• বাংলাদেশের ভারত সফর
  • " />

     

    অবাক হওয়া না হওয়ার সেই পুরোনো চক্রে বাংলাদেশ

    অবাক হওয়া না হওয়ার সেই পুরোনো চক্রে বাংলাদেশ    

    বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১৫০ অল-আউট (মুশফিক ৪৩, মুমিনুল ৩৭, শামি ৩/২৭, ইশান্ত ২/২০) ও ২য় ইনিংস ২১৩ অল-আউট (মুশফিক ৬৪, মিরাজ ৩৮, শামি ৪/৩১, আশ্বিন ৩/৪২)
    ভারত ১ম ইনিংস ৪৯৩/৬ ডিক্লে. (আগারওয়াল ২৪৩, রাহানে ৮৬, জাদেজা ৬০*, পুজারা ৫৪,  রাহি ৪/১০৮)
    ভারত ইনিংস ও ১৩০ রানে জয়ী 


    পুরো দিনের ঘটনা


    টেস্টের প্রথম দিন হিসেবে বিবেচনা করুন, অবাক হবেন না। পেসাররা টানা বোলিং করে গেলেন শুরুতে, টানা ২২ ওভার, লাঞ্চের পরে এক ওভার ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পেস আক্রমণ আর টার্নিং উইকেটের চেয়ে পেস-সহায়ক উইকেটের দিকে তাদের ঝোঁক বিবেচনায় আনলে ব্যাপারটি খুব অবাক হওয়ার মতো নয়ও। পেসারদের সঙ্গে রবি আশ্বিনের তোপে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ২১০ রানেই, এতেও নিশ্চয়ই অবাক হবেন না আপনি।

    তবে ম্যাচে এটি তৃতীয় দিন, তৃতীয় ইনিংস। এবার একটু নড়েচড়ে বসতে হবে আপনাকে। প্রথম দিন থেকেই ধুলো ওঠা ভারতের উইকেট দেখে অভ্যস্থ আপনাকে একটা ধাক্কা দেবে বিরাট কোহলির দল। সে ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই দেখবেন, ইনিংস ও ১৩০ রানে পরাজয় সম্পন্ন হয়ে গেছে বাংলাদেশের। আপনি নাহয় অবাক হলেন, খেলার ধরন দেখলে মনে হবে অবাক হয়ে গেছে বাংলাদেশ দলও। আদতে অবাক হওয়ার মোড়কে আছে বাংলাদেশের সামর্থ্যের ঘাটতি, আছে সিদ্ধান্ত ও এর বাস্তবায়নে বেশ বড়সড় এক শূন্যতা। 

    পেসারদের সামলাতে নতুন বল পার করতে হতো টপ অর্ডারকে, ৪০-৪৫ ওভার পরে এসজি বলের সিম নিচু হয়ে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ে একটু সুবিধা হয়- কাজে লাগাতে হতো সে সুযোগ। সঙ্গে ভারতের রিভিউ খরচ করে ফেলা কিংবা ক্যাচ ফেলা- সুযোগ নিতে হতো সেসবেরও। বাংলাদেশ সেভাবে করতে পারলো না কিছুই। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দ্বিতীয় সেশনে দুটি জুটি হলো বটে লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজের। তবে যথেষ্ট হলো না সেসব। 

    ঘুরেফিরে এলো সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের শূন্যতা। তবে এ হাহাকার তুলে দিল এক প্রশ্ন, দুজন ক্রিকেটারকে মিস করার সামর্থ্য আদতে আছে বাংলাদেশের? সাকিবকে ছাড়া যে এক বছর খেলতে হবে, সেই বাস্তবতাটা মেনে নিয়ে পারফর্ম করতে ঠিক কতোদিন সময় নেবে বাংলাদেশ? সাকিব-তামিমের ‘অভাব’-এর কথা বাদ দিয়ে যারা খেলছেন তাদের খেলার ধরনের দিকে যদি তাকানো যায়, তবে সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে খুব বড় করেই। 

    ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস যেমন। প্রথম ইনিংসের মতো দুজনই আউট হলেন ৬ রান করে, ইশান্ত শর্মা ও উমেশ যাদবের মিলিত আক্রমণে তাদের আউট হওয়া আবারও হয়ে দাঁড়ালো সময়ের অপেক্ষা। দুই পেসার দুইদিকে সুইং করে বা মুভমেন্ট আদায় করে খুব সহজেই ধন্দে ফেলে দিলেন সাদমান-ইমরুলকে, দুজনই স্টাম্প হারালেন যথাক্রমে ইশান্ত ও উমেশের বলে। প্রথম ইনিংসে বল ভালভাবে ছেড়ে একটু টিকে ছিলেন মুমিনুল হক, শামি এসে তাকে করা শুরু করলেন স্টাম্প বরাবর। ফল- ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউ বাংলাদেশ অধিনায়ক, যে উইকেট ভারত পেলো রিভিউ নিয়ে। 
     


    সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন.../বিসিসিআই


    মোহাম্মদ মিঠুনের চারে আসা নিয়ে প্রশ্নটা উঠলো আরেকবার। তার বিপক্ষে ভারত রিভিউ খরচ করলেও শামির শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মোমেন্টামের কিছুই না পেয়ে তিনি ধরা পড়লেন শর্ট মিডউইকেটে। মিঠুনের চারে আসার সঙ্গে প্রশ্ন আরেকটি- মুশফিকের পাঁচে আসা। বল পুরোনো হয়ে গেলে দলের সেরা ব্যাটসম্যান এসে স্কোর বড় করবেন- এমন ট্যাকটিকস আদৌ কোনও দলের জন্য কতটা কার্যকরী? 

    দুই ইনিংস মিলিয়ে যা রান করার, তা অবশ্য ওই মুশফিকই করলেন। প্রথম ইনিংসে ফিফটি মিস করলেও এবার সেটা পেলেন, ওপাশে সঙ্গীদের যাওয়া আসা দেখে হতাশ হয়ে আশ্বিনকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়ার আগে করলেন ৬৪। ভারতের বিপক্ষে এমনিতেই রেকর্ডটা ভাল তার, তবে ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে সেঞ্চুরি পাওয়া মুশফিক দুই ইনিংস মিলিয়ে করতে পারলেন ১০৭ রান। আর মাহমুদউল্লাহ টেস্টে নতুন করে খুঁজে ফিরলেন যেন, লাঞ্চের পরপরই শামির অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়ে।

    লিটনের ব্যাটিং যেন নতুন প্রেমে পড়ার মতো, শুরুর দিকে মোহ কাটে না। এরপর সে প্রেম ছুটে যেতে চায়, বিষণ্ণতা জেঁকে বসে। এদিনও তার ইনিংসটি থাকলো তেমনই- দারুণ টাইমিং আর প্লেসমেন্ট যখন আপনাকে অনেক স্বপ্ন দেখাচ্ছে, হুট করেই আশ্বিনকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিলেন তিনি। এরপর মিরাজ একটু সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মুশফিককে, হাত খুলে ছয়ও মেরেছেন। চা-বিরতিতে ছেদ পড়েছে তার মনযোগে, উমেশের বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। 

    তাইজুল ৪৩ বল টিকে ছিলেন। এরপর আবু জায়েদ ও এবাদতের আউট হওয়া হয়ে পড়েছিল সময়ের অপেক্ষা। যেটি এবাদত হলেনও, ম্যাচে আশ্বিনের পঞ্চম শিকার বনে গেলেন তিনি। 

    তবে ওপেনার ও লোয়ার-অর্ডার- দুই প্রান্তেই থাকলো সেই অনিশ্চয়তা- আউট হতে পারেন যে কোনও সময়। মিডল অর্ডার ভঙ্গুর। আবু জায়েদ ছাড়া বোলাররা দিকভ্রান্ত পথিকের মতো এর আগে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছেন। ২২ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া কলকাতা টেস্ট আরও নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে বাংলাদেশের সামনে, গোলাপি বল আর ফ্লাডলাইটের আলোর সঙ্গে। 

    তার আগে ইন্দোর হয়ে থাকলো দারুণ এক ক্ষত হয়ে। বরং বলা ভাল, দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর ইন্দোর সে ক্ষতটা বড় করলো আরও। ক্ষত সারানোর কথা বাদই দিন, আদতে এ ক্ষত কেন সেটি বুঝে ওঠার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের? 

    যদি না থাকে, তাহলে কি অবাক হবেন আপনি? আর যদি থেকে থাকে, তাহলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ কেন নেওয়া হচ্ছে না- সেটি ভেবে অবাক হওয়ার ব্যাপারটি তো থেকেই যায়।