• জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    'রুবেল ইজ হ্যাপি', 'মজা হবে' : অধিনায়ক মাশরাফির হাইলাইটস

    'রুবেল ইজ হ্যাপি', 'মজা হবে' : অধিনায়ক মাশরাফির হাইলাইটস    


    ২০১৪ সালে মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে যখন দায়িত্ব নেন আরেক মেয়াদে, সে বছর ওয়ানডেতে কোনও জয় ছিল না বাংলাদেশের। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে শুরু হয়েছিল তার অধিনায়কত্বের 'নতুন' অধ্যায়, সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই আরেকটি সিরিজ জয়ে শেষ হচ্ছে সেটি। এর আগেও অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন, তবে চোটের কারণে দীর্ঘমেয়াদে সেটি পালন করা হয়নি। 

    প্যাভিলিয়ন ফিরে তাকিয়েছে তার অধিনায়কত্বের সেরা ঘটনাগুলির দিকে….


    "রুবেল ওয়াজ হ্যাপি, সো ওয়াজ বাংলাদেশ" 

    রুবেল হোসেন ছুটছেন। ছুটছেন সবাই। একপাশে শুয়ে পড়েছেন তিনি- মাশরাফি বিন মুর্তজা। একটু পর তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লেন সবাই। অ্যাডিলেড ওভালে সেদিন যেন উচ্ছ্বাস বাঁধ মানছিল না বাংলাদেশের। ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সে জয় দিয়ে। জেমস অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে সে জয় নিশ্চিত করেছিলেন রুবেল। কোথাও সেদিন হারিয়ে যাওয়ার মানা ছিল না কোনও।  

    একটু পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাশরাফি গেলেন মাথায় জাতীয় পতাকা স্কার্ফের আদলে বেঁধে। গিয়ে রুবেল প্রসঙ্গে বললেন, “আই থিঙ্ক রুবেল ইজ হ্যাপি নাউ”! 

    মাশরাফির এই কথায় একটা ‘ইঙ্গিত’ ছিল, প্রসঙ্গ ছিল- বিশ্বকাপের আগ দিয়েই ঝামেলায় জড়িয়ে কারাগারে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল রুবেলকে। মাশরাফির সেই কথার পরও যদি আপনি রুবেলের সেই ব্যাপারটা মনে করতে না পারেন, তাহলে সেটি আপাতত আপনাকে জানানোর প্রয়োজন নেই আপাতত। 

    বিশ্বকাপে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে লাফিয়ে উঠে বুক মিলিয়ে মাশরাফির উদযাপনটাও হয়ে গেছে আলোচিত এক ছবি।

    তবে অ্যাডিলেডের সেই দিনটি ছিল “ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ইন বাংলাদেশ হিস্টোরি...।” যেদিন “দ্য বাংলাদেশ টাইগারস হ্যাভ নকড আউট দ্য ইংলিশ লায়নস!” 


    সিরিজ জয়, চলছিলই!

    পাকিস্তান। ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা। 

    এর আগে এদের কারও বিপক্ষে সিরিজ জেতেনি বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে জিতল সবার সঙ্গে- একের পর এক। ৩ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ (মাশরাফি প্রথম ম্যাচে খেলেননি), ভারতের বিপক্ষে ২-১ এর পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাংলাদেশ হারিয়েছিল ২-১ এ। 

    এর মাঝে ভারতের বিপক্ষে নিজের প্রথম ২ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। 

    এই তিন দলের পর এসেছিল জিম্বাবুয়ে, হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল তারা। মাশরাফির নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারেনি কখনোই, সিলেটে শেষ ওয়ানডের আগে। 


    "মজা হবে", হয়েছিলও 

    ২০১৭ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ খেলতে গেল বাংলাদেশ। হুট করেই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন মাশরাফি। অথচ এর আগে বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি দলটা নিয়ে কাজ করতে চান। এর আগের বছর বেঙ্গালুরুতে হৃদয়-ভঙ্গের অন্যরকম এক বিষাদকাব্য লিখেছিল বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে। 

    টি-টোয়েন্টিতে অবসর নেওয়ার পর দেশে ফিরে বিমানবন্দরে মাশরাফি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “এখনও তো ওয়ানডে খেলছি। মজা হবে সেখানেই।”

    সেই মজাটা হলো কদিন বাদেই, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। কার্ডিফে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর মহাকাব্যিক এক জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে গেল বাংলাদেশ।

    জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ড্রেসিংরুমের ব্যালকনিতে মাশরাফির উচ্ছ্বাসটা নিশ্চয়ই চাইলেও ভুলতে পারবেন না আপনি! 


    বিশ্বাস হৃদয়ে... 

    ওপেনিংয়ে লিটন দাসের সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজকে। দারুণ এক ভিত পেয়েছিল বাংলাদেশ তাতে। লিটন পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, তার উদযাপনে মিশে ছিল স্বস্তি। তবে ড্রেসিংরুমের সামনে থেকে মাশরাফির ইঙ্গিতটা রক্ত টগবগ করতে বাধ্য করেছিল বোধহয় আপনাকে। 

    বুকে হাত দিয়ে মাশরাফি ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন, “সাহস রাখ, শেষ করে আয়।” 

    শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তামিম ইকবালের অনন্য সাহসিকতার পেছনেও ‘হাত’ ছিল মাশরাফির। হাতে চোট পেয়ে তামিম উঠে গিয়েছিলেন শুরুতেই, তবে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গ দিতে শেষদিকে হাতে প্লাস্টার নিয়ে নেমেছিলেন আবারও। একহাতে ব্যাটিং করেই খেলেছিলেন ১ বল। পরে তামিম বলেছিলেন, ড্রেসিংরুমে প্রথম তাকে ব্যাটিংয়ের কথা বলেছিলেন মাশরাফিই। 

    তামিমের সে ম্যাচের পরই দেশে ফিরেছিলেন, ফিরেছিলেন সাকিবও। বাংলাদেশও ফাইনালটা শেষ করে আসতে পারেনি, ফাইনালে ভারতের কাছে আরেকবার হয়েছিল স্বপ্নভঙ্গ। মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব ফরম্যাট মিলিয়ে এশিয়া কাপের দুটি ফাইনালে খেলেছে। 

     


    অবশেষে শিরোপা 

    ২০০৯ থেকে ২০১৯- একাধিক দলের টুর্নামেন্টের ফাইনাল জেতার অপেক্ষাটা বাংলাদেশের শুধু বাড়ছিলই, সূর্যের আলোর সঙ্গে ছায়া বড় হওয়ার মতো করে। মালাহাইডে অবশেষে ঘুচলো সে অপেক্ষা। 

    ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে খুব কাছে গিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে হারের পর সাকিব-নাসির হোসেনের কান্নার ছবিটা হয়তো এখনও আপনাকে কেমন করে তোলে। অথবা তারও আগে ২০০৯ সালে মুত্তিয়া মুরালিধরন বা নিদাহাস ট্রফিতে দীনেশ কার্তিকের অতিমানব হয়ে ওঠা আপনাকে উদাস করে তোলে এখনও। 

    সেসব ছবি মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল মালাহাইডের সেই ফাইনাল। সৌম্য সরকারের দারুণ এক ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো একাধিক দলের সিরিজের ফাইনাল জিতেছিল বাংলাদেশ, মাশরাফির নেতৃত্বে। 

    ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে মাশরাফি একপ্রান্তে বসে পড়েছিলেন, এবার লিটনের কাঁধে হাত রেখে পোজ দিচ্ছিলেন ছবির জন্য। সামনে ছিল একটা শিরোপা- ‘ফাইনাল’ জিতে পাওয়া শিরোপা। 
     


    বিস্মৃত বিশ্বকাপ (সাকিবের জন্য নয়)

    ২০১৯ বিশ্বকাপটা সাকিব আল হাসানের স্বপ্নের সমান বড়। 

    বাংলাদেশের শুরুটাও হয়েছিল দারুণ- দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে। তবে ধীরে ধীরে সাকিব নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে লাগলেন, আর বাংলাদেশ উলটোপথে হাঁটা শুরু করলো। মাশরাফি থাকলেন বিবর্ণ। ৮ ইনিংস বোলিং করে মাশরাফি পেয়েছিলেন মাত্র ১ উইকেট। 

    পরে সাকিব প্রকাশ্যেই নিজের হতাশা জানিয়েছিলেন দলের পারফরম্যান্স নিয়ে। অনেক উচ্চাশা নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শেষ করেছিল ৯ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে ৮ নম্বরে থেকে। 

    বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সিরিজে শেষমুহুর্তে চোটের কারণে খেলেননি মাশরাফি। এরপর লম্বা বিরতির পর জিম্বাবুয়ে সিরিজ, মাশরাফি যেটি দিয়ে ইতি টানলেন তার অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ারের।