• বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ
  • " />

     

    বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ থেকে কী পেল বাংলাদেশ?

    বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ থেকে কী পেল বাংলাদেশ?    

    আরও একবার সেমিফাইনালেই শেষ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশের যাত্রা। আগেরবার ফিলিস্তিনের কাছে হেরে, এবার বুরুন্ডি। আগেরবারও তিন ম্যাচের একটিতে জিতেছিল বাংলাদেশ, দেড় বছর পরও একটি জয়ই বাংলাদেশের সান্ত্বনা। পাওয়ার চেয়ে না না পাওয়ার হাহাকারই বেশি। 

    ২০১৯ এ দারুণ ধারাবাহিক বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়েছিল বছরের শেষে এসএ গেমসে গিয়ে। অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বলেছিলেন, এসএ গেমস যে ভুল ছিল সেটা প্রমাণ করতে চান তারা। বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল ফিলিস্তিনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হেরে। এর পর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ৩-০ তে জিতে সেমিফাইনালে উঠেছিল জেমি ডের দল। আর বুরুন্ডির কাছে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে হারল একই ব্যবধান, ৩-০ তে।

    বাংলাদেশ যে দল দুইটির কাছে হেরেছে তাদের অবস্থান  ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ওপরেই। ফিলিস্তিন ১০৬ আর বুরুন্ডি ১৫১। র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৮৭ তে থাকা বাংলাদেশের জন্য হার দুইটি অপ্রত্যাশিত ছিল- তেমনটা জোর গলায় বলা যাবে না।



    বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে এখান থেকে পজিটিভ হিসেবে নিচ্ছেন তার দলের খেলার ধরনকে। গত বছর বেশিরভাগ ম্যাচেই বাংলাদেশ নিজেদের খোলস বন্দী করে রেখেছিল রক্ষণে। এবার অবশ্য বাংলাদেশের অন্য রূপ দেখা গেছে। গোল করতে না পারলেও বাংলাদেশের গোলের চেষ্টাটা ছিল লক্ষ্যনীয়।   

    ফিলিস্তিনের বিপক্ষেও প্রথম ম্যাচে বল পজেশনে সমানে টেক্কা দিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমার্ধ শেষে তো বল পজেশন ছিল ৫০-৫০। এর পর শ্রীলঙ্কা ও বুরুন্ডির বিপক্ষেও বল পজেশনে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোচও বুরুন্ডি ম্যাচের পর আক্ষেপ করে বললেন এতো বল পজেশন নিয়েও গোল করতে না পারার কথা, “তিন ম্যাচেই আমাদের বল পজেশন ভালো ছিল। আমরা আরও ভালো ফুটবল খেলেছি। পার্থক্যটা হলো গোল করতে পারিনি আমরা। আমরা আগের চেয়েও অনেক বেশি সুযোগ তৈরি করেছি।” 

    সেমিফাইনালে যাত্রা থামলেও তাই একেবারে খালি হাতে ফেরেনি বাংলাদেশ। তবে সেটা কী সন্তুষ্ট থাকার মতো কিছু? তিন ম্যাচে বাংলাদেশ গোল করল তিনটি। গড়ে প্রতি ম্যাচে একটি করে। তাও ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের ২০৫ নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এসেছে সবগুলো গোল। গোলের জন্য হাহাকার থামবে কবে? বাংলাদেশ কোচ আরও একবার বললেন লিগের ফরম্যাট ঢেলে সাজানোর কথা, “সাদ আজকে যে ওয়ান ওয়ানে মিসটা করল- আবাহনীর হয়ে সে এরকম পরিস্থিতিতে আগে পড়েছে? সে খেলে ফুলব্যাক হিসেবে? তাহলে ওয়ান অন ওয়ানে কী করতে হবে সেটা ও জানবে কী করে?” 

    “আমার কথা অনেকের ভালো লাগবে না। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ফরোয়ার্ড হিসেবে না খেলালে এই সমস্যার (গোল খরার) সমাধান নেই।”

    জেমি ডের আক্ষেপ বেশি বুরুন্ডির কাছে হারে। তার হিসাবে ম্যাচে বুরুন্ডির চেয়ে বেশি না হলেও বুরুন্ডির সমান সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ, “আপনি দেখুন আমরা ম্যাচে ৭-৮ টি গোলের সুযোগ তৈরি করলাম। দিনশেষে পার্থক্য গড়ে দিল একটা জিনিস, ওরা গোল করল। আমরা গোল দিতে পারলাম না।” 

    জেমি ডের সামনে অবশ্য চ্যালেঞ্জও ছিল অনেক। চোটের কারণে টুটুল হোসেন বাদশা, নাবিব নেওয়াজ জীবনরা টুর্নামেন্টের আগেই বাদ পড়েছিলেন। জামাল ভুঁইয়া এক ম্যাচ খেলেননি, ইয়াসিন খান ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলার পর আর মাঠেই নামতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ খেলে আলো কেড়ে নেওয়া মতিন মিয়াকে নিয়ে বুরুন্ডির বিপক্ষে প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের। সেই মতিনও ম্যাচ শুরু হতে না হতেই ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়লেন। এসব অবশ্য অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চাননি জেমি ডে। 

    টুর্নামেন্ট শেষ। জাতীয় দলের ব্যানারে কিন্তু মূল জাতীয় দল ফেলে আসা ফিলিস্তিন, বুরুন্ডির বিপক্ষে জিততে না পারা অশনীয় সংকেতই দিচ্ছে। জেমি ডে ফিরে যাবেন আরেকবার। এবার অবশ্য ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ডে যেতেই হচ্ছে তাকে। মার্চ থেকে শুরু বাংলাদেশের আসল পরীক্ষা। বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ শুরু বাংলাদেশের। চলবে জুন পর্যন্ত। ভারত, ওমান, আফগানিস্তান বাংলাদেশে আসবে, কাতারে খেলতে যাবে বাংলাদেশ। এর আগে বাংলাদেশকে আশা-হতাশার দোলাচলে রেখে গেলেন জেমি ডে।