• আইপিএল ২০১৯
  • " />

     

    সিটি-লিভারপুলের ব্যবধান ১ পয়েন্ট, মুম্বাই-চেন্নাইয়ের ব্যবধান ১ রান

    সিটি-লিভারপুলের ব্যবধান ১ পয়েন্ট, মুম্বাই-চেন্নাইয়ের ব্যবধান ১ রান    

    আইপিএল, ফাইনাল
    মুম্বাই ১৪৯/৮, ২০ ওভার
    চেন্নাই ১৪৮/৭, ২০ ওভার 


    ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুলের ব্যবধান ১ পয়েন্ট। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ব্যবধান ১ রান। দুইয়ের তুলনা হয়তো হয় না, তবে আইপিএলের সূচনাতে হয়তো ছিল অমন এক প্রিমিয়ার লিগেরই স্বপ্ন। ২০১৯ সালে অন্তত শীর্ষ দুই দলের ব্যবধান মিলিয়ে দিল দুই লিগকে, ১ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে সিটির শিরোপ জেতার দিনে হায়দরাবাদের নাটকীয় ফাইনালে চেন্নাইকে ১ রানে হারিয়ে আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুম্বাই। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতল তারা, আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো।  

    এ ফাইনালের রিপোর্টটা অবশ্য অল্প কথায় শেষ করা শক্ত। এদিন নায়ক হতে পারতেন দীপক কিংবা রাহুল চাহার, নায়ক হতে পারতেন শেন ওয়াটসন। নায়ক হওয়ার কথা ছিল বুমরাহর। তবে শেষ মুহুর্তে গিয়ে, একেবারে শেষ বলে গিয়ে সব আলো কেড়ে নিলেন লাসিথ মালিঙ্গা, যিনি আগের ৩ ওভারে দিয়েছিলেন ৪২ রান। শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের প্রয়োজন ছিল ৯ রান, ৫ উইকেট নিয়ে। ক্রিজে ছিলেন চেন্নাইকে প্রায় একা হাতে এতোদূর নিয়ে আসা ওয়াটসন। 

    তবে চতুর্থ বলে ডাবলসটা চুরি করতে গেলেন তিনি, স্টাম্প থেকে দূরে বল সংগ্রহ করে দারুণভাবে স্টাম্প ভাঙলেন কুইন্টন ডি কক, আগের ওভারের শেষ বলে হাস্যকর মিসে চার রান বাই দিয়েছিলেন যিনি, যিনি প্রায় হতে চলেছিলেন খলনায়ক! পরের বলে একটা ডাবলস নিলেন শারদুল ঠাকুর, শেষ বলে প্রয়োজনীয়তাটা ছিল ২ রানের, উঁকি দিচ্ছিল প্রথমবারের মতো আইপিএল ফাইনালে সুপার ওভার। মালিঙ্গা করলেন তার ট্রেডমার্ক ফুললেংথে স্লোয়ার, ঠাকুর হলেন এলবিডব্লিউ! ২০১৭ সালে ১ রানে জিতেছিল মুম্বাই, এবার আবারও জিতলো তারা! 

    অথচ ১৫ ওভার শেষেও বেশ পিছিয়ে ছিল চেন্নাই। ৩০ বলে প্রয়োজন ছিল ৬২ রান, ১৬তম ওভারে মালিঙ্গা দিলেন ২০ রান। ১৭তম ওভারে এলেন বুমরাহ, দিলেন ৪ রান। পেতে পারতেন ওয়াটসনের উইকেট, তবে মিডউইকেটে তার ক্যাচ ফেলেছিলেন রাহুল চাহার, ওয়াটসন পেলেন ইনিংসে তৃতীয়বারের মতো জীবন। ১৮তম ওভারে চেন্নাই আবার তুললো ২০ রান, এবার ক্রুনাল পান্ডিয়াকে টানা তিন ছয় মারলেন ওয়াটসন। ১৯তম ওভারে আবার মুম্বাইকে প্রায় ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন বুমরাহ, ডি ককের ওই মিসের আগে। এরপর বল গেল চেন্নাইয়ের কোর্টে, তবে শেষ খেলাটা মালিঙ্গা খেলবেন বলেই যে ঠিক করা ছিল যেন নিয়তিতে! 

     

    নায়ক হতে পারতেন ওয়াটসন, শেষ পর্যন্ত যেটা হয়েছেন মালিঙ্গা

     

    এর আগে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল এমএস ধোনির সূক্ষ্ণ রান-আউট, যেটা অনেক সময় নিয়ে দিয়েছিলেন টিভি আম্পায়ার নাইজেল লং, যে আউট নিয়ে হয়তো বিতর্ক হবে অনেক। ফাফ ডু প্লেসি ও ওয়াটসনের দারুণ শুরুর পর হুট করেই ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল তারা, এরপর ওয়াটসন ও ব্রাভোর জুটি টেনেছে তাদের, তবে হয়নি শেষরক্ষা। 

    এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল মুম্বাই। কুইন্টন ডি কক, টুর্নামেন্টে মুম্বাইয়ের সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহকের ফাইনালের শুরুটাও হলো দারুণ। দীপক চাহারের এক ওভারে মেরেছিলেন তিন ছয়, এরপর শারদুল ঠাকুরকে আরেকটি। তবে পরের বলেই ফিরেছেন ঠাকুর, দারুণ শর্ট বলে গ্লাভড হয়েছেন ডি কক। পরের ওভার দীপক চাহার ফিরিয়েছেন রোহিত শর্মাকে, পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারটা তিনি করেছেন মেইডেন। চাহারদের জন্য ঘটনাবহুল রাতের শুরু ছিল সেটা। 

     

     

    পরের তিন ওভারে মুম্বাইকে টেনে ধরেছিলেন হারভাজান সিং ও ডোয়াইন ব্রাভো, দুই ওভারে ইশান কিশানের তিন বাউন্ডারি মুম্বাইকে ইনিংসের অর্ধেক শেষে নিয়ে গিয়েছিল ৮০ পর্যন্ত। সূর্যকুমার যাদব ও কিষানকে নিজের পরপর দুই ওভারে ফিরিয়েছেন ইমরান তাহির, মাঝে ক্রুনাল পান্ডিয়াকে ঠাকুর ফিরিয়েছিলেন, মুম্বাই যেন থমকে দাঁড়িয়েছিল হুট করেই। ৫ ওভার বাকি থাকতে তাদের রান ছিল ১০২। 

    তবে ছিলেন পোলার্ড। তাহিরকে ছয় মেরে শুরু করেছিলেন ঝড়, তবে ১৯তম ওভারে চাহারের জোড়া আঘাত হয়ে দাঁড়িয়েছে গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে একটি ছিল হারদিক পান্ডিয়ার উইকেট। সে ওভারে এসেছিল মাত্র ৪ রান। শেষ ওভারে হয়েছে এক দফা নাটক। 

    প্রথম বলে ডাবলস হতে পারতো, তবে সেটা নেননি পোলার্ড, ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মিচেল ম্যাকলেহানকে। এরপর দুই বল ছিল অফস্টাম্পের বেশ বাইরে, এমনকি ওয়াইড নির্দেশক দাগেরও বাইরে। প্রথমটিতে সরে খেলার চেষ্টা করেছিলেন পোলার্ড, পরেরটিতে করেননি তেমন- তবে একটিও ওয়াইড দেননি আম্পায়ার নিতিন মেনন। এরপর রান-আউট ম্যাকলেনাহান শেষ দুই বলে চার মেরে অবশ্য সেসব পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পোলার্ড। 

    শেষ পর্যন্ত শেষ হলো ওই মেননকে দিয়েই, মালিঙ্গার বলে ঠাকুরের মৃত্যুদন্ড দিলেন তো তিনিই। এবার অবশ্য বিতর্কের সুযোগ থাকলো না, রায়না রিভিউটা খরচ করে ফেলেছিলেন বলে সে সুযোগ পাননি ঠাকুর, তবে পরে হক-আই দেখিয়েছে, বলটা ভাঙতো ঠাকুরের লেগস্টাম্প।