• ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
  • " />

     

    পোর্ট এলিজাবেথ লেট কাট : দ্য নিউ পোপ, রুটের দুই রকম রেকর্ড, বিদায় ডু প্লেসি?

    পোর্ট এলিজাবেথ লেট কাট : দ্য নিউ পোপ, রুটের দুই রকম রেকর্ড, বিদায় ডু প্লেসি?    

    ইংল্যান্ড ৪৯৯/৯ ডিক্লে.
    দক্ষিণ আফ্রিকা ২০৯ ও ২৩৭ 
    ইংল্যান্ড ইনিংস ও ৫৩ রানে জয়ী 


    সেঞ্চুরিয়নে হার, কেপটাউনে দারুণ জয়ের পর ইংল্যান্ড এবার পোর্ট এলিজাবেথেও দাপুটে জয় পেল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৪৯৯ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড বেন স্টোকসের ১২০ রানের সঙ্গে ওলি পোপের ১৩৫ রানে ভর করে। প্রথম ইনিংসে ডম বেসের তোপে পড়ে ২০৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা পড়েছিল ফলো-অনে। চতুর্থ দিন জো রুটের ৪ উইকেটের পর পঞ্চম দিন শুরুতেই ৩ উইকেট নিয়েছিল ইংল্যান্ড, তবে কেশভ মহারাজ ও ড্যান প্যাটারসনের ৯৯ রানের জুটি ইংল্যান্ডের জয়টা বিলম্বিত করেছে একটু। তবে ইনিংস ব্যবধানে জিতেই সিরিজে এগিয়ে গেছে ইংল্যান্ড, বাধা হতে পারেনি বৃষ্টিও। 

    দ্য নিউ পোপ 

    কেপটাউনের প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৬১ রান, ছিলেন অপরাজিত। দ্বিতীয় ইনিংসে ডম সিবলির সেঞ্চুরির সঙ্গে বেন স্টোকসের অল-রাউন্ড পারফরম্যান্সে কিছুটা ম্লান হয়ে গিয়েছিলেন যেন, যদিও ইংল্যান্ডের এ দল সমন্বিত পারফরম্যান্সের কথা বারবারই বলে আসছে। পোর্ট এলিজাবেথে সেঞ্চুরি করলেন স্টোকসও, তবে সবাইকে ছাপিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার গেল ওলি পোপের কাছেই। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসটাকে নিয়ে গেছেন প্রথম সেঞ্চুরিতে, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৩৫ রানে। স্টোকসের সেঞ্চুরির পর স্যাম কারান বা মার্ক উডের ঝড়ে ৪৯৯ রান পর্যন্ত ইংল্যান্ড গেছে তো পোপের ভিতে দাঁড়িয়েই। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে এক ইনিংসে বড় স্কোর প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের, পোপ নিশ্চিত করেছেন সেটি। 


    ডমের ‘বেস’গিটারের সুর

    জ্যাক লিচ অসুস্থতার কারণে এরই মাঝে ফিরে গেছেন দেশে। জো ডেনলি আর জো রুট স্পিনে দারুণ সমর্থন দিয়ে গেলেও ব্যাটনটা আছে ডম বেসের হাতেই। পোর্ট এলিজাবেথে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার মূল ক্ষতিটা করেছেন ২২ বছর বয়সী এই অফস্পিনারই। চতুর্থ টেস্টে এসে প্রথম পাঁচ উইকেট নিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের প্রথম পাঁচ উইকেটই ছিল তার। দ্বিতীয় ইনিংসে শেষে গিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট, তবে ইংল্যান্ডের প্রয়োজনে সবার আগে হাত তুলে এগিয়ে এসেছিলেন তিনিই।  
     


    জোহানেসবার্গেই দেশের মাটিতে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট হতে পারে ফাফ ডু প্লেসির/ক্রিকইনফো



    বোলিংয়ে রুটের দুই রকমের রেকর্ড 

    দ্বিতীয় ইনিংসের ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট কার? জো রুটের। হজম করাটা একটু কঠিন হলেও সত্যি এটিই। পার্টটাইমার রুট চতুর্থ দিনই হুমকি জাগিয়েছিলেন খেলা শেষ করে দেওয়ার, রুটের বোলিং যেন বুঝে উঠতেই পারছিল না দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য শেষদিন মুদ্রার উলটো পিঠের ছবিটা খুব কঠিন করে ভেসে উঠলো রুটের সামনে, তার এক ওভারেই যে উঠলো ২৮ রান! সেটিও আবার নিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান কেশভ মহারাজ। টেস্টে এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটিই- ২০০৩-০৪ মৌসুমে জোহানেসবার্গে রবিন পিটারসনের ওভারে ব্রায়ান লারা, ২০১৩-১৪ মৌসুমে পার্থে জেমস অ্যান্ডারসনের ওভারে জর্জ বেইলি তুলেছিলেন সমানসংখ্যক ২৮ রান। রুটের এ ওভারে অবশ্য ৪ রান বাই আছে, তবে রেকর্ডে নামটা তার ঠিকই তুলে দিয়েছেন মহারাজ। 

    শেষ পর্যন্ত ৮৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন রুট, ১৯৮৪ সালে  ক্রাইস্টচার্চে বব উইলিসের ৫১ রানে ৪ উইকেটের পর কোনও ইংল্যান্ড অধিনায়কের টেস্টে এটিই সেরা বোলিং ফিগার।


    উডের প্রত্যাবর্তন

    বিশ্বকাপ ফাইনালে ৯.৩ ওভার করে ফেলার পর চোটটা টের পেয়েছিলেন মার্ক উড। পরের ৩ বল না করেই উঠে যেতে পারতেন, তবে বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো উপলক্ষ্যে সেটা করতে চাননি উড। শেষ ওভারটা সম্পন্ন করার সময়ই জানতেন, অ্যাশেজ মিস করতে চলেছেন তিনি। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসেনি এই পেসারের, এক জীবনে বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ তো বারবার আসে না! উড টেস্ট ক্রিকেটে ফিরলেন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর আবারও। যেন নতুন করে শুরু করলেন ক্রিকেট ক্যারিয়ার! প্রথম ইনিংসে ২ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন ৩ উইকেট। পরের টেস্টে জফরা আর্চার ফিরলেও উডকে খেলানোর ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন রুট। উড বলছিলেন, যে কোনও দিনই তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে- চোটের সঙ্গে তার লড়াইটা এমনই। সে কারণেই উপভোগ করতে চান প্রতিটি দিন। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টটা কম উপভোগ করলেন না তিনি! 


    বিদায় ডু প্লেসি?

    শ্রীলঙ্কা, ভারতের সঙ্গে সিরিজ হারের পর ইংল্যান্ডের সঙ্গে ১ ম্যাচ বাকি রেখে দক্ষিণ আফ্রিকা পিছিয়ে ২-১ ব্যবধানে, ফাফ ডু প্লেসি যে চাপে আছেন, সেটা আলাদা করে না বললেও চলে। ব্যাটিংয়েও সময়টা মোটেই সুবিধার যাচ্ছে না তার। এক বছর ধরে সেঞ্চুরি নেই, গত অক্টোবরে ভারত সিরিজ শুরু হওয়ার পর থেকে ১২ ইনিংসে তার ব্যাটিং গড় ২১.৫৫। ডু প্লেসি এবার নিজের বিদায়ের ইঙ্গিতটা দিয়ে রাখলেন। জোহানেসবার্গে সিরিজের শেষ টেস্টই দেশের মাটিতে তার শেষ হতে পারে বলে বলেছেন তিনি। এমনিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিজেকে ‘দায়বদ্ধ’ উল্লেখ করা ডু প্লেসি বলেছেন, “আমি আগেও বলেছি, অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার একটা সুযোগ আছে। (এ সিরিজের পর) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জুলাইয়ে দুটি টেস্ট আছে, এরপর এ বছর সীমিত ওভার শুধু। হয়তো এর পর টেস্ট ক্রিকেট আমাকে আর দেখবে না।”