• বিশ্বকাপের দল-ব্যবচ্ছেদ
  • " />

     

    কোণঠাসা শ্রীলংকা: যে পাঁচ প্রশ্নের জবাব চাই...

    কোণঠাসা শ্রীলংকা: যে পাঁচ প্রশ্নের জবাব চাই...    

    শ্রীলংকা দল এবারের বিশ্বকাপে কেমন করবে, সেটি অনুমান করার আগে একটা কয়েকটা অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত। তাদের ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিং ৯, এই বিশ্বকাপের দশ দলের মধ্যে একমাত্র আফগানিস্তানই শ্রীলংকার নিচে। গত চার বছরে ৮৪টি ম্যাচ খেলে মাত্র ২৩টিতে জিতেছে শ্রীলংকা, এই সমিয়ে তাদের চেয়ে বেশি ম্যাচ হারেনি কেউ। শিরোপা জয় দূরে থাক, এবার শেষ চারে উঠলেই শ্রীলংকার জন্য সেটি হতে পারে বড় চমক।

    এবারের বিশ্বকাপে জবাব খুঁজতে হচ্ছে বেশ কিছুর প্রশ্নেরও।

     

    করুনারত্নে কেমন করবেন?

    ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে গত মাস পর্যন্তও যিনি কোনো ওয়ানডে খেলেননি, সেই করুনারত্নের হাতেই বিশ্বকাপে দায়িত্ব সঁপে দিয়েছে শ্রীলংকা। ৩১ বছর বয়সী এই ওপেনারের নিজেরই জায়গা পাকা নয় দলে, তবে আপাতত দলকে একসূত্রে গাঁথার আজটা তাঁকেই করতে হচ্ছে। টেস্টে যেভাবে পীরছেন, সীমিত ওভারেও সেভাবে পারবেন বলেই আপাতত আশা দেখছে লংকান বোর্ড। করুনারত্নে অবশ্য গত মাসের ঘরোয়া ওয়ানডে কাপে দারুণ ফর্ম ছিলেন, কাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও গিয়েছিলেন সেঞ্চুরির কাছাকাছি। তারপরও অধিনায়ক হিসেবে তো বটেই, খেলোয়াড় হিসেবে এই বিশ্বকাপে করুনারত্নের করুণ পরিণতি হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

     

     ‘ইগোর’ দ্বন্দ্ব ঘুঁচবে?

    দেড় বছর আগে যোগ দেওয়ার পর চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শুরুটা খারপ ছিল না, শ্রীলংকা জিতেছিল ত্রিদেশীয় কাপে। এরপর থেকে দল যেমন উলটো পথে হেঁটেছে, নিজেও খবরের শিরোনাম হয়েছেন ভুল কারণে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সঙ্গে দ্বন্দ্বটা এসেছে প্রকাশ্যেই, এমনকি ওয়ানডে থেকেও ম্যাথুসকে বাদ দেওয়ার পেছনে ভূমিকা ছিল হাথুর। অন্যদিকে লাসিথ মালিঙ্গা আর থিসারা পেরেরার ‘ফেসবুক-ঝগড়াও’ কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। মালিঙ্গার স্ত্রী পেরেরাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন, পেরেরা সেটি নিয়ে নিজের উষ্মাও জানিয়েছেন। নিজেদের ভেতরে এত সব ইগোর লড়াই আমলে মাঠে কতটা কী করতে পারবে শ্রীলংকা।

     

    অনিয়মিতদের ওপর ফাটকা খাটবে?

    শ্রীলংকার দল নির্বাচনটাই এবারের বিশ্বকাপে বোধ হয় সবচেয়ে চমকে দেওয়া ছিল। ডিকভেলা, দনঞ্জয়াদের মতো নিয়মিতদের ছেঁটে ফেলে এমন চার জনকে নেওয়া হয়েছিল, যারা ২০১৭ সালের পর থেকে ওয়ানডেই খেলেননি। থিরিমান্নে, ভ্যান্ডারসে, জীবন মেন্ডিস আর সিরিবর্ধনাদের মধ্যে শুধু থিরিমান্নেরিই দেশের হয়ে ওয়ানডেতে বলার কিছু রেকর্ড আছে। কিন্তু কাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও কেউ সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি। কম্বিনেশনের কারণে এই চার জনকে একসঙ্গে বাইরে রাখা শ্রীলংকার জন্য কঠিনই হবে। সেক্ষেত্রে তাঁরা বোঝা হয়ে উঠবেন না তো?

     

    ভারের সঙ্গে ধারে কাটবেন মালিঙ্গা?

    এবারের শ্রীলংকার যদি কিছুটা আশা ভরসা থেকে থাকে, সেটা সেই লাসিথ মালিঙ্গার জন্যই। হারিয়ে যেতে যেতেও ফিরে এসেছেন সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বুড়ো বয়সেই। গত এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ উইকেট নিয়েছেন, পরের মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়েছেন ৫ উইকেট। গত বছর সেপ্টেম্বরে আবার দলে ফেরার পর থেকে শ্রীলংকার হয়ে সবচেয়ে বেশি ২১টি উইকেট তাঁরই। ১৪টি নিয়ে কাছাকাছি আছেন শুধু থিসারা পেরেরাই। বিশ্বকাপে ২১ গড়ে ৪৩ উইকেট নিয়ে মালিঙ্গার রেকর্ডও দুর্দান্ত। এবারই সম্ভবত শেষ বার, বড় মঞ্চে আরেকবার জ্বলে ওঠার সুযোগ ।

     

    মিনি অলরাউন্ডারের ভীড়ে পেরেরাই ভরসা?

    জীভান মেন্ডিস, মিলিন্দা সিরিবর্ধনা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা; এঁরা সবাই হাত ঘোরানোর পাশাপাশি ব্যাটও করতে জানেন। তবে ঠিক জেনুইন অলরাউন্ডার এঁদের কাউকেই বলা যায় না, শ্রীলংকা দলে একমাত্র থিসারা পেরেরাই য ভরসা। মূলত পেস বলের সঙ্গে লোয়ার মিডল অর্ডারে হাত খুলে খেলতে জানতেন, বড় কোনো ইনিংস খেলা হচ্ছিল না পেরেরার। তবে সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যও জানান দিচ্ছেন। ইদানীং ইসিরু উদানার ব্যাটেও দেখা যাচ্ছে ঝলক। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর এঁদের কাউকে হাল ধরতে হতেই পারে।   

     

    অধিনায়ক: দিমুথ করুনারত্নে

    কোচ: চন্ডিকা হাথুরুসিংহে

     

    সূচি

    নিউজিল্যান্ড, ১ জুন, ৩.৩০, কার্ডিফ

    আফগানিস্তান, ৪ জুন, ৩.৩০, কার্ডিফ

    পাকিস্তান, ৭ জুন, ৩.৩০, ব্রিস্টল,

    বাংলাদেশ, ১১ জুন, ৩.৩০, ব্রিস্টল

    অস্ট্রেলিয়া, ১৫ জুন, ৩.৩০, ওভাল

    ইংল্যান্ড, ২১ জুন, ৩.৩০, লিডস

    দক্ষিণ আফ্রিকা, ২৮ জুন, ৩.৩০, ডারহাম

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১ জুলাই, ৩.৩০, ডারহাম

    ভারত, ৬ জুলাই, ৩.৩০, লিডস

     

    বিশ্বকাপে রেকর্ড

    ১৯৭৫-গ্রুপ পর্ব

    ১৯৭৯-গ্রুপ পর্ব,

    ১৯৮৩- গ্রুপ পর্ব,

    ১৯৮৭-গ্রুপ পর্ব

    ১৯৯২-গ্রুপ পর্ব

    ১৯৯৬-চ্যাম্পিয়ন

    ১৯৯৯- গ্রুপ পর্ব

    ২০০৩-সেমিফাইনাল

    ২০০৭- রানার্সআপ

    ২০১১- রানার্সআপ

    ২০১৫- কোয়ার্টার ফাইনাল

     

    স্কোয়াড

    দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), আভিশকা ফার্নান্ডো, লাহিরু থিরিমান্নে, কুশাল পেরেরা, কুশাল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, থিসারা পেরেরা, ইসুরু উদানা, লাসিথ মালিঙ্গা, সুরাঙ্গা লাকমাল, নুয়ান প্রদীপ, জিভান মেন্ডিস, মালিন্দা সিরিবর্দনা, জেফরি ভ্যান্ডারসে।