• ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
  • " />

     

    অ্যান্ডারসনের পাঁচের পর সিবলির ৮৫*, রুটের ৬১-তে ইংল্যান্ডের দিন

    অ্যান্ডারসনের পাঁচের পর সিবলির ৮৫*, রুটের ৬১-তে ইংল্যান্ডের দিন    

    ৩য় দিন, স্টাম্পস
    ইংল্যান্ড ২৬৯ অল-আউট (পোপ ৬১, রাবাদা ৩/৬৮, প্রিটোরিয়াস ২/২৬, ফিল্যান্ডার ২/৪৬) ও ২১৮/৪* (সিবলি ৮৫*, রুট ৬১, নরকিয়া ২/৩৬)
    দক্ষিণ আফ্রিকা ২২৩ (এলগার ৮৮, ভিডি ডুসেন ৬৮, অ্যান্ডারসন ৫/৪০, ব্রড ২/৩৬, কারান ২/৩৯) 
    ইংল্যান্ড ২৬৪ রানে এগিয়ে 


    ডমিনিক সিবলির ব্যাটিং একবার দেখলেই আপনার নজরে পড়বে একটু। তার টেকনিক, কিংবা তার আগে হাই ব্যাকলিফটের সঙ্গে একটা অন্যরকমের শাফল, ব্যাটটা সামনে বাড়ানো- সিবলি ঠিক আর দশটা ব্যাটসম্যানের মতো নন, অন্তত ব্যাটিংয়ের স্টাইলে। এবং আন-অর্থোডক্স হলেই শুরুতে নড়বড়ে মনে হতে পারে আপনার তাকে, সিবলির ক্ষেত্রেও হয়তো হয়েছে সেটিই। সেই সিবলিই কেপটাউনের তৃতীয় দিনের আলো কাড়লেন, তার অপরাজিত ৮৫ রানকে কেন্দ্র করে দিনটি ইংল্যান্ড করে নিয়েছে নিজেদের, সিরিজে ফেরার সম্ভাবনাও জাগিয়েছে প্রবলভাবে। এর আগে দ্রুত ২ উইকেট নিয়ে পাঁচ পূর্ণ করে আগের কাজটা সেরে রেখেছিলেন জেমস অ্যান্ডারসন। 

    জো ডেনলির সঙ্গে ২য় উইকেটে ৭৩ রানের পর অধিনায়ক জো রুটের সঙ্গে ১১৬ রানের জুটি ছিল সিবলির, পরের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে হতাশ করে গেছে বেশ কিছুক্ষণ। শেষবেলায় পুরোনো বলে রুট ও নাইটওয়াচম্যান ডম বেসের উইকেট হয়তো একটু স্বস্তি দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৪র্থ দিন দ্বিতীয় নতুন বল তারা পাবে ১ ওভারের মাঝেই, সেটির দারুণ সদ্ব্যবহার করতে হবে স্বাগতিকদের। নাহলে ইংল্যান্ডের ২৬৪ রানের লিড ফুলেফেঁপে উঠবে, আর ম্যাচ থেকে ধীরে ধীরে ছিটকে যাবে প্রোটিয়ারা। 

    ৪৬ রানের লিড পেয়েছিল ইংল্যান্ড, তবে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ঠিক মনমতো হয়নি তাদের। ৫ বাউন্ডারিতে দ্রুত ২৫ রান করে ফেলেছিলেন জ্যাক ক্রলি, কাগিসো রাবাদার ৮৭ মাইল গতির ফুললেংথের বলে আলগাভাবে ব্যাট চালিয়ে সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটিয়েছেন তিনি। দ্রুত উইকেট, ইংল্যান্ডের লিড নাগালের মধ্যে আটকে ফেলার সম্ভাবনা- দক্ষিণ আফ্রিকা ঠিক পথেই ছিল তখনও। 

    লাঞ্চের আগে অবশ্য আর উইকেট পাওয়া হয়নি তাদের। ডেনলি ও সিবলি আঁকড়ে ছিলেন ক্রিজ, লিডটা ১০০-এর ঠিক আগে রেখে বিরতিতে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। পরের সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে শুধু ১টি উইকেট, প্রিটোরিয়াসের দারুণ এক ক্যাচে ফিরতে হয়েছে ১১১ বলে ৩১ রান করা ডেনলিকে। আনরিখ নরকিয়ার শর্ট বলে ব্যাট চালানো ছাড়া উপায় ছিল না ডেনলির, ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে ডানদিকে ছুটতে থাকা প্রিটোরিয়াস শেষ মুহুর্তে গতিপথ বদলে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। 

    চা-বিরতিতে যাওয়ার আগেও অবশ্য ফিফটি হয়নি সিবলির, রুটও তখন ব্যাটিং করছিলেন মাত্র ৭ রানে। বিরতির পর থেকে দুজন মিলে চড়াও হয়েছিল প্রোটিয়া বোলারদের ওপর। বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন রুট, ৮১ বলে পূর্ণ করেছেন ফিফটি, ৭ চারে। সিবলি ছিলেন বেশ ধীরগতির, লম্বা ইনিংস খেলার ইচ্ছাটা বেশ স্পষ্ট ছিল তার। এই ডানহাতির ফিফটিতে পৌঁছাতে লেগেছিল ১৪০ বল। 

    ১৭৭ বলের দুজনের জুটি ছুঁয়েছে ১০০, এদিন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য শুধু একরাশ হতাশাই যখন বাকি বলে মনে হচ্ছিল, ১২ বলের মাঝে ২ উইকেট সেটি হতে দেয়নি। প্রিটোরিয়াস অবশেষে খুঁজে পেয়েছেন অফস্টাম্পের বাইরের সেই চ্যানেলটা, বল পড়ার পর হালকা মুভমেন্টে বেরিয়ে যাওয়ার আগে যেটি গতি পরিবর্তন করেছে রুটের আউটসাইড-এজে। উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক স্টাম্পের ওপর এসে কিপিং করছিলেন বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই, তবে ক্যাচ নেওয়ার জন্য স্লিপে ছিলেন ফাফ ডু প্লেসি। 

    নাইটওয়াচম্যান বেস টিকেছেন ৮ বল, নরকিয়ার বগল-বাউন্স ডি ককের হাতে গিয়ে ধরা পড়ার আগে ছুঁয়ে গেছে তার গ্লাভস। অবশ্য এ উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে রিভিউ নিয়ে, শুরুতে তাদের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার পল রাইফেল। রিভিউ সফল হয়েছে স্বাগতিকদের, সঙ্গে তারা পেয়েছে স্বস্তিও। 

    দিনের শুরুতে অবশ্য খুব একটা স্বস্তি ছিল না তাদের। দিনের প্রথম বলেই অফস্টাম্পের বাইরে থেকে খোঁচা দেওয়া কাগিসো রাবাদাকে ফিরিয়েছিলেন অ্যান্ডারসন। এরপর নরকিয়া তার বলে দিয়েছেন স্লিপে ক্যাচ, যে ক্যাচ দিয়ে অ্যান্ডারসন ও স্টোকস- দুজনেরই পাঁচ পূর্ণ হয়েছে, অ্যান্ডারসনের ৫ উইকেটের সঙ্গে স্টোকসের ৫টি ক্যাচ। এই দুই পাঁচই আবার রেকর্ড- অ্যান্ডারসন ইনিংসে ৫ উইকেটে ছাড়িয়ে গেছেন ইয়ান বোথামের ২৭ বারের রেকর্ডকে, আর ইনিংসে ৫ ক্যাচের বিশ্বরেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন স্টোকস। এর আগে ১১ জনের ছিল এই কীর্তি।