• বঙ্গবন্ধু বিপিএল
  • " />

     

    পাকিস্তান যাওয়ার আগে বিপিএল থেকে যা পেল বাংলাদেশের ক্রিকেট...

    পাকিস্তান যাওয়ার আগে বিপিএল থেকে যা পেল বাংলাদেশের ক্রিকেট...    

    বঙ্গবন্ধু বিপিএল প্রায় শেষের পথে। তারকাজৌলুস হোক বা দর্শকের উপস্থিতি হোক, এবারের বিপিএল অনেক দিন দিক দিয়েই কিছুটা মলিন। তবে দিন শেষে প্রাপ্তির খাতায় কয়েকটা ব্যাপার হয়তো পেতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

    উইকেটই এবার সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিকগুলোর একটি। বিপিএলে বিশেষ করে মিরপুরের পিচ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে আগে, সেটা নিয়ে মন্তব্য করে ফেঁসে যেতে বসেছিলেন তামিম ইকবাল। চট্টগ্রামের উইকেট আগের মতোই দুর্দান্ত ছিল, সিলেটও খুব খারাপ করেনি। তবে মিরপুরের উইকেট সব মিলে এবার টি-টোয়েন্টির জন্য বেশ উপযোগী ছিল। মিরপুরের উইকেটে এবার ২০০র চেয়ে বেশি রান হয়েছে তিনটি ইনিংসে। কয়েকটা ম্যাচ একটু লো স্কোরিং ছিল, আবার সব ম্যাচেই রান হলে বোলারদের তো কিছু করার থাকে না। সেদিক দিয়ে এবারের মিরপুরের উইকেট লেটার মার্ক না হলেও ভালোমতোই উৎরে গেছে।

    উইকেটের এই ব্যাপারটা প্রভাব ফেলেছে ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেটেও, আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে এবার অন্তত যারা ২০০ রান করেছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেট তামিম ইকবালের। তবে অন্তত ২০০ রান যারা করেছেন, তাদের মধ্যে ১২০ এর নিচে স্ট্রাইক রেট আছে শুধু মোহাম্মদ নাঈম ও সাব্বির রহমানের। মাহমুদউল্লাহ এই তালিকায় ১৭০ স্ট্রাইক রেট নিয়ে সবার ওপরে। ব্যাটসম্যানদের তালিকায় শীর্ষ দশে থাকা ইমরুল কায়েস, আফিফ হোসেন, লিটন দাস সবার স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর বেশি। আর মুশফিকুর রহিম ৪৫৮ রান করার জন্য যতটা না, তার চেয়েও বেশি তৃপ্তি পাবেন নিজের ১৫০ এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটের জন্য। আগের আসরগুলোতে দেখা গেছে, শীর্ষ পাঁচে থাকা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু একজনের স্ট্রাইক রেটই ছিল মুশফিকের এবারের স্ট্রাইক রেটের ওপরে। ২০১২-১৩ তে বিপিএলের দ্বিতীয় মৌসুমে শামসুর রহমান ১৫০ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৪১৬ রান। এবার তামিম ছাড়া শুরুর দিকে থাকা বেশির ভাগ বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট তাদের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের চেয়ে বেশি। মুমিনুল হকও এবার ১২০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। এমন নয়, সবাই খুব তেঁড়েফুঁড়ে খেলেছেন। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বোঝার চেষ্টা করেছেন অনেকে।

    দেশী ব্যাটসম্যানদের একটা বড় সাফল্য হতে পারে বড় ইনিংস খেলা। বিপিএলে দুই বিদেশীদের সঙ্গে দেশী নাজমুল হোসেন শান্তও সেঞ্চুরি পেয়েছেন। মুশফিক দুইবার পেতে পেতেও পারেননি। মুমিনুলও নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে সেঞ্চুরি পাননি, কাছাকাছি গিয়েছিলেন সৌম্যও। লিটনই বরং বেশির ভাগ ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েও আরও বড় করতে পারেননি, একই দায় আছে আফিফ হোসেনও। 

    দেশীয় ওপেনারদের ব্যাপারটাও সেই সঙ্গে আসবে অবশ্যই। ভারত সফরে মোহাম্মদ নাঈম যে দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন, বিপিএলেও সেটি ধরে রাখতে পেরেছেন। শেষদিকে এসে শান্ত, মুমিনুল, মেহেদী হাসান মিরাজ রান পেয়েছেন ওপেনিংয়ে। আর লিটন ও আফিফ মিলে গড়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা জুটি। পাকিস্তান সফরের আগে নির্বাচকদের জন্য একটা মধুর সমস্যাই হয়ে গেছে, ওপেনিংয়ে কাকে ছেড়ে কাকে রাখবেন।

    পেসারদের উন্নতিটাও এবার কিছুটা চোখে পড়ার মতো ছিল। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট মোস্তাফিজুর রহমানের। শুরুর দিকে বিবর্ণ হলেও পরের দিকে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন কিছুটা। তার বাইরে দেশীদের মধ্যে মেহেদী হাসান রানার কথা বলতে হবে আলাদা করে। শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট নিয়েছেন, আমলার উইকেট ছিল অনেক দিন মনে রাখার মতো। তবে রাসেলের জন্য শেষটা ভালো হয়নি, আবারও দেখিয়ে দিয়েছেন এখনও বড় ম্যাচে স্নায়ুচাপ ধরে রাখার জন্য বেশ কিছুটা পথ যেতে হবে স্থানীয় বোলারদের। খুলনার শহীদুল ইসলাম বেশ ধারাবাহিক ছিলেন, সব ম্যাচ ভালো করতে না পারলেও গতি আর সুইং দিয়ে নজর কেড়েছেন ঢাকার তরুণ হাসান মাহমুদ। আর সিলেটের এবাদত হোসেন এঁদের মধ্যেই নিজেকে চিনিয়েছেন আলাদা করে। খুব সম্ভবত দেশী পেসারদের মধ্যে তার বোলিং ছিল এবারের অন্যতম প্রাপ্তি, বিশেষ করে ওয়াটসনকে দুই ইয়র্কারে করা বোল্ড দুইটি ছিল এবারের দেশী বোলারদের বিজ্ঞাপন। আর স্পিনারদের মধ্যে একমাত্র মাহেদী হাসান একটু ধারাবাহিক ছিলেন, ব্যাট হাতেও অবদান ছিল তার।

    তার বাইরে প্রাপ্তি বলতে ছিল মুশফিকের অধিনায়কত্ব। বিপিএলের আগের আসরগুলো ব্যাটসম্যান হিসেবে ভালো-খারাপ গেলেও অধিনায়ক হিসেবে খুব বেশি ভালো যায়নি মুশফিকের। গত বার চট্টগ্রামের হয়ে ভালো করলেও শেষদিকে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন। এবার মাঝে একটু হোঁচট খেলেও শেষ দিকে পথ দেখিয়েছেন দলকে। মুশফিকের অধীনে এককাট্টা মনে হয়েছে খুলনাকে, সতীর্থ রবি ফ্রাইলিংকও প্রশংসা করেছেন তার। মাহমুদউল্লাহ বিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে আলো ছড়িয়েছেন আগে থেকেই, এবার স্বল্প সময় করেছেন অবশ্য। চট্টগ্রাম কোচ পল নিক্সন আলাদা করে বলেছেন তার নেতৃ্ত্বগুণের কথা। যদিও মোসাদ্দেক হোসেন সুযোগ পেয়েও ভালো কিছু করতে পারেননি, মাশরাফিও খুব আহামরি কিছু করেননি। আর সৌম্য, ইমরুল সুযোগ পেলেও মনে রাখার মতো কিছু করেননি।