• আফ্রিকান নেশন্স কাপ
  • " />

     

    নেশনস কাপ দেখতে সমর্থক হাঁটলেন ১০ হাজার কিলোমিটার!

    নেশনস কাপ দেখতে সমর্থক হাঁটলেন ১০ হাজার কিলোমিটার!    

    পেশায় বোথা মাসিলা পুরোদমে বেকার। সারাদিন কোন কাজকর্ম নেই, দক্ষিণ আফ্রিকা কেপটাউনের পথেঘাটে ফুটবল খেলে ও স্টেডিয়ামে খেলা দেখেই দিন পেরিয়ে যায় তাঁর। একদিন হুট করেই মাসিলার মাথায় চাপল এক পাগলামি। মিশরের কায়রোতে গিয়ে আফ্রিকান কাপ অফ নেশনসের খেলা দেখবেন মাসিলা, এমন কথা শুনে পরিবার ও প্রতিবেশীরা হেসেই কূল পান না। যার পকেটে নেই খাবার কেনার টাকা, সে ১০ হাজার কিলোমিটারের পথ পাড়ি দেবে কীভাবে? মাসিলার মাথাতেও সেই চিন্তাটা এসেছিল, কীভাবে যাবেন কায়রো? শেষ পর্যন্ত আগেপিছে কিছু না ভেবেই ব্যাগ নিয়ে হাটা ধরলেন। অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় পুরোটা পথ হেটেই কায়রোতে এসে পৌঁছেছেন মাসিলা! 

    গত মাসের ৬ তারিখ মাসিলা শুরু করেন তাঁর এই যাত্রার। কখনো ট্রাকের পেছনে চেপে, কখনো কারো গাড়ি, মোটরসাইকেলে; কখনো বা মাইলের পর মাইল হেটে; ৪৪ বছর বয়সী মাসিলার যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিল না। যাত্রাপথে খাওয়াদাওয়া করেছেন মানুষের থেকে চেয়ে, ঘুমিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। প্রতিদিনই যাত্রাপথের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন মাসিলা। ধীরে ধীরে তাঁর এই যাত্রার খবর ছড়িয়ে পরে পুরো পৃথিবীজুড়ে। যেখানেই গেছেন, স্থানীয় মানুষদের সাহায্য পেয়েছেন দারুণভাবেই।

    জিম্বাবুয়েতে পৌঁছানোর পর মাসিলার এই যাত্রায় যোগ দেন আরেক ফুটবল পাগল আলভিন জাকাতা। দুইজন মিলে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছান ইথিওপিয়া-কেনিয়া সীমান্তে। সেখানে বাধার মুখে পড়েন মাসিলা-জাকাতা। অন্য কোথাও ভিসার সমস্যা না হলেও এই সীমান্তের কর্মকর্তারা তাদের আটকে দেন। তাৎক্ষনিক ভিসার অনুমতির জন্য তাদের থেকে ৫০ ডলার করে চাওয়া হয়। 

    কিন্তু যারা বিমান ভাড়ার অভাবে এতদূর হেটে এসেছেন, তাঁরা এত টাকা কোথায় পাবেন? সীমান্তে মাসিলাদের অপেক্ষা বাড়তে থাকে। তাহলে কি এতদূর এসে বাড়ি ফিরে যেতে হবে? এদিকে যাদের খেলা দেখার জন্য এতকিছু, সেই দক্ষিণ আফ্রিকার খেলাও শুরু হতে বেশিদিন বাকি নেই।  

    আর কোন উপায় যখন খুঁজে পাচ্ছেন না মাসিলা, ঠিক তখনই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন একজন দক্ষিণ আফ্রিকান সাংবাদিক। টুইটারে শুরু থেকেই মাসিলাদের যাত্রার ছবি দেখে আসছিলেন তিনি। যখন দেখলেন মাসিলারা সীমান্তে ভিসার অভাবে আটকে আছেন, তখন তাদের টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। শুধু ভিসার টাকা নয়, মাসিলা-জাকাতার জন্য নাইরোবি থেকে কায়রো পর্যন্ত বিমানের টিকেটও কেটে দেন সেই সাংবাদিক। 

    বিমানে করে কায়রোতে পৌঁছান মাসিলা-জাকাতা। মাঠে বসে দেখেছেন বাফানা বাফানাদের ম্যাচও। দক্ষিণ আফ্রিকা ফুটবল দল মাসিলাকে হতাশ করেনি। শেষ মুহূর্তের গোলে মিশরকে হারিয়ে তাঁরা পৌঁছে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। 

    সাংবাদিকের দেওয়া টিকেটে তো কায়রো এসেছেন মাসিলা-জাকাতা। কিন্তু বাড়ি ফিরবেন কীভাবে? আবার কী ১০ হাজার কিলোমিটার হেটে কেপটাউনে ফিরতে হবে? মাসিলা অবশ্য এই মুহূর্তে এসব কিছু নিয়ে একদমই ভাবছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা নেশনস কাপের শিরোপা জিতবে, এই স্বপ্নেই বিভোর তিনি।