• বঙ্গবন্ধু বিপিএল
  • " />

     

    যাযাবর রাসেল আর রাজশাহীর সঙ্গে তার অসাধারণ ভ্রমণ

    যাযাবর রাসেল আর রাজশাহীর সঙ্গে তার অসাধারণ ভ্রমণ    

    আন্দ্রে রাসেল লাফিয়ে উঠে গর্জন করে উঠছেন, যেন কান পাতলেই সেটি শুনতে পাওয়া যাবে। 

    রাজশাহী রয়্যালস ও শিরোপার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। মুশফিককে ফেরাতে রাসেল করলেন দিনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও ‘পারফেক্ট’ ডেলিভারিটা- ইয়র্কার। মুশফিকের কিছু করার ছিল না, এদিন রাজশাহীর বিপক্ষেও তেমন কিছু করার ছিল না খুলনার। কোয়ালিফায়ারে এই রাজশাহীকে হারিয়েই সরাসরি ফাইনালে চলে গিয়েছিল খুলনা, তবে চট্টগ্রামের বিপক্ষে প্রায় অসম্ভব এক জয়ে রাজশাহীর ঘুমন্ত দানবকে জাগিয়ে তুলেছিলেন রাসেল। সেই দানবকে ফাইনালে এসে আর শান্ত করতে পারেনি খুলনা। 

    বিপিএলে যখন দানবীয় পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন রাসেল, ক্যারিবীয়রা তখন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলছে টি-টোয়েন্টি। এর আগে ভারত, আফগানিস্তনের বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজ খেলেছে তারা। রাসেল বিশ্বকাপের পর আর ওয়ানডে খেলেননি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টি-টোয়েন্টি শেষ খেলেছেন ২০১৮ সালের আগস্টে। ঠিক ফিট নন, বা ফিরে ফিরে আসা হাঁটুর চোট তার ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে বাদ পড়ার একটি কারণ।

    বিপিএলেও সব ম্যাচ খেলতে পারেননি, তবে চোটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলেছেন বাকিগুলো। নেতৃত্ব দিয়েছেন, বিপিএলের প্রথম বিদেশী অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন শিরোপাও। এ নিয়ে ১২টি টি-টোয়েন্টি শিরোপা জিতলেন তিনি, তবে অধিনায়ক হিসেবে এটিই প্রথম। এই শিরোপা তাই 'স্পেশাল' তার কাছে, “এটা বিশেষ কিছু। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ আমার। বোলিং নির্বাচনের মতো ব্যাপার, নিজেকে ব্যবহার করা- অধিনায়ক হলে আপনি স্বার্থপর হতে পারবেন না। সবাই নিজের কাজটা করেছে। সবাই এগিয়ে এসেছে।” 
     


    ফরহাদ রেজা, ইরফান শুক্কুর, অলক কাপালির সঙ্গে উদযাপনে রাসেল/বিসিবি


    এমন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলিতে সময় পাওয়া যায় খুবই কম, দলের মাঝে রসায়নটা গড়ে ওঠাই হয়ে ওঠে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে একজন বিদেশীর অধিনায়কত্ব করা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি কঠিন। তবে রাসেল বলছেন, কাজটা খুব কঠিন ছিল না তার কাছে, “খুব কঠিন ছিল, তা নয় সত্যি বলতে। প্রথম সপ্তাহ, কয়েকটি অনুশীলন সেশন। প্রথম দুই ম্যাচ। সবাইকে জানতে পেরেছি অনুশীলনে, কোথায় তাদের ব্যবহার করতে পারি। মাঝের ওভার না কোথায় (বোলারদের)। আজ রাব্বি ভাল বোলিং করেছে, ইরফান করেছেন। আর ইরফান শুক্কুর? তার কী যেন নাম? হ্যাঁ। বিশাল হৃদয় তার। আমি তাকে বলেছিলাম, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে, ইতিবাচক থাকতে। বড় ক্রিকেটার তো পাহাড় সরাতে পারে।”

    রাসেল পাহাড় সরাচ্ছেন। আজ এখানে, কাল সেখানে। সিপিএল, বিপিএল, এরপর পিএসএল, দ্য হান্ড্রেড- রাসেল যেন এক ভ্রমণে বেড়িয়েছেন। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম একবার ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলা ক্রিকেটারদের নিয়ে বলেছিলেন, তারা এখন টি-টোয়েন্টির ‘অলজ্জিত ভাড়াটে সৈনিক’। রাসেল যখন বিপিএল খেলছেন, সেই একই ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে খেলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

    এই অনুভূতিটা একটু অদ্ভুত কিনা, এমন প্রশ্নে রাসেল ‘না না না’ করে উঠলেন, “এটা এমনই, ম্যান। আমি বিজয়ী অধিনায়ক (এখানে), দেখতে পাচ্ছেন না? আমার নিয়ন্ত্রণ নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে কী হচ্ছে। এখানের ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে। যা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটা তো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।”

    “আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন। আমি সেটাই করছি। আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য প্রস্তুত। সবসময়ই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমি সবার প্রথমে রাখি, কারণ সেখানেই তো শুরু হয়েছিল সব। স্কোয়াডে (যেতে) আমি সব সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি। (তবে) আমি এই ট্রফি নিয়ে যাব এটা মনে রেখে যে আমি একটা জয়ী দলের সদস্য ছিলাম। এই ভ্রমণটা অসাধারণ ছিল।”

    ****

    চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর টিম বাসে হোটেল ফেরার পথে এক ফেসবুক লাইভে রাসেল বলে উঠলেন “ইনশাল্লাহ”- যস্মিন দেশে যদাচার। রাতে ইনস্টাগ্রামে ট্রফি হাতে আর চ্যাম্পিয়ন দলের আরেকটি ছবি পোস্ট করলেন। সেখানে কমেন্ট করেছে উইন্ডিজ ক্রিকেট- "অভিনন্দন"! 

    রাসেল ভ্রমণপথে যেখানেই যান না কেন, তিনি তো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। রাসেল যাযাবর হতে পারেন, তবে ভ্রমণটা তিনি উপভোগ করেন।