• ক্রিকেট, অন্যান্য
  • " />

     

    শ্রদ্ধাঞ্জলি : বাপু নাদকার্নি

    শ্রদ্ধাঞ্জলি : বাপু নাদকার্নি    

    ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে মারা গেছেন সাবেক ভারত স্পিনার বাপু নাদকার্নি। ক্যারিয়ারজুড়ে যিনি পরিচিত ছিলেন তার 'কিপটে' বোলিংয়ের জন্য।


    পঞ্চাশের দশকে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা নামতে শুরু করেছিল। রিচি বেনোর মতো অধিনায়করা প্রথা ভাঙছিলেন, তবে সবাই তো আর বেনোর মতো ছিলেন না! যেমন ১৯৬৪ সালের ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ। পাঁচ টেস্টের চারটিই ড্র। লড়াইটা ছিল ব্যাট আর স্পিনের, ইংল্যান্ডের সফরকারী দলেই ছিলেন মোটে একজন পেসার! তবে প্রথম টেস্টে মাদ্রাজে(বর্তমান চেন্নাই) যা হয়েছিল, তা হয়নি এখন পর্যন্ত আর একবারও!

    ভারতের বাঁহাতি স্লো-অর্থোডক্স বোলার বাপু নাদকার্নি প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ২১ ওভার মেডেন, টানা! দক্ষিণ আফ্রিকার হিউ টেফিল্ডের অবশ্য ১৩৭ বল কোনো রান না নিয়েই বোলিং করার রেকর্ড আছে, তবে টেফিল্ডের সময়ে ওভার ছিল আট বলের। নাদকার্নির অভিষেক ১৯৫৫ সালে, তবে ১৯৫৮-৫৯ থেকে নিয়মিত হয়েছিলেন দলে। বোলিং নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন, ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাতেন নেটে। লো ট্র্যাজেকটরি, বেশ ধীরগতির বোলার ছিলেন।

    দুইটা প্রস্তুতি ম্যাচ, এরপর প্রথম টেস্ট। ভারত অধিনায়ক মানসুর আলি খান বা টাইগার পাতৌদি টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন, প্রথম দিনশেষে ২ উইকেটে ২৭৭ রান। দর্শকরা ফিরলেন খুশীমনেই। পরদিন দিনের খেলা শেষ হওয়ার ৯০ মিনিট আগে ইনিংস ঘোষণা করলেন টাইগার, ইংল্যান্ড দিন শেষ করলো ২ উইকেটে ৬৩ রান নিয়ে।

    তবে ইংল্যান্ডের মাঠের বাইরের সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল তারও আগেই। মিকি স্টুয়ার্টকে টিম হোটেলে রেখে আসতে হয়েছিল পেটের পীড়ার কারণে, দ্বিতীয় দিন সকালে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন জিম পার্কস। তৃতীয় দিন সকালে ফ্রেড টিটমাস আর ব্যারি নাইটও অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তবে এ দুজন মাঠেই ছিলেন। অবশ্য দরকার পড়লে যাতে স্টুয়ার্টকে আনা যায়, সেজন্য একটা গাড়ি মাঠের পাশেই রাখা ছিল সবসময়!

     


    বাপু নদকার্নি (১৯৩৩-২০২০)


    একে তো পেটের গোলমাল, উইকেটও শুরু করলো উল্টা-পাল্টা আচরণ! ইংল্যান্ড বুঝে গেল, রান টানের হিসেব বাদ, টিকে থাকতে হবে শুধু। প্রথম সেশনে এলো ৮৬ রান। নাইটওয়াচম্যান ডন উইলসন ৪২ রানে ফিরে গেলেন, কেন ব্যারিংটন যোগ দিলেন ওপেনার ব্রায়ান বোলাসের সাথে। নাড়কার্নিকে প্রথম বোলিংয়ে আনা হলো লাঞ্চের পর।

    নাদকার্নি এরপর বল করে যান, দুই ব্যাটসম্যান ঠেকিয়ে যান। হাফ ভলি, লং হপ- বল যেমনই হোক, রানের দেখা নেই! ২১ ওভার ৫ বল কোনো রান না দিয়েই থাকলেন নাডকার্নি। চা বিরতি উঁকি মারছে, ৩ টা বেজে ৫ মিনিটে ব্যারিংটন একটা সিঙ্গেল নিলেন।

    তৃতীয় সেশনে আবার দশ ওভার বোলিং করার জন্য এলেন নাদকার্নি, দিন শেষ করলেন ২৯-২৬-৩-০ ফিগার নিয়ে। নাদকার্নি রেকর্ডের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না, খেলা শেষ হওয়া পর অফিশিয়াল স্কোরার এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন। তখন যা হতো, কোনো উদযাপন নেই, শুধু ড্রেসিংরুমে দুই-একটা কথা।

    নাদকার্নি ইনিংস শেষ করেছিলেন ৩২-২৭-৫-০ বোলিং ফিগার নিয়ে। ওভারপ্রতি রান দশমিক এক পাঁচ! এখনও সবচেয়ে ‘কৃপণ’ বোলিংয়ের রেকর্ডে শীর্ষে এটি! দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ছয় ওভার বোলিং করেছিলেন নাদকার্নি, পেয়েছিলেন দুই উইকেট। সব মিলিয়ে ম্যাচে তাঁর বোলিং ফিগার ছিল এমন: ৩৮ ওভার, ৩১ মেডেন, ১১ রান, ২ উইকেট।

    শুধু সে ম্যাচ নয়, ক্যারিয়ারজুড়েই বড্ড ‘কৃপণ’ ছিলেন নাদকার্নি। ১৯৬০-৬১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজে কানপুর টেস্টে তাঁর বোলিং ফিগার ছিল ৩২-২৪-২৩-০, দিল্লীতে ছিল ৩৪-২৪-২৪-১। কমপক্ষে ৪০ টেস্ট খেলেছেন এমন বোলারদের মধ্যে সেরা ইকোনমিতে নাদকার্নির ওপরে আছেন শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রেভর গোড্ডার্ড। ওভারপ্রতি তিনি খরচ করেছিলেন ১.৬৪ রান করে। আর নাদকার্নির ওভারপ্রতি খরচ ছিল ১.৬৭।

    সব মিলিয়ে ভারতের হয়ে খেলেছেন ৪১ টেস্ট, ১৯৬৮ সালে ছিল যার শেষটি। প্রথম শ্রেণিতে ১৯১ ম্যাচে ৫০০ উইকেটের সঙ্গে ৮৮৮০ রান আছে তার।