• ফুটবল, অন্যান্য
  • " />

     

    কীর্তিময় ক্লাবকাহিনী ৭ঃ আর্সেনালের স্বর্ণালী সন্ধ্যা

    কীর্তিময় ক্লাবকাহিনী ৭ঃ আর্সেনালের স্বর্ণালী সন্ধ্যা    

    আশির দশক, আর্সেনালের প্রবল ট্রফি খরা চলছে। ১৯৭৬ এর মাঝে টেরি নিল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রায় ৭ বছর আর্সেনালের ম্যানেজার হিসেবে কেবল একটি এফএ কাপ ছাড়া আর কিছুই এনে দিতে পারেন নি। আইরিশম্যান টেরির ওপর ধৈর্য্য হারিয়ে মালিকেরা দায়িত্ব দিলেন এক খাস ইংরেজ ভদ্রলোক ডন হাউইকে।

     

    হাউই আর্সেনালের হয়ে খেলতেন একসময়, পরে কোচ হিসেবে আর্সেনালেই যোগ দেন। আর্সেনালের ১৯৭১ সালের ডাবল জেতা দলের প্রধান কোচ ছিলেন হাউই। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই তাকে ম্যানেজারের দায়িত্ব দিয়ে ৭ বছরের প্রিমিয়ারশিপের খরা কাটানোর স্বপ্ন দেখাটা একেবারে অযৌক্তিক ছিল না। তবে ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না, টেরির তিন বছরের শাসনামলে আর্সেনাল একটিও ট্রফি জিততে পারে নি। এবার আর্সেনালের মালিকদের লেজে আগুন লাগার মতো অবস্থা, হন্যে হয়ে তাঁরা একজন ত্রাণকর্তা খুঁজতে লাগলেন। তখনি তাঁদের চোখ পড়ল জর্জ গ্রাহামের ওপর।

     

    গ্রাহাম আর্সেনালের ১৯৭০-’৭১ এর ডাবল জয়ী দলের হিরো ছিলেন। ম্যানেজার হিসেবে তখন গ্রাহাম খুব অল্প সময়ের মাঝে থার্ড ডিভিশনের দল মিলওয়ালকে ফার্স্ট ডিভিশনে উঠিয়ে এনে 'টক অফ দা টাউন' হয়ে গিয়েছেন। মজার ব্যাপার হল গ্রাহামকে চিন্তা করা হয়েছিল অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। ম্যানেজার হওয়ার অফার যে ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছিল, তিনি তখন স্কটল্যান্ডের জাতীয় দলের কোচ; আর সামনে বিশ্বকাপ থাকায় ঐ ব্যক্তি কিছু সময় চাইলেন চিন্তাভাবনা করার জন্য। আর্সেনাল মালিকেরা আবার একটু অধৈর্য্য প্রকৃতির, তাঁরা অপেক্ষা না করে সরাসরি ম্যানেজার হওয়ার প্রস্তাব দিলেন গ্রাহামকে; গ্রাহামও সম্মতি দিলেন।

     

    আজকের এই আর্সেনালের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন জর্জ গ্রাহাম নামের সেই ভদ্রলোক। ওয়েঙ্গার যুগের আগে, গ্রাহাম যুগই ছিল আর্সেনালের সেরা সময়। তবে তাঁর কাহিনী শুরু করবার আগে একটু করে বলে নেই স্কটল্যান্ডের জাতীয় দলের সেই কোচের কথা, অল্পের জন্য যিনি আর্সেনালের মতো বড় একটা দলের দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ হারালেন। ঐ ভদ্রলোক পরবর্তীতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যানেজারদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ভদ্রলোকের নাম ছিল অ্যালেক্স ফার্গুসন!!


     

    নতুন ম্যানেজার, নতুন দল, নতুন যুগ

     

    ট্রফি খরার সাথে সাথে আরো অনেক সমস্যা জর্জরিত আর্সেনালের জোয়াল কাঁধে নিলেন জর্জ গ্রাহাম। ট্রফির সন্ধানে পরপর তিন বছর ধরে “প্লেয়ার অফ দা ইয়ার”-র খেতাব জেতা লিয়াম ব্রেডি তখন ঠিকানা বদলে জুভেন্টাসে চলে গিয়েছেন। এরও আগে, ৩০০ ম্যাচে ১০৮ গোল করা স্ট্রাইকার ফ্র্যাংক স্টেপলটন-ও  ট্রফির আশায় যোগ দিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে এবং ফাইনালে গোল করে ‘৮৩ এবং ‘৮৫ সালের এফএ কাপের শিরোপাও জিতিয়ে দিয়েছেন ইউনাইটেডকে। আর্সেনাল শেষ প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি জিতেছে ১৫ বছর আগে, যে দলে গ্রাহাম নিজেই ছিলেন! এই দলকে খোলনলচে বদলে দেয়ার জন্য যে একেবারে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে, সেটা গ্রাহাম জানতেন এবং তিনি সেদিকেই মনোযোগ দিলেন।

     

    গ্রাহাম শুরুতেই একাডেমি থেকে এক ঝাঁক সম্ভাবনাময় তরুণদের দলে ভেড়ালেন - ডেভিড রোক্যাসল, টনি এডামস, মাইকেল টমাসদের। সেই সাথে কিছু নতুন তরুণকেও দলে সাইন করলেন গ্রাহাম - লি ডিক্সন, নাইজেল উইন্টারবার্ন, স্টিভ বোল্ড। এই তিন নতুন সাইনিং এবং টনি এডামস মিলে তৈরী হলো আর্সেনালের রক্ষণব্যুহ, যার ওপর ভর করে গ্রাহাম তৈরী করলেন তাঁর স্বপ্নের দল, যে দল পরবর্তীতে আর্সেনালের কিংবদন্তীর অংশ হলো। গ্রাহামের দ্বিতীয় মৌসুমেই মাইকেল টমাসের অতিরিক্ত সময়ের গোলে তখনকার প্রবল পরাক্রমশালী লিভারপুলকে নিজেদের মাঠে হারিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর পর প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় আর্সেনাল।

     

    গ্রাহামের জহুরীর চোখ সময়ের সাথে সাথে আরো রত্ন নিয়ে আসে আর্সেনালে। ১৯৯০-’৯১ মৌসুমের শুরুতে হাইবুরির দর্শকদের প্রিয় গোলরক্ষক জন লিউকিচকে সরিয়ে তিনি দলে নিয়ে আসেন ডেভিড সিম্যানকে। এই সিম্যানই সম্প্রতির এক জরিপে আর্সেনালের সর্বকালের সেরা খেলোয়ারদের তালিকায় ৭ম স্থানে ছিলেন । ঐ সময় গ্রাহামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, 'ফ্যান ফেভারিট' হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি লিউকিচকে সরিয়ে দিচ্ছেন, জবাবে গ্রাহাম বলেন,”আমি জানি, জন লিউকিচ ইংল্যান্ডের সেরা গোলরক্ষকদের একজন, তবে সিম্যান হচ্ছে সেরা।”

     

     

    এর পরের মৌসুমে গ্রাহাম সাইন করেন ইয়ান রাইটকে, যিনি ২৭৯ ম্যাচে ১৮৫ গোল করে আর্সেনালের সর্বকালের সেরা গোলস্কোরারের রেকর্ডটা নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছিলেন। ২০০৫ সালের অক্টোবরে রাইটের এই রেকর্ড ভাঙ্গেন থিয়েরি অঁরি।

     

    খেলোয়াড় হিসেবে গ্রাহাম তাঁর ঢিলেমির জন্য বেশ বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু ‘৮৬ সাল থেকে শুরু হওয়া তাঁর ম্যানেজার যুগে সেই ঢিলেমির লেশমাত্র দেখা যায় নি। তাঁর শৃংখলার কড়াকড়ি এবং কঠিন নিয়মানুবর্তিতার জেরে আর্সেনালের ড্রেসিংরুমের অলস আবহাওয়া হাওয়ায় উড়ে গিয়ে সব খেলোয়াড়দের মাঝেই একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব তৈরী হয়ে গিয়েছিল। সেই যুদ্ধংদেহী মনোভাব মাঠ এবং মাঠের বাইরেও সমানভাবে জারি ছিল। এরই রেশে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষের এক ম্যাচে মারামারি করে আর্সেনাল ২ পয়েন্ট হারায় শাস্তিস্বরূপ। টনি এডামসের হয় কারাদন্ড।

     

    ড্রেসিংরুম থেকেই আর্সেনালকে একটা 'ইউনিট' হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারটা ফল দেয় প্রায় সাথে সাথেই। গ্রাহামের প্রথম মৌসুমেই লিটলউডস কাপের (বর্তমানে ক্যাপিটাল ওয়ান কাপ) ফাইনালে প্রথমে পিছিয়ে পড়েছিলো গানাররা। শেষ পর্যন্ত চার্লি নিকোলাসের জোড়া গোলে লিভারপুলকে পরাস্ত করে বহু বছর পর প্রথম ট্রফির স্বাদ পায় গানাররা। গ্রাহামের ট্যাকটিকাল প্রজ্ঞার পরিচয় বিশ্ববাসী পায় ১৯৮৯ সালের মে মাসে। সিজনের শেষ ম্যাচে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে হলে আর্সেনালকে লিভারপুলের বিরুদ্ধে জিততে হবে ২ গোলের ব্যবধানে। লিভারপুল তখন টেকনিক্যাল, ফিজিক্যাল ইত্যাদি সকল দিক থেকেই আর্সেনালের থেকে শক্তিশালী দল। আর্সেনালের সবচেয়ে কট্টর সমর্থকেরাও হয়তো খুব একটা আশা করে নি আর্সেনালের জয়ের। সকল পত্রপত্রিকা আর্সেনালের পরাজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে ফেলেছে। সেই শেষ ম্যাচে এরপর ঠিকই ২-০ গোলের জয় ছিনিয়ে আনলো গ্রাহামের রণকৌশল এবং তাঁর মন্ত্রে উজ্জীবিত গানার বাহিনী; এবং অমরত্বের খাতায় নাম লেখার বন্দোবস্তটাও শুরু হল ওখান থেকেই।    

     

    ট্রফি খরার যুগ কাটিয়ে জর্জ গ্রাহাম আর্সেনালের ম্যানেজার হিসেবে ৯ বছরে ২ টি প্রিমিয়ার লিগ, ২টি লিগ কাপ, একটি এফএ কাপ এবং একটি উয়েফা উইনার্স কাপের শিরোপা এনে দিয়েধিলেন আর্সেনালকে। তাঁর আর্সেনাল ক্যারিয়ারের কিছু হাইলাইটস আমরা দেখে নেই চটজলদি…

     

    প্রথম কাপ এবং ইয়ান রাশের মিথলজির মৃত্যু

     

    “ইয়ান রাশ গোল করলে লিভারপুল কখনো হারে না” - এরকম একটা কথা প্রচলিত ছিল আশির দশকে। উড়িয়ে দেওয়ার কোন উপায়ও নেই অবশ্য। কারণ তখন পর্যন্ত ইয়ান রাশ ১৫০ ম্যাচে লিভারপুলের হয়ে গোল করেছেন এবং অবিশ্বাস্য হলেও ঐ ১৫০ ম্যাচেই লিভারপুল জয়ী হয়ে ফিরেছে। কাজেই লিটলউডস কাপের ফাইনালের ২৩ মিনিটের মাথায় যখন ইয়ান রাশ গোল করে লিভারপুলকে এগিয়ে নিলেন, ওয়েম্বলির দর্শকের সিংহভাগই আর্সেনালকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিলো। শুধু ইয়ান রাশের রেকর্ড নয়, লিভারপুল ছিল আশির দশকে ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে পরাক্রমশালী শক্তি এবং এর আগের বছরের চ্যাম্পিয়ন দল। অপরদিকে আর্সেনালের অধিকাংশই কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ; নতুন দল, নতুন ম্যানেজার। কিন্তু গ্রাহামের মন্ত্রে দীক্ষিত তরুণ তুর্কীরা যে ফেভারিট বা এসব রেকর্ডকে পাত্তা দেয় না, সেটা তখনো ইংলিশ দর্শকেরা টের পায় নি। হাফ টাইমের আগে একটি এবং ৮৩ মিনিটের মাথায় আরো একটি গোল করে চার্লি নিকোলাস ব্যাপারটা ভালো করে ওয়েম্বলি এবং গোটা ইংল্যান্ডকে বুঝিয়ে দিলেন। হাইবুরির ফ্যানরা ৮ বছর পর স্বাদ পেলো প্রথম ট্রফির।

     

    “স্বয়ং ঈশ্বরও তোমাদের বাঁচাতে পারবেন না, আর্সেনাল”

     

    “স্বয়ং ঈশ্বরও তোমাদের বাঁচাতে পারবেন না, আর্সেনাল” - ১৯৮৮-’৮৯ মৌসুমের শেষ ম্যাচের আগে এটাই ছিল ডেইলি মিররের শিরোনাম। লিভারপুল পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে, পরপরই আর্সেনাল। লিগ জিততে হলে শেষ ম্যাচে শুধু জিতলেই হবে না, ২ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। বিপক্ষ দল? গতবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। আর ভেন্যু? অ্যানফিল্ড, লিভারপুলের ঘরের মাঠ, যেখানে গত মৌসুমে একটিও ম্যাচ তারা হারে নি। কিন্তু গ্রাহামের চিন্তা ভিন্ন ছিল, তিনি ঐ ম্যাচে ব্যাকে ৪ জনের জায়গায় রাখলেন ৩ জন। নাইজেল উইন্টারবার্ন আর লি ডিক্সনকে এগোনোর স্বাধীনতা দেওয়ায় তাঁরা ক্রমাগত ওভারল্যাপিং করে লিভারপুলের রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখলেন। ফল এলো দ্বিতীয়ার্ধের ৭ মিনিটের মাথায়।উইন্টারবার্নের ফ্রি কিকের বল ধরে অ্যালান স্মিথ হেড দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিলেন। কিন্তু তখনও আরো একটি গোল দরকার। এর মাঝে বেশ কিছু সুযোগের অপচয়ও করেছে গানাররা। ৯০ মিনিট শেষ হয়ে এরপর 'ইনজুরি টাইম' চলছে।গোলরক্ষক লিউকিচের বাড়ানো একটি বল ধরে ডিক্সন চমৎকার একটি ডিফেন্সচেরা পাসে বলটি পাঠিয়ে দেন স্মিথের পায়ে। স্মিথ অনেক ডিফেন্ডারের ভিড়ে টমাসকে খুঁজে বের করলেন এবং এক শ্বাসরুদ্ধকর গোলে আর্সেনালের ১৮ বছরের প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা খরা ঘুচিয়ে দিলেন মাইকেল টমাস। 

     

    “ওয়ান-নিল টু আর্সেনাল”

     

    উরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপের ফাইনাল, বিপক্ষ দলে সিরি আ চ্যাম্পিয়ন পার্মা। জিয়ানফ্রাংকো জোলা, এস্পিরিলা, ব্রলিনের মতো তারকায় পরিপূর্ণ পার্মা শুরু থেকেই মুহুর্মুহু আক্রমণ চালাতে থাকে আর্সেনালের রক্ষণে। কোপেনহেগেনের দর্শকেরা ভেবেছিলো, আর্সেনালের গোল খাওয়াটা কেবল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু হঠাৎ করেই এক কাউন্টারে অ্যালান স্মিথ গোল দিয়ে দিলেন। পিছিয়ে পড়ে পার্মা আরো ভয়ানক হয়ে ওঠে। গানারদের রক্ষণে এডামস, উইন্টারবার্ন, ডিক্সন, বোল্ড এবং বিশেষ করে কিপার সিম্যান চীনের প্রাচীরের মতো একের পর এক আক্রমণ নস্যাৎ করতে থাকেন। খেলা শেষের বাঁশী বাজার সাথে সাথেই আর্সেনালের সমর্থকদের “ওয়ান-নিল টু আর্সেনাল” কলরবে আকাশ বাতাস মুখর হয়। ২৪ বছর পর কোনো ইউরোপিয়ান শিরোপা জিতল আর্সেনাল; গ্রাহামের কিংবদন্তী হওয়ার পথে আরেকটি মাইলস্টোন। গ্রাহাম পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর আর্সেনালের সবচেয়ে প্রিয় জয় ছিল কোপেনহেগেনের ‘ওয়ান-নিল টু আর্সেনাল”।

     

    ********** 

     

    গ্রাহামের সময়ে ইস্পাত কঠিন রক্ষণের মহিমায় আর্সেনালের ট্রফি বন্ধ্যাত্ব ঘুচে যায়। ১৯৯০-’৯১ মৌসুমে যখন আর্সেনাল যখন প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতে তখন পুরো মৌসুমে তারা মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছিলো। তাদের রক্ষণের মাহাত্ম্য আরো স্পষ্ট হবে যখন আমরা দেখি পুরো মৌসুমে গানাররা মাত্র ১৮টি গোল হজম করেছে এবং ক্লিন শিট রেখেছে ২৪টি ম্যাচে! ১৯৯২-’৯৩ মৌসুমে ঘরোয়া কাপের ডাবল জেতার পর 'কাপ স্পেশালিস্ট' তকমা এঁটে যায় গ্রাহামের আর্সেনালের গায়ে। এবং গ্রাহাম যতদিন ছিলেন ততদিন প্রতিটি কাপ প্রতিযোগিতায় আর্সেনাল প্রায়ই শেষ ধাপ পর্যন্ত গিয়েছে বা কাপ জিতেছে। ১৯৯৪ সালে অনৈতিক অর্থ লেনদেনের দায়ে চাকরি যায় গ্রাহামের, এবং তাকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে ফুটবল এসোসিয়েশন। কিন্তু আর্সেনালের কিংবদন্তীতুল্য এই ত্রাণকর্তার অবদান ওই কালিমা দিয়ে ঢেকে দেওয়াটা সম্ভব হয় নি।  

     

    জর্জ গ্রাহাম অনেক ট্রফি জিতলেও ট্রফির থেকে বড় অবদান ছিল আর্সেনালের পুনর্জীবনের পেছনে। ওয়েঙ্গারের “ইনভিন্সিবল” আর্সেনালের ভিত্তি গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন গ্রাহাম। তরুণ তুর্কীদের কাজে লাগানো এবং দামী খেলোয়াড় না কিনে উঠতি তারকাদের খুঁজে বের করার আর্সেনালের আজকের  যে ঐতিহ্য - সেটারও শুরু ছিলেন গ্রাহামই।

     

     


    কীর্তিময় ক্লাবকাহিনীর অন্যান্য পর্বঃ

    "বুসবি বেবস" ও একটি ট্র্যাজেডির গল্প

    রিয়ালের গ্যালাক্টিকো আর অন্তরালের ধ্রুবতারা

    গুটম্যানের বেনফিকা ও একটি অভিশাপের গল্প

    হেরেরার "কাতানেচ্চিও" ও বদলে যাওয়া ইন্টার

    টোটাল ফুটবলের রূপকথা

    বায়ার্নের পরশপাথর