• বিশ্বকাপের ক্ল্যাসিক মুহুর্ত
  • " />

     

    ২০১১: মুকুট পেলেন মহারাজ

    ২০১১: মুকুট পেলেন মহারাজ    

    শচীন টেন্ডুলকার উৎকন্ঠা নিয়ে বসেছিলেন ড্রেসিংরুমে। বাইরে ওয়াংখেড়ে অপেক্ষা করছে রূপকথার শেষের জন্য। ডট বল হলে কখনো নিশ্চুপ হচ্ছে, আবার চার বা ছয়ের সঙ্গে মুম্বাইয়ের ইথারে ছড়িয়ে পরছে হাজারো কন্ঠের প্রকম্পিত চিৎকার। তবে এসব কিছুই বিচলিত করতে পারছে না শচীনকে, নড়াচড়াও করছেন না খুব একটা। পাছে যদি আউট হয়ে যান ধোনিদের কেউ! যে মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করছেন ২১ বছর ধরে, সেটা যদি ভেস্তে যায়?

    শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়নি। শচীনের ‘ত্যাগ’ বৃথা যায়নি। নুয়ান কুলাসেকারাতে গ্যালারি পাঠিয়ে দিলেন ধোনি, ব্যাটটা আলতো করে ঘুরিয়ে আনলেন তাঁর মতো। ছয় মেরেই শেষ করলেন ম্যাচ। ওয়াংখেড়ে কাঁদছে, ২৩ বছরের অপেক্ষা সাঙ্গ হয়েছে ভারতের। তিনি বেরিয়ে এসেছেন ড্রেসিংরুম থেকে, বাঁধা পড়েছেন সতীর্থদের আলিঙ্গনে। কোহলিরা তখনও জুনিয়র, সবার আগে  ছুটে গিয়ে ধোনিকে জড়িয়ে ধরেছেন তাঁরা। শচীনও যেন ভুলে গেছেন, তাঁর বয়স হয়ে গেছে ৩৮। খানিক পরেই পারলে ছুটেই নেমে গেছেন মাঠে, মনে হচ্ছে একজন কিশোর যেন খুঁজে পেয়েছে সাতরাজ্যের গুপ্তধন। ধোনিকে জড়িয়ে ধরেছেন সবার আগে, এরপর বাকিরা। তবে খানিক পরেই লেখা হয়ে গেছে সেই বিশ্বকাপের সবচেয়ে মনে রাখার ছবিটা। কোহলি একপাশ থেকে কাঁধে তুলে নিয়েছেন শচীনকে, অন্য পাশে পাঠান। রায়না ছিলেন পাশেই, আর সামনে হরভজন। ওয়াংখেড়ে দেখছে, সতীর্থদের সিংহাসনে বসে হাতে তেরঙা পতাকা নিয়ে মহারাজ গোটা মাঠে সেলাম নিচ্ছেন। শচীনের মুখে তখন দিগ্বিজয়ীর হাসি!

     

     

    এর পরে অনেক সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। ভারতের হয়ে প্রথম মাঠে নামা, এত এত সেঞ্চুরি, প্রথম ২০০ রান।। মনে রাখার মুহূর্ত হিসেব করলে তো আর শেষ হবে না। কিন্তু বিশ্বকাপের সঙ্গে আর কিছুরই তুলনা ছিল না। যখন ঠিক হলো মুম্বাই হবে ফাইনালের ভেন্যু, শচীন সতীর্থদের বলেছিলেন এবার যে কোনো মূল্যে শিরোপাটা জিততে চান। সেবার সতীর্থেরাই তাঁকে সেটা উপহার দিয়েছেন।

     

    ফাইনালের কথাই ধরুন। মাহেলা জয়াবর্ধনের ৮৪ বলের সেঞ্চুরিতে বড় একটা লাইফলাইন পেয়ে যায় শ্রীলংকা। ২৭৪ রান এখন এমন কিছু মনে হচ্ছে না, কিন্তু তখন সেটা অনেকই ছিল। আর মঞ্চটা যখন বিশ্বকাপ ফাইনাল, এত রান তাড়া করেও জেতার কীর্তি ছিল না। ভারতের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো, দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লু শেওয়াগ। তবে শ্মশানের নীরবতা নেমে আসে সপ্তম ওভারে। মালিঙ্গার অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা ড্রাইভ করতে গিয়ে শচীন ক্যাচ দিলেন সাঙ্গাকারাকে। মালিঙ্গার উদযাপন যেন শেষ হয় না, শ্রীলংকা পাচ্ছিল শিরোপার সুবাস। ফাইনালে ১৮ রান করেই আউট শচীন!

    সেটা হতে দেননি দুজন। গৌতম গম্ভীর সেঞ্চুরিটা পেয়ে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে যান ৯৭ রান করে। তবে আসল কাজটা করে দিয়েছেন এমএস ধোনি। গম্ভীর আউট হওয়ার পরও ৫২ রান দরকার ছিল ভারতের, একটা উইকেট চলে গেলে হতে পারত অনেক কিছু। ধোনি যুবরাজকে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচটা শেষ করলেন। শচীন পেলেন ওপেন অপেক্ষার মুকুট।

    এরপর কী ঘটেছিল?

    বিশ্বকাপের পর আরও বছরদুয়েক খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন শচীন। ধোনি পরের বিশ্বকাপেও অধিনায়ক ছিলেন, এরপর ব্যাটনটা দিয়েছেন কোহলিকে। ভারত এবার দুই নম্বর দল হয়ে যাচ্ছে বিশ্বকাপে, তৃতীয় শিরোপার আশায়।