• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের আয়োজন থামিয়ে কোয়ার্টারে অ্যাটলেটিকো

    অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের আয়োজন থামিয়ে কোয়ার্টারে অ্যাটলেটিকো    

    অতিরিক্ত সময় শেষে
    লিভারপুল ২-৩ অ্যাটলেটিকো


    মার্কোস ইয়োরেন্তের বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া শট গোললাইন পার করে ড্রপ খেয়েছে, এর পর জালে জড়াতেই ‘খ্যাচ’ করে আওয়াজ। স্তব্ধ অ্যানফিল্ডে এর পর ইয়োরেন্তেদের চিৎকার। আপনি যদি লিভারপুল সমর্থক না হন এই শব্দ আপনার জন্য মধুর। আর লিভারপুল সমর্থক হলে আপনার বুকে শেল বিঁধেছে তখন। ৬ মিনিটের ব্যবধানে বদলি ইয়োরেন্তের দ্বিতীয় গোল ছিল এটি। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো খেলার প্রথমার্ধে হয়েছে তিন গোল, পরের অর্ধে এক। রবার্তো ফিরমিনোর অতিরিক্ত সময়ের ৪ মিনিটের গোল অথবা তারও আগে জর্জিনিয়ো ওয়াইনাল্ডামের টাইয়ে সমতায় ফেরানো গোল- সবকিছু ইতিহাস হয়ে গেছে ততোক্ষণে।

    অ্যাটলেটিকোর মাঠে গিয়ে গতবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতে এসেছিল লিভারপুল। সেই অ্যাটলেটিকো এবার অ্যানফিল্ডে এসে বিদায় করে দিয়ে গেল চ্যাম্পিয়নদের। আসলে অ্যানফিল্ড দেখেছে ডিয়েগো সিমিওনে ক্লাসিক। পুরোটা সময় প্রতিপক্ষের কাছে পাত্তা না পেয়েও কীভাবে স্নায়ু ধরে রেখে ফল বের করে আনতে হয় সেটাই আরেকবার দেখিয়ে দিয়েছেন সিমিওনে।

    লিভারপুল অবশ্য চাইলে ম্যাচটা অন্যভাবেও দেখতে পারে। সবকিছুই তো ঠিকঠাক এগুচ্ছিল তাদের। নির্ধারিত সময়ে শেষে লিভারপুল ১-০ তে (দুই লেগে ১-১ সমতা) এগিয়ে থাকায় ম্যাচ গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। এর আগ পর্যন্ত ছিল লিভারপুলের দারুণ দাপট, পরেও তাই। ৯৪ মিনিটে রবার্তো ফিরমিনোর বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া হেড লেগেছিল বারপোস্টে। ফিরতি বল জালে ঢুকিয়েই ফিরমিনো প্রথমবারেরর মতো টাইয়ে এগিয়ে দিয়েছিলেন দলকে।


    এর পর লিভারপুলকে ভোগালো অ্যালিসনের অভাব। হিপ ইনজুরিতে এই ম্যাচে তার খেলা হবে না সেটা জানাইছিল ইউর্গেন ক্লপের। দ্বিতীয় গোলরক্ষক আদ্রিয়ান করলেন ভুলটা। তার ভুল পাস থেকে হোয়াও ফেলিক্স ভয়ঙ্কর জায়গায় বল পেয়েই পাস বাড়িয়েছিলেন ইয়োরেন্তেকে। এর পর বক্সের ঠিক বাইরে থেকে কোণাকুণি শটে ইয়োরেন্তে করে ফেলেন মহামূল্যবান অ্যাওয়ে গোল। লিভারপুলের রক্ষণ তখন থেকেই লাগামছাড়া। ৯৭ মিনিটে গোল হজম করে লিভারপুলের আত্মবিশ্বাস যতোখানি কমেছে, অ্যাটলেটিকোর প্রেরণা ততো বেশি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। প্রথমার্ধের যোগ সময়ে ইয়োরেন্তে যখন আরেকবার গোল করলেন তখন লিভারপুলের বড় ধরনের ভুলের আর দরকার হলো না অ্যাটলেটিকোর। আর একেবারে শেষে গিয়ে আরেক বদলি আলভারো মোরাতা গোল করে ম্যাচের ব্যবধান করেছেন ৩-২। মোরাতার উদযাপনে শেষ হয়েছে খেলা, খেলা শেষের পর গ্যালারি ফাঁকা হয়ে গেছে, তবু থামেনি সেই উদযাপন।

    এমন জয় আসলে উদযাপন করার মতোই। সিমিওনের জন্য এর মাহাত্ম্য তো আরও বেশি। অ্যানফিল্ডে অ্যাটলেটিকো এসেছিল ২০২০ সালে কোনো অ্যাওয়ে ম্যাচ না জিতে। আর লিভারপুল নেমেছিল ঘরের মাঠে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় টানা ২৫ ম্যাচ অপরাজিত থেকে। দুই দল কোন ছন্দে খেলবে সেটাও নির্ধারণ হয়ে ছিল। শেষ পর্যন্ত ক্লপের আক্রমণাত্মক ফুটবলকে মাথা নত করতে হয়েছে সিমিওনের রক্ষণ দূর্গের কাছে।

    অ্যানফিল্ডে রোমাঞ্চের ইঙ্গিত ছিল শুরু থেকে। শুরু থেকে চড়াও লিভারপুলও। আর বাক্সবন্দী অ্যাটলেটিকো। আপনি ভাবতে পারেন গোল হওয়া সময়ের ব্যাপার ছিল। কিন্তু দলটা অ্যাটলেটিকো- তারা চাপ সঙ্গী করেই খেলতে জানে।  দুই প্রান্ত থেকে ক্রস আসে, কখনও সাভিচ-কখনও ফেলিপে লাফিয়ে উঠে ক্লিয়ার করেন। লিভারপুল যখন রক্ষণে ফাটল ধরায় তখন ইয়ান অবলাক হয়ে দাঁড়ান বাধা। ৯০ মিনিটের সারমর্ম এটুকুই।

    অ্যানফিল্ডের শেষ নক আউট পর্বের ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন ওয়াইনাল্ডাম। বার্সেলোনার বিপক্ষে স্মরণীয় সেই রাত যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষেও। বক্সের ভেতর লেট রান নিয়ে ডান প্রান্ত থেকে অ্যালেক্স অক্সলেড চেম্বারলাইনের ক্রসের শেষ মাথায় পৌঁছেছিলেন তিনি। এর পর পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি জায়গা থেকে হেডে অবলাককে পরাস্থ করে অ্যানফিল্ডের নাটক জমিয়ে তোলেন ওয়াইনাল্ডাম। আক্রমণের বুলডোজার চালিয়ে ৪৩ মিনিটের ওই গোলে স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল লিভারপুল।

    স্বস্তি ছিল দ্বিতীয়ার্ধেও। চেম্বারলিন, ফিরমিনো, সালাহ তো ছিলেনই, সঙ্গে দুই ফুলব্যাক রবার্টসন-আর্নল্ডরাও নিয়মিত গোলে শট নিয়ে গেছেন। পরের গল্পটা তো আপনি এতোক্ষণে জেনে গেছেন। দাপট দেখিয়েও লিভারপুল যে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ জিততে পারেনি তার মূল কারণ ছিলেন অবলাক। স্লোভেনিয়ান গোলরক্ষক পুরো সময় ব্যস্ত রেখেছিল লিভারপুল। সবমিলিয়ে মোট ৯টি সেভ করে ম্যান অফ দ্য ম্যাচও হয়েছেন অ্যাটলেটিকো গোলরক্ষক।

    প্রথমার্ধে লিভারপুলের ৭৮ শতাংশ পাস অ্যাকুরেসির বিপরীতে অ্যাটলেটিকোর ছিল মাত্র ৫৬ শতাংশ। লিভারপুলের দাপট ঠেকাতে ৫৬ মিনিটে ডিয়েগো কস্তাকে তুলে ইয়োরেন্তে নামিয়ে দিয়েছিলেন সিমিওনে। মিডফিল্ডে লোক বাড়ানো ছিল সিমিওনের লক্ষ্য। নির্ধারিত সময়ে তেমন কাজে আসেনি সে কৌশল। কস্তা বদলি হওয়ার পর মাঠ ছেড়েছিলেন রাগে গজরাতে গজরাতে। ম্যাচ শেষে আর আফসোস থাকার কথা নয় তার। সেই ইয়োরেন্তেই তো ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচের ভাগ্য।

    ভাগ্য ঘুরে গেল সিমিওনেরও। এই ম্যাচে পরিস্কার ফেভারিট ছিল লিভারপুল। গত ১০ বছরে দুইবার চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল, ৩ বার ইউরোপা লিগের ফাইনাল খেলা অ্যাটলেটিকো এবার ধুঁকছিল। লা লিগায় তাদের অবসথান চ্যাম্পিয়নস লিগ স্পটেরও বাইরে। সিমিওনের 'কার্যকরীতা' নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল তাই স্বাভাবিকভাবেই। 'এল চলো' জবাব দিলেন সময়মতো। আর সেটার জন্য অ্যানফিল্ডের চেয়ে ভালো জায়গা আর কী হয়! 

     

    লিভারপুল একাদশ

    আদ্রিয়ান, আর্নল্ড, মাতিপ, ভ্যান ডাইক, রবার্টসন, হেন্ডেরসন, অ্যালেক্স অক্সলেড চেম্বারলেইন, ওয়ানাইল্ডাম, মানে, সালাহ, ফিরমিনো
    অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ একাদশ
    অবলাক, ট্রিপিয়ের, সাভিচ, ফেলিপে, লোদি, নিগেজ, পার্তে, কোকে, ফেলিক্স, কোরেয়া, কস্তা