• অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান সিরিজ
  • " />

     

    ওয়ার্নারের ৩৩৫*-এর চেয়ে ২৩৯ রানে পিছিয়ে পাকিস্তান

    ওয়ার্নারের ৩৩৫*-এর চেয়ে ২৩৯ রানে পিছিয়ে পাকিস্তান    

    ২য় দিন, স্টাম্পস
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৫৮৯/৩ ডিক্লে. (ওয়ার্নার ৩৩৫*, ল্যাবুশেন ১৬২, আফ্রিদি ৩/৮৮)
    পাকিস্তান ৯৬/৬* (বাবর ৪৩*, স্টার্ক ৪/২২)
    পাকিস্তান ৪৯৩ রানে পিছিয়ে


    স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৩৫তম বার আউট হওয়ার পর ডেভিড ওয়ার্নারের সেই হাসিটা মনে আছে? কাষ্ঠ হাসিটা? এই তো কয়েকদিন আগেই, অ্যাশেজে। ব্রড আসেন, বোলিং করেন, ওয়ার্নার আউট হয়ে ফিরে যান। সেই অ্যাশেজকে পেছনে ফেলে আসার প্রথম ধাপ হিসেবে ওয়ার্নার শেফিল্ড শিল্ডে করলেন সেঞ্চুরি, এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতেও তাই। পাকিস্তান এলো, ওয়ার্নার সেঞ্চুরি করলেন যে এক ইনিংস ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলেন। এরপর এলো এই অ্যাডিলেড। 

    এক, দুই, তিন… ছয়বার উদযাপনে মাতলেন তিনি। একটির মাত্রা যেন ছাড়িয়ে গেল আরেকটিকে। ওয়ার্নার পেয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি, অ্যাডিলেড ওভালে সর্বোচ্চ স্কোর। ডন ব্র্যাডম্যানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পর টিম পেইন ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন। সেটা না করলে ওয়ার্নার মাইলফলকের পর মাইলফলক পেরিয়ে যেতে পারতেন এদিন, উদযাপন করতে পারতেন ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৩৫ বার। সেটি হয়নি। আর প্রায় ৬০০ রানের বোঝা মাথায় নিয়ে, গোধূলিবেলায় ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের যা হওয়ার তাই হয়েছে। 

    দ্বিতীয় দিনশেষে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ৪৯৩ রানের পিছিয়ে পাকিস্তান, ওয়ার্নারের চেয়ে পিছিয়ে ২৩৯ রানে। মিচেল স্টার্ক অফস্টাম্পের বাইরে করেন, পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা খোঁচা দেন আর ফিরে যান- এক বাবর আজম ছাড়া হয়েছে সেটিই। তবে অ্যাডিলেডে বড় পরাজয় আটকাতে বাবর বা পাকিস্তানকে করতে হবে এখন অলৌকিক কিছু। 

    ওয়ার্নারের ইনিংসটা ঠিক অলৌকিক না হলেও জাদুকরী তো বটেই। ১৬৬ রানে অপরাজিত থেকে দিন শুরু করেছিলেন, ইয়াসির শাহকে কাভার পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি মেরে দিন শুরু করলেন। সেই কাভার দিয়ে এ ইনিংসে ১০৯ রান করেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ১৬২ রান করেছেন বাউন্ডারি থেকে, ১৭৩ রান নিয়েছেন দৌড়ে। অথচ এ ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ৮০.১৪। ওয়ার্নারের এ ইনিংসে তাই মোহ শুধু নয়, মিশে আছে বেশ ত্যাগ-তিতিক্ষার গল্পও! 
     


    ২২৬ রানে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ মুসার বলে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি বাবরের হাতে, তবে মুসা করেছিলেন নো-বল। ওয়ার্নারকে আউট করার আশা যেন ওখানেই শেষ হয়ে গেছে পাকিস্তানের। তিনি শুধু মেতেছেন উল্লাসে। তাকে ১৯৭ রানে রেখে শাহিন আফ্রিদির নিপড-ব্যাক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন মারনাস ল্যাবুশেন, নিজে ১৬২ রান করে, ওয়ার্নারের সঙ্গে ৩৬১ রানের জুটির পর। 

    তবে ওয়ার্নার থামেননি। সে ওভারেই লেগসাইডে সিঙ্গেল নিয়ে পূর্ণ করেছেন ২০০, ২৬০ বলে। আফ্রিদির বলেই ডাবলস নিয়ে ২৫০ হয়ে গেছে তার, ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো। এরপর তাকে রেখে ফিরেছেন স্মিথ, একই বোলারের বলে আন্ডার-এজড হয়ে, ওয়ার্নারের সঙ্গে ১২১ রানের জুটির পর। ওয়ার্নার থামেননি। 

    তার ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী ক্রিজে ছিলেন ম্যাথু ওয়েড। মোহাম্মদ আব্বাসের শর্ট অফ লেংথ বলটা টেনে পুল করে দৌড় শুরু করেছিলেন, বল বাউন্ডারি যাওয়ার পর শুরু করেছেন গর্জন। শেষ এই ফিফটিটা ওয়ার্নার পূর্ণ করেছেন মাত্র ৫৯ বলে। ইফতিখার আহমেদের অফস্টাম্পের বাইরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন ব্র্যাডম্যান ও মার্ক টেইলরকে। অস্ট্রেলিয়ানরা ততক্ষণে নেমে এসেছেন নীচে, ওয়ার্নার তাদেরকে ও অ্যাডিলেডকে কুর্ণিশ করে ছেড়েছেন মাঠ। 

    এরপরের গল্পটা খুব বড় কিছু নয়। এলবিডব্লিউর হাত থেকে বারদুয়েক বাঁচার পর শান মাসুদ অবশেষে ধরা পড়েছেন টিম পেইনের হাতে, জশ হ্যাজলউডের লাইন ধরে রাখা বলে। তার আগেই আরও দুটি উইকেট হারিয়ে ফেলেছে পাকিস্তান। স্টার্কের বলে ইমাম স্লিপে ধরা পড়েছেন ওয়ার্নারের হাতে, ডিনারের আগে এই একটি উইকেটই পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। 

    বিরতির পর আজহারকে স্কয়ারড-আপ করে আউট করেছেন কামিন্স, স্লিপে নীচু হয়ে নেওয়া স্মিথের ক্যাচটা গিয়েছিল টিভি আম্পায়ারের কাছে। এরপর আসাদ শফিক, ইফতিখার ও মোহাম্মদ রিজওয়ান- তিনজনই স্টার্কের অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে ধরা পড়েছেন টিম পেইনের হাতে। ৪৩ রান করে দিনশেষে অপরাজিত আছেন বাবর।