• লা লিগা
  • " />

     

    বার্সেলোনাকে হারিয়ে লা লিগার শীর্ষে উঠল রিয়াল মাদ্রিদ

    বার্সেলোনাকে হারিয়ে লা লিগার শীর্ষে উঠল রিয়াল মাদ্রিদ    

    ফুলটাইম
    রিয়াল মাদ্রিদ ২-০ বার্সেলোনা


    এই শিরোনাম রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের জন্য প্রাণ জুড়ানো। সাদামাটা, নিরেট এক লাইন, প্রয়োজন নেই কোনো উপমারও। সেটা রিয়াল মাদ্রিদের জন্য যতখানি প্রশান্তির বার্সেলোনার জন্য তার চেয়েও বেশি অস্বস্তির। গেল সপ্তাহে রিয়াল মাদ্রিদের হারের সুযোগে লা লিগার শীর্ষে উঠে গিয়েছিল বার্সেলোনা। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বার্সাকে হারিয়ে সব ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে জিনেদিন জিদানের দল। ২০১৪ সালের পর লিগে ঘরের মাঠে বার্সাকে হারাতে পেরেছে তারা। তাতে বার্সাকে টপকে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে এখন শীর্ষে আবার রিয়াল মাদ্রিদ। লিগের ১২ ম্যাচ বাকি থাকতে এখান থেকে আর নামতে চাইবে না লস ব্লাংকোরা।

    ম্যাচের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। ৭১ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে বল নিয়ে বার্সার বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। এর পর কাট করে কিছুটা ভেতরে ঢুকে ডান পায়ে শট নিলেন, সেটা জেরার্ড পিকের গায়ে লেগে মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানকে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে যায় কাছের পোস্টে। দর্শক গ্যালারিতে থাকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্যই হয়ত অনেকটাই তার ঢঙেই এরপর গোল উদযাপন করেছেন ভিনিসিয়াস। যোগ করা সময়ে বদলি মারিয়ানো ডিয়াজের নিশ্চিত করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের জয়।

    পেছন ফিরে তাকালে বার্সেলোনা কেবল আফসোসই করতে পারে। প্রথমার্ধটা তাদেরই ছিল। একের পর এক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে বার্সাই আসলে কঠিন পথ বেছে নিয়েছিল। আর প্রথমার্ধটা সামাল দিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে দেখা মিলেছে দুর্দান্ত রিয়ালের। বার্সা কাজের কাজটা না করলেও রিয়াল ফিরেছে রাজার মতো।


    ৫৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শট করে ইস্কো শুরুটা করেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। টের স্টেগানকে তখন অতিমানবীয় এক সেভ করে আটকে রাখতে হয়েছে রিয়ালকে। অথচ প্রথমার্ধে একরকম অবসরেই গিয়েছিল তার। বার্সাকে বহু আগেই অশনী সংকেত দিয়ে রেখেছিল রিয়াল। ইস্কো পরেরবার করলেন হেড, সেটা গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করতে হলো জেরার্ড পিকেকে। করিম বেনজেমা নেমেছিলেন ক্যারিয়ারের ৫০০ তম ম্যাচ খেলতে। ৬৩ মিনিটে তার নেওয়া সাইড ভলি ওপর দিয়ে গেলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে বার্সা।

    প্রথমার্ধ ততোক্ষণে অনেকটাই ইতিহাস হয়ে গেছে। তবে নিজের প্রথম ক্লাসিকোতে কিকে সেতিয়েন জয় নিয়েই ফিরতে চেয়েছিলেন হয়ত। ৬৯ মিনিটে আর্তুরো ভিদালকে বদলি করে মার্টিন ব্রাথওয়েটকে নামিয়ে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে তিন ফরোয়ার্ড নিয়ে খেলতে থাকে বার্সা। ব্রাথওয়েটের ক্লাসিকোর অভিষেক সেতিয়েনের ভাগ্য খুলে দিতে পারত। মাঠে নেমেই তিনি দারুণ এক সুযোগ তৈরি করেও ফিরেছিলেন খালি হাতে। ফিরতি আক্রমণেই সেতিয়েনকে আফসোসে পোড়ায় রিয়াল।

    ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে শেষ ম্যাচে টনি ক্রুস কেন ছিলেন না সেটা একটা বিস্ময়। তবে এদিন তিনি খেললেন শুরু থেকেই। রিয়ালের একাদশে বদল দুইটি, মার্সেলো আর ক্রুস নেমেছিলেন একাদশে। ম্যাচের গিট খুলতে দরকার হলো ক্রুসকে।  বার্সার রক্ষণ একরকম ঘুমিয়েই পড়েছিল তখন। ভিনিসিয়াসকে পাহারায় রাখার দায়িত্ব পড়েছিল সেই ব্রাথওয়েটের। কিন্তু ক্রুসের পাসের নাগালই পাননি তিনি, নাগাল পাননি পরে ভিনিসিয়াসেরও।

    ম্যাচ শেষে যখন বার্সেলোনা ফিরে তাকাবে, তখন প্রথমার্ধটাই তাদের সবচেয়ে বড় আফসোসের কারণ হওয়ার কথা। মেসি তখন একবার ওয়ান অন ওয়ানে গোল মিস করেছেন। ৭৫ মিনিটে যখন আরেকবার প্রায় একই রকম সুযোগ পেয়ে গেলেন, মেসির মিস করার কথা ছিল না। মার্সেলোর দুর্দান্ত এক ট্যাকেল তখন বাঁচিয়ে দিল রিয়াল মাদ্রিদকে। এর পরকে বার্নাব্যুর দর্শকদের তাঁতিয়ে দিতে যে উল্লাস তিনি করলেন, তাতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এই ম্যাচের লাগাম ছাড়ছে না রিয়াল। তবে মেসিকে আটকে রাখতে বড় অবদান অন্য ব্রাজিলিয়ানের। কাসেমিরো একেবারে শুরু থেকেই পকেটে পুরে রেখেছিলেন মেসিকে। এর পরও মেসি ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন একবার। তখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন থিবো কোর্তোয়া।

    রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক প্রথমার্ধে দারুণ কিছু সেভ না করলে তার দলের জন্য ম্যাচটা হাত ফস্কে বেরিয়ে যেতে পারত আরও আগেই। মেসির মতো আর্থার মেলোকে ওয়ান অন ওয়ানে ফিরিয়েছিলেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক।  লা লিগায় অন টার্গেটে থাকা শেষ ৩৬ শটের ভেতর ৩০ টিই ঠেকিয়েছেন কোর্তোয়া। এদিন তার সঙ্গে যোগ হলো বার্সার বিপক্ষে আরেকটি ক্লিনশিটও। কোর্তোয়া তৃপ্তি পেতেই পারেন!

    তবে এসব কিছুর আগে বার্সাকে হতাশ করেছলেন আসলে আন্টোয়ান গ্রিযমান। গোলের দশ গজ দূরে বল পেয়েও ম্যাচের ২০ মিনিটে গ্রিযমান শট মেরেছিলেন আকাশে উড়িয়ে। বার্সার ভাগ্য যে খুব খারাপ ছিল তেমনটাও বলার উপায় নেই। দ্রুত ইনজুরি থেকে সেরে উঠে ক্লাসিকোতে নেমে পড়েছিলেন জর্দি আলবা। দ্রুতই আবার মাঠ ছাড়তে হতে পারত তাকে। ১৯ মিনিটে প্রথম হলুদ কার্ড দেখার পর ৩২ মিনিটে ‘শিশুসুলভ’ এক ট্যাকেল করে দ্বিতীয় কার্ডটিও পেয়ে যেতে পারতেন তিনি। রেফারির কাছে অবশ্য ঘটনাটা কার্ড দেখানোর মতো মনে হয়নি।

    শেষে গিয়ে বার্সার দুর্দশা প্রকট হয়েছে ডিয়াজের কাছে গোল হজম করে। মাঠে নামার ৫০ সেকেন্ডের ভেতর বার্সার বক্সের ঢুকে টের স্টেগানকে কাছের পোস্টে গোল হজম করিয়েছেন তিনি। অথচ এই মৌসুমে এটি ছিল লা লিগায় তার প্রথম ম্যাচ। এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে  বদলি হিসেবে নেমে দ্রুততম সময়ে গোল করে ইতিহাসে ঢুকে গিয়েছেন তিনি।

    ইতিহাস গড়েছেন ভিনিসিয়াসও। ১৯ বছর ৩৩ দিন বয়সে ক্লাসিকোতে গোল করে এই শতাব্দীতে ক্লাসিকোর তরুণতম গোলদাতা এখন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। ২০০৭ সালে মেসির ১৯ বছর ২৫৯ দিনে ক্লাসিকোতে গোল করার রেকর্ড হাতছাড়া হয়েছে তাতে। এই গোলে অবশ্য মেসিদের এই মৌসুমের শিরোপাটাও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

          

    রিয়াল মাদ্রিদ একাদশ
    কোর্তোয়া, কারভাহাল, ভারান, রামোস, মার্সেলো, ভালভার্দে, কাসেমিরো, ক্রুস, বেনজেমা, ভিনিসিয়াস
    বার্সেলোনা একাদশ
    টের স্টেগান, সেমেদো, পিকে,উমতিতি, জর্দি আলবা, ডি ইয়ং, বুস্কেটস, আর্থার, ভিদাল মেসি, গ্রিযমান