• " />

     

    'সাদা' ক্রিকেট, 'কালো' ক্রিকেট - পর্ব ২

    'সাদা' ক্রিকেট, 'কালো' ক্রিকেট - পর্ব ২    

     

    সাদা-কালো বৈষম্য, শ্বেতাঙ্গ-অশ্বেতাঙ্গ জাতিবিদ্বেষ- বিংশ শতাব্দীতেও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসবের শিকড় উপড়ে ফেলা যায়নি। ইতিহাসের একমাত্র দেশই হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা, যেখানে প্রত্যেক খেলার জাতীয় দল ছিল একাধিক! প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ছিল শুধু সাদা ক্রিকেটারদের জন্যে। কালো তো বটেই অশ্বেতাঙ্গরাই সেখানে সু্যোগ পেত না। কালোদের জন্যে চালু ছিল আলাদা লিগ, সু্যোগ-সুবিধা ছিল সীমিত, মাঠ সংকট ছিল প্রকট। অনেক ক্ষেত্রেই মাঠগুলোতে কালোদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ করা হত। বিস্ময়কর হলেও সত্যি গত শতাব্দীর ষাটের দশকে দুনিয়ার একপ্রান্তে যখন চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন সরকার তখন ব্যস্ত ছিল সাদা-কালো বৈষম্য জিইয়ে রাখার নির্লজ্জ এবং প্রকাশ্য অনাচারে। জয়-পরাজয়ের ঊর্ধ্বে সম্প্রীতিই যেখানে শেষ কথা, দক্ষিন আফ্রিকায় সেই খেলাধুলা নিয়েই ঘটছিল সম্প্রীতি বিনাশের কর্মযজ্ঞ।এসবের ফলশ্রুতিতেই তাদের উপর নেমে আসে নিষেধাজ্ঞা। দীর্ঘ ২২ বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছিল নির্বাসিত। ক্রিকেটীয় চেতনার জন্যে অপমানকর সেই ঘটনাবলীর পূর্বাপর আর প্রভাব নিয়েই চার পর্বের এই ধারাবাহিক।

     


    আরো পড়ুনঃ

    'সাদা' ক্রিকেট, 'কালো' ক্রিকেট - পর্ব ১


     

    ৫. সবুজ কালিতে লেখা চিঠি...
     

     

    মানুষ অল্প দুঃখে কাঁদে, বেশি দুঃখে হতবাক হয়ে যায়। লড়াকুরা হোঁচট খেলেও থেমে থাকে না, ক্ষোভকে পরিণত করে শক্তিতে। বার্তালোমিউ-ও যেমন লড়াকু ছিলেন, ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করে হার মানেননি বলেই তো লিসবনের বন্দরে তাঁর শ্বেতশুভ্র ভাস্কর্য আজো চোখে পরে। আজ হয়নি বলে যে কোনদিনই হবে না এমন কোন কথা তো আর নেই। সাহসীরা তাই আগুয়ান হয়। দুঃখবন্দী হয়ে না থেকে অন্তরে বারুদ জ্বালায়।

     

    একেকটি দুঃখ একেকটি দেশলাই কাঠির মতন, অবয়ব সাজায় ভয়ংকর সুন্দরের কালো কালো অগ্নিতিলকে’।

     

    হেলাল হাফিজের কবিতা অলিভেইরা নিশ্চিতভাবেই পড়েননি। কিন্তু শোককে শক্তিতে প্রকাশ করার চিরন্তন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঠিকই ঘটিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরকে কেন্দ্র করে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলার যেই রেণু পাখা মেলেছিল, ‘সাদা’ ক্রিকেট-দুর্বৃত্তদের হাতে তা নৃশংসভাবে খুন হল। অলিভেইরা আরো হতাশ হয়েছিলেন কারণ তৎকালীন আফ্রিকান কিছু অশ্বেতাঙ্গরাও এই সফরের বিরোধিতা করেছিলেন! তাদের যুক্তি ছিল- এত ‘হাই স্ট্যান্ডার্ড’ খেলা নিয়ে কালোদের উচ্চকিত হওয়া এবং নিজেদের ‘ব্লু ব্লাড’ দের কাতারে নিয়ে যাবার প্রচেষ্টা নেহায়েত অর্থহীন! নিজের সমাজ থেকেই এমন বঞ্চনা ‘উপহার’ পাওয়ার পর হতাশ অলিভেইরা চিঠি পাঠালেন ইংল্যান্ডে, ইংলিশ ধারাভাষ্যকার জন আরলট-র কাছে। আরলট ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে ইংল্যান্ডের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করার সময়ই কালোদের উপর সাদাদের অত্যাচার কি পর্যায়ে চলছিল তা হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন। ইউরোপে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকিত শোরগোলের মধ্যে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল অবিসংবাদিত।

     

    বিক্ষুব্ধ অলিভেইরা সবুজ কালিতে লিখে পাঠালেন তাঁর প্রতি করা অবজ্ঞার ইতিহাস। তিনি সাদা নন, ‘কালারড’ দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়ক; তাই তাঁর চিঠির রঙ ও ছিল ‘কালারড’। চিঠিতে আকুল অনুরোধ জানালেন সে দেশ থেকে তাঁকে বের করে নেয়ার জন্যে, ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে একটু সুযোগ দেয়ার জন্যে। তিনি সাদা-কালো সমান অধিকার চাননি, সামাজিকভাবে কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথাও সেখানে বলেননি। তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ক্রিকেট খেলা - যেখানে তাঁর প্রত্যেকটা শটে দর্শক হাততালি দিবে, তাঁর উইকেটপ্রাপ্তির আনন্দে শুধু কালোরাই উচ্ছ্বসিত হবেনা। সবুজ কালিতে লেখা অলিভেইরার চিঠি যেন ছিল অলিন্দের গোপন ইচ্ছার রক্তাক্ত কথামালা! 

     

    ৬. গন্তব্য ল্যাঙ্কাশায়ার

     

    দক্ষিণ আফ্রিকার অমানবিকতার বিরুদ্ধে এমনিতেই সোচ্চার জন আর্লট ঐ চিঠি পাবার পর আর স্থির থাকেননি। সাথে সাথেই তিনি যোগাযোগ করেন জন কে এর সাথে, ল্যাঙ্কাশায়ার লিগের অনেক ক্লাব কর্মকর্তার সাথে ঐ ব্যক্তির উঠাবসা ছিল। তিনিই মিডলটনের হয়ে অলিভেইরার খেলার ব্যবস্থা করে দেন। অতঃপর ১৯৬০ সালে জন্মভূমি ত্যাগ করলেন বাসিল ডি’অলিভেইরা। কেপটাউনের প্রতি মায়াকে অগ্রাহ্য করলেন স্বজাতিদের নির্লিপ্ততা আর জাতবিদ্বেষী কর্মকর্তাদের অনাচারের শিকার হয়ে।

     

    মিডলটন তাঁকে মাসিক ৪৫০ পাউন্ডের প্রস্তাব দিয়েছিল। ভিনদেশে বসত গড়তে চাওয়া অলিভেইরা এতেই সন্তুষ্ট ছিলেন। অসচ্ছল পরিবারে জন্মানো অলিভেইরার ইংল্যান্ডে যাবার বিমানভাড়া যোগানোর সামর্থ্যটুকুও ছিল না! একজন ভারতীয় সাংবাদিক নিজ উদ্যোগে অনুদান সংগ্রহ করে ২০০ পাউন্ডের এয়ার টিকেট তাঁকে ব্যবস্থা করে দেন।

     

    ইংল্যান্ডে অলিভেইরার জীবন একেবারেই বদলে দেয়। সব সাদা লোকেরাই যে খারাপ নয় এরূপ প্রমাণ ইংল্যান্ড এসে পেয়ে তিনি হতবাক হয়ে যান। সাজঘরের সমস্ত সতীর্থরাও তাঁকে সাদরে বরণ করে নেন। তিনি যে 'কালো' -এজন্যে কোথাও তাঁকে হেনস্তা হতে হয়নি। প্রথম প্রথম শ্বেতাঙ্গদের সাথে মিশতে তিনি সঙ্কোচ বোধ করতেন। ইংল্যান্ডের ঝাঁ চকচকে আভিজাত্য আর আধুনিক প্রযুক্তির সরঞ্জাম দেখে বিস্মিত হতেন। তবে ক্লাব কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা, মানুষ হিসেবে সম্মান প্রদান আর ‘লোকাল হিরো’ হিসেবে অভিধা তাঁকে ধীরে ধীরে ইংলিশ জীবন-যাপনের সাথে অভ্যস্ত করে তুলে।

     

    আর ক্রিকেট? প্রথম দিকে ঘাসের উইকেটে রানের জন্যে সংগ্রাম করলেও আস্তে আস্তে সেটা মানিয়ে নেন। ফলশ্রুতিতে মৌসুম শেষে তাঁর অ্যাভারেজ দাঁড়ায় লিগে সর্বোচ্চ। রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তাঁর নিচে কালো করে আরেকজন অলরাউন্ডারও কিন্তু ছিলেন - স্যার গ্যারি সোবার্স, সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারের নাম বলতে গেলে তাঁর নামই কিন্তু আগে আসবে!

     

    ৭. ‘ফার্স্ট ক্লাস’

     

    শুধুমাত্র অশ্বেতাঙ্গ বলেই যে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ব্রাত্য হয়ে ছিলেন সেটার প্রমাণ একে একে দিতে থাকেন অলিভেইরা। অসাধারণ ব্যাটিং পারফরম্যান্সের পুরস্কার স্বরূপ ডাক পান পূর্ব আফ্রিকা সফর করার জন্যে। অবশ্য সেটি ছিল সৌজন্য সফর, কোন ম্যাচই তাই প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পায়নি। ঐ সফরে অলিভেইরার সতীর্থ ছিলেন স্যার এভারটন উইকস, যিনি ঐ সফরে খেলা অলিভেইরার একটি ইনিংসকে তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস দেখার অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। পরের বছর কমনওয়েলথ দলের অধীনে অলিভেইরা পাকিস্তান সফর করেন। উপমহাদেশীয় মন্থর পিচও তাঁর রানের চাকা থামাতে পারেনি। ৫২ গড়ে ঐ সফরে তিনি ২৬০ রান করেছিলেন।

     

    ক্রমশ ইংলিশ আদবকেতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠা বাসিল অলিভেইরা ১৯৬৪ সালে ইংলিশ নাগরিকত্ব পান। এরপরই যোগ দেন উস্টারশায়ারে। অবশেষে পূরণ হয় তাঁর প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলার ইচ্ছা। উস্টারশায়ারে যোগ দেয়ার পথটাও কিন্তু অতটা মসৃণ ছিল না। সব ব্রিটিশই যে তাঁর প্রতি মানবিক আচরণ করছিল এমনটা ভাবা কিন্তু ভুল। উন্নাসিক অনেক নির্বাচকই কাউন্টি ক্রিকেট খেলার যোগ্য হিসেবে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি। এরূপ পরিস্থিতিতে টম গ্র্যাভিনি তাঁকে সহযোগিতা করেন। ইস্ট আফ্রিকা এবং পাকিস্তান সফরের সময় বন্ধু বনে যাওয়া টমই অনেকটা জোর করে উস্টারশায়ার কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেন অলিভেইরাকে সাইন করানো জন্যে।

     

    বন্ধুর বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে অলিভেইরা এতটুকুও সময় নেননি। পরের বছরই উস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়। ঐ মৌসুমে দুই বন্ধু টম এবং অলিভেইরার মিলিত রান ছিল ৩০০০ এর উপরে। ছয়টি শতক হাঁকিয়ে অলিভেইরা করেছিলেন ১৬৯১ রান। সাথে দেখছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান কালো হয়েও টেস্ট ক্যাপ মাথায় তুলার অসম্ভব স্বপ্নটাও।

     

    ৮. বয়স চুরি!!!

     

    প্রথম পর্বে বলেছিলাম- বাসিল ডি’অলিভেইরার বয়স নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যেও ধোঁয়াশা আছে। অলিভেইরা যে তাঁর বয়স ঐ সময় গোপন করেছিলেন! জীবনের শেষভাগে এসে আত্নজীবনী রচনার সময় তিনি স্বীকার যান যে, তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালে। কিন্তু তাঁর প্রোফাইলে জন্মতারিখ দেয়া ছিল ১৯৩৪। খেলা ছাড়ার পর সেটাকে আবার সংশোধন করে বলেছিলেন ১৯৩১। এখন সবখানে তাঁর জন্মসাল এই ১৯৩১-ই দেয়া।

     

    বয়স নিয়ে কেন এই লুকোচুরি জানেন? শুধুমাত্র টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণ করার জন্যে। ইংলিশ না হলেও ইংল্যান্ড জাতীয় দলে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়ে খেলা যায়। নাগরিকত্ব পাবার পর অলিভেইরার স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায় সেটাই। ১৯২৮ সালে জন্ম হিসেব করলে ১৯৬৬ সালে তাঁর বয়স হয়ে গিয়েছিল ৩৮। এই বয়সে কোন জাতীয় দলই কোন খেলোয়াড়কে টেস্ট ক্যাপ মাথায় তুলে দিবে না। এর উপর তিনি ইংলিশও ছিলেন না, অশ্বেতাঙ্গ এক হতভাগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর ইংল্যান্ডে আগমন ঘটেছিল। কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর রাজসিক উত্থান নাকউঁচু অনেক ব্রিটিশদেরও চক্ষুপীড়ার কারণ ছিল। অলিভেইরা বুঝতে পারছিলেন, যেকোন সামান্য অজুহাতেই তাঁকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া হতে পারে। বয়স নিয়ে মিথ্যা বলার কারণ ওটাই। ১৯৩৪ সালে জন্ম হিসেব করলে অভিষেকের সময় তাঁর বয়স দাঁড়ায় ৩২। একজন ব্যাটসম্যানের জন্যে এটা তেমন কোন বয়স অবশ্যই নয়।

     

    ৯. স্বপ্নের মাঠে স্বপ্ন পূরণ...

     

    কেপটাউনের ঘিঞ্জি এলাকায় জন্ম, বেড়ে উঠা। কালো বলে মার খেতে হয়েছে শৈশব, কৈশোরের প্রতিটি পদে। ক্রুদ্ধ চিত্তে সয়ে যেতে দেখেছেন কালোদের উপর সাদাদের নিপীড়ন, ব্যথিত হয়ে দেখেছেন নিপীড়িত মানুষের চোখের আশাহীন, বিড়ম্বিত দৃষ্টি।

     

    ‘আমার শৈশব বলে কিছু নেই, আমার কৈশোর বলে কিছু নেই, আছে শুধু বিষাদের গহীন বিস্তার’।

     

    সেই বিষাদের বিস্তার অতিক্রম করেই বাসিল ডি’অলিভেইরা নামলেন টেস্ট খেলতে, ইংল্যান্ডের হয়ে। ৬ বছর আগেও যার ঠিকুজি ছিলনা, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটই যার কাছে ছিল দূর আকাশের স্বপ্ন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলতে না পারার দরুণ যিনি ছিলেন ক্লান্ত-পরাজিত এক সেনাপতি; সেই তিনিই নামলেন টেস্ট খেলতে। ভাগ্যের পরিহাসে নামলেন সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই বিরুদ্ধেী, নামলেন ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে, কালো হয়েও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ালেন ‘অভিজাত’-দের কাতারে। আজকে যা হয়নি সেটা কখনোই হবে না, এমন কোন কথা আসলেই তাই নেই। জীবন থেমে থাকে না, এগিয়ে যায়। মার খেতে থাকা দুর্বলদের প্রতিবাদ করার ভাষা তাই চিরকালই রুদ্ধ থাকেনা, সামনে এগুতে হয়। বুক চিতিয়ে অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়। আলো আসবেই, আঁধার কাটবেই। বাসিল ডি’অলিভেইরা ১৯৬৬ সালের ১৬ জুন লর্ডসে খেলতে নেমে এই চিরন্তন বাণীগুলোই আবার ছড়িয়ে দেন!

     

    অভিষেক ইনিংসে দুর্ভাগ্যক্রমে রানআউট হয়ে যান ২৭ রান করে। বোলিংয়েও তেমন কিছু করতে পারেননি। কিন্তু পরের টেস্টে দুই ইনিংসেই করেন অর্ধশতক, বোলিং করে দুই ইনিংসেই দুটি করে উইকেট তুলে নেন। পরের টেস্টে সাংঘাতিক ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়া ইংল্যান্ডকে টেনে তুলেন ৮৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে। ভুলে যাবেন না, প্রতিপক্ষ দলে তখন পেসারদের রাজত্ব- ওয়েস হল, চার্লি গ্রিফিথ, গ্যারি সোবার্স আর ল্যান্স গিবসদের হাত থেকে বল নয় বরং আগুনের গোলা ছুটে। এঁদের বিরুদ্ধেও তিনি সহজাত ব্যাটিং ছাড়েননি। ওয়েস হলকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মারার মত দুঃসাহসিক কাজও তিনি করে দেখান! ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স অবশ্য সতীর্থদের ব্যর্থতায় তিনি উপভোগ করতে পারেননি। দুইটি টেস্টেই তাঁকে পরাজয় দেখতে হয়।

     

    প্রথম সিরিজেই নিজের জাত চেনানো অলিভেইরা অবশেষে পান আন্তর্জাতিক পরিচিতি। ইংল্যান্ড ক্রিকেটে তিনি হন নতুন সেনসেশান। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দিয়ে তিনি জয় করে নেন বহু ইংলিশ ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়। চল্লিশের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও অলিভেইরার ব্যাট হাসতে থাকে। তবে নশ্বর দুনিয়াতে কোনকিছুই তো আর অবিনশ্বর নয়। অলিভেইরার দুঃসময় আসতেও তাই সময় লাগেনা। বরাবরের মত এবারও তাঁর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গায়ের রঙ। তবে এবার তিনি একা লড়েননি, তাঁর সাথে বিশ্ব মানবতাও লড়েছে; তাঁর হাতে হাত মিলিয়েছে সাদা-কালো নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ। তাঁকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়া ঘটনা প্রবাহে ভর দিয়ে খেলোয়াড়ি দুনিয়াতে অতঃপর প্রলয় ঘটে গেছে। সেই গল্প নাহয় আগামী পর্বের জন্যেই তোলা থাকলো।

     


    আরো পড়ুনঃ

    'সাদা' ক্রিকেট, 'কালো' ক্রিকেট - পর্ব ৩ 

    'সাদা' ক্রিকেট, 'কালো' ক্রিকেট - শেষ পর্ব