• বাংলাদেশের ভারত সফর
  • " />

     

    'আলোকিত' ইডেনে 'চেনা' আঁধারে ডুব বাংলাদেশের

    'আলোকিত' ইডেনে 'চেনা' আঁধারে ডুব বাংলাদেশের    

    ১ম দিন, স্টাম্পস
    বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১০৬ অল-আউট (সাদমান ২৯, ইশান্ত ৫/২২, যাদব ৩/২৯)
    ভারত ১ম ইনিংস ১৭৪/৩* (কোহলি ৫৯*, পুজারা ৫৫, এবাদত ২/৬১)
    ভারত ৬৮ রানে এগিয়ে


    দিবা-রাত্রির টেস্ট ভারতের মাটিতে প্রথম বা বাংলাদেশ-ভারতের জন্য প্রথম, এটি বাদ দিলে এদিন সচরাচর ঘটে না এমন ঘটনার ছড়াছড়ি থাকলো। একাধিক কনকাশন বদলি প্রয়োজন পড়লো বাংলাদেশের, স্পিনারের ‘প্রয়োজনীয়তা’ ছাড়াই নিজেদের মাটিতে প্রতিপক্ষকে অল-আউট করে দিল ভারত, ইশান্ত শর্মা ১২ বছরের ক্যারিয়ারে দেশের মাটিতে মাত্র দ্বিতীয়বার নিলেন ৫ উইকেট, আলোকস্বল্পতার বালাই না থাকলেও সব মিলিয়ে খেলা হলো ৭৭ ওভারেরও কম- তালিকাটিকে চাইলেই লম্বা করতে পারেন আপনি। 

    কলকাতায় মাঠের ক্রিকেটের বাইরে এমনিতেও ক্রিকেটকে ঘিরে ছিল এক বিশেষ দিন- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আর পশ্চিমবঙ্গের প্রধানমন্ত্রী মিলে বাজালেন ইডেনের ম্যাচশুরুর ঘন্টা, বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট স্কোয়াডের সদস্যদের সঙ্গে ইডেনে হাজির ভারত কিংবদন্তিরা, আর গোলাপি রঙের ছড়াছড়ি। আর দশটা দিনের চেয়ে এ দিনটি ছিল আলাদা। এমন দিন ভারত খুব দেখেনি। তবে এমন বাংলাদেশকে ভারত দেখেছে। আগের টেস্টে। তার আগে। কিংবা তারও অনেক আগে।

    মাঠের ভেতর টেস্ট ক্রিকেটে যদি বাংলাদেশকে এনে আপতন করেন- তাহলে পুরোনো ঘটনাই ফিরে পাবেন আপনি। টসে জিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত আরেকবার প্রশ্নের মুখে, মুশফিকের চার-নম্বরে-না-নামা রহস্য, দল-নির্বাচন কিংবা আইসিসির নতুন নিয়মের কথা মাথায় রেখে স্কোয়াডকে প্রস্তুত না রাখার সঙ্গে সেই চিরায়ত প্রশ্ন- ব্যাটিংয়ে শীর্ষ পর্যায়ের পেস আক্রমণসম্পন্ন দলের বিপক্ষে খেলার সামর্থ্য কতখানি বাংলাদেশের? পেসাররাই বা প্রস্তুত কতখানি? ওপরের সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশকে ৩০.৩ ওভারে ১০৬ রানে অল-আউট করে দেওয়ার পর প্রথম দিনশেষেই ৭ উইকেট বাকি রেখে ৬৮ রানে এগিয়ে থাকা ভারত উসকে দিয়েছে সে প্রশ্নই- অগুণিতবার না হলেও সিরিজে আরেকবার। 
     


    দুটি কনকাশন বদলি লেগেছে বাংলাদেশের- লিটনের পর নাঈমও ছিটকে গেছেন প্রথম দিনই/বিসিসিআই


    দিবা-রাত্রির টেস্ট, গোলাপি বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার থাকলেও দিনশেষে ব্যাট আর বলের চিরায়ত সেই লড়াই এটি, কন্ডিশন আর পরিস্থিতি বুঝে সে অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার। প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা সেসবের পাশে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসিয়ে দিলেন। ৫৭.১ ওভারের মাঝেই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে গিয়ে ভারত সফরকারিদের ঠেলে দিল এক বিশাল অনিশ্চয়তার দিকে। 

    টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সময় মুমিনুল বললেন, তারা সাহস দেখাতে চান। স্কোরকার্ডে অবশ্য সেই সাহসের ছিঁটেফোঁটা থাকলো না। ইন্দোরের মতো কলকাতার দুপুরে ভারত পেসাররা তেমন সুইং আর মুভমেন্ট পেলেন না, তবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের আউট করার রাস্তাটা তারা পেয়ে গেলেন খুব দ্রুতই। সাদমান ইসলাম, লিটন দাসের পর দুই অঙ্ক ছুঁলেন নাঈম হাসান- অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে পরের দুজন ব্যাটিংয়ের পরই এ টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন শামির বলে হেলমেটে আঘাত পেয়ে কনকাশনের কারণে। তাদের বদলি হিসেবে যথাক্রমে এসেছেন মিরাজ ও তাইজুল- এর মাঝে প্রথমজন আবার ‘লাইক-টু-লাইক’ বদলির হিসেবে বোলিং করতে পারবেন না। 

    ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের গল্পটা পুরোনোই। ইমরুল কায়েস ইশান্ত শর্মার ভেতরের দিকে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ, মুমিনুল হক স্লিপে রোহিতের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার উমেশের বলে। দুজনের কেউই বলের লাইন পড়তে পারেননি ঠিকঠাক। মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিম হয়েছেন ইনসাইড-এজে বোল্ড, প্রথমজন উমেশের বলে, পরেরজন শামির বলে। দুজনের ফুটওয়ার্ক ছিল বড্ড নড়বড়ে। মাহমুদউল্লাহর পুরো ইনিংসই ছিল তাই, উড়ন্ত ঋদ্ধিমানের হাতে ধরা পড়ে মুক্তি মিলেছে তার। 
     


    এমন উপলক্ষ্য খুব বেশি পায়নি বাংলাদেশ/বিসিসিআই


    শুরুর দিকে সাদমানকেই মনে হচ্ছিল বেশ দৃঢ়, তবে ইন্দোরে বড় সুইংয়ের ব্যাপারটা মাথা থেকে সরেনি তার। উমেশের বলে সুইং প্রত্যাশা করে শেষ পর্যন্ত খোঁচা দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ লাঞ্চে গেছে ৬ উইকেট হারিয়ে, সঙ্গে অবসর নেওয়া লিটনকে সহ। লিটন যেন খেলছিলেন অন্য কোনও কন্ডিশনে- পাঞ্চ, কাভার ড্রাইফ, ফ্লিক, পুলে পাঁচটি চারে ২৭ বলে ২৪ রান তার। হেলমেটে বল লাগার পরও একটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত উঠেই গেছেন তিনি। 

    লাঞ্চের পর লিটন আর নামেননি, স্কোয়াডে বাড়তি কোনও ব্যাটসম্যান নেই বলে তার বদলি হিসেবে নিতে হয়েছে মিরাজকে, যিনি ফ্লিক করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন দ্রুতই। নাঈম অবশ্য ব্যাটিং করেছিলেন ইশান্তের বলে বোল্ড হওয়ার আগে। আর বাংলাদেশের লেজ দ্রুতই এরপর ছেঁটে দিয়েছেন ইশান্ত-শামিরা। 

    আগের ম্যাচ ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মায়াঙ্ক আগারওয়াল গালিতে ধরা পড়েছেন আল-আমিনের বলে। এরপর ১২ রানে আল-আমিনের হাতে জীবন পেয়ে সেটা খুব একটা কাজে লাগাতে পারেননি রোহিত, ২১ রান করে এবাদতের ভেতরের দিকে ঢোকা বল ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ হাসতে পেরেছে আরেকবার- এবাদতের লাফিয়ে ওঠা বলে স্লিপে পুজারা ক্যাচ দেওয়ায়। তবে তার আগেই পুজারা করেছেন ফিফটি, কোহলির সঙ্গে তার জুটি ৯৩ রানের। 

    বাকিটা সময় রাহানেকে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে দ্রুততম সময়ে ৫০০০ রান পূর্ণ করা কোহলি। আর আভাস দিয়ে রেখেছেন, প্রথম দিন বাংলাদেশ যেটি পারেনি, শুরুর সেশনে সেই ব্যাটিং কন্ডিশন কাজে লাগানো। তেমন হলে কলকাতায় বাংলাদেশের দুর্দশা বাড়বেই শুধু। অনেকদিনের চেনা আঁধারে আরেকবার ডুব দেবে তখন বাংলাদেশ।