• বাংলাদেশ-আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ
  • " />

     

    যেভাবে 'বিপ্লব' এলো বাংলাদেশ ক্রিকেটে

    যেভাবে 'বিপ্লব' এলো বাংলাদেশ ক্রিকেটে    

    মাহমুদউল্লাহ কাল রীতিমতো অভিভূত। বার বার বলছিলেন, বিপ্লবের বোলিং তার খুব মনে ধরেছে। বিশেষ করে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে যেভাবে আগ্রাসন দেখিয়েছেন এই তরুণ, সেটা দারুণ লেগেছে মাহমুদউল্লাহর। সেই বিপ্লব কীভাবে ব্যাটসম্যান থেকে লেগ স্পিনার হলেন, সেই প্রশ্ন আপনার মনে আসতেই পারে। আজ চট্টগ্রামে টিম হোটেলে তার অনেকটুকুই মেটালেন এই ডানহাতি লেগ স্পিনার।

    এমন নয় যে বাংলাদেশ দলে ব্যাটসম্যান থেকে কেউ বোলার হয়ে যাননি। আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বিকেএসপির ও জাতীয় দলের অগ্রজ মেহেদী হাসান মিরাজই তো ব্যাটিং অলরাউন্ডার থেকে প্রায় বোলার হয়ে গেছেন। আফিফ হোসেনও বোলিং দিয়ে নজর কেড়েছিলেন, যদিও এখন আবার মনযোগ দিচ্ছেন ব্যাটিংয়ে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বিপ্লব লেগ স্পিন করেন আগে থেকেই। কিন্তু তার মূল পরিচয় ছিল ব্যাটসম্যান। পরিসংখ্যানও সে কথা বলছে। কালকের আগ পর্যন্ত যে কোনো স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে কোনো উইকেট ছিল না বিপ্লবের। লিস্ট এ তেই উইকেট ছিল মাত্র তিনটি। অথচ কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে পেলেন ২ উইকেট।

    মূলত ব্যাটসম্যানই তিনি। তবে নেটে তার বোলিং দেখে নির্বাচকদের মনে হয়েছে, একে একটা সুযোগ দেওয়া যায়। এমনিতে জাতীয় দলে একজন লেগ স্পিনারের জন্য হাহাকার চলে সবসময়। বিপ্লব অবশ্য বললেন, বোলিং ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই করতেন। তবে কাঁধের চোট তাকে সেটি নিয়মিত করতে দেয়নি, ‘আসলে আমি ক্যারিয়ারের শুরু থেকে বোলিং করতাম। মাঝে অনেকদিন গ্যাপ গেছে বোলিংয়ে। কাঁধের ইনজুরির কারণে বোলিং করতে পারতাম না। ইনজুরিটা প্রিমিয়ার লিগের সময় হয়েছিল। কাঁধের ইনজুরি সেরে উঠার পর কোচ সাইমন হেলমট আমার বোলিং নিয়ে কাজ শুরু করে। ওয়াহিদুল গনি স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। এর আগে সোহেল স্যারের (বিসিবির অন্তর্বর্তীকালীন স্পিন কোচ সোহেল ইসলাম) সঙ্গে কাজ করেছি কিভাবে বোলিং উন্নতি করা যায়। ওয়াহিদ স্যার ও সোহেল স্যারের কাছে যেগুলো ভালো হয়েছিল সেগুলোই পরে চেষ্টা করে গেছি। প্রিমিয়ার লিগে চার ম্যাচ বোলিংয়ের পর শোল্ডার ইনজুরিতে পড়েছিলাম।’

     

     

    এরপর আর সেভাবে বল করতে পারেননি। এরপর এইচপি দলের হয়ে শ্রীলংকার ইমার্জিং দলের বিপক্ষে গত মাসে তিন ম্যাচে বল করেছিলেন। সেখানেও আহামরি কিছু করেননি, তিন ম্যাচে নিয়েছেন তিন উইকেট। জাতীয় দলে ডাক পাবেন, সেটা তার জন্য চমকই ছিল। বাকিটা বিপ্লবের মুখেই শুনুন, ‘দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পর সোহেল স্যার আমাকে ফোন দিয়েছিল, জিজ্ঞেস করেছিল তুই কি কিছু জানিস। আমি বলি না আমি জানি না। উনি বলল, আচ্ছা ওয়েট কর একটা ভালো নিউজ পাবি। সাব্বির ভাই (বিসিবির অপারেশন্স ম্যানেজার সাব্বির খান) আমাকে ফোন দিয়ে জানায় যে, কনগ্রাচুলেশন তোমাকে ন্যাশনাল টিমে ডাকা হয়েছে।  রাতে তখন ঘুমাতে পারিনি। প্রথমবারের মতো তো। সত্যি বলতে এতো বড় আশা করিনি।  এ দল থেকে নির্বাচকরা আমাকে সিলেক্ট করেছে। তারপর থেকে আল্লাহর রহমতে হয়ে গেছে।’

     

    তবে কাল মাহমুদউল্লাহ যেমন বলছিলেন, মাঠে নামার সময় বিপলবে শুধু বললেন নিজের খেলাটা খেলতে। বিপ্লব আজ বললেন, সিনিয়রদের অভয়বাণী থেকে স্নায়ুচাপটা কেটে গেছে, ‘আমি যখন বোলিংয়ে যাই তখন একটু নার্ভাস ছিলাম…সাকিব ভাই আমাকে বলল তুই নরম্যাল যেভাবে বোলিং করিস সেভাবে বোলিং করার চেষ্টা কর। রিয়াদ ভাই বলছিল, ভালো জায়গায় বোলিং করলেই হবে। সেগুলো করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমতে ভালো হয়েছে।সাকিব ও রিয়াদ ভাইয়ের মতো বড় খেলোয়াড় এগুলো বলে তখন অটোমেটিক আত্মবিশ্বাস চলে আসে। আমি শুধু ওটাকে কন্টিনিউ করার চেষ্টা করেছি।’

     

     

    তবে পথ এখনো শুরু সবে। ভয়টা বেশ লেগ স্পিনার বলেই, বাংলাদেশে তো শেষ পর্যন্ত এখানে হাহাকারের মিছিলটা লম্বাই হয়েছে। বিপ্লব অবশ্য সেটা জানেন। সেজন্য নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, ‘আমি ফিল করি সেল্ফ কন্ট্রোল অনেক বড় জিনিস। নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি দেখেছি আগে কারা কে কি করেছে। চেষ্টা থাকবে নিজেকে কন্ট্রোল করে ডে বাই ডে উন্নতি করার চেষ্টা করবো। ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো করার চেষ্টা করবো।’

    কথার পরিণতিবোধের মতো বিপ্লব সেটি মাঠে করে দেখাতে পারলে হয়!