• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    সিজন প্রিভিউ: নতুন চেলসি, অনভিজ্ঞ ল্যাম্পার্ড, চাপ তবুও আগের মতোই

    সিজন প্রিভিউ: নতুন চেলসি, অনভিজ্ঞ ল্যাম্পার্ড, চাপ তবুও আগের মতোই    

    চেলসির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি, ক্লাবকে খাদের কিনারা থেকে বাঁচিয়েছেন অনেকবার। মরিজিও সারি, এডেন হ্যাজার্ড ক্লাব ছেড়েছেন; চেলসির মাথার ওপর ঘুরছে দলবদলে নিষেধাজ্ঞার খড়গ। ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ারটা মাত্র এক বছরের হলেও ‘অনভিজ্ঞ’ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের ওপরই আস্থা রেখেছে তারা। মাঠে চেলসিকে বাঁচিয়েছেন অনেকবার, এবার ল্যাম্পার্ডের দায়িত্ব মাঠের বাইরে থেকে ইংলিশ ফুটবলে চেলসির শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করা।

     

    যারা এলেন, যারা গেলেন

    এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে কেবল মাতেও কোভাসিচকেই দলে ভেড়াতে পেরেছে চেলসি। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে গত মৌসুম স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ধারে খেলায় চেলসিতে যোগ দিতে পেরেছেন তিনি। এ বছরের শীতকালীন দলবদলে আমেরিকান অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচকে দলে ভিড়িয়েই বরুশিয়া ডর্টমুন্ডেই তাকে ধারে পাঠিয়েছিল ‘ব্লুজ’রা, নতুন মৌসুমের আগে ফিরেছেন তিনি। নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন আর কাউকে দলে নিতে পারেনি চেলসি, ধারে ফিরেছেন অনেকেই।

    ট্যামি আব্রাহাম, তিয়েমুয়ে বাকায়োকো, মিচি বাতশুয়াই, মেসন মাউন্ট, কার্ট জুমা, মার্কো ভ্যান গিঙ্কেল, কেনেডি, লুকাস পিয়াৎজনরা ফিরেছেন ক্লাবে। তাই ‘পুরনো’দের ওপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে ল্যাম্পার্ডকে। ক্লাব ছেড়েছেন হ্যাজার্ড, গঞ্জালো হিগুয়াইন, গ্যারি কেহিল, ইথান আম্পাদু। ইউরোপে নিজের প্রথম মৌসুমের দলবদল নিয়ে তাই হয়তো খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না ল্যাম্পার্ড। তবে কিছু করারও ছিল না তার, সব জেনে বুঝেই এসেছিলেন চেলসিতে।

     

    আমরা যা জানি

    ডার্বি কাউন্টিতে গত মৌসুমে মোট ১৩জন ফুটবলারকে যুবদল থেকে মূল স্কোয়াডে সুযোগ দিয়েছিলেন ল্যাম্পার্ড। চেলসির হয়ে প্রাক-মৌসুমেও সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি। মার্ক গুয়েহি, ড্যানিয়েল স্টার্লিং, কনোর গ্যালাগার, কেসি পালমার ফিকায়ো তোমোরিদের সবাইকেই প্রাক-মৌসুমে সুযোগ দিয়েছেন চেলসির নতুন ম্যানেজার। অন্তত আরও এক বছর নতুন কাউকে দলে ভেড়াতে না পারায় হয়তো আগামী মৌসুমে তরুণদের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।

    ল্যাম্পার্ডের তরুণদের সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে আস্থা রাখছেন চেলসির যুবারাও। গত মৌসুমে চেলসি ছাড়া সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল ক্যালাম হাডসন-ওদোয়ের। কিন্তু ল্যাম্পার্ড আসতেই চেলসির সাথে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করেছেন তিনি। প্রাক-মৌসুমে খুব সম্ভবত চেলসির হয়ে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন মাউন্ট। ৩ গোল এবং ২ অ্যাসিস্ট দিয়ে ল্যাম্পার্ডকে নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েই রেখেছেন তিনি।

     

     

    তরুণদের সুযোগ দেওয়ার মত আরও এক ব্যাপারে হয়তো নিশ্চিত থাকতে পারে চেলসি। ডার্বিতে ৪-২-৩-১ এবং ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন ল্যাম্পার্ড। প্রাক-মৌসুমে এই দুই ফর্মেশনেই দল সাজিয়েছেন তিনি। ফলাফলও এসেছে হাতেনাতে। প্রথম ম্যাচ ড্র করলেও হারিয়েছেন বার্সেলোনা, রিডিং, রেডবুল সালজবার্গকে। উইংনির্ভর ফুটবল খেলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কথা আগেও জানিয়েছিলেন চেলসির নতুন ম্যানেজার। পুলিসিচ, পেদ্রো, উইলিয়ান, হাডসন-ওদোয়রা থাকায় চেলসিতেও একই ট্যাকটিক্স অনুসরণ করার সম্ভাবনাই বেশি ল্যাম্পার্ডের।

    সারির অধীনে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলায় বেশ সমালোচনা সইতে হয়েছিল চেলসিকে। তবে ল্যাম্পার্ডের অধীনে চেলসির আক্রমণাত্মক ফুটবলেই ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি। গত মৌসুমে ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় বিভাগে ল্যাম্পার্ডের ডার্বির চেয়ে বেশি গোল করেছিল কেবল শীর্ষ পাঁচ দল। দুই উইঙ্গার এবং একজন ফরোয়ার্ড নিয়েই খেলে থাকে চেলসি। সেক্ষেত্রে ল্যাম্পার্ডের ট্যাকটিক্সের সাথে মানিয়ে নিতে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয় ঈদ দলের, প্রাক-মৌসুমে চেলসির খেলাও সে ইঙ্গিতই দেয়।

     

    যা নিয়ে সংশয়

    স্ট্রাইকার নিয়ে গত মৌসুমে দারুণ ভুগতে হয়েছে সারির চেলসিকে। হিগুয়াইন ফিরে গেছেন জুভেন্টাসে, অ্যাটলেটিকোয় পাকাপাকিভাবে যোগ দিয়েছেন আলভারো মোরাতা। জিরু, আব্রাহাম, বাতশুয়াইরা থাকলেও চেলসির মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন কে, সে বিষয়ে এখনও কিছুই জানাননি ল্যাম্পার্ড।

    শুধু স্ট্রাইকার নয়, মৌসুম শুরুর মাত্র সপ্তাহখানেক বাকি থাকতেও চেলসির মূল একাদশ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। প্রাক-মৌসুমে সবাইকেই সুযোগ দিয়েছেন ল্যাম্পার্ড। আব্রাহাম, পুলিসিচ, মাউন্টরা গোল পেয়েছেন ঠিকই; কিন্তু নিশ্চিতভাবে ল্যাম্পার্ডের একাদশে জায়গা হয়তো কেবল পুলিসিচেরই পাকা। একাদশ নিয়ে অনিশ্চয়তা ভাবাচ্ছে চেলসিকে, একসাথে না খেলায় বোঝাপড়ার অভাবেও ভুগতে হতে পারে তাদের।

     

     

    ল্যাম্পার্ডের সাথে চেলসি সমর্থকদের সম্পর্কটা প্রচন্ড আবেগ এবং ভালবাসার। তার গোলেই নিশ্চিত হয়েছিল অর্ধশতক পর ২০০৪-০৫ মৌসুমে চেলসির প্রিমিয়ার লিগ জেতা। এমন একজন কিংবদন্তীকে ম্যানেজার হিসেবে পেয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিতই থাকার কথা চেলসির। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের মত তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ লিগে কেমন করবেন অনভিজ্ঞ ল্যাম্পার্ড, সে দুশ্চিন্তা থেকেই যায়। চেলসিকে স্বরূপে ফেরাতে না পারলে তাকে বিদায় করার কথা দু’বার ভাববেন না মালিক রোমান আব্রামোভিচ, সেটাও হয়তো জানা আছে ল্যাম্পার্ডের।

    গত কয়েক মৌসুম ধরেই চেলসির মূল ভরসা ছিলেন হ্যাজার্ডই। বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডের শূন্যস্থান পূরণ করতেই মূলত পুলিসিচকে দলে ভিড়িয়েছে চেলসি, আক্রমণে হ্যাজার্ডের মত ফর্মই তার থেকে প্রত্যাশা করছেন চেলসি সমর্থকেরা। প্রাক-মৌসুমে সালজবুর্গের বিপক্ষে জোড়া গোল করে সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন তিনি। বয়স মাত্র ২০, এতদিন ডর্টমুন্ডের উঠতি তারকা পুলিসিচই হয়তো আগামী মৌসুমে আক্রমণে চেলসির মূল ভরসা। গতি, ড্রিবলিং, গোল করার সামর্থ্য, খেলেন বাঁ-প্রান্তে- দুজনের মধ্যে মিল আছে বেশ। হ্যাজার্ডের শূন্যস্থান হয়তো পূরণ করতে পারবেন না, প্রিমিয়ার লিগে প্রথম মৌসুমের চাপটাও থাকবে পারদসম। পুলিসিচের ফর্মের ওপরই হয়তো নির্ভর করছে চেলসির মৌসুমের অনেকটাই। 

     

     

    শেষ পাঁচ মৌসুমের চেলসি

    প্রিমিয়ার লিগে গত পাঁচ মৌসুমে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখার দিক দিয়ে হয়তো অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবে চেলসিই। ২০১৪-১৫ মৌসুমে হোসে মরিনহোর অধীনে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ঘরে তুলেছিল ‘ব্লুজ’রা। কিন্তু পরের মৌসুমেই মাটিতে নেমে আসতে হয় তাদের। ২০১৫-১৬ এর মাঝপথেই চাকরি হারান মরিনহো, তার স্থলাভিষিক্ত হয়েও চেলসির মৌসুম বাঁচাতে পারেননি গাস হিডিঙ্ক। ১০ম হয়ে মৌসুম শেষ করে তারা।

    হিডিঙ্কের পর চেলসির হটসিটে এসেই ২০১৬-১৭ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগশিরোপা পুনরোদ্ধার করেন আন্তোনিও কন্তে। কিন্তু মরিনহোর মতই তাকেও মুখোমুখি হতে হয় কঠিন বাস্তবতার। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৫ম হওয়ায় চাকরি হারান কন্তে, তার জায়গায় আসেন আরেক ইতালিয়ান সারি। শুরুটা যাচ্ছেতাই হলেও ৩য় হয়ে ২০১৮-১৯ মৌসুম শেষ করে চেলসি, ঘরে তোলে ইউরোপা লিগের শিরোপা।

    ম্যানেজার হিসেবে নিজের প্রথম মৌসুমে প্লে-অফ ফাইনাল না হারলে এবার হয়তো চেলসি নয়, ডার্বির হয়েই প্রিমিয়ার লিগে আসতেন ল্যাম্পার্ড। সংকটময় মুহূর্তে চেলসির ল্যাম্পার্ডকে যতটা দরকার, ল্যাম্পার্ডেরও চেলসিকে দরকার ঠিক ততটাই। ল্যাম্পার্ড জানেন, সময় তার অনুকূল নেই; খারাপ করলেই বেজে উঠতে পারে বিদায়ঘণ্টা। সাবেক ক্লাবে ফেরাটা যে সবসময় সুখকর হয় না, সেটা তো প্রিমিয়ার লিগে ল্যাম্পার্ডের প্রথম প্রতিপক্ষ ওলে গানার সোলশারের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যাত্রাই প্রমাণ করে। খেলোয়াড় হিসেবে সম্ভাব্য সবই জিতেছেন, এখন ম্যানেজার হিসেবে কেমন করেন ল্যাম্পার্ড- সেটিই দেখার বিষয়।