন এফসি অ্যান্ড অ্যাথলেটিক গ্রাউন্ডস লিমিটেড।


    প্তাহখানেক পর। কিছুদিন আপাতভাবে চুপচাপ বসে থাকার পর হোউল্ডিং রওনা দিলেন লন্ডনে- ওয়েম্বলিতে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে ঢুঁ মারতে। চুপ থাকতে থাকতেই অবশ্য আরেকটি ফুটবল ক্লাব তিনি তৈরি করে ফেলেছেন এখান-ওখান থেকে খেলোয়াড় ধার করে। লন্ডনে যাওয়ার উদ্দেশ্য সেই ক্লাবকে নিবন্ধন করানো। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য আবেদনপত্র দেখেই তা নাকচ করে দিল, হোউল্ডিং যে নতুন ক্লাবের নাম দিয়েছেন ‘এভারটন’! উদ্দেশ্য মোটেও সুবিধার ছিল না তার, আসল এভারটনকে সরিয়ে নতুন এই ক্লাবকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা মাত্র। এফএ-কে কুপ্রস্তাবে রাজি না করাতে পেরেই হোউল্ডিং আবেদনে নাম পরিবর্তন করে রাখলেন ‘লিভারপুল’। ঝানু ব্যবসায়ী বলেই হয়তো হোউল্ডিং মনস্তত্বটা ধরতে পেরেছিলেন ঠিকঠাক- নাবিকদের জীবনের সাথে এই মিথিক্যাল ‘লিভার’ বার্ডস জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে। উত্তাল মহাসমুদ্রে বুকে বল যোগানো ‘লিভার’ বার্ড এই ক্লাবেও দ্যোতনা সৃষ্টি করবে, আশা ছিল এমনই।

     

    উত্তাল মহাসমুদ্রে বুকে বল যোগানো ‘লিভার’ বার্ড এই ক্লাবেও দ্যোতনা সৃষ্টি করবে, আশা ছিল এমনই।/ রিজওয়ান আবীর

     

    জীবদ্দশায় অবশ্য সে দ্যোতনা হোউল্ডিং দেখে যেতে পারেন নি। মার্সিসাইডের মানুষ ক্লাব বলতে এভারটনকেই বুঝে, আর স্টেডিয়াম বলতে গুডিসন পার্ক। লিভারপুল ক্লাব হিসেবে যে খুব একটা খারাপ করছিল সেটা নয়, জন্মের সময় যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিল সেটাই ছিল অ্যানফিল্ডে লোক জমায়েতের পেছনে প্রধান অন্তরায়। মাত্র দু’বছরের মধ্যে লিভারপুল উঠে আসে প্রথম ডিভিশনে, জন্মের নয় বছরের মাথায় ১৯০১ সালে জিতে শিরোপা। কিন্তু ম্যাচের দিন মেরেকেটে হাজারখানেক দর্শকও অ্যানফিল্ডে হতো না! মার্সিসাইড ডার্বির দিন অবশ্য হত, তবে বেশিরভাগই আসতেন দুয়ো দিতে।

     

    অ্যালবার্ট ডকে বছরের প্রথম দিনই বহু মানুষের ভীড়। বেশিরভাগ লোকই ক্ষুব্ধ, উত্তপ্ত- পেটের উপর চাপ এসে পড়লে অবশ্য ক্ষুব্ধ না হয়ে উপায়ও নেই। সমস্যা ক্লাবকেন্দ্রিক নয়, শহরের অস্তিত্বই এখন শঙ্কার মুখে পৌঁছে গেছে। ঘটনার সূত্রপাত কয়েক বছর আগে ম্যানচেস্টার সিটি কাউন্সিলের সেই ঘোষণার সময়, তারা মার্সি থেকে একটা খাল খনন করবে যাতে জাহাজ লিভারপুলের বদলে সোজা ম্যানচেস্টারে চলে যেতে পারে। ম্যানচেস্টারের কটনমিল মালিকদের এতে অনেক লাভ, লিভারপুলের পোর্টের ভাড়া দিতে হয়না, সাথে লিভারপুল থেকে ম্যানচেস্টারে রেলযোগে তুলা নিয়ে আসার খরচও বেঁচে যায়। পোর্টসিটি লিভারপুল কাউন্সিল শুরু থেকেই এটার বিরোধী, কিন্তু খাল খননে সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

    ১৮৯৪ সাল, লিভারপুলের মুখের উপর ঝামা ঘষে দিয়ে ম্যানচেস্টার ক্যানাল দিয়ে প্রথম জাহাজ এসে পৌঁছুল ম্যানচেস্টারে। সাগর থেকে ৪০ মাইল ভেতরে থেকেও ম্যানচেস্টার আস্তে আস্তে হয়ে উঠল ব্রিটেনের অন্যতম প্রধান বন্দর! এ ঘটনার মাত্র তিন মাস পরে লিভারপুল মুখোমুখি হল নিউটন হিথের। ম্যানচেস্টার কেন্দ্রিক এই ক্লাবের বিপক্ষে ম্যাচের দিন এভারটন-লিভারপুল বিভেদ ভুলে অ্যানফিল্ডে ছিল মার্সিসাইডবাসীর উপচে পড়া ভিড়। নিছক ফুটবল ম্যাচের আদলে এ ছিল শহর বনাম শহরের লড়াই, ডকারদের সাথে শ্রমিকদের লড়াই, বন্দরের সাথে শিল্প-কারখানার লড়াই। সমর্থনের প্রতিদান লিভারপুল দিয়েছিল ঠিকই, ২-০ তে নিউটন হেলথকে হারিয়ে। স্যান্ডনে সে রাতে বিয়ারে গলা ভিজিয়েছিল এভারটন-লিভারপুল সব সমর্থকরাই, একসঙ্গে।

    ১৯০৬ সালে লিভারপুল যখন দ্বিতীয়বার লিগ জিতল, সে বছরই নিউটন হিথ হয়ে গেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। একই বছর এভারটন এফএ কাপ জেতায় অন্তত ফুটবলের দিক থেকে ম্যানচেস্টার পেছনে পড়ে গেল লিভারপুলের। ইউনাইটেডের তাতে কিছু যায় আসেনি অবশ্য- নাম বদলের দু’বছরের মাথায় প্রথম লিগ শিরোপা আর চ্যারিটি শিল্ড ট্রফি জিতে তারা যাত্রা শুরু করলো যেন আকাশপানে! এরপরের বছরই এফএ কাপ এলো ঘরে, ১৯১১ সালে দ্বিতীয়বার লিগ জিতে মাত্র পাঁচ বছরেই ধরে ফেললো লিভারপুলকে, এভারটনকে তো পেছনেই ফেললো।

     

    অ্যালবার্ট ডকে বছরের প্রথম দিনই বহু মানুষের ভীড়। বেশিরভাগ লোকই ক্ষুব্ধ, উত্তপ্ত- পেটের উপর চাপ এসে পড়লে অবশ্য ক্ষুব্ধ না হয়ে উপায়ও নেই।/ রিজওয়ান আবীর

     

    ইউনাইটেডের আকাশপানে সেই যাত্রা থমকে গেল বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, লিভারপুলের সামনে সুযোগ এলো এগিয়ে যাওয়ার।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কয়েক বছর প্রথম ডিভিশনে ছিল ইউনাইটেড, এরপরই রেলিগেশনের ধাক্কা। আর লিভারপুল পরপর দু’বছর জিতলো লিগ শিরোপা। অবশ্য এরপরই লাগে মড়ক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়া পর্যন্ত কোন দলই আর কোন শিরোপা জেতেনি।

     

    লিভারপুলের হয়ে ম্যাট বাসবি খেলতে নামেন ১৯৩৬ সালের ১৪ মার্চ। হাফ ব্যাক ছিলেন, মাঝে মাঝে উপরে এসে গোলও করতে পারতেন। পেশাদার ফুটবলে নাম লেখানোর আগে ছিলেন খনি শ্রমিক, সেই খনির শহর থেকেই উঠে আসা বব পেইজলি যখন তিন বছর পর লিভারপুলে যোগ দিলেন, দু’জনের বন্ধুত্ব হতে সময় লাগেনি একদমই। দুজনই চিন্তা করতেন কিভাবে শিরোপাখরা ঘোচানো যায়, দিন বদলানো যায়। বিশ্বযুদ্ধ সেটি আর হতে দিল না, পেইজলি ক্লাবে যোগ দিলেও মাঠে নামতে পারলেন না, চলে গেলেন সেনাবাহিনীতে। আর বাসবি কোচের দায়িত্ব নিলেন সেনাবাহিনীর শারীরিক শিক্ষা বিভাগে।

    যুদ্ধ শেষে দু’জনই ফিরলেন লিভারপুলে। খেলা ছেড়ে বাসবি চাইলেন কোচিং অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে, পেইজলি উৎসুক থাকলেন লিভারপুলের হয়ে অভিষেকের। গভর্নিং বডি বাসবিকে কোচের দায়িত্ব দিতে চাইলো, কিন্তু সেটা জর্জ কে-র সহকারী হিসাবে, প্রধান কোচ হিসাবে নয়। বাসবি চাইছিলেন প্রধান কোচের দায়িত্ব, তাই সরে আসলেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে কোচ নেই দেখে যোগাযোগ করলেন সেখানে, দ্য গ্রেট স্যার ম্যাট বাসবির সাথে ইউনাইটেডের গাঁটছাড়া সেখান থেকেই শুরু! লিভারপুল ভুল করেনি অবশ্য, জর্জ ২৪ বছর পর লিভারপুলকে এনে দিয়েছিলেন শিরোপা। পেইজলি লিভারপুলের হয়ে দ্বিতীয় মৌসুমেই শিরোপার স্বাদ পেয়েছিলেন। তবে এরপরই পাশার দান একেবারে উলটে গেল!


    স্যার আলেকজান্ডার ম্যাথু বাসবি (১৯০৯-১৯৯৪)- ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তী ম্যানেজার। ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু ম্যানচেস্টার সিটিতে, এরপর খেলেছেন লিভারপুলে। কিন্তু ম্যানেজার ক্যারিয়ার শুরু ইউনাইটেডে। তাঁর অধীনে ইউনাইটেড ইংলিশ লিগে জায়ান্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়, কিন্তু ‘মিউনিখ ট্রাজেডি’ তে হারান তাঁর দলের প্রায় সবাইকে। পরে অবশ্য নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে আবার ইউনাইটেডকে বিশ্বসেরায় পরিণত করেছিলেন।

    রবার্ট ‘বব’ পেইজলি (১৯১৯-১৯৯৬) - লিভারপুল টানা পাঁচবার ইংলিশ লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁর অধীনে। কার্লো আনচেলত্তি এবং জিনেদিন জিদানের বাইরে তিনিই একমাত্র ম্যানেজার যিনি চ্যাম্পিয়নস লিগ (তখনকার ইউয়েফা লিগ) তিনবার জিতেছেন। খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার দুই ভূমিকাতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতার রেকর্ড তার ছাড়া আছে আর মাত্র চারজনের।

    স্যার কেনেথ ম্যাথিসন ডালগ্লিশ (১৯৫১- ) - লিভারপুলের ইতিহাসে কিংবদন্তিতুল্য। স্কটিশ এই খেলোয়াড় লিভারপুলের হয়ে ম্যানেজার এবং খেলোয়াড় দুই ভূমিকাতেই সম্ভব সবকিছু জিতেছেন। অ্যানফিল্ডের পুরো একটি স্ট্যান্ড তাঁর নামে করা। লিভারপুলের সর্বশেষ শিরোপা ১৯৮৯-৯০ ৌসুমে এসেছে তাঁরই হাত ধরে।  


    বাসবির অধীনে ইউনাইটেড পরপর তিন বছর রানার্সআপ হয়ে শেষ করল, ১৯৫২ সালে এসে জিতল শিরোপা। এর মধ্যেই ঘরে তুললো এফএ কাপ। আর লিভারপুল যেতে লাগলো অধঃপতনের দিকে, শেষমেশ রেলিগেটেড হতে হল সেকেন্ড ডিভিশনে। বিল শ্যাঙ্কলি ১৯৫৯ সালে যখন কোচের দায়িত্ব নিলেন, লিভারপুল যেন বিধ্বস্ত এক জনপদ- অ্যানফিল্ডে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেই, ট্রেনিং গ্রাউন্ড ‘মেলউড’ এ ছিল গবাদি পশু চড়ানোর উপযোগী বিশাল বিশাল ঘাস!

     

    সেদিন সকাল থেকেই বিল শ্যাঙ্কলির মেজাজ খারাপ। বোর্ড পরিচালকদের সাথে দফায় দফায় মিটিং হয়েছে তার, কিন্তু তাদেরকে বোঝাতেই পারছিলেন না যে মেলউডের সংস্কার অ্যানফিল্ড সংস্কারের চেয়েও জরুরি! তিনি চাচ্ছিলেন আরো কিছু খেলোয়াড় কিনতে, কিন্তু তাদের সাফ কথা ‘এত টাকা লিভারপুলের নেই!’ রেগে মেগে মিটিং থেকে বের হয়ে গেলেন তিনি, ওয়াটারফ্রন্টের সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকবেন।

    যুদ্ধের ক্ষত মার্সির পাশের ডক থেকে পুরোপুরি শুকোয়নি তখনো, লিভার বিল্ডিংয়ের কিছু অংশে সংস্কার চলছে। বিশ্বযুদ্ধের সময় লিভারপুল ছিল ব্রিটেনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী- ‘দ্য ব্যাটল অব আটলান্টিক’ এর যাবতীয় রসদ যোগানো হত এখান থেকে, যুদ্ধাহত নাবিকদের সেবা হতো এখানকার হাসপাতালে, সামরিক নৌযানের প্রস্তুতি সারা হত অ্যালবার্ট ডকে। জার্মানরা জানতো সেসব, লন্ডনের পর সবচেয়ে বেশি বোমা তাই এ শহরেই পড়েছিল। যুদ্ধের পর অবশ্য ডক ব্যবসা কমে গেছে, মানুষ আস্তে আস্তে ঝুঁকেছে অন্য পেশায়। তবে একটা চিত্র বদলায়নি, ওয়াটার ফ্রন্টের সামনে মানুষের ভিড়। সাদাসিধে জীবন তাদের, কাপড়-চোপড়ে এখনো পুরনো দিনের নৌযাত্রার চিত্র লেগে আছে। ফুটবল তাদের কাছে একমাত্র বিনোদন, লিভারপুল জিতলেই তাদের পর্যুদস্ত জীবনে একটুখানি সুখ আসে। বিয়ারের স্বাদে কিছুটা বৈচিত্র্য আনে ওই ফুটবলই।

     

    তবে একটা চিত্র বদলায়নি, ওয়াটার ফ্রন্টের সামনে মানুষের ভিড়। সাদাসিধে জীবন তাদের, কাপড়-চোপড়ে এখনো পুরনো দিনের নৌযাত্রার চিত্র লেগে আছে। ফুটবল তাদের কাছে একমাত্র বিনোদন, লিভারপুল জিতলেই তাদের পর্যুদস্ত জীবনে একটুখানি সুখ আসে। বিয়ারের স্বাদে কিছুটা বৈচিত্র্য আনে ওই ফুটবলই। /রিজওয়ান আবীর

     

    মার্সির সামনে শ্যাঙ্কলি এসেছিলেন লিভারপুল ছেড়ে দিবেন এ সিদ্ধান্ত নিয়ে, কিন্তু ফিরে গেলেন তা পরিবর্তন করে। ‘এ মানুষগুলা আমার মতোই, আবেগী। এদের জন্যই লিভারপুল ছেড়ে যাব না!’

    পরদিন আচ্ছামতো তর্ক করলেন পরিচালকদের সাথে। বোঝালেন, চিৎকার করলেন, রাগে ফোঁপালেন। অবশেষে এরিক সয়্যারের মন গললো। এই পরিচালকই পরে অন্যদের বোঝাতে সক্ষম হলেন। শ্যাঙ্কলির চাপাচাপিতে মেলউডে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করা হল, অ্যানফিল্ডে ৩০০০ পাউন্ড খরচে বসানো হল পানি ছিটানোর যন্ত্র। আর দলে নেওয়া হল দুজন প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার।

    শ্যাঙ্কলি লিভারপুলের হয়ে এরপর যা করেছেন সেটাকে এক কথায় বলা যায়- ‘ইতিহাস’। প্রথম বছর দ্বিতীয় বিভাগে তৃতীয় হয়েছিল দল, তখন প্রথম বিভাগ থেকে রেলিগেটেড হত দুই দল, পরের মৌসুমেও তাই দ্বিতীয় বিভাগে থেকে যেতে হয় লিভারপুলকে। ওই বছর আরো কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ভেড়ান শ্যাঙ্কলি, বাজি ধরা নতুন খেলোয়াড়রা চ্যাম্পিয়ন করেই লিভারপুলকে তুলে আনেন প্রথম বিভাগে। বিলের অধীনে প্রথম বছর মৌসুমশেষে লিভারপুলের অবস্থান ছিল আট, পরের বছর সেখান থেকেই চ্যাম্পিয়ন! ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে প্রথমবারের মত ইউরোপিয়ান কাপে খেলতে এসেই সেমিফাইনাল, পরের মৌসুমে ফাইনালে পৌঁছে ডর্টমুন্ডের কাছে ২-১ এ হেরে রানার্স আপ। ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছিলেন অবশ্য পরে- ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে ক্লাবকে প্রথমবারের মত শ্যাঙ্কলি পরিচয় করিয়ে দেন ‘ডাবল’ এর স্বাদের সাথে। ইউরোপিয়ান কাপের সাথে ঐ মৌসুমেই অষ্টম বারের মত ঘরে নিয়ে আসেন লিগ শিরোপা।

    'অ্যান্ড ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন...ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন...’/ রিজওয়ান আবীর

    শ্যাঙ্কলির পর পেইজলি দায়িত্ব নেন লিভারপুলের। সেই পেইজলি যিনি ম্যাটের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে লিভারপুলকে করতে চেয়েছিলেন বিশ্বসেরা। ম্যানেজার হিসাবে পেইজলির অর্জন ছিল অবিশ্বাস্য, ১৯৭৫-৭৬ থেকে টানা ৫ বছর লিভারপুল জিতেছিল লিগ শিরোপা! দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে জেতান চ্যাম্পিয়নস লিগ (তখনকার ইউয়েফা কাপ)। ইউরোপিয়ান কাপ জেতান আরো তিনবার, আসে ইউয়েফা সুপার কাপের শিরোপা।

    শ্যাঙ্কলির অধীনে পেইজের মত লিভারপুল অত ট্রফি জেতেনি হয়তো, কিন্তু লিভারপুলের ইউরোপিয়ান ‘জায়ান্ট’ হবার পেছনে তার অবদানটাই আসল। একটা গড়পড়তা ক্লাবকে তিনি তুলে এনেছিলেন ‘অভিজাত’দের কাতারে, ‘মার্সিসাইডার’দের কাছে এভারটনকে টপকে আগে এনেছিলেন লিভারপুলকে। সমর্থকদের তিনি মনে করতেন দ্বাদশ খেলোয়াড়, ‘দিস ইজ অ্যানফিল্ড’ স্লোগানটা তারই সৃষ্টি। লিভারপুলের সাথে একাকার হয়ে যাওয়া ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’ গান গাওয়া শুরু শ্যাঙ্কলির আমলেই। লিভারপুলের বর্তমান ‘ক্লাব কালচার’ এর সূত্রপাতও সেখানেই! অ্যানফিল্ডের বাইরে তাই কেনি ডালগ্লিশ অথবা হালের স্টিভেন জেরার্ডের কোন মূর্তি নেই, বব পেইজলিরও নেই; কিন্তু বিল শ্যাংকলির আছে। যেখান লেখা ‘হি মেইড দ্য পিপল হ্যাপি।’ অ্যানফিল্ডের বাইরে দুই হাত বাড়িয়ে আজও স্বাগত জানাচ্ছেন দুনিয়ার যে কোনও প্রান্ত থেকে আসা সমর্থকদের।

     

    লিভারপুলের বর্তমান ভয়ঙ্কর ত্রয়ী ড্রেসিংরুমেও বসেন পাশাপাশি/রিজওয়ান আবীর

     

    ন্ডন থেকে লিভারপুলে আসার সবচেয়ে সহজ উপায় এখন বুলেট ট্রেন। লাইম স্টেশনে নামলেই কানে আসে অ্যালবাট্রসের ডাক। স্টেশন ছোট, প্ল্যাটফর্ম থেকে কয়েক কদম এগুলেই রাস্তায় নেমে যাওয়া যায়। লাইম স্ট্রিট এটি, ডানে বিশাল এক প্রাসাদ। এক কালে লর্ড, কাউন্সিলরদের জায়গা ছিল সেটা- এখন ওয়ার্ল্ড মিউজিয়াম আর লিভারপুল সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। লাইম স্ট্রিট ধরে উত্তরে এগুতে থাকলে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গাংচিলের গান। চোখে পড়ে চিরায়ত ইউরোপিয়ান ঘরানার বাড়িঘর, সাথে আধুনিক স্থাপনা। মিনিট পনের হাঁটলে টিলার উপরে ওঠার একটি পথ- “এভারটন হিস্টোরিক ট্রেইল”, টিলার উপরে উঠলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুরো লিভারপুল শহর, তা ছাড়িয়ে সহজেই দেখা যায় মার্সি নদী। চোখে পড়ে নীল কালিতে লেখা ‘ফরেভারটন’ স্লোগান, লিভারপুলের উদ্দেশ্যে লেখা দুয়োধ্বনি।

    ট্রেইল ধরে এগুলে আসা যায় সেন্ট ডমিংগো রোডে, সেখান থেকে ১০ মিনিট দূরেই সেই বিখ্যাত ওকফিল্ড রোড। ডমিংগো রোড থেকেই চোখে পড়ে সেই চিরচেনা স্থাপনা, সাথে বিশালাকার লেখা- ‘দিস ইজ নট স্টেডিয়াম, দিস ইজ হোম’। স্যান্ডনের সামনে থেকেও চাইলে আসা যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্য ঘুরতে হয় একটু। ভেনমোর স্ট্রিট দিয়ে শর্টকাট মেরে আসাই সহজ তার চেয়ে। অ্যানফিল্ডের সামনে দাঁড়ালে এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়, বিল শ্যাঙ্কলির মূর্তির সামনে দাঁড়ালে শ্রদ্ধা জাগে মনে। সাইডার কাঠ দিয়ে বানানো সেই কপ স্ট্যান্ড এখন ইউরোপের অন্যতম সেরা এক বিশাল গ্যালারি। পানি ছিটানোর ব্যবস্থা না থাকা অ্যানফিল্ডের ঘাস এখন গালিচার মত মোলায়েম। পুরো স্টেডিয়ামে লালের ছোঁয়া, ছাদে উঠলে লিভারপুল শহরটাকে আরেকবার দেখা যায় পাখির চোখে।

     

    মিনিট পনের হাঁটলে টিলার উপরে ওঠার একটি পথ- “এভারটন হিস্টোরিক ট্রেইল”, টিলার উপরে উঠলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুরো লিভারপুল শহর, তা ছাড়িয়ে সহজেই দেখা যায় মার্সি নদী।/রিজওয়ান আবীর

     

    অ্যানফিল্ড থেকে ওয়াটারফ্রন্ট অবশ্য বেশ দূরে, প্রায় তিন মাইলের মত। অ্যালবার্ট ডকটা আগের মতই আছে, শুধু জাহাজ এখন আর ভেড়ে না। পুরনো ডকহাউসের লাল দালানগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ওয়াটারফ্রন্টের সামনে এখনো প্রচুর মানুষ, তবে তাদের বেশিরভাগই ভ্রমণকারী। মার্সির পাশে রেলিংয়ে ভর করে শহরের দিকে তাকালে সেই লিভার বিল্ডিং চোখে পড়ে। বিল্ডিং এর চূড়ায় আজও নাবিকদের প্রতি খেয়াল রেখে চলছে ‘লিভার বার্ড’রা। ডকাররা এখন ধোপদুরস্ত পোশাক পরা আধুনিক কর্মকর্তা, আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত শহর এখন ইউনেস্কো ‘হেরিটেজ সিটি’।

    একটা বিষয় অবশ্য এখনো বদলায়নি- ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা। সেটা এখনো আগের মতই আছে। এভারটন-লিভারপুল এখানে কোন বিষয় নয়, এজন্যে এখনো ইউরোপের একমাত্র ডার্বি এটি যাতে সমর্থকরা একই স্ট্যান্ডে মিলেমিশে খেলা দেখতে পারে। অল-রেড জার্সি পরে এভারটন পার্কে খুব সহজেই হেঁটে আসা যায়, আবার ব্লু স্কার্ফ কাঁধে জড়িয়ে ওকফিল্ড রোডে পিৎজা খেতে গেলেও কেউ কিছু মনে করে না। একা হাঁটলেও শহরটাকে পর মনে হয় না, নতুন এলেও মনে হয়না শহরটা অচেনা। কারণ কানে ফিসফিসানি একটা থেকেই যায়,

    ‘ওয়াক অন, ওয়াক অন...
    উইথ হোপ ইন ইয়র হার্ট...
    অ্যান্ড ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন...ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন...’

     

    লেখক- প্যাভিলিয়ন কন্ট্রিবিউটর। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহতে পিএইচডি গবেষক।

     

     

     

    Pavilion Android App
    Pavilion Android App