• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    বিতর্ক সঙ্গী করে অ্যানফিল্ডে সিটিকে ডোবাল লিভারপুল

    বিতর্ক সঙ্গী করে অ্যানফিল্ডে সিটিকে ডোবাল লিভারপুল    

    প্রিমিয়ার লিগ

    ফুলটাইম

    লিভারপুল ৩-১ ম্যানচেস্টার সিটি


    অ্যানফিল্ডে শেষ ৪৫ ম্যাচে হারেনি লিভারপুল। ‘অল রেড’দের মাঠে ২০০৩-এর পর জয়ের দেখা পায়নি ম্যানচেস্টার সিটি। প্রিমিয়ার লিগে নতুন ক্লাসিকোতে লিভারপুল আবারও প্রমাণ করল, কেন অ্যানফিল্ডে রীতিমত অজেয় তারা। লিভারপুল বড় জয় পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা ছাপিয়ে গেছে ‘ভিএআর’ বিতর্ক। পেপ গার্দিওলার দলকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে লিভারপুল।

    প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ দুইদলের লড়াইয়ের শুরু থেকেই ছিল বিতর্কের ছায়া। ম্যাচের ৬ মিনিটে বের্নার্দো সিলভার ক্রস ডিবক্সে লিভারপুল রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের হাতে লাগলেও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। আগুয়েরো-সিলভাদের প্রতিবাদের মুখে প্রতি-আক্রমণে বাঁ-প্রান্তে বল পান সাদিও মানে। তার করা ক্রস সিটি ডিফেন্ডারকা ক্লিয়ার করলেও বল যায় ফাবিনহোর পায়ে। গোলের প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে সাবেক লিভারপুল অধিনায়ক স্টিভেন জেরার্ড সদৃশ আগুনে শটে সিটি গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোকে পরাস্ত করেন ফাবিনহো।

    শুরুতেই এগিয়ে গিয়ে লিভারপুল সমর্থকদের উল্লাসে প্রকম্পিত হওয়া অ্যানফিল্ডেই রেফারিকে ঘিরে ধরেন সিটির ফুটবলাররা, ‘ভিএআর’-এর শরণাপন্ন হন মূল রেফারি মাইকেল অলিভার। রিপ্লেতে আর্নল্ডের হাতে বল লাগার ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখা গেলেও বিস্ময়করভাবে গোলের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন ভিডিও রেফারি। লিভারপুল আর ম্যান সিটির লড়াই যেমনটা হওয়ার কথা ছিল সেটা তাই হলো একেবারে শুরু থেকেই। তাতে থাকল দুর্দান্ত গোল, থাকল বিতর্ক। সিটির অসন্তোষ দ্বিগুণ হয় কিছুক্ষণ বাদেই; লিভারপুলের দ্বিতীয় গোলেও ছিল বিতর্কের ছাপ। ১৩ মিনিটে লেফটব্যাক অ্যান্ড্রু রবার্টসনের ক্রসে হেড করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মোহামেদ সালাহ। আবারও তলব করা হয় ভিডিও রেফারিকে।

     

    কন্ট্রাস্ট!

     

    রিপ্লেতে দেখা যায় রবার্টসনের ক্রসের সময় অফসাইডে ছিলেন সালাহ। কিন্তু আবারও সিদ্ধান্ত যায় লিভারপুলের পক্ষে, গোলের সিদ্ধান্তে অটল থাকে ‘ভিএআর’। ম্যাচের শুরুতেই এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এরপর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি গার্দিওলা, ডাগআউটে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা স্প্যানিশ ম্যানেজারকে সতর্কও করে দিতে হয়েছে অলিভারকে। প্রথমার্ধে বিতর্কের কারণে ভুগতে হলেও আক্রমণে অবশ্য একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি সিটি। রক্ষণে জোয়েল মাতিপের ইনজুরির কারণে নেমেছিলেন দেয়ান লভ্রেন, যাকে ধরা হচ্ছিল লিভারপুলের ‘উইক লিঙ্ক’। কিন্তু প্রথমার্ধে সেই লভ্রেনই রীতিমত পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন আগুয়েরো-সিলভাদের। ভার্জিল ভ্যান ডাইক ছিলেন স্বরূপে, কিন্তু লভ্রেন ছিল আক্ষরিক অর্থেই নিখুঁত।

    প্রথমার্ধে অ্যাঞ্জেলিনোর ক্রস আর্নল্ডের গায়ে লেগে ক্রসবারে প্রতিহত হওয়া ছাড়া অ্যালিসনকে তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি গার্দিওলার দল। পারফরম্যান্সের বিচারে সিটির চেয়ে অনেকাংশে এগিয়ে ছিল লিভারপুলই। ইনজুরি কাটিয়ে মাঝমাঠে রদ্রির ফেরাটা সুসংবাদই ছিল সিটির জন্য, কিন্তু প্রথমার্ধে তাকে রীতিমত নাচিয়ে ছেড়েছেন ফাবিনহো-ওয়াইনাল্ডামরা। 

     

    "এবার হয়তো আর লিগ জেতা হচ্ছে না"

     

    প্রথমার্ধের কিছু বুঝে ওঠার আগেই লিড নিয়েছিল লিভারপুল। দ্বিতীয়ার্ধেও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে ক্লপের দল। ৫২ মিনিটে জর্ডান হেন্ডারসনের দুর্দান্ত ক্রসে হেড করে ব্যবধান ৩-০ করেন মানে। হেন্ডারসনের দারুণ ক্রস, বা মানের বুলেটগতির হেডের চেয়েও হয়তো রাইটব্যাক কাইল ওয়াকারের মার্কিংয়ে হতাশ বেশি হবেন গার্দিওলা, হেন্ডারসনের ক্রসে মানেকে মার্কই করেননি তিনি। তিন গোলের লিড নেওয়ার পর ম্যাচের বাকিটা সময় প্রতি-আক্রমণে খেলেছে লিভারপুল। আক্রমণের ধার কমানো ‘অল রেড’দের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধেও মাঝমাঠে সুবিধা করতে পারেননি রদ্রিরা।

    দ্বিতীয়ার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও অ্যালিসনের গোলে মাত্র একবার শট নিতে পেরেছিল সিটি। ম্যাচের মিনিট দশেক বাকি থাকতে অবশ্য সিটিকে ম্যাচে ফেরানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বের্নার্দো। অ্যাঞ্জেলিনোর ক্রস থেকে শেষদিকে গোলশোধ করেছিলেন তিনি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অ্যানফিল্ডে তা সিটির জন্য সান্ত্বনা ছাড়া যেন আর কিছুই ছিল না।

    ম্যাচ শেষে মাথা নিচু করে গার্দিওলার শূন্যদৃষ্টি যেন প্রমাণ করে; লিভারপুলকে আর ধরা হচ্ছে না এবার- সেটা হয়তো মেনেই নিয়েছেন তিনি। অলিভারের শেষ বাঁশির পর স্বভাবসুলভ মুষ্টিবদ্ধ উদযাপন দিয়ে ক্লপও জানান দিলেন; এবার আর খালি হাতে ফিরতে চায় না তার দল। ১২ ম্যাচ শেষে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরেই থাকল লিভারপুল। সমানসংখ্যক ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে চার-এ নেমে গেল সিটি, ২৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে উঠে আসল লেস্টার সিটি।