• বিশ্বকাপের ক্ল্যাসিক মুহুর্ত
  • " />

     

    ২০০৭ : আয়ারল্যান্ডের 'নিষিদ্ধ' ক্রিকেটে সেন্ট প্যাট্রিকস ডে-র হাসি

    ২০০৭ : আয়ারল্যান্ডের 'নিষিদ্ধ' ক্রিকেটে সেন্ট প্যাট্রিকস ডে-র হাসি    

    সেন্ট প্যাট্রিকস ডে। ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের বাৎসরিক ভোজের দিন। ২০০৭, কিংস্টন, জ্যামাইকা। 

    স্যাবাইনা পার্কের পিচটা সবুজাভ। আইরিশরা তো এমন পিচে খেলেই অভ্যস্থ, পাকিস্তানিরা নয়। মোক্ষম সুযোগ। ফিল্ডিংয়ে নামার সময় একদল পাকিস্তানি দর্শক ব্যঙ্গ করছিলেন, “ক্রিকেট মাঠে আইরিশরা কী করছে! তাদের থাকার কথা পানশালায়, বিয়ার নিয়ে!” 

    সে বিশ্বকাপে আইরিশ বোলারদের মন্ত্র ছিল একটাই। স্টাম্প ধরে বোলিং। নো বল করা যাবে না। তবে তারা সেই ইনিংসে করলেন তিনটা নো-বল। বাকি মন্ত্র ঠিকই থাকলো। ১৩২ রানে অল-আউট পাকিস্তান। তবে কাজটা বাকি তখনও। বাকি অসম্ভবকে সম্ভব করার। বাকি আয়ারল্যান্ডে ‘নিষিদ্ধ’ আইরিশ ক্রিকেটকে বিশ্বমঞ্চে প্রকাশ করার। 

    হ্যাঁ, একসময় ক্রিকেট নিষিদ্ধ ছিল আয়ারল্যান্ডে। 

    ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জিএএ বা গ্যেলিক অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের ছড়ানো জাতীয়তাবাদের সুরে ক্রিকেট হয়ে পড়েছিল কোণঠাসা। খেলাধুলাতেও সবকিছু আইরিশ হতে হবে বলে খেলতে হতো মূলত হারলিং, গ্যেলিক ফুটবল। আর কিছু নয়। ১৯০১ সালে ‘নিষিদ্ধ’ করা হলো ক্রিকেটকে। ক্রিকেটের মতো ‘বিদেশী’ খেলা শুধু খেলতে নয়, নিষেধাজ্ঞা এলো দেখাতেও। যারা এ নিয়ম ভঙ্গ করবেন, তাদেরকে জিএএ আয়োজিত কোনও খেলায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না। জাতীয়তাবাদের চাপে চাপা পড়ে গেল ক্রিকেট। 



    অথচ এর আগে ক্রিকেট ছিল আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। সেই ১৭৩০ সাল থেকে শুরু, উনবিংশ শতাব্দিতেও ৩২টা কাউন্টিতে খেলা হতো, ক্যাথলিক, প্রোটেসটান্টরা খেলতেন মিলেমিশে। সেই ক্রিকেটই মিলিয়ে যেতে লাগলো। তবে ঠিক হারিয়ে গেল না। কিছু পরিবার চালিয়ে গেলেন খেলা। গোপনে।  এই নিষেধাজ্ঞা ছিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। তবে ক্রিকেট ততোদিনে টিকে আছে শুধু এর ছায়ায়। যারা তখনও ক্রিকেট খেলতেন, ব্যঙ্গ করে তাদের বলা হতো ‘ওয়েস্ট ব্রিটস’। ক্রিকেট তখন শুধুই মজার বিষয়, এ নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার কিছু ছিল না।

     

     

    ইংল্যান্ডে যেসব জাতীয় দল সফরে যেত, তারা আয়ারল্যান্ডে থামতো গা-গরমের জন্য। তবে সেসব ম্যাচে টস হতো না। সফরকারিরাই আগে ব্যাট করতো বরাবর। আয়ারল্যান্ডের খেলা বলতে বছরে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে শুধু একটি ম্যাচ। ১৯৯৩ সালের আগ পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড ছিল ইংল্যান্ডের ‘মাইনর কাউন্টি’র মর্যাদার। সে বছর আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ পেল আয়ারল্যান্ড। ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডের নতুন দেওয়ালের প্রথম ইট সেটিই। এরই মাঝে অস্ট্রেলিয়া থেকে এলেন জনস্টন, মিডলসেক্সে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন এড জয়েস। 

    সেই জয়েস, স্কুলে থাকতে যার ব্যাট চুরি যেতো প্রায়। ডাবলিনের দক্ষিণের এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা জয়েসের মতোই অবস্থা ডাবলিনের উত্তরের শ্রমিক পরিবার থেকে আসা জন মুনির। ট্রেনে করে অনুশীলনে যাওয়ার সময় তাকেও লুকিয়ে রাখতে হতো ব্যাট। 

    স্যাবাইনা পার্কের সেন্ট প্যাট্রিকস ডে-র ইনিংস বিরতিতে জনস্টন আইরিশদের মাঝে ছড়িয়ে দিলেন ক্রিকেটের অন্য রকমের এক মন্ত্র। তখন আয়ারল্যান্ড দলে পেশাদার ক্রিকেটার বলতে দুইজন- এড জয়েস ও অইন মরগান। বাকি সবারই পেশাটা আলাদা, নেশাটা একই। আইরিশ পানশালায় বসে বিয়ার নয়, ২২ গজের ক্রিকেট।

    “ফিরে গিয়ে আবার কাপড় বেচতে চাও? কৃষিকাজ করবে? স্কুলে পড়াতে চাও? যদি না করতে চাও, তাহলে এটাই সুযোগ”, জনস্টন উদোম গায়ে চিৎকার করছিলেন ড্রেসিংরুমে।  

    সেই মন্ত্রটা খুব বেশিক্ষণ কাজে লাগাতে পারলো না আয়ারল্যান্ড। ১৫ রানে নেই ২ উইকেট। চারে নামলেন নিয়াল ও’ব্রায়েন। খেললেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় ইনিংস। ১৩৩ রানের লক্ষ্যে তিনি নিজেই করলেন ৭২ রান। তবে তার উইকেটের পর নামলো আরেকটা ধস- ৫ রানে গেল ৩ উইকেট। একদিক আগলে থাকলেন আরেকজন ও’ব্রায়েন, চার বছর পর বেঙ্গালুরুতে যিনি লিখবেন ইংলিশ-বধ কাব্য। এদিন ৫২ বলে করলেন ১৬ রান। 

    আজহার মাহমুদকে লং-অন দিয়ে ছয় মেরে আইরিশদের উল্লাসে মাতালেন জনস্টন। ক্রিকেট বিশ্ব শুনলো হারিয়ে যাওয়া এক ‘আইরিশ পাব সং’। 

    আয়ারল্যান্ডের নিষিদ্ধ ক্রিকেট হাসলো জ্যামাইকায়। সেন্ট প্যাট্রিকস ডে-তে। 

    এরপর কী ঘটেছিল- 
    সুপার এইটে আয়ারল্যান্ডের শিকার হয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার 'বিখ্যাত' হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের উইকেটের উদযাপন- 'চিকেন ড্যান্স'। ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে, ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ২০১৮ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না তাদের, বাছাইপর্বের বাধা পেরুতে পারেনি তারা। 

    আয়ারল্যান্ডের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর লেখা “আয়ারল্যান্ড হাসছে, 'নিষিদ্ধ' ক্রিকেটে টেস্টের হাসি” শীর্ষক লেখা থেকে সংকলিত