• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    রিয়ালকে ভুগিয়ে বার্নাব্যুতে হাসল গার্দিওলার সিটি

    রিয়ালকে ভুগিয়ে বার্নাব্যুতে হাসল গার্দিওলার সিটি    

    ফুলটাইম
    রিয়াল মাদ্রিদ ১-২ ম্যানচেস্টার সিটি 


    আগামী অন্তত দুই বছরের জন্য চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যানচেস্টার সিটির শেষ অ্যাওয়ে ম্যাচ হয়ে থাকতে পারে এটি। তেমনটা হলেও পেপ গার্দিওলা এই ম্যাচটা মনে রাখবেন। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে, রিয়াল মাদ্রিদের ঘরে আরও একবার আগুন জ্বালিয়ে গেছে তার দল। বার্নাব্যুতে জয় তো তার জন্য বিশেষ কিছুই। তার দলও কথা রেখেছে। ইউয়েফার নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পর গার্দিওলা বলেছিলেন দলের মেধা প্রমাণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার খেলোয়াড়দের। বার্নাব্যুতে মেধার সঙ্গে সিটিজেনরা প্রজ্ঞার পরিচয়ও দিয়ে গেছেন। আর প্রশ্নবিদ্ধ ট্যাকটিকস নিয়েও নিজেদের প্রথম দেখায় জিনেদিন জিদানকে টপকে গেছেন গার্দিওলা। 

    যদিও এখনও কিছুই নির্ধারণ হয়নি। ইতিহাদে ঘটতে পারে অনেক কিছু। যত যাই ঘটুক- তার আগ পর্যন্ত সিটির ঝুলিতে থাকবে দুই অ্যাওয়ে গোলের শক্তি। থাকবে বার্নাব্যুর আত্মবিশ্বাস। আর রিয়াল মাদ্রিদ সে রাতের জন্য যে নাটকই জমিয়ে রাখুক তাতে থাকবেন না সার্জিও রামোস। ৮৬ মিনিটে ক্লাব ক্যারিয়ারের ২৬ তম লাল কার্ড দেখে দলের বিপর্যয় আরও বাড়িয়েছেন রিয়াল অধিনায়ক।

    রামোসের অবশ্য করারও কিছু ছিল না। মিনিট দশেক আগেও খেলা ছিল তার দলের দখলে। ৫ মিনিটের এক ঝড়ে ১-০ থেকে রিয়াল মাদ্রিদ পিছিয়ে পড়েছিল ২-১ এ। গোলের দিকে এগুতে থাকা গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে বাধা দেওয়ার কেউ ছিল না। রামোসকে ঝুঁকি নিতেই হত। হয়ত ৩-১ ব্যবধানের হার থেকেই দলকে রক্ষা করে গেছেন তিনি।


    ইতিহাস আর অভিজ্ঞতা যে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে- রিয়াল মাদ্রিদ ঘরের মাঠে সেটাই প্রমাণ করছিল। গোলশূন্য প্রথমার্ধে দুইদলই হাতে গোণা অল্প কিছু গোলের সুযোগ তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল সিটির আক্রমণ। এক রিয়াদ মাহরেজই বিরতির পর দশ মিনিট সময়ে তিনবার গোলে শট করেছিলেন। প্রথমবার বাইরে মারলেন, পরের দুইবার থিবো কোর্তোয়ার দুর্দান্ত দুই সেভে আটকে যেতে হলো তাকে। রিয়ালের বিপক্ষে সুযোগ নষ্টের পরিণাম কতোখানি ভয়াবহ হতে পারে সিটি সেটা টের পেয়েছিল ৬০ মিনিটে।

    ভিনিসিয়াস জুনিয়র সিটির কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুত ঢুকে পড়েছিলেন বক্সের ভেতর। স্কয়ার পাসে গোলের সামনে থাকা ইস্কোকে খুঁজে নেন তিনি। ইস্কো আর ভুল করেননি, ডান পায়ের শটে ম্যাচে গোলের খাতা খুলেছিলেন তিনি। সিটির বিপক্ষে তখন সবকিছু। রক্ষণের সবচেয়ে বড় ভরসা আইমেরিক লাপোর্তে ইনজুরি নিয়ে প্রথমার্ধেই মাঠে ছেড়ে গিয়েছিলেন। হেসুস প্রথমার্ধে দুইবার গোলবঞ্চিত হয়েছেন। একবার কোর্তোয়ার সেভের কাছে হেরেছেন, আরেকবার বিরতির ঠিক আগে দিয়ে গোললাইন থেকে শট ক্লিয়ার হয়েছে তার। দ্বিতীয়ার্ধে ভালো শুরু করেও লাভ হয়নি সিটির। আর নিষেধাজ্ঞার প্রচ্ছন্ন চাপটা তো ছিলই।

    রিয়াল মাদ্রিদ গোল দিয়ে সিটিকে একরকম পেয়ে বসেছিল। সমর্থকেরাও তখন ভুলে গেছেন ম্যাচের ৩০ মিনিটে করিম বেনজেমার হেড এডারসন দারুণ সেভে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ফিরতি বলে টোকা দিলেই গোল পেতেন ভিনিসিয়াস। ব্রাজিলিয়ান তখন পিছলে গিয়েছিলেন। এসব তখন ইতিহাস। রিয়াল মাদ্রিদ একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছে। আর ‘বুড়ো’ ফার্নান্দিনহো-অটামেন্ডি তখন গতির কাছে হারছেন। কখনও রামোসের ভলি প্রাণ-পণে ঠেকিয়ে কর্নারের বিনিময়ে হাঁপ ছাড়ছেন।

    ঘরের মাঠে শেষে গিয়ে এমন কিছু প্রত্যাশাই করেনি রিয়াল মাদ্রিদ। অবশ্য কেভিন ডি ব্রুইন একেবারে শুরু থেকে ভুগিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের। রঙ বদলের ম্যাচের শেষ অঙ্কে গিয়ে আসলে ডি ব্রুইনের কাছেই হেরেছে রিয়াল। ৭৮ মিনিটে তার ক্রস থেকে হেডে গোল করে হেসুস সিটিকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন। ভিএআর অবশ্য বাগড়া বাঁধাতে পারত। হেসুসের সামনে ছিলেন রামোস। হালকা পুশও করেছিলেন হেসুস। তবে সেটা ফাউল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।  ওই এক গোলেই দিশেহারা রিয়াল। জিনেদিন জিদানের দল ঘরের মাঠে এমন খাপছাড়া খেলে না, চ্যাম্পিয়নস লিগে তো আরও না! এমন কিছুর জন্য অপ্রস্তুত ছিল বলেই কী এমন ছন্নছাড়া রিয়াল?

    ৮৩ মিনিটে দানি কারভাহাল বক্সের ভেতর বাম পাশে ফাউল করে বসলেন রাহিম স্টার্লিংকে। গোল আর পেনাল্টি- দুইবারই মাঠের রেফারির প্রথম সিদ্ধান্ত বহাল থেকেছে। ডি ব্রুইনের মাথা ঠান্ডা। স্পট কিক থেকে গোল করে বার্নাব্যুকেও ঠান্ডা করে দিলেন তিনি।

    এসব কিছুর আগে দুই কোচের একাদশে চমক ছিল। গার্দিওলা সার্জিও আগুয়েরোর বদলে হেসুসের ওপর ভরসা রেখেছিলেন। আগুয়েরোকে আর শেষ পর্যন্ত দরকারই হয়নি তার। হেসুস প্রয়োজন মিটিয়েছেন। স্টার্লিংও বদলি হিসেবে নেমে পেনাল্টি আদায় করে নিয়েছেন। কাজে দেয়নি জিদানের টোটকা। টনি ক্রুসকে ছাড়া মিডফিল্ডে সেভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। করিম বেনজেমা শততম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগে। তিনিও একজন জাত গোলস্কোরারে জন্য রিয়ালের অভাবটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এডেন হ্যাজার্ড তো আগেই বাদ, রদ্রিগোও ছিলেন না। গ্যারেথ বেল কখন নামেন, কখন কী করেন সেটা বোধ হয় তার সতীর্থরাও বুঝে উঠতে পারেন না। আর জিদান আসলে গার্দিওলার বিপক্ষে আরও অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। ২০০৯ সালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগের কোনো ম্যাচে ঘরের মাঠে এগিয়ে থেকেও প্রথমবারের মতো হারল লস ব্লাঙ্কোরা।

    ইতিহাদে জিদান আপাতত চাইবেনে একটা রেকর্ড ধরে রাখতে। চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বের টাইয়ে তিনি তো অপরাজিত। এই ফলের পর সেটা ধরে রাখতে হলে অবশ্য দ্বিতীয় লেগে জাদু দেখাতে হবে জিদানকে।     

     

    রিয়াল মাদ্রিদ
    কোর্তোয়া, কারভাহাল, ভারান, রামোস, মেন্ডি, ভালভার্দে, কাসেমিরো, মদ্রিচ, ভিনিসিয়াস, বেনজেমা, ইস্কো
    ম্যান সিটি
    এডারসন, ওয়াকার, অটামেন্ডি, লাপোর্তে, মেন্ডি, ডি ব্রুইন, রদ্রি, বের্নার্দো, গুন্দোয়ান, মাহরেজ, হেসুস