• বাংলাদেশের ভারত সফর
  • " />

     

    ভারত সিরিজের রিপোর্ট কার্ড : 'ফেল'-এর ছড়াছড়িতে পেসারদের 'এ মাইনাস'

    ভারত সিরিজের রিপোর্ট কার্ড : 'ফেল'-এর ছড়াছড়িতে পেসারদের 'এ মাইনাস'    

    ওপেনিং 

    সাদমান ইসলাম (এফ), ইমরুল কায়েস (এফ), সাইফ হাসান (অনুপস্থিত)

    ১২, ১২, ১৫, ০- চার ইনিংসে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি কিংবা দুই ওপেনারের আলাদা করে ১০.২৫ (সাদমান) ও ৫.২৫ (ইমরুল) গড় দুর্দশার চিত্রটাই ফুটিয়ে তোলে। সাদমান এসেছিলেন ‘এ’ দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি ফিফটি, জাতীয় লিগে বড় সেঞ্চুরি (১৭৮) সঙ্গে নিয়ে। পা নড়াচড়া করেনি তার বেশিরভাগই সময়ে। সাদমানের চেয়ে ইমরুল আরও বেশি সহজ শিকার ছিলেন ভারত পেসারদের, যিনি এসেছিলেন জাতীয় লিগে ডাবল সেঞ্চুরির আত্মবিশ্বাস নিয়ে। তবে ক্রিজে তার উপস্থিতি যেন ক্লাসে গিয়ে শুধু ‘প্রেজেন্ট স্যার’ বলার মতোই, এরপর লেকচারে কী হয়েছে- তার কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। আর অভিষেক হওয়ার আগেই কলকাতা টেস্ট থেকে চোটের কারণে ছিটকে গেছেন সাইফ হাসান, কনকাশনে দুটি বদলি প্রয়োজন হলেও সাইফকে পাওয়া যায়নি তাই।

    তামিম ইকবাল, আপনি কই? 

    তিন নম্বর ও অধিনায়ক, মুমিনুল হক (এফ) 

    অধিনায়ক মুমিনুল, নাকি ব্যাটসম্যান মুমিনুল- কোনজন বেশি ব্যর্থ? অধিনায়ক মুমিনুলের বোলিং পরিবর্তন বা ফিল্ড-সেটিংয়ের চেয়ে আগে আসবে দুই টেস্টেই টসে জিতে তার ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত। ‘টিম ম্যানেজমেন্ট’-এর দোহাই দিলেও অধিনায়ক হিসেবে অনেকখানি দায় নিতে হবে তাকেই। 

    ব্যাটসম্যান মুমিনুলের ক্ষেত্রে অবশ্য দেশের বাইরে চিত্রটা বদলায়নি, ইন্দোরে প্রথম ইনিংসে একাধিক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ইনিংস বড় করার ক্ষেত্রে। কলকাতা টেস্টে তো পেয়েছেন ‘পেয়ার’-ই। দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাটসম্যান মুমিনুল দুই রকমের- সাফল্য ও ব্যর্থতার মানদন্ডে। তবে ভারত সফরে ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক মুমিনুল- দুজনই ব্যর্থ। 


    গ্রেড পয়েন্ট (১০০-তে)
    ৪০-এর নিচে = এফ
    ৪০-৪৪= ডি
    ৪৫-৫৪= সি
    ৫৫-৬৯= বি
    ৭০-৭৪= এ মাইনাস
    ৭৫-৭৯= এ
    ৮০-এর ওপরে = এ প্লাস 


    মিডল-অর্ডার

    মোহাম্মদ মিঠুন (এফ), মুশফিকুর রহিম (এ মাইনাস) মাহমুদউল্লাহ (এফ) 

    মোহাম্মদ মিঠুন কি চারে খেলার যোগ্য? ৫.২৫ গড়ে ৪ ইনিংসে ব্যাটিং করে মিঠুন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বলছেন। মিডল অর্ডারে একমাত্র পাশ করেছেন মুশফিক। অবশ্য দুইবার ফিফটি পেরুলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। কেন পাঁচে নামছেন উইকেটকিপিং ছাড়ার পরও, সে প্রশ্নের সঙ্গে টেইল-এন্ডারদের নিয়ে তার খেলার অ্যাপ্রোচ নিয়েও আছে প্রশ্ন। মাহমুদউল্লাহ কলকাতায় ভাল কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে পড়েছেন চোটে। এর আগে পুরো সিরিজে তার হাইলাইটস- ইন্দোরে রবি আশ্বিনকে অফস্টাম্পের বাইরে সরে গিয়ে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হওয়া। আদতে টেস্ট ক্যারিয়ার নিয়ে কী ভাবছেন তিনি? 


    উইকেটকিপিং, লিটন দাস (ব্যাটসম্যান হিসেবে 'বি', উইকেটকিপার হিসেবে 'এ', মিঠুন 'এ')  

    লিটনের ব্যাটিং আপনার হতে হতে না হওয়া প্রেমের মতো- শেষ পর্যন্ত বিষাদ যেখানে গ্রাস করে সব আনন্দের হাতছানি। ভারতের বিপক্ষেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ইন্দোর কিংবা কলকাতা- দুই টেস্টেই সেই বিষাদ জাগিয়েছেন তিনি। অবশ্য কলকাতায় হেলমেটে আঘাত না পেলেও সেই পুরোনো আক্ষেপেই পুড়াতেন কিনা, সে জবাব খোঁজার ভার আপনার ওপর। দ্বিতীয় টেস্টে উইকেটকিপিং করেছেন তাই মিঠুন, এর আগে লিটন ছিলেন ঠিকঠাকই। 
     


    উঁহু, মুশফিক। রেজাল্ট রিভিউ করার সুযোগ নেই।/বিসিসিআই



    অলরাউন্ডার (অনুপস্থিত)

    মোসাদ্দেক হোসেন টি-টোয়েন্টি সিরিজের পরই দেশে ফিরেছিলেন, তার বদলি হিসেবে ডাকা হয়নি কাউকে। মিরাজ কলকাতায় শুধু ব্যাটিং করেছিলেন। ইন্দোরে মাহমুদউল্লাহ বোলিংয়ে এসেছিলেন ১০০ ওভারের পরে, করেছেন ৩ ওভার।


    স্পিন 

    মেহেদি হাসান মিরাজ (এফ), তাইজুল ইসলাম (সি), নাঈম হাসান (অনুপস্থিত) 

    দুজনই বাদ পড়ার পরও কনকাশন বদলি হিসেবে খেলেছিলেন কলকাতায়। শুধু ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাওয়া মিরাজ নিজের এই সামর্থ্যের জানান দিতে পারেননি, এর আগে ইন্দোরে ছিলেন নিস্প্রভ। সাকিবের অনুপস্থিতিতে বোলিংয়ের অনেক বড় দায়িত্ব ছিল তাইজুলের ওপর, প্রথম টেস্টে হতাশ করেছিলেন তিনিও। দ্বিতীয় টেস্টে সুযোগ পেয়ে অবশ্য বোলিংয়ে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এই বাঁহাতি। তবে দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে। 


    পেস  

    আবু জায়েদ, এবাদত হোসেন, আল-আমিন (সবাই এ মাইনাস), মোস্তাফিজুর রহমান (অ্যাডমিট কার্ড পাননি)

    দুই টেস্টে বাংলাদেশের যা একটু আশা জুগিয়েছিলেন পেসাররাই। দুই টেস্ট মিলিয়ে ভারতের যে ১৫টি উইকেট নিতে পেরেছে বাংলাদেশ, পেসাররাই নিয়েছেন এর ১৩টি। ইন্দোরে রাহি নিয়েছিলেন ৪টি, তবে এবাদত ও রাহি মুভমেন্ট আদায় করার মতো লেংথটা খুঁজে ফিরেছিলেন ইনিংসজুড়েই। বাড়তি একজন পেসারের অভাবও বোধ করেছিল বাংলাদেশ। কলকাতায় আল-আমিনের সংযোজন বেশ কাজেই দিয়েছিল বাংলাদেশের। এবাদতও দারুণ স্পেল করেছেন। গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জও সামলেছেন তারা। 


    ফিল্ডিং (এ মাইনাস)  

    ইন্দোরে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ক্যাচ মিস করেছিলেন ইমরুল, বাংলাদেশের সেটির মাশুল গুণেছিল ২০০ রানেরও বেশি। কলকাতায় যেমন একাধিক মিসফিল্ড করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, তেমনি দারুণ ক্যাচ নিয়েছিলেন তাইজুল। সব মিলিয়ে ফিল্ডিং ছিল ঠিকঠাকই, তবে ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতা ফিল্ডিং নিয়ে আলাদা করে কথা বলতে দিচ্ছে না আপাতত।