• জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    ট্রিপল না হলেও ডাবলেই 'ওকে' মুশফিক

    ট্রিপল না হলেও ডাবলেই 'ওকে' মুশফিক    

    নাঈম হাসানকে সবার সামনে রেখে উঠছিল বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ডেকে একবার অভিনন্দন জানালেন তাকে। প্রথম দিন দারুণ ধারাবাহিক বোলিংয়ে নাঈমই তো ছিলেন নায়ক। দ্বিতীয় দিন মুশফিক উঠলেন মুমিনুল হককে অভিনন্দন জানাতে জানাতে। মুমিনুল ফিফটি করেছেন তখন, সেঞ্চুরির দিকে এগুচ্ছেন। মুশফিক ফিফটি থেকেই ১২ রান দূরে। অভিনন্দন তো মুমিনুলেরই প্রাপ্য। 

    ****

    সেঞ্চুরির পর মুমিনুল তেমন উল্লাস করতে গেলেন না। মুমিনুল সেটা যে সবসময় করেন, তাও না। ২০১৮ সালে মুশফিক শেষ যেবার ডাবল সেঞ্চুরি করলেন, মুমিনুল তার সঙ্গে ব্যাটিং করছিলেন। মুমিনুল সেঞ্চুরি করেছিলেন, ফিফটির সময় সেবার খেয়ালই করেননি। এবারও মুশফিক তাকে জড়িয়ে ধরলেন, মুমিনুল মোটামুটি নির্লিপ্তই থাকলেন। 

    এ ম্যাচের আগে মুমিনুল কথা দিয়েছিলেন, কেউ বড় সেঞ্চুরি করবেন। তিনি সেঞ্চুরি করলেন, তবে ১৩২-এর বেশি যেতে পারলেন না। টেস্টে বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক এই জুটি, সবার ওপরে সাকিবের সঙ্গে মুশফিক। মুমিনুল অবশ্য ডাবল সেঞ্চুরির সময় ছিলেন না মুশফিকের সঙ্গে। 

    লিটন এলেন। এই লিটনের কাছেই উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্বটা ছেড়ে দিয়েছেন মুশফিক। এর আগেও উইকেটকিপিং ছাড়া খেলেছিলেন, তবে সেসবের পেছনে ছিল চোটের হাত। ভারত সফরের আগে মুশফিক উইকেটকিপিং ছেড়েছেন স্বেচ্ছায়। ভারতে দুই ফিফটি পেয়েছিলেন, সেঞ্চুরি পাননি। পাকিস্তান সফরে যাননি নিরাপত্তার কারণে। 

    মুশফিককে নিয়ে এরপর কথা উঠেছিল, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টের আগে নিজেকে 'প্রমাণ' করে ফিরতে হবে তাকে। বিসিএলে মুশফিক সেঞ্চুরি করে প্রমাণ করেছিলেন। এদিন সেঞ্চুরির পর ব্যাটটা বাতাসে ঘুরিয়ে আনলেন, যেন বুঝালেন, তার ব্যাটই সব কথার জবাব দেয়। অবশ্য পরে মুশফিক বললেন, তিনি কোনও ‘প্রতিশোধ বা প্রতিবাদ’ করেন না। লড়াইটা তার নিজের সঙ্গেই। 

    উইকেটকিপিং ছেড়ে দেওয়া অবশ্য মুশফিকের কাছে চাপমুক্ত কোনও ব্যাপার মনে হচ্ছে না, “কোথায় ফ্রি? এখন তো চাপ আরও বেড়ে গেল। তখন তো দুইটা ছিল। একটা খারাপ করলে অন্তত আরেকটায় সহায়তা পাওয়া যেত। এখন তো একটা মাত্র দিক। আমি তো বোলিংও পারি না (হাসি)।”
     


    তবে বাস্তবতাটা মনে করিয়ে দিলেন, “আমার মনে হয়, বাস্তবতা অবশ্যই মানতে হবে। আমার যে বয়স হচ্ছে এটাও মানতে হবে। আমার মনে হয়, এটাই আমার সঠিক সময় এখন অন্য দিকে একটু মনোযোগ দেওয়ার। কারণ, ফিল্ডিংয়ের সময় আমি একটু ‘নির্ভার’ থাকতে পারি। এতে ব্যাটিংয়ে আমার মনোযোগটা আরও বেশি থাকতে পারে। ভালো যাচ্ছে, আশা করছি এটা ধরে রাখতে পারব।”

    “অনেক সময় হতে পারে আমি কিপিং করেও অনেক ভালো খেলেছি। আমি এখনো মনে করি, পেছন থেকে দেখলে সেটা আমাকে অনেক সহায়তা করে। এখন আমাকে জেনে নিতে হয়- লিটন কী হচ্ছে, স্লিপে কী হচ্ছে। এটা কী হচ্ছে, ওটা কী হচ্ছে, আমার কাছে মনে হয়, দুটো দুই ধরনের জিনিস। একই সঙ্গে আমার বয়স বেশির দিকেই যাচ্ছে।”

    লিটন অবশ্য ডাবল সেঞ্চুরি পর্যন্ত মুশফিককে ‘সহায়তা’ করতে পারলেন না। লিটন ফিরলেন। মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি করলেন তাইজুলকে একপাশে রেখে। নন-উইকেটকিপার হিসেবে মুশফিকের প্রথম সেঞ্চুরি ছিল এটি, সেটিকে নিয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে। বাংলাদেশের হয়ে আর ডাবল সেঞ্চুরিই আছে দুটি- তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের। 

    ****

    মুশফিক অবশ্য নিজেকে ‘সেরা’ বা এ ধরনের কিছু ভাবেন না। তামিমের ড্রাইভ বা সাকিবের কাট দেখে বরং আফসোস করেন- তিনিও যদি খেলতে পারতেন! মুশফিক অবশ্য এ ইনিংসে কাটকে করে নিলেন নিজের ট্রেডমার্ক, ড্রাইভও করলেন। তার সবচেয়ে কার্যকরী শটই ছিল কাট- এর মাধ্যমেই করেছেন ৪১ রান। সঙ্গে তার সুইপের দাপট তো ছিলই। 

    ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে এক্সট্রা কাভারের দিকের অঞ্চল মিলিয়েই তিনি করেছেন ৯৪ রান। একবার তার বিপক্ষে একটা রিভিউ নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে, বলতে গেলে আর কোনও সুযোগ দেননি তিনি। তবে এ ইনিংসকে মুশফিক বলছেন সহজই, “যদি তুলনার কথা বলেন, এটা সবচেয়ে সহজ উইকেট ছিল। ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেটটা খুব ভালো। ওদের দলে যে খুব আহামরী কোনো বোলার ছিল হুমকি দিতে পারে, এমন না। খুব সুইং করছে বা স্পিন করছে এমন না, বা কোনো ‘মিস্ট্রি’ বোলার নেই। আমি যে তিনটা (ডাবল) সেঞ্চুরি করেছি এর মধ্যে এটাই সবচেয়ে সহজ উইকেট ছিল বলে আমার মনে হয়।”

    অবশ্য এ উইকেটটা তাদের দরকার ছিল, ব্যাখ্যা করছেন তিনি, “একদম টার্নিং উইকেটে খেলা কঠিন। বাংলাদেশই একমাত্র দল, আপনি যদি খেয়াল করে দেখেন, বিদেশে গিয়ে আমাদের কঠিন কন্ডিশন মোকাবিলা করতে হয়। আবার দেশে যদি টার্নিং উইকেট করি, সেখানেও কঠিন কন্ডিশন। দেখা যায় ব্যাটসম্যানদের জন্য স্কোর করা অনেক কঠিন হয়ে যায়, বিশেষ করে বড় স্কোর। এরকম উইকেট সচরাচর আমরা পাই না।”

    “এবার পেয়েছি, সবার ভেতর একটা ইচ্ছা ছিল সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার যেন করতে পারি। করতে পেরেছি, এটা ভালো। ব্যাটসম্যান হিসেবে যদি বলেন আমি এরকম উইকেটই পছন্দের আগেভাগে থাকে করি। কিন্তু এটা নির্ভর করে কোন দলের বিপক্ষে আমরা খেলছি। ভবিষ্যতে হয়তো ভিন্ন পরিকল্পনা হতে পারে।”


    ****

    মুশফিক ভেবেছিলেন, ট্রিপলের সুযোগ আছে তার সামনে। ইনিংস ঘোষণার ব্যাপারটি খুব আগে থেকে জানতেন না। সামনে আবার সুযোগের অপেক্ষায় থাকবেন তাই। অবশ্য তার এমন ইনিংস, বা সব মিলিয়ে দল দারুণ অবস্থানে- তিনি খুশি সে কারণেই। 

    ডাবল সেঞ্চুরি যে ওভারে করলেন, সে ওভারশেষেই ইনিংস ঘোষণা করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুমিনুল। ওভারের শেষ বলটা মুশফিক ডিফেন্ড করলেন। 

    এরপর উঠে যাওয়ার আগে প্রতিটি জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার ছুটে এসে হাত মিলিয়ে গেলেন মুশফিকের সঙ্গে, জানালেন অভিনন্দন। আর দিনশেষে সবার সামনে তিনি। 

    আঙুল তুলে জানাচ্ছিলেন- “ওকে”। 

    ট্রিপল না হোক, ডাবল সেঞ্চুরিই বা কম কিসে।