• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    কেমন গেল মেসি-রোনালদোর দশক?

    কেমন গেল মেসি-রোনালদোর দশক?    

    গত দশকে লড়াইটা শুরু হলেও লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দ্বৈরথ সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে গত ১০ বছরেই। কখনও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে হেসেছেন রোনালদো, কখনও বার্সেলোনার হয়ে এগিয়ে গেছেন মেসি। গোল, শিরোপা- দুজনের কারোই অভাব হয়নি একেবারেই। কিন্তু খুব সম্ভবত ফুটবলের আধুনিক যুগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দ্বৈরথের দশকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে ছিলেন কে?


    লিগ ফুটবলে এগিয়ে মেসি

    বার্সেলোনায় ক্যারিয়ার শুরু করা মেসি এখনও আছেন কাতালানদের দলেই, হয়েছেন ক্লাব অধিনায়ক। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দশক শুরু করলেও রোনালদো দু’বছর আগে পাড়ি জমিয়েছেন জুভেন্টাসে। লিগ ফুটবলের বিবেচনায় এগিয়ে থাকবেন মেসি। গত দশকে লিগে মোট ৩৬৯ গোল করেছেন বার্সেলোনা অধিনায়ক। রিয়াল এবং জুভেন্টাস মিলিয়ে রোনালদোর লিগ গোলসংখ্যা ৩৩৫। শুধু গোল নয়, অ্যাসিস্টের বিচারেও রোনালদোকে পেছনে ফেলেছেন মেসি। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের পাস থেকে এই দশকে তার সতীর্থরা গোল করেছেন ২০৫টি, রোনালদোর অ্যাসিস্ট সংখ্যা ১৪০।

    গত দশকে ৬ বার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন মেসি, রোনালদো হয়েছেন ৪বার। গোল্ডেন বুটের দৌড়েও এগিয়ে আছেন মেসি, ৬ বার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতেছেন তিনি, রোনালদো জিতেছেন ৩ বার। লিগ জেতার দিক দিয়েও মেসির চেয়ে পিছিয়ে আছেন রোনালদো। লা লিগা এবং স্কুডেট্টো মিলিয়ে লিগশিরোপা রোনালদো জিতেছেন মাত্র ৩ বার। বার্সেলোনার হয়ে গত দশকে মেসি লিগ জিতেছেন ৭বার।

    চ্যাম্পিয়নস লিগে রোনালদোর জয়জয়কার

    লিগ ফুটবলে মেসি এগিয়ে থাকলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে গোল, শিরোপা- সবদিক দিয়েই এগিয়ে আছেন রোনালদো। এই দশকে চ্যাম্পিয়নস লিগে রোনালদো গোল করেছেন ১০৮টি, মেসি করেছেন ৯৫টি। সবার আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে গোলের ‘সেঞ্চুরি’ পূরণ করেছেন ‘সিআর৭’, তবে রাউল গঞ্জালেজের চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড (৭১) ভেঙেছিলেন মেসিই। এই দশকে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৬ বার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন রোনালদো, মেসি হয়েছেন ৫ বার। রিয়ালের হয়ে ৪ বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন রোনালদো। ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠ সম্মান মেসি জিততে পেরেছেন ২ বার। চ্যাম্পিয়নস লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও এই দশকেই গড়েছেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড (১৭)।

    কাপ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে মেসি

    কোপা ডেল রে-তে এই দশকে মেসি গোল করেছেন ৪০টি। স্প্যানিশ কাপ এবং কোপা ইতালিয়া মিলিয়ে রোনালদোর গোলসংখ্যা ২২। কাপ প্রতিযোগিতায় ৪০ গোল করতে মেসির লেগেছে ৫৫ ম্যাচ। রোনালদোর ২২ গোল এসেছে ৩১ ম্যাচে।  বার্সার হয়ে মেসি কোপা জিতেছেন ৫ বার, রোনালদো জিতেছেন ২ বার। লাৎসিওর কাছে বছরের শেষ ম্যাচ হেরে এখনও ইতালিয়ান কাপ অধরাই থাকল রোনালদোর।

    সুপারকাপের পরিসংখ্যানেও এগিয়ে আছেন মেসি। ১৫ স্প্যানিশ সুপারকাপের ম্যাচে মেসি গোল করেছেন ১১টি। রিয়াল ছাড়ার আগে স্প্যানিশ সুপারকাপে ৭ ম্যাচ খেলেছিলেন রোনালদো, গোল করেছিলেন ৪টি। ইতালিয়ান সুপারকাপে খেলা ২ ম্যাচে করেছেন ১ গোল। সুপারকাপের শিরোপা মেসি জিতেছেন ৫বার, রোনালদো জিতেছেন ৩ টি।

    ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের দৌড়ে এগিয়ে আছেন রোনালদো। ৬ ম্যাচে করেছেন ৬ গোল, শিরোপা জিতেছেন ৩টি। ৩ ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা ৩, শিরোপা জিতেছেন ২টি। ইউয়েফা সুপারকাপে মেসি-রোনালদোর শিরোপাসংখ্যা সমান (২)। অবশয় এখানেও গোলের দিক দিয়ে এগিয়ে মেসিই। ২ ম্যাচে ৩ গোল করেছেন তিনি, রোনালদোর গোলসংখ্যা ২।

    দেশের হয়ে যোজন যোজন এগিয়ে রোনালদো

    ক্লাব ফুটবলে মেসির চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও জাতীয় দলের হয়ে এগিয়ে আছেন রোনালদো। আর্জেন্টিনার হয়ে এই দশকে ৬১টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মেসি গোল করেছেন ২৯টি। মেসির চেয়ে এই সময়ে রোনালদোর গোলসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। ৬৪ ম্যাচে ‘সিআর৭’ পর্তুগালের হয়ে জাল খুঁজে পেয়েছেন ৬৩ বার। ইউরো বাছাইপর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন রোনালদো, ইউসেবিওকে টপকে গেছেন পর্তুগালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবেও।

    পর্তুগিজ ফুটবলের শ্রেষ্ঠতম দুই মুহূর্ত ইউরো ২০১৬ এবং ইউয়েফা নেশনস লিগ জয়ের নায়কও রোনালদোই। দেশের হয়ে শিরোপা জয়ে রোনালদো যতটা উজ্জ্বল, মেসি ততটাই নিষ্প্রভ। অমরত্বের পথে হাঁটতে হাঁটতেও অবশ্য অল্পের জন্য খালি হাতে ফিরেছেন মেসি। বিশ্বকাপ এবং টানা দুই কোপা আমেরিকা ফাইনাল হেরেছেন তিনি। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার হলেও তাই আক্ষেপটা হয়তো মেসিরই বেশি।

    বিশ্বকাপের হিসেবে অবশ্য এগিয়ে থাকছেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে এই দশকে মোট তিনবার বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। ২০১০ এ কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৪ তে ফাইনাল আর ২০১৮ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়েছিল আর্জেন্টিনার মেসি। এই সময়ে রোনালদো পর্তুগালকে নিয়ে একবারও দ্বিতীয় রাউন্ড বাধাও পার হতে পারেননি। গোলের হিসেবে অবশ্য রোনালদোই এগিয়ে, মেসির ৫ গোলের বিপরীতে রোনালদোর গোল আরেকটি বেশি।

    তবে সবকিছুর পর ইউরোর শিরোপাটা এগিয়ে রাখছে রোনালদোকে। ২০১৬ ইউরোটা তো রোনালদোরই ছিল! 

    ব্যালন ডি’অরে এগিয়ে মেসিই

    দুজনের লড়াইটা শুরু হয়েছিল ব্যালন ডির দিয়েই। দশক শেষে সেরা ফুটবলারের পুরস্কারের দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন মেসি। এই দশকে মেসি ব্যালন ডির জিতেছেন ৫বার, রোনালদো জিতেছেন ৪বার। রোনালদোকে টপকে সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি’অর জেতা ফুটবলার এখন মেসিই (৬)।

    কৈশর-যৌবন পেরিয়ে মেসি-রোনালদো দুজনই এখন পুরোদস্তুর 'ভেটেরান'। বয়সটা ত্রিশের কোঠায় পৌঁছেছে দুজনেরই, ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলাও এগিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। ফুটবলে হয়তো এর আগে কখনও এমন হাড্ডাহাড্ডি দ্বৈরথ দেখেনি ফুটবল, হয়তো আর দেখবেও না। একজন এলিয়েনের বনাম একজন মেশিন- জয়টা হয়েছে ফুটবলেরই। এই দশকের বাকি আর মাত্র দিন দুয়েক। অনেকে হয়তো এই দশককে মনে রাখবেন রিয়াল মাদ্রিদের দশক হিসেবে, অনেকে হয়তো রাখবেন বার্সেলোনার দশক হিসেবে। কিন্তু একটা জায়গায় এসে হয়তো একমত হবেন সবাই-ই। এই দশকেই সবচেয়ে বেশি আগুন ঝড়িয়েছিলেন মেসি-রোনালদো; যাদের প্রস্থান আসন্ন আগামী দশকেই...