• বাংলাদেশ-আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ
  • " />

     

    ফিফটি নয়, মাহমুদউল্লাহর কাছে অবদান রাখাটাই বড়

    ফিফটি নয়, মাহমুদউল্লাহর কাছে অবদান রাখাটাই বড়    

    জিম্বাবুয়ের সংবাদ সম্মেলনে রিচমন্ড মুতুম্বানি এসে বলে গিয়েছিলেন, মাহমুদউল্লাহর ৬২ রানের ইনিংসটাই শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দুই দলের। মাহমুদউল্লাহ নিজে স্বাভাবিকভাবেই নিজের অবদান বড় করে দেখলেন না। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টির মতো ফরম্যাটে বড় ইনিংসের চেয়ে দলের জন্য অবদান রাখতে পারাটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন।

    এই ম্যাচের আগে এক অর্থে বাংলাদেশের পিঠ দেয়ালে একরকম ঠেকেই গিয়েছিল। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে হেরে গেলে ফাইনালে ওঠার রাস্তা হয়ে যেত অনেক কঠিন। তবে সেই বাধা শুধু সরায়নি বাংলাদেশ, সহজেই উপড়ে ফেলেছে। সেই পথটা শুরুতে লিটন ও শান্ত দেখিয়েছেন, তবে আধিপত্যের আসল বার্তাটা ছড়িয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহই। সাকিব আল হাসান ওভাবে উইকেট দিয়ে আসার পর প্রথম বলেই যেভাবে ছয় মেরেছেন মাহমুদউল্লাহ, সেটাও একটা বিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে।

    সংবাদ সম্মেলনে শুরুর ওই শট নিয়েও জানতে চাওয়া হলো মাহমুদউল্লাহর কাছে। তিনিও স্বীকার করলেন, ‘ইন্টেন্ট ছিল, স্পেশালি যখন ড্রেসিংরুমে ছিলাম আমার ইচ্ছা ছিল সুযোগ পেলে প্রথম বলেই সুযোগ নেব। আমার মনে হয় বোলাররাও আশা করছিল না। আমি শুধু কাউন্টার অ্যাটাক করার চেষ্টা করেছি।’

     

     

    সেই প্রতিআক্রমণটা মাহমুদউল্লাহ করেছেন তার পছন্দের সব শট খেলেই। ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছয় মেরেছেন, লেগ সাইডে বল পেয়ে ফ্লিক করে সীমানার ওপারে আছড়ে ফেলেছেন। প্রথম চারটা ছয়ের সময় একটি চারও ছিল না, পরে সুইপ করে মেরেছেন একটি। মাহমুদউল্লাহ বলছেন, যতক্ষণ ব্যাটিং করছিলেন স্বচ্ছন্দই বোধ করছিলেন উইকেটে, ‘উইকেট খুব ভালো ছিল আজকে। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা ১৯০-২০০ উইকেট। আমি আমার মুশি যতক্ষণ ব্যাট করছিলাম খুব ভালো মনে হয়েছে উইকেট। আমার মনে হয়েছে, লিটন আর শান্তর জুটিটা অনেক গুরুত্বপূর্ন ছিল। আর মুশিও আজকে অনেক ভালো ব্যাট করেছে।’

    তবে মাহমুদউল্লাহর নিজের জন্য কিছুটা হলেও আজকের ইনিংসটা স্পেশালই টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং অর্ডারের কারণে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ সব সময় পান না। আজকের আগে ফিফটি ছিল তিনটি, সর্বশেষটি ছিল আড়াই বছরেরও বেশি সময় আগে। সেটি মনে করিয়ে দেওয়া হলে একটু মুচকি হাসলেন। তবে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে একদমই স্বল্পবাক তিনি, নিজের সন্তুষ্টি বা তৃপ্তির চেয়ে বরং দলের জন্য কিছু করাটাই দেখছেন বড় ব্যাপার হিসেবে, ‘আমার কাছে মনে হয়েছ, ৫০ রান ব্যাপার না। বড় ব্যাপার হচ্ছে, আমি দলের জন্য কতটা অবদান রাখতে পারলাম। আমি দলের জন্য সবসময় খেলার চেষ্টা করি। আর ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মনে হয় না দলের কেউ ওরকম চিন্তা করে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। কারণ টি-টোয়েন্টি খেলার ধরনটাই এরকম, এখানে ২০-৩০ রান করেও ম্যাচ জেতানোর অনেক সুযোগ থাকে। ও ওইগুলা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ম্যাচ জেতাতে পারলে সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

    আগের ম্যাচের পরেই সাকিব বলেছিলেন, সিনিয়ররা আরও বেশি দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ওপরের দিকে ব্যাট করতে চাইছেন। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য এখানে সিনিয়র বা জুনিয়র বিভাজন করতে চাইলেন না। নিজে যে পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করছেন, সেটা নিয়েও আলাদা করে কোনো পর্যবেক্ষণ নেই তার, ‘না, আমি ওভাবে চিন্তা করিনি। আমার মনে হয় যে কত অবদান রাখছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর আমার ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে চিন্তা নেই। যেখানে ব্যাট করি, সেখানেই আমি দায়িত্ব পালন করতে চাই।’

    বাংলাদেশ দলের জন্যও তো এই জয়টা কম স্বস্তির নয়। আফগানদের কাছে হারের পর সমালোচনার শূল কম বিদ্ধ হয়নি। এই হারে আপাতত সেই ক্ষতটা ঢাকল, সেই সঙ্গে আছে ফাইনালে ওঠার স্বস্তিও। মাহমুদউল্লাহ এই ব্যাপারটাই দেখছেন বড় করে, ‘আমার মনে হয় সাম্প্রতিক সময়ে ফল হিসেবে ভালো করিনি। টেস্টে হারলাম, শ্রীলংকায় তার আগে হেরেছি। আফগানিস্তানের সাথেও হেরেছি। আমার মনে হয়, সবার মধ্যে আজকের ম্যাচের আগে স্পৃহাটা বেশি কাজ করছিল। টিম ম্যানেজমেন্ট সবার সাথে কথা বলেছে, কোচ এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলেছে। সাকিব অনেক বেশি কথা বলেছে, অনেক বেশি ইনভলড ছিল। নেক্সট স্টেজ হচ্ছে, আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে একই রকম বা আরও ভালো করতে পারি এবং ফাইনালের জন্য তৈরি হতে পারি। যেটা আমাদের আরও বেশি আত্মবিশ্বাস দেবে।’