• লা লিগা
  • " />

     

    বড় ব্যবধানে জয়ের সঙ্গে আরও অনেক কিছুই পেল বার্সা

    বড় ব্যবধানে জয়ের সঙ্গে আরও অনেক কিছুই পেল বার্সা    

    ভ্যালেন্সিয়ার গোলের পর আর খেলা গড়ায়নি মাঠে। শেষ বাঁশির আগে গোল হজম করা বার্সেলোনার জন্য সেটা কিছুটা হতাশারই। ম্যাচে বার্সার জন্য হতাশার কিছু থেকে থাকলে অমন অ্যান্টিক্লাইম্যাকটিক শেষটুকু। এছাড়া পুরোটা অনেক কিছু পাওয়ার। ভিত গড়ে দিয়েছিলেন নতুন দুইজন। প্রথমার্ধের সেই ভিত দ্বিতীয়ার্ধে আরও শক্ত করে ন্যু ক্যাম্পে ভ্যালেন্সিয়াকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বার্সেলোনা। ৫-২ ব্যবধানে জয়ে আরও অনেক কিছুই যোগ হয়েছে এর্নেস্তো ভালভার্দের ঝুলিতে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ রিয়াল সোসিয়েদাদের কাছে হারায় লা লিগায় ভালোভাবেই ফেরত এলো বার্সা। ৭ পয়েন্ট নিয়ে চারে উঠে এসেছে তারা পয়েন্ট টেবিলের, শীর্ষে থাকা অ্যাটলেটিকোর পয়েন্ট ৯।

    সাবেক বার্সা গোলরক্ষক জ্যাস্পার সিলেসেনের ফেরাটা তাই সুখের হয়নি। মৌসুমের প্রথম ম্যাচের পর প্রথমবারের মতো মাঠে ফিরেছিলেন লুইস সুয়ারেজ। তার ফেরাটা হয়েছে রাজকীয়। মাঠে ছিলেন শেষ ত্রিশ মিনিট। তাতেই শিরোনাম কেড়ে নিয়েছেন সুয়ারেজ।


     

    লিওনেল মেসি ইনজুরি থেকে না ফেরায় এ ম্যাচেও ছিলেন না দলে। কিন্তু তার অভাব এক মুহুর্তের জন্যও ফুটে ওঠেনি ম্যাচে। অভাবটা বুঝতে দেননি নতুন দুইজন। আনসুমানে ফাতিহর অভিষেক দেখেছে ন্যু ক্যাম্প। ফাতিহকে ঠিকঠাক মতো দেখার আগেই অবশ্য তিনি আনন্দে ভাসিয়েছেন সমর্থকদের। দুই মিনিটও সময় নেননি। ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ংয়ের ক্রস বাম দিক থেকে গিয়ে পড়েছিল ডিবক্সের ভেতর। অ্যান্টোয়ান গ্রিযমান দেখে শুনে ছেড়ে দিয়েছেন পেছনে থাকা ফাতিহর ওপর ভরসা করে। ১৬ বছর বয়সী ফাতিহ আত্মবিশ্বাসী শটে গোল পুরেছেন জালে। 

    পাঁচ মিনিট পর বার্সার ইতিহাসের তরুণতম গোলদাতা দেখিয়েছেন তিনি গোল বানাতেও সমান পারদর্শী। ডিবক্সের ভেতর ভ্যালেন্সিয়ার এজেকুয়েল গ্যারায়কে এক ঝটকায় কাটিয়ে চলে গিয়েছিলেন বাইলাইনের দিকে। এরপর মাইনাস করেছেন পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি জায়গায়। ডি ইয়ং দৌড়ে এসে স্লাইড করা শটে করেছেন বার্সার জার্সিতে নিজের প্রথম গোল। গত সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসের জার্সিতে প্রথম গোল করেছিলেন ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার, এরপর আর অপেক্ষা করতে হয়নি নতুন ক্লাবের হয়েও।

    ভ্যালেন্সিয়ার অবশ্য বার্সেলোনায় এসেছিল ঝামেলা সঙ্গী করে। চারদিন আগে কোচ বরখাস্ত হয়েছে, নতুন কোচ আলবার্ত সেলাদেসের প্রথম ম্যাচই ছিল ন্যু ক্যাম্পে। এরপর শুরুর সাত মিনিটে দুই গোলে পিছিয়ে যাওয়া- ভ্যালেন্সিয়া ও  নতুন কোচের জন্য দুঃস্বপ্নের শুরু। সেটা অবশ্য কাটিয়েও উঠেছিল ভ্যালেন্সিয়া। 

    বার্সাকে রক্ষণে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন কেভিন গ্যামেইরো। ২৭ মিনিটে রদ্রিগো মরেনোর থ্রু পাস ধরে ঢুকে পড়েন তিনি বার্সার গোলের সামনে। এগিয়ে আসা মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান হাত পা ছড়িয়ে নিজেকে বড় করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু গ্যামেইরোর কোণাকুণি নিচু শট ফারপোস্টে লেগে গোলে পরিণত হয়। দুই গোলের লিড হারিয়ে অস্বস্তি চাপে ন্যু ক্যাম্পে। প্রথমার্ধে দুইবার গ্যামেইরোকে ভালো সেভ করে ফেরান টের স্টেগান। এগিয়ে থেকে বিরতির সময় বার্সার টানেলে যাওয়ার কারণও তিনি।

    দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য আর কোনো সুযোগ ভ্যালেন্সিয়াকে দেয়নি বার্সা। নেলসন সেমেদো ভালো এক শট করেছিলেন। সিলেসেনকে তাই আবারও শুরু থেকেই থাকতে হয়েছে ব্যস্ত। কিন্তু ভুলটাও করে বসলেন গ্রিযমানের শট ধরতে গিয়ে। হাত ফস্কে সেটা গিয়ে লাগল বারপোস্টে, জেরার্ড পিকে এসব মুহুর্তের জন্যই ওপরে থাকেন, এদিনও ছিলেন। ফিরতি বল জালে ঢুকিয়েই বার্সাকে বড় স্বস্তি এনেন দেন বার্সার নাম্বার থ্রি।

    এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি বার্সাকে। মঞ্চ নিয়ে নিয়েছেন সুয়ারেজ। ৬০ মিনিটে মাঠে নেমেছিলেন। গোল করতে সময় নিয়েছেন এক মিনিট। ডিবক্সের সামনে বল পেয়ে প্রথমবার শট করতে গিয়েও করেননি। ডামিতে গ্যাব্রিয়েল পলিস্তা নড়ে গিয়েছিলেন। সিলেসেনও ফাঁকা রেখে দিয়েছিলেন এক পাশে। সুয়ারেজের দৃষ্টি গেল সেখানেই। খুব জোরে মারলেন না, বাঁক ঠিক রাখলেন। বল গিয়ে সোজা পড়ল বারপোস্টের কোণায়, ওই কোণায় পড়লে বল ভেতরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এসব কিছু ঘটল এক মুহুর্তে। মেসি মাঠে বসে দেখেছেন দলের জয়, সবগুলো গোলে স্বস্তি দেখা গেছে তার চেহারায়। আর সুয়ারেজের গোলের পর হাসি চওড়া হয়েছে তার মুখে। 

    তবে সাবেক সতীর্থ সিলেসেনের ওপর সদয় হয়নি বার্সার কেউ। বাকি সময়ে সুয়ারেজ আরও কয়েকবার সিলেসেনকে বিপদে ফেলেছেন। ডি ইয়ংয়ের নিজের অর্ধ থেকে দৌড়ে ভ্যালেন্সিয়ার অ্যাটাকিং থার্ড পর্যন্ত পৌঁছে ভালো এক সুযোগ তৈরি করেছিলেন। সুয়ারেজ ডামি করে ছেড়ে দিয়েছিলেন গ্রিযমানকে। তার ডান পায়ের শট সিলেসেন ঠেকিয়েছেন, ফিরতি বলে কার্লেস পেরেজকে দুর্দান্তভাবে ফিরিয়েছেন, এরপর ওই আক্রমণ থেকেই ৬৪ মিনিটে আবার আর্থারকেও ঠেকাতে হয়েছে সিলেসেনকে। ম্যাচ শেষের ৮ মিনিট বাকি থাকতে গ্রিযমানের পাস থেকে আরেকটি চমৎকার ফিনিশে সুয়ারেজ করেন দ্বিতীয় গোল।

    ম্যাচের একেবারে শেষ মুহুর্তে দুই বদলি মিলে ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে এক গোল শোধ করেন। চেরিশেভের ক্রস থেকে ম্যাক্সি লোপেজ পান ভ্যালেন্সিয়ার জার্সিতে প্রথম গোল। এসব কিছুই সান্ত্বনা ভ্যালেন্সিয়ার জন্য। তবে জয়টা বার্সার জন্য বড় প্রেরণার। বুধবার চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে তাদের খেলতে হতে পারে মেসিকে ছাড়াই। সেটার একটা ভালো ডেমো দেখিয়ে দিয়েছে বার্সা ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে।