• ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
  • " />

     

    এবার কাণ্ড কেপটাউনে, নায়ক সেই স্টোকস

    এবার কাণ্ড কেপটাউনে, নায়ক সেই স্টোকস    

    ইংল্যান্ড ২৬৯ ও ৩৯১/৮

    দক্ষিণ আফ্রিকা ২২৩ ও ২৪৮ অলআউট

    ফলঃ ইংল্যান্ড ১৮৯ রানে জয়ী


    একেকটি বল সাপের মতো ছোবল মেরে চলে যাচ্ছে ব্যাটের পাশ ঘেঁষে। বেন স্টোকস হতাশায় মাটিতে বসে পড়েছেন, জো রুট দুই হাত উঁচিয়ে বার্মি আর্মিকে তাঁতিয়ে দিচ্ছেন আরও জোর চিৎকারের জন্য। কেপটাউনে শেষ পর্যন্ত স্টোকস আর ইংল্যান্ডের জয়জয়কার। শেষ সেশনে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার সব প্রতিরোধ ভেস্তে গেল। মহিষ বধ হলো সিংহের থাবায়, আর স্টোকস দেখালেন তিনি বল হাতেও ম্যাচ জেতাতে পারেন।

    টেস্ট ক্রিকেট চার দিনে নিয়ে আসা উচিত কি না এ নিয়ে কদিন থেকে বেশ আলোচনা হচ্ছিল। কেপটাউনে রোমাঞ্চকর পঞ্চম দিন মোক্ষম একটা জবাব হতে পারে চারদিনপন্থীদের জন্য। প্রথম সেশনেও মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটা বাঁচিয়ে ফেলবে। দ্বিতীয় সেশনেও সেই ধারণা থেকে সরে আসার খুব বেশি কারণ ছিল না। কিন্তু শেষ সেশনে এসে সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল প্রোটিয়াদের।

    সকালে শুরুতেই অবশ্য প্রথম উইকেট পেয়ে গিয়েছিল ইংলিশরা। নাইটওয়াচম্যান কেশব মহারাজ দিনের তৃতীয় ওভারেই এলবিডব্লু হয়ে যান জেমস অ্যান্ডারসনের বলে। পিটার মালান আগের দিন ফিফটি করেছিলেন, এবার ধনুর্ভঙ্গ পণ করলেন কিছুতেই উইকেট দিয়ে আসবেন না। অন্যদিক থেকে অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিও রান তোলার চেয়ে উইকেট না দিয়ে আসাটাই মোক্ষ মানলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। লাঞ্চের আগেই মনযোগ নড়ে গেল ডু প্লেসির। অফ স্পিনার ডম বেসের বল সুইপ করতে গিয়ে স্কয়্যার লেগে ক্যাচ দিয়ে এলেন ডেনলিকে। ৫৭ বলে ১৯ রান করে ফিরলেন ডু প্লেসি।

    কিন্তু লাঞ্চের পরেই মনযোগ নড়ে যায় মালানের। নতুন বল পেয়েছিলেন স্যাম কারান, তার বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে দিলেন মালান। শেষ হলো ২৮৮ বলে ৮৪ রানের ম্যারাথন ইনিংস। ১৭১ রানে পঞ্চম উইকেট হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা, ক্রিজে ফন ডার ডুসেন ও কুইন্টন ডি কক। ডুসেন একটার পর একটা বল ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন, তবে ডি কক রান নিচ্ছিলেন সুযোগ হলেই। দুজনের জুটিতে ৫০ রান এলো। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে চা বিরতিতে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

    এর পরেই এলোমেলো হয়ে গেল সবকিছু। শুরুটা হয়েছিল ডেনলির নেহায়েতই নির্বিষ একটা ডেলিভারি দিয়ে। লং হপটা চাইলে যে কোনো জায়গাতেই পাঠাতে পারতেন ডি কক। কিন্তু বলটা চলে গেল শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো ক্রলির দিকে। ঠিক ফিফটি করে আউট হয়ে গেলেন ডি কক। ফন ডার ডুসেন যখন কিছুতেই আউট হচ্ছিলেন না, তার জন্য ফাঁদ পাতলেন রুট আর ব্রড। লেগ স্লিপ আনা হলো, লেগ স্টাম্পের ওপর বল করলেন ব্রড। ফ্লিক করতে গিয়ে সেই লেগ স্লিপেই অ্যান্ডারসনের হাতে বল তুলে দিলেন ডার ডুসেন। ১৪০ বলে ১৭ রানের ইনিংসটা শেষ হলো।

    এরপরের গল্পটা স্টোকসের। রিভার্স সুইং আর পেসে আগুন ঝরিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রিটোরিয়াস একটুর জন্য আউট হননি, শেষ পর্যন্ত স্টোকসের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য হয়েছেন। নরকিয়া প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছেন তৃতীয় স্লিপে, হ্যাটট্রিকের সুযোগ স্টোকসের। সেটা হয়নি। দিনের ওখন ওভার দশেকের কিছু বেশি বাকি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি প্রোটিয়াদের। ফিল্যান্ডার ৫১ বলে ৮ রান করে কগালিতে ক্যাচ দিয়েছেন, ইংল্যান্ড মেতেছে উচ্ছ্বাসে। ১৯৫৬-৫৭ এর পর ইংল্যান্ড সপ্তম টেস্টে এসে কেপটাউনে জিতল। আর ২০১৪ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকা সপ্তম টেস্টে এসেই কেপ টাউনে হারল।