• দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফর
  • " />

     

    "খেলা কেড়ে নিলে আর কী থাকে জীবনে"

    "খেলা কেড়ে নিলে আর কী থাকে জীবনে"    

    করোনা ভাইরাসের প্রকোপে খেলার দুনিয়া থমকে গেছে পুরোপুরি। কমবেশি ‘অলস’ সময় কাটাতে হচ্ছে খেলা সংশ্লিষ্ট সবাইকেই, দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইনও ব্যতিক্রম নন। তবে এরকম সময়ে তার উপলব্ধি হচ্ছে, জীবন থেকে খেলাধুলা সরিয়ে নিলে আসলে কিছু থাকে না আর। 

    ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বজুড়েই জনসমাগম রোখার প্রচেষ্টা এবং নতুন সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতেই খেলাধুলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই অবসর সময়ে খেলোয়াড়রাও সতর্কতার অংশ হিসেবে ঘরেই থাকছেন বেশিরভাগ সময়। 

    পিএসএল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফেরা প্রোটিয়া পেসার ডেল স্টেইন এখন কেপটাউনে সমুদ্র পাড়ে তার মায়ের বাসায় অবস্থান করছেন। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বাইরে বেরুচ্ছেন না। ক্রিকইনফোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে করোনার দিনগুলি কীভাবে কাটাচ্ছেন, সেটি জানিয়েছেন তিনি। 

    করোনার কারণে এখন একরকম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। যেখানেই যান না কেন, সবার মুখে করোনা নিয়ে সতর্কবাণী, দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তার গল্প, স্টেইনও প্রথমে সেটির কথাই বললেন, “আসলে বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করাটা কঠিন। আপনি যেখানেই যান না কেন, সবাই এই একটি বিষয় বিয়েই কথা বলছে। প্লেনে, গ্রোসারির দোকানে বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গুলোতে এটাই একমাত্র আলোচনার বিষয়।” করোনার কারণে ছুটি দিনগুলো বাসায় বসেই কাটাতে হচ্ছে, সেটি নিয়েও হতাশা ঝরে পড়ল তার কণ্ঠে, “হ্যাঁ, ব্যাপারটা আসলেই অদ্ভুত। সাধারণত ছুটিতে থাকলে আমি মাছ ধরতে যাই অথবা সার্ফিং করি, কিন্তু এখন আমি শুধু বাসায় বসেই দিন কাটাচ্ছি।”

    বিশ্বজুড়ে প্রায় সব ক্রীড়া আয়োজন একের পর এক বন্ধ হয়ে গেলেও পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ব্যাপক সমালোচনার পরও চলছিল। একে একে বেশ কয়েকজন বিদেশী খেলোয়াড় পিএসএল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ১৭ মার্চ প্লে-অফ শুরুর আগে স্থগিত করা হয় এবারের আসর। 

    এদিকে পিএসএল খেলে ইংল্যান্ডে ফেরার পর ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স হেলসের শরীরে দেখা দিয়েছে করোনার উপসর্গ। তাই সাক্ষাৎকারে পিএসএলের শেষ দিনগুলো পাকিস্তানে কেমন কেটেছে, সেটিও স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসল স্টেইনের কথায়, “সবকিছু খুব দ্রুত হয়েছে। আমরা পাকিস্তানে সবসময়ের মতোই হোটেল বন্দি ছিলাম। ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব কেমন যেন বদলে গেল। এর আগে কেউ করোনা নিয়ে আমাদের মধ্যে তেমন একটা আলোচনা হয়নি। হঠাৎ কিছু সময়ের ব্যবধানে সবার হাতে দেখা গেল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এটাই সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে উঠল।”

    বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষজন টয়লেট পেপার এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মজুত গড়ে তুলছে, পড়ে যদি আর দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র না পাওয়া যায় সেই ভয়ে। তবে স্টেইন অবশ্য একেবারেই তেমন দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ করছেন না, “বাসায় এই জিনিসগুলো মজুত করা একেবারেই উচিৎ নয়। এর ফলে যাদের বেশি প্রয়োজন, তাদের জিনিসপত্র না পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আমি গ্রোসারি শপে গিয়ে দেখলাম সব টয়লেট পেপার শেষ প্রায়, আমি অবশ্য আমাদের যতটুকু প্রয়োজন তা পেয়েছি। সেগুলো শেষ হলে আবার নিয়ে আসব। সবার যা যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই সংগ্রহ করা উচিৎ, একবারে জম্বি অবস্থার মতো আচরণ করা উচিৎ নয়।”

    খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবনে আদৌ প্রভাব পড়ছে কিনা এবং প্রভাব পড়লে তার কতটা সুদূরপ্রসারী তাও ফুটে উঠল স্টেইনের কথায়, “হ্যাঁ, অবশ্যই প্রভাব পড়ছে। এটা দুঃখের বিষয় যে সব খেলা বন্ধ হয়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের মাঝে অনেক বিভাজন আছে, তবে খেলা আমাদের এক করে। সপ্তাহের শেষে যখন আমাদের ক্রিকেট দল বা রাগবি দল খেলে, তখন সবাই একত্র হয়। এখন আর সেই বিষয়টি নেই। খেলার মতো মানুষকে আর কিছু ঐক্যবদ্ধ করতে পারে না। আপনি জীবন থেকে খেলাকে সরিয়ে নিলে, আমি জানি না আর কী থাকে।”